![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সচরাচর আমার ফেইসবুক ওয়াল-এ কোন ফেইসবুক বন্ধুর আউল-ফাউল ট্যাগ দিয়ে যাওয়াটা আমার বিরক্তিকর ঠেকে। এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত অভিরুচির ব্যাপার। কবুল করি, সম্ভবতঃ নিজের ওয়াল-এ হাতে গোনা কিছু ট্যাগ ব্যতীত অন্ন সকল ট্যাগ আমি রিমুভ করে দেই। এটা একান্তই নিজের ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার ব্যপার। আমার ওয়ালে সেই হাতে গোনা কিছু অক্ষত ট্যাগ-এর মধ্যে কাব্যচর্চায় সদাচঞ্চল এক কবির কবিতা ও তাঁর পদ্যভাবনা সঞ্চাত লেখাটি আমাকে ট্যাগ করার জন্য ধন্যবাদ জানাই।কবিতা বিষয়ে তাঁর ভাবনাটি মনযোগ দিয়ে পড়েছি। বেশ কিছু বিষয়ে মতান্তর থাকলেও শুধুমাত্র কবিতার ক্ষেত্রে তাঁর অকৃত্তিম নিখাদ ভালোবাসা থেকে উৎসারিত ভাবনাগুলোকে আমি গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই সাদরে আমার মস্তিষ্কে ঠাঁই দিয়েছি এবং মনে মনে মারহাবা জানিয়েছি তাঁকে।
আমি সাহিত্য সমালোচক নই। সেই যোগ্যতা আর পড়াশুনাও আমার অতটা নেই। তারপরও কবিতা নামক এই কলাকৈবল্যকে আমি হৃদয় দিয়ে ভালোবাসি বলেই ওই কবির লেখার উছিলায় নিজের কিছু ক্ষুদ্র ভাবনাকে নীচে প্রকাশ করার তাগিদ বোধ করছিঃ
কবিতা ছন্দে ইতিহাস সংবদ্ধ করে, জমিয়ে রাখা যায়। স্মৃতির লালন-পালনের মধ্য দিয়ে মানুষের সামাজিক, প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস আগায়। সামাজিক ইতিহাস যতো আগে বাড়ে, রাজনৈতিক ইতিহাস ততো সামাজিক হয়ে উঠে। কবিতা মানুষের লিরিক্যাল হিস্টরি, ইতিহাস যারে কই, সাদামাটা কথায়। পৃথিবীর সকল ভৌত অবকাঠামোর মতই ভাষার সবচে’ নান্দনিক ভৌত অভিপ্রকাশ ঘটে কাব্যে। কাব্য কিছু ভুলতে দেয় না। স্মৃতিসত্তার জীবন্ত ও সবল, সপ্রাণ ও সরল কাঠামোগত, লিরিক্যাল স্ট্রাকচারের মধ্যে, পদ ও পদকর্তার সম্পর্কের সবচে’ উৎকৃষ্ট অভিব্যক্তি কাব্য। লিরিক কেবলমাত্র কবিতার বৈশিষ্ট্য নয়, গানের, নৃত্যের, শ্রমিকতার, এমনকি সশস্ত্রতার। আদি লিরিকের নোটেশন করা কবির কাজ, বিজ্ঞানীর নয়। কবি রাজহংসের মত। দুধ থেকে জল আলাদা করে আত্মস্থ করেন। কবি এস্কিমোদের বরফের ঘরের মত। শীতল, সাধারণ, হতশ্রী শব্দকে উত্তাপ দিয়ে দিয়ে গণমানুষকে ওই শব্দের নয়া ভাবে নাড়াতে পারেন। অতএব, প্রতিনিয়ত কবি ও কবিতা শব্দের চলনসই, চালু মানে আর প্রথাগত অর্থ ওলট-পালোট করে অসংখ্য সঞ্চরণশীল শব্দের কিলবিল থেকে মানুষের ‘হৃদয়কে’ মুক্তি দেন এবং শব্দের মাথায় অর্থের নোতন তাজ পরান। এই অর্থে কবিতা হয়ে ওঠে তখনই যখনঃ
।। আলাদা একটা পদ সেটা করতে পারে না। শব্দের আলাদা আলাদা মানে অভিধানের বিষয়, কবিতার নয়। সকল পদ মিলে যখন একসঙ্গে কথা কয়ে ওঠে। প্রতিটি পদের অর্থ রূপান্তর যখন সকল পদের উপর নির্ভর করে তখন কবিতার প্রাথমিক শর্ত তৈয়ার হয়। বাংলার কবিতা সবসময়ই এ্যান্টি-র্যা শনাল ছিল। এটাই বাংলা কবিতার অসম্ভব শক্তি।।
