নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরও কত দূরে আছে সে আনন্দধাম...

সেলিম তাহের

স্মরণে ত্বরণ, স্পর্শে মুক্তি

সেলিম তাহের › বিস্তারিত পোস্টঃ

"রোমন্থন অথবা ভীমরতিপ্রাপ্তর পরচরিত চর্চা"

২৬ শে জুন, ২০২০ দুপুর ২:৪৭


তপন রায়চৌধুরীর "রোমন্থন অথবা ভীমরতিপ্রাপ্তর পরচরিত চর্চা" বইটি স্মৃতিচারণমূলক রসালো বর্ণনায় টইটুম্বুর। সেখান থেকেই ছোট্ট একটি উদ্ধৃতি দিলামঃ

"...মেঘ যে আরো ঘন হয়েছে সে কথা বুঝলাম যখন সবাই বলতে লাগলো যুক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী আমাদের সর্বজনপ্রিয় হক সাহেব, অর্থাৎ শের-ই-বাংলা ফজলুল হক শত্রু পক্ষের লোক। বরিশালের স্টিমার ঘাটে নেমে, জনসংযোগের উদ্দেশ্য নিয়েই বোধহয়, উনি পায়ে হেঁটে অনেক দূর অবধি যেতেন। অনেক সময়ই পথে আমাদের বাড়িতে থেমে কিছুক্ষণ গল্প করতেন। ... তাঁর বিশাল বপু সাধারণ চেয়ারে ভালো আঁটতো না। তাই উনি বাড়ি এলে জাঁদরেল সাইজের একটি চেয়ারে উনাকে বসতে দেয়া হতো। বরিশালের আর পাঁচজন ভদ্রলোকের মত উনিও স্পষ্ট বরিশালীতে কথা বলতেন, ভিক্টরিও ন্যাকামির ধার ধারতেন না। রাজনীতির খাতিরে উনি একাধিকবার দল বা জোট বদল করেছেন। যে ঘটনার কথা বলতে যাচ্ছি সে ঘটনার সময় উনি মুসলিম লীগের পক্ষে। কৃষক প্রজা দলের ছাত্ররা স্টিমার ঘাটে কালো নিশান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাবার জন্য প্রস্তুত হয়েছে।
...গণ-সমর্থকদের শেখানো হয়েছে, হক সাহেব স্টিমারের সিঁড়ি বেয়ে নামলেই তারা নিশান আস্ফালন করে “Shame! Shame!” বলে ধিক্কার দেবে। কিন্তু ব্যাপারটা একটু গোলমাল হয়ে গেল। ঐ বাঘের মত মানুষটিকে সামনে দেখে নিশানবাহীরা পালাবার পথ পায় না। ছাত্রনেতারা উস্কাচ্ছেন, “চুপ করিয়া ক্যান? ক’, চ্যাঁচাইয়া চ্যাঁচাইয়া ক’।” অতি সঙ্কোচে মুখ হাতে ঢেকে বিক্ষোভকারীরা শ্রীরাধিকার মত নরম সুরে বললো, “শ্যাম! শ্যাম!” হক সাহেব মুচকি হেসে এগুলেন। পরবর্তি স্টপ আমাদের বাড়ি। সেখানে ওর বাল্যবন্ধু ইন্দুভূষন গুপ্ত বসে আছেন সদলেঃ “আইজ আউক! ফজলুরে আইজ ধোয়ামু”- অর্থাৎ সস্নেহ গালিগালাজের তোড়ে শের-ই-বাংলাকে উনি ধৌত করে ছাড়বেন। হক সাহেব ধীরে সুস্থে পাপোষে পা মুছে বৈঠকখানা ঘরে ঢুকলেন। ঢোকা মাত্র ইন্দুবাবুর আক্রমণঃ “ফজলু, তর লইগ্‌গা ভদ্দরসমাজে আর মুখ দ্যাহান্‌ যায় না।” হক সাহেব গভীর সহানুভূতির দৃষ্টিতে বাল্যবন্ধুকে দেখলেন একটুক্ষণ। তারপর বললেন, 'হেইলে ত তর বড় মুশকিল! ভদ্দরসমাজে মুখ দ্যাহাইতে পারিস না? তয় হোগাটা দেহাইস।'
এই ঋষি বাক্যের পশ্চিমবঙ্গানুবাদ আর দিলাম না।"

