নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরও কত দূরে আছে সে আনন্দধাম...

সেলিম তাহের

স্মরণে ত্বরণ, স্পর্শে মুক্তি

সেলিম তাহের › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুগল্প -১

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:১৩


এখন সন্ধ্যা। বিষন্ন হয়ে বসে আছে সে মুখ গুঁজে। নিজের ভাবনায় এতোটা নুয়ে থাকে হতাশাবাদীরা। কিন্তু সে বেঢপ হতাশাবাদী নয়। সে পর্যদুস্ত হয়ে আছে অন্যের ভাবনায়। দুপুরের খর রোদে হন্‌হন করে হেঁটেছে সে। এখন রাস্তার পাশে সন্ধ্যার আগ মূহুর্তে গাছের নীচে বসে আছে। মাঝে মাঝে ইতিউঁতি চোখ গাছের পাতার ঘন বিস্তার উপেক্ষা করে চিলতে আকাশ দেখছে। আকাশের বিস্তারের চেয়ে ভগ্নাংশ দেখা অনেক বেশী রোমাঞ্চকর, গবেষনার সান্নিধ্যময় একধরনের বিস্ময়বোধক তৃপ্তি পাওয়া যায়। ইতিউঁতি চোখ চারপাশের গাছ গাছালির উপর গিয়ে পড়ে।

সারাদিন খুঁজেছে। সে ভাবে, তার খোঁজা নিরন্তর চলতেই থাকবে। হঠাৎ একটা পাখির ডানা ঝাপটানির শব্দ সে শুনতে পায়। পাখিদের প্রতি একধরনের দরদ তার আছে। কিন্তু কিঁচির-মিচির সে পছন্দ করে না। আর এক মূহুর্তকার ডানা ঝাপটানি তাকে বেশ বিরক্ত করে- যেন বা তার ধ্যান ভাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে। আসলে সে ধ্যানী নয়। মাঝে মাঝে তার শরীর এবং মগজ ধ্যানের ভান করে। এবং এ ভান তার পছন্দ নয়।

কবিরাজ হরিলাল। বয়সে তরুণ। কবিরাজ হতে হলে বয়স বাড়তে হয়, মানুষের শরীর আর গাছেদের সম্পর্ক বুঝতে হয়। কবিরাজ হরিলালের কারবার গাছপালা নিয়ে। কোন গাছ না পেলে তার মনে হয় যে, সে তার বড় ছেলেটাকে হারিয়ে ফেলেছে। কবিরাজের খেয়াল নেই- সন্ধ্যা নিভুনিভু, এখনই রাত শুরু হবে। আজ রাতে গাছ খোঁজা বেশ মুশকিলের কাজ। সাপ-খোপের ভয় আছে। যদিও কবিরাজ মানুষ ছাড়া আর কাউকে কিছুকে ভয় পায় না। কবিরাজ মানুষকে ভয় পায় কেন, তা সে জানে না। গাছটাকে গত কয়েকদিন ধরে খুঁজছে। সেটা পাওয়া যাবে কি না সে ব্যাপারে কবিরাজ হরিলাল তেমন নিশ্চিত হতে পারছে না। নিশ্চিত হতে পারলে আরও বেশী শ্রম ব্যয় করতে পারতো সে।

কবিরাজের তন্ময় অবস্থা দেখে পাশের বাড়ির আবনের বাপ ভাবছে, ছেলেটা এতো অল্প বয়সেই ভাবুক হয়ে উঠেছে! বেশী বয়স হলে করবে কি? তখন তো বোধ হয় শরীরের কাপড় খুলে সাধনার শেষ সীমায় পৌঁছাবে।

অবনের বাপ হাট থেকে ফিরছিল। তার আগে আগে হারিকেন হাতে তার ছোট ছেলে আসাদ। আসাদ বাপের চোখে রাস্তাকে দৃশ্যমান করে তোলার জন্য হারিকেনটা যাতে নড়াচড়া না করে- সেদিকেই মনোযোগী। বাপের কথায় সে জিজ্ঞেস করলো, “বাবা, কার কথা বলতেছো?”
-“হরিলালের কথা।”
- “হরিলাল মোশায় আমাদের ইস্কুলে একদিন লতা-পাতার গুন নিয়া বেশ বক্তৃতা দিছিলেন।”
- “হরিলাল আজকাল বক্তিমাও দেয় নাকি?”
- “তাকে আমাদের হেড স্যার কি বলছে, জানো? বলছে, বাবা যতো বেশী পারো গাছের খবর ছেলেদের কাছে পৌঁছে দাও, ছেলেরা মানুষ হয়ে উঠবে।”
- “ধুৎ তোর মানুষ! ঐ দেখ কবিরাজ হরিলাল মাঠের মাঝখানে বসে আছে।”

আমাকে অন্য সবার মতো হরিলালও অসুস্থ ঠাউরেছিল। তার প্রাণপ্রিয় বন্ধুর অসুখের চিকিৎসার জন্য প্রতিদিন সে তার আকাঙ্খিত বৃক্ষের অনুসন্ধানে বের হয়।

সবাই তাকেও পাগল ভাবছে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: হরিলাল সত্যিকারের জ্ঞানী লোক।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:১৪

সেলিম তাহের বলেছেন: আজকালকার জ্ঞানপাপীরাই শুধু হরিলালকে চিনলো না।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুন্দর উপস্থাপন l ভালো থাকুন। আরো লিখুন।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:১৫

সেলিম তাহের বলেছেন: পাঠে অনেক ধন্যবাদ। আপনিও ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.