নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কে আমি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজি...!!

সরকার পল্লব

কবি বা লেখক হয়ে অর্থ কামানো আমার জন্য একদম নিষিদ্ধ!!!

সরকার পল্লব › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুর্য উঠে তবু সকাল হয় না!

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৪৪

সুর্য উঠে তবু সকাল হয় না!

সন্ধ্যার পর রাস্তার নিয়ন বাতি গুলো জ্বলে উঠল। আলো আধারী ফুটপাত দিয়ে একা একা অনল হাটছে, হঠাৎ বোরকাপরা এক মহিলা তাকে বলে; যাবেন? এমন প্রশ্ন শুনে সে থেমে যায়।
- যাব? কোথায় যাব? প্রশ্ন করে অনল।
- আমার সাথে।
- আপনার সাথে যাব কেন?
এই কথা শুনে বোরকা পরা মহিলা নেকাব তুলে উল্টা জিগেস করে; আপনি কি পুরুষ?
অনলের পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া অন্য যুবক অনল কে লক্ষ্য করে বলল, আপনি চলে যান, উনি খারাপ মহিলা, খদ্দের খুজছে। অনল দ্রুত সেখান থেকে হেটে তার গন্তব্যর দিকে হাটতে লাগল।কিছু দূর গিয়ে সে একটা চা'য়ের দোকানের সামনে থামল। চা দোকানীকে এক কাপ রঙ চা দিতে বলে। চা'য়ের কাপে চুমুক দিতেই একটি পুলিশের গাড়ী দোকানের সামনে এসে থামল। গাড়ীর সামনে মাঝ বয়েসী অফিসার বসে আছে, পিচন থেকে দুইজন কনষ্টেবল নেমে দোকানের সামনে আসা মাত্রই দোকানী ত্রিশ টাকা বের করে একজনের হাতে দিল, অন্য জন দোকানের সামনে ঝুলানো কলা থেকে দুটো কলা ছিড়ে একটা খেতে খেতে গাড়ীতে গিয়ে বসে। গাড়ী চলে গেল সামনের দিকে। দোকানীকে অনল প্রশ্ন করে, কিসের টাকা দিলেন?
- আর কইয়েন না মামা, এই যে ফুটপাতে দোকান বসাইছি সেইটার ভাড়া। টাকা না দিলে দোকান উঠায়া দিবো।
- রোজ নিয়ে যায়?
- হুম, তয় গ্যাপ হইলে পরের দিন দেওন লাগে।
- কলার দাম তো দিল না!
- এবার দোকানী মুচকি হেসে অনলের দিকে তাকাইয়া থাকে; তার তাকানোর দৃষ্টি অনলকে অস্বস্তিতে ফেলায়, অনলের মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বোকা মানুষটির দিকে দোকানী চেয়ে আছে।
- কিছু কলা আল্লাহ পুলিশের জন্যই সৃষ্টি করছে মামা, সে কলা খাইলে দাম দেওন লাগে না, আপনি চা'র দাম দ্যান। চা'য়ের দাম দিয়ে অনল মিরপুর দশ নাম্বারের গোল চত্বরের দিকে হাটতে হাটতে এগিয়ে যায়। সামনে আর রিক্সা যায় না, রিক্সা যাওয়া নিষেধ। অনেকগুলো রিক্সা জট লেগে আছে, মাঝখান থেকে একটি রিক্সা সামনে গিয়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের হাতের মধ্যে কিছু একটা দিয়ে সামনে পার হয়ে গেল। ট্রাফিক পুলিশ অদৃশ্য বস্তুটি তার পকেটের মধ্যে গুজে রাখলেন। অনল দাঁড়িয়ে থাকা রিক্সাওয়ালাকে জিগেস করে, ও চলে গেল আপনারা যাচ্ছেন না কেন?