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৩১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনার লেখায় উৎসাহিত হয়ে বইটি পড়া শুরু করলাম।

২৬ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৪

সেলিম তাহের বলেছেন: পড়ুন। আপনার নিশ্চিত ভালো লাগবে।

২| ২৬ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৪৮

পদ্মপুকুর বলেছেন: ভাই রে ভাই, শেষে এইটা কি হইলো????? =p~ =p~ =p~

২৬ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৫

সেলিম তাহের বলেছেন: বরিশাইল্যা মনু বইলা কথা :)

৩| ২৬ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৪:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: বইটা কোণ প্রকাশনির?

২৬ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৯

সেলিম তাহের বলেছেন: কোলকাতার আনন্দ পাবলিশার্স।

৪| ২৬ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৪:৫৬

কল্পদ্রুম বলেছেন: শেষের অংশটা পড়ে শের এ বাংলা যে জাত বরিশাইল্লা সেটা বোঝা গেলো।

২৬ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৬

সেলিম তাহের বলেছেন: একদম!

৫| ২৬ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৫:০২

ডার্ক ম্যান বলেছেন: আঞ্চলিক ভাষার বিশাল শক্তি আছে । আমাদের চট্টগ্রামের ভাষায় শেষ লাইনটি আরো রোমাঞ্চকর হত ।

২৬ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৭

সেলিম তাহের বলেছেন: শেষ লাইনটা চট্টগ্রামের ভাষায় কি হতো, বলে গেলেন না কিন্তু!

৬| ২৬ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৫:৪৫

জুন বলেছেন: বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তপন রায় চৌধুরীর এই লেখাটি মনে হয় ১৫/১৬ বছর আগে দেশ পত্রিকায় পুজা সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল। তখন থেকে কতশত বার যে পড়েছি তার ঠিক ঠিকানা নাই। এমনকি বরিশালের কীর্তিপাশায় তাদের ভগ্নপ্রায় জমিদার বাড়িটিও দেখে এসেছি। অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ভাষায় লেখা বইটিতে দেশবিভাগের করুন বর্ননা ফুটে উঠেছে শেষের দিকে।

২৬ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৩

সেলিম তাহের বলেছেন: ঠিক বলেছেন, অনেক আগে দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর "বাঙালনামা"ও পড়েছেন আশা করি।

৭| ২৬ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৪

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: কীর্তিপাশার শশাংক পাল আমার বন্ধু ছিল।৭১রে মারা যায়।ওর সাথে ঐএলাকায় অনেক ঘুরে বেড়িয়েছি।হক সাহেবের গ্রামের বড়ীও ঘুরে দেখে এসেছি।এ সব হয়েছে ৭১ রে।

২৬ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৯

সেলিম তাহের বলেছেন: তথ্যটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ জানাই।

৮| ২৬ শে জুন, ২০২০ রাত ৮:০৩

আহমেদ জী এস বলেছেন: সেলিম তাহের,



রায় চৌধুরীর এই বই আন্নে বিচরাইয়া পাইলেন কৈ?
হের থন ধার লৈয়া আরেটটু লিহি ---

" রাম - মোর কলমডা কই মা?
মা - বিচরাইয়া দ্যাখ। মুই জানিনা।
রাম - বিচরামু তোন হানে ? এই হানে ত আছেলো।
মা - তয় মুই কি হেডা আহালের হদের মদ্যে হান্দাইয়া থুইছি ? "

