![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কবি বা লেখক হয়ে অর্থ কামানো আমার জন্য একদম নিষিদ্ধ!!!
স্যার, ১০ ট্যাহা কেজি চাল ব্যাচে কোন হানে?
ফ্রামগেটের ওভার ব্রীজ পার হতে গিয়ে হঠাৎ থেমে যায় অনল নামের যুবক, তাকিয়ে দেখে জীর্ণ শরীরের ১০ /১২ বছরে একটা ছেলে তাকে এই প্রশ্ন করেছে! অনল জানে না ঢাকা শহরের কোথায় ১০ টাকা দরে চাল বিক্রি হয়, তাই সে উত্তর দিতে পারছিল না, টিভি তে সে দেখেছে গ্রামে এ চাল সরকার বিক্রি করছে। এবার উত্তর দেয় অনল,
-ঢাকায় কোথায় বিক্রি করে জানি না, তবে গ্রামে বিক্রি করে।
-স্যার গ্যারামে অভাবের লাইগায় তো শহরে নিয়ে আইছে বাজান, বিক্সা চালাইয়া আমগো সংসার চালাইত, বাজানের কয় দিন হইল জ্বর, তাই রিক্সা চালাইতে পারে নাই, ঘরে ছিল ৯০ ট্যাহা, মা কইল যা চাল কিনে আন, হুনছি সরকার ১০ ট্যাহা স্যারে চাল ব্যাচে, তাই খুজতাছি কই ব্যাচে।
-অন্য কাউকে জিগেস করে দেখ
-জিগাইছি, একজনে কইল হেই চাল নাহি শুক্রবার আর বুধবার এই দুই দিন হেরা ব্যাচে, আইজ তো শনিবার
-৯০ টাকা দিয়ে তুমি দুই কেজি চাল কিনে নিয়ে যাও
-হ স্যার, ৪৫ট্যাহা দিয়াই তো চাল কিইনা খাই, তয় মা কইল, ১০ ট্যাহা করে ৫ কেজি পাওন যাইবো, বাজানের জ্বর সারতে যদি দেরি হয় তয় আরো কয়দিন উপোস থাকতে হইবো, তাই... বলে থেমে যায় ছেলেটি।
-১০০ টাকা বের করে দিলাম, নিল না বললো, মার নিষেধ আছে! মা কইছে তোর বাপে মুক্তিযোদ্ধা, কারো করুনা বা দয়া নিবি না বাজান, দয়ায় বা করুনায় এই দেশ স্বাধীন হয় নাই, গায়ে গতরে খ্যাইটা এই দেশ স্বাধীন করছে তোর বাজানেরা, তুই সেই বাপের ছাওয়া, কিছু দরকার হইলে খ্যাইটা জোগার করবি।
- ওর কথা শুনে অবাক হলাম, বললাম মুক্তিযোদ্ধাদের তো সরকার ভাতা দেয়, তোমার বাবা সেই ভাতা নেয় না?
-না নেয় না, হ্যায় ভাতা উঠানোর কার্ড করতে গ্যাছিল, যে সাহেব কার্ড কইরা দিব হেয় কইছে পনের হাজার ট্যাহা লাগবো না হলে ভাতা পাইবো না, তাই বাজান রাগে আর কার্ড করে নাইকা
-বললাম এখন তো অনেক টাকা পায় মুক্তিযোদ্ধারা।
-বাজান কইছে আর কুনুদিন হ্যায় কার্ড নিব না, কাউরে কইবো না হ্যায় মুক্তিযোদ্ধা!
-কেন বলবে না
-হুনছি আমাগো গ্যারামের এক ব্যাডায় রাজাকার ছিল হ্যায় নাকি পরে মুন্ত্রি মিনিস্টার হইছিলো, সেই থ্যাইকা বাজানের রাগ, এহন কইলে কয় হ্যায় নাকি কুন এক ন্যাতা ছিল এই দ্যাশে তার ভাষন হুইনা যুদ্ধে গ্যাছিলো, হ্যারে যেদ্দিন মারছে সেই থেইকা বাজান কয় আবার এই দ্যাশে যেদিন যুদ্ধ হইব হ্যায় যুদ্ধ করবো, সেই যুদ্ধে নাকি বাজান.... ছেলেটি থেমে যায় কি যেন বলতে গিয়ে!
-বললাম সেই যুদ্ধে বাজান কি?
-না বলা যাইবো না
এই বার সে বলে আপনি যান, অত গল্প করনের সময় নাই, আমি দেহি কই ১০ ট্যাহা স্যারে চাল ব্যাচে সেই জাইগা খুইজা বাইর করি, বলেই সে চলে যায়!
১০০ টাকাটা অনলের হাতের মধ্যে, যেন ১০০ টাকা না, একটা চাপা যন্ত্রনা অনল ধরে আছে! ওর চলে যাওয়া অপলক চোখে তাকিয়ে দেখছিল, ওভার ব্রীজের উপর দাড়িয়ে থাকা যুবক আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, একটা বেনসন সিগারেটের দাম ১১ টা! ৫ মিনিটে সে সিগারেট ধোয়া হয়ে বাতাসে মিশে যায়! অথচ আমাদের এত কষ্টের, এত রক্তের, এত ইজ্জতের বিনিময়ে কেনা স্বাধীনতা টার দাম ১০ টাকা ও না!!
স্বাধীনতার গল্প/
সরকার পল্লব
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:১৮
ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: ভালো লিখেছেন।