- পাচ টাকা দিলে যাইতে দিবো, না দিলে চাক্কার পাম ছাইড়া দিবো।
অনল ফুটওভার ব্রীজ দিয়ে ওপার যাচ্ছিল, ৭/৮ বছরের কিছু ছেলে শুয়ে ঘুমাচ্ছে, সন্ধ্যার সময় প্রায়ই অনল তাদের ঘুমাতে দেখে, ড্যান্ডি নামক নেশা করে এরা নাকি এভাবে ঘুমায়। ওভার ব্রীজ থেকে নেমে অনল রিক্সা নিল বাসার দিকে যাওয়ার জন্য। রিক্সাওয়ালা ছেলেটিকে জিগেস করে, বাড়ী কোথায়? ছেলেটি উত্তর দিল পাবনা।
অনলের ছেয়ে চার পাচ বছরের ছোট হবে রিক্সাওয়ালা ছেলেটি।
- কবে আসছিস ঢাকায়, আবার জিগেস করে অনল।
- গতকাল আসছি মামা।
- গ্রামে তোর কে কে আছে?
রিক্সাওয়ালা ছেলেটি উত্তর দেয় না, আবারো অনল জিগেস করে, কিরে গ্রামে কে কে থাকে? এবার অনল ছেলেটার ফুফিয়ে কান্নার শব্দ পেল, জড়ানো কন্ঠে উত্তর দেয় ছেলেটি দুই বোন আর মা আর আব্বা...... বলে সে থেমে যায়। অনল লক্ষ্য করল ও ভালমত রিক্সা চালাতে পারছে না, বাসার সামনে এসে রিক্সা দাড়াল। অনল মানিব্যাগ থেকে বিশ টাকা বের করে ভাড়া দিল। মাথা নিচু করে রিক্সাওয়ালা ছেলেটি অনলকে বলে, মামা আর বিশ টাকা বেশি দিবেন!
- বিশ টাকা দিবো মানে? ভাড়া তো বিশ টাকাই।
- হ তা তো ঠিক আছে, আর বিশ টাকা বেশী চাইলাম, দিবেন?
- আজব, কেন বিশ টাকা বেশি দিব, সেই টা তো বলবি।
এবার ছেলেটি ফুফিয়ে কাদতে থাকে, চোখের পানি গড়িয়ে গাল ভিজে যাচ্ছে।
- কাদছিস কেন? বল কি হয়েছে?
- মামা দুপুরে গ্যারাজের মালিকের কাছে দ্যাশ থেকে ফোন কইরা জানাইছে আব্বা.... বলে আর সে বলতে পারে না, আবারো কাদতে থাকে।
- আব্বা কি অসুস্থ হইছে? ছেলেটি না সুচক মাথা নেড়ে জবাব দেয়।
-তাহলে...?
রিক্সাওয়ালা ছেলেটি চোখের পানি মুচতে মুচতে বলে, আব্বা আজ দুপুরে মারা গেছে, গতকাল ঢাকায় আসনের সময় অসুখ দেইখা আইছি, আজ দুপুরেই আব্বা... বলে সে হাউমাউ করে কাদতে থাকে।
- বাড়ি যাস নি ক্যান এখনো?
- টাকা চাইছিলাম গ্যারাজের মালিকের কাছে, কইল কালই তো আসলি, কামাই না করে কি টাকা দিমু তোরে, রিক্সা আছে যা সন্ধ্যা পর্যন্ত চালাইয়া যা কামাইবি তা নিয়া বাড়ি যাস, আমারে রিক্সার ভাড়া দেওন লাগবো না। তাই রিক্সা নিয়া বাইর হইছি আড়াইশ টাকা হইলেই বাড়ি চইলা যামু। মামা হেই খবর শোনোনের পর থাইকা রিক্সা চালাইতে পারতাছি না, হাত পা কাপতাছে। অনল সব শুনে দ্রুত আবার পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে পাচশ টাকার একটা নোট ওর দিকে দিয়ে বলে ধর এইটা নিয়ে এখনি বাড়ি চলে যা, রিক্সা গ্যারাজে জমা দিয়ে আর দেরী করিস না। ছেলেটি নির্বাক অনলের দিকে তাকিয়ে থাকে! ওর চোখের পানি অঝরে পড়