রায় চৌধুরী এ লাইন কয়টি " ক্যলানীয় বাবা গেদু"র চিঠিতে লিখে পরে বলেছেন -
এখন বলত বাছা, বিচরাইয়া, আহাল এবং হান্দাইয়ার বুৎপত্তি কি ? আমি আমার কনুই( যাহা বরিশালীয় উচ্চারণে কেনু )কামড়াইয়া বলতে পারি যে , তুমি যদি বরিশালের মাল না হও তবে ইহার বুৎপত্তি দূর অস্ত, সাধারন অর্থ পর্যন্ত বলিতে পারিবেনা। সুনীতিকুমার দানবের প্রতিভা লইয়া জন্মিয়াছিলেন ( আহা! তাহার যেন লক্ষবার মানুষী যোনিভ্রমন বিধাতা বরাদ্দ করেন।) তিনি পারিলেও পারিতেন ..........

আসলেই ভীমরতিপ্রাপ্ত পরচরিতচর্চা রোমন্থন।

২৬ শে জুন, ২০২০ রাত ৮:৫৪

সেলিম তাহের বলেছেন: হা হাা হা সেরাম হইসে!
তাঁর থেকে তাহলে আরেকটা উদ্ধৃতি দেইঃ

ফার্সির মৌলবী সাহেবের কাছে ফারসী গদ্য-পদ্যর সরল বঙ্গানুবাদ শুনে শুনে ভাষাটা রপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ‘দেলশ্‌ বোলন্দ্‌ বুদ্‌’ কথাটির ব্যাখ্যা করতেন,
-“বোZলা ত? তেনার দেল খু্ব বোলন্দ আছেলে।”
বুঝতে আর কিছু বাকী থাকতো না। সব প্রাঞ্জল হয়ে যেত। শেখ সাদীর গোলেস্তাঁর একটি আপ্তবাক্য বড় সুন্দর বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। “দরুগ্‌-এ মেছ্‌লেহত্‌-আমিজ্‌ বেহ্‌ আজ রাস্‌ত-এ ফেত্‌নাহ্‌-আনগিজ্‌ (বঙ্গানুবাদঃ যে মিথ্যাকথায় সম্প্রীতি বাড়ে তা সত্যকথার চেয়ে ভাল)।”
-“বোZলা তোমরা? শেখ্‌ সাদী কইথে আছেন, যে দরুগে মেছলেহত চাইগা ওডে হ্যায়া ফেত্‌নাহ চাগাইন্যা হাচা কথার চাইয়া অনেক ভাল।”
সংস্কৃত পন্ডিত মশায় শিখিয়েছিলেন পৃথিবীর যে কোন ভাষার শব্দ সংস্কৃতে ধাতুগত ব্যাখ্যা করা যায়। যেমন, “মূলং জানাতি ইতি মৌলানা”, “ইস্টং পিনদ্ধি ইতি ইস্টুপিড।” ...আরেকটি শ্লোক তিনি বলতেন,

"শীতেতে কাঁকুড়ি-মাকুড়ি মাঘ মাসস্য রাত্রৌ
কন্থাং ভারে বাপুরে মাগোরে লইয়া আয়ো চায়ের পাত্রৌ",
ব’লে বলতেন, “ ‘পাত্রৌ’ কেন বোঝলা?”
উত্তরঃ “না।”
প্রত্যুত্তরঃ এয়াও বোঝলা না? দ্বিবচন! নরঃ নরৌ নরাঃ। মাঘ মাসের রাত্তিরে এক পাত্তর চায়ে হইবে কি? হেইয়ার লাইগ্‌গা ‘পাত্রৌ’।

৯| ২৬ শে জুন, ২০২০ রাত ৮:৫৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: স্মৃতিকথা পড়ে ভালো লাগে। এইসব বই তথ্যপূর্ণ ।

২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ৮:১৪

সেলিম তাহের বলেছেন: পাঠে ধন্যবাদ।

১০| ২৬ শে জুন, ২০২০ রাত ১০:৩৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: বাঙালনামা আংশিক পড়েছি। এখন শেষ করার অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। আগে এটার মূল্য বুঝি নাই।

২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ৮:১৫

সেলিম তাহের বলেছেন: ঠিক বলেছেন....সম্পূর্ণ একমত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.