তবে এখন এটা বলা দরকার, কাব্য সবসময়ই জ্যোতির-জেল্লা। জাদু, ঝিকিমিকি। সৎ ও সত্যিকারের কবি সব জানেন। তিনি ইঙ্গিতে, ইশারায়, ভাব ও বস্তুর সম্পর্ক ও ফারাক বোঝেন ও বুঝিয়ে দেন। কবিতা ছাড়া পদার্থ বিজ্ঞান আগাতে পারে না, আগাবেও না। পদার্থ বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে কবিতার ইংগিত যে প্রাকৃতিক নিয়মের সবচে’ নির্ভরযোগ্য সম্ভাব্য ব্যাখ্যা, সেটি মানার ক্ষেত্রে গড়িমসি, কৃপণতা ও আসলে বিজ্ঞান হিসাবে অক্ষমতা। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সকল বিজ্ঞানীরাই এখনো পর্যন্ত প্রথম শ্রেণীর ছাত্র। যা জানি তা জানার শুরু মাত্র। যার ভেতর দিয়ে প্রকৃতি নিজেকে সবচে’ বেশী প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে তার নাম কবি মানুষ। অতএব , কবি তৈরি করা যায় না,কবি হয়ে ওঠে। কেউ কেউ ভুলে এই বয়ানকে আধ্যাত্মিকতার সাথে তুলনা করলে ভুল করবেন দুইবার। কবি লালনবাদী,ফকির-দরবেশ নয়।
।। যখন কবি হয়ে উঠছেন মাত্র, লক্ষণ পরিষ্কার, তখন নিজেকে পাগল পাগল লাগে। পদ্ম পাতায় শিশির কালি দিয়ে লিখবার খায়েস হয়। সবকিছু আউলা-ঝাউলা লাগে। কবি কাব্যের শৈশবে তার নিজের কর্তাগিরি হারায়। তাকে যেন চালিত করছে অন্য কেউ। সেই অন্য কেউ কোন ঈশ্বরিক শক্তি নয়, স্বর্গ ও দোজখের অধিকর্তা নয়, একটা অগ্নিকুন্ড। সেটা জরথুস্ত্রায়ান প্রাকৃতিক অগ্নির ধর্মতাত্ত্বিক শিখা নয়, আরতির আরাধ্য জাগতিক শিখা নয়, মাজারের মোমবাতি নয়- সেঁজুতিও নয়। এটা অনির্বচনীয় শিখা- দীপ্তিময় দিপালী- আমার সবকিছু দেখার সহজিয়া লালন মনশ্চক্ষু। মানস-নয়ন।।
কবির উপর সবকিছুই নাজেল হয়, আবার কোনকিছু না। নাজেলের একটা ধর্মতাত্বিক মানে খাড়া করা যায়। অভিভূত হওয়ার জন্য কিছু আবির্ভূত হতে হয়। আবার সমাজ টিকিয়ে রাখার জন্য কিছু কিছু জিনিস গায়েবি রাখতে হয়। বাতেনি ও গায়েবের এই রুপালি রূপান্তর (ম্যাটামোরফিসিস) কবির জন্য এক জব্বর মূহুর্ত এনে দেয়।
মানুষ তার খোদ্গুণে কিছু নয়, প্রান মাত্র। বাকী সব গুণ মানুষ হয়ে উঠার আত্মস্থকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়। কিন্ত মানুষের মধ্যে নিহিত প্রাকৃতিক গুণ এমনই যে আত্মস্থকরণ কেবল তার পক্ষেই সম্ভব। কাব্য সেই প্রাকৃতিক নিহিত সম্ভাবনা যা মানুষের লিরিক্যাল নিসর্গ দশা। এই ‘দশা’ থেকে ভাবে উৎক্রমণ হবে ক’জনার মধ্যে তা কিন্তু প্রাকৃতিক নির্বাচন, এক অর্থে।
কবিতারই কেবল বাণী বিকাশ ও পুনরুৎপাদনের ক্ষমতা আছে। তাই কবিকে শাসক শ্রেনী ভয় পায়। কবিকে দিয়ে রাজনামা, রাজস্তুতি লেখাতে পারলে জনমানসে দীর্ঘজীবি হওয়া যায়। কাব্য স্মৃতির স্বরলিপি। কবিতা বিষয়ে অন্যরকম নোট টিয়া টিয়া হয়ে যখন কাঁদে হিয়া, তখন এই নিয়া কাব্যি হউক। যে টিয়ার জন্য বাংলার কৃষক ক্ষেতে রেখে যায় কিছু ধান কিংবা থেকে যায় ফসল কাটার পর সে-ই টিয়া ঠোঁঠাঠোটি করে প্রেমভাবে কাটিয়ে দিক ওষ্ঠ- অনির্বাণ দিবস ও রজনী। কিন্তু ব্রজের মহিষীরা এই রূপকল্পের বৃন্দাশ্রমে এসে দেখে যাক না বিরহকাতর এইসব উন্মুখ ওষ্ঠে কতো রস।
কী জ্যামিতিক এই আদর। আহা! মানুষ যদি এমন হতো। আহারে! আমরা যদি একবার দিব্যজ্ঞানে আমাদের অশ্রুনিরোধসংকল্পে টপ টপ প্রস্রবণ নয়নাধারে রেখে একবার শুধু বলতে পারতাম, সিদ্ধান্ত নিয়েছি ,আর না, ফিরার পথে ভালোবাসা দিও। আহা প্রত্যাবর্তনের এই ব্যক্তিগত দ্বৈরথ সামাজিক হয়ে উঠুক। আমরা বলে উঠি অনুরাগই অর্জুন। বিরহবিধানে মর্মে জাগ্রত রাধা। আর ভারতীয় উপমহাদেশে রাধার ক্রমবিকাশ ঘটেছে। প্রেম-চৈতন্যের, ভাববিভায় আলোকিত ভারতীয় আধুনিকতার দেবী তিনি। তার মর্ম আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে অপরিসীম।
ইচ্ছাতে গড়াই সবকিছু। কবির আপন ইচ্ছা তার অপর সমগ্রতার ইচ্ছা হয়ে উঠে। কবির আপনসমগ্র যখন ভালোবাসার ভূবনের চিত্রকল্প তৈরি করেন, তখন তিনি তার আপন ইচ্ছা আমাদের মধ্যে দিয়ে বাস্তবায়িত হয়ে উঠবার এক বাসনা এমনভাবে আমাদের “মর্মার্থসমীপে” পেশ করেন যে আমরা তার অভিযাত্রী দলের সদস্য হয়ে উঠি। যে কোন কাব্যে ভাবের প্রতিমাস্বরূপ যে উপমা তা স্বয়ং যখন আলাদা অর্থময়তায় ব্যঞ্জনার বৈসাদৃশ্য ছাপিয়ে পরম পরিদৃষ্টমান করে তোলে অন্য এক ভাবজগত, তখন উপমা ও রূপক আর ভাবপ্রকাশের মাধ্যম থাকে না, হয়ে উঠে স্বয়ং ভাব।
আমাদের সম্পর্কের মধ্যে আমরা ভালোবাসা প্রস্তাব করি। ভালোবাসার মধ্য দিয়ে আমরা প্রস্তাবিত হয়ে উঠি। এই কবিতা মনভূমের মনভূমিকা। সকল সম্পর্ক গৃহবাসী করি না আমরা। আমাদের অন্তর্জগতের স্বামী কবি, কর্তাশক্তি, মনোভূমে বিকশিত প্রণয়ের সাধন-বোধন ও প্রাণ অধিষ্ঠান প্রক্রিয়ার মধ্যে কবি তাকে ডাকেন। যত ডাক, ততো ধ্বনি। ক্ষরণক্ষুব্ধকালে অন্তরের অপেরায় এক অবিনাশী সঙ্গীতের সুরধ্বনি দিয়ে কবি বোধন করেন। প্রণয়নীর পরিত্রাণ নাই। সে-ই নিঠুরাকে চিনি আবার চিনি না। কবি তাঁর অন্তর্লোকে যাকে স্থাপন করেন, যাকে তিনি দুনিয়ার চিরাচরিত সম্পর্কের ডোরে বাধেন নাই, তার প্রতি এই নিবেদন আমাদের প্রণয়শাস্ত্রের দার্শনিক পাটাতন।
কবিতা বিষয়ে আমার আরও কিছু ভাবনার বিষয় আছে। একটু সময় নিয়ে আবার ফিরে আসার ইচ্ছা জ্ঞাপন করছি।
২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৩:২১
খায়রুল আহসান বলেছেন: "কবিতা মানুষের লিরিক্যাল হিস্টরি" - কথাটা চমৎকার বলেছেন।
বাকি কথাগুলোকে বুঝতে গিয়ে সবকিছু কেমন যেন ঘোলাটে মনে হয়েছে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:১৪
রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের দেশে কবির অভাব নেই। অভাব হলো ভালো মানুষের।
সত্যিকার কবি আমাদের দেশে খুবই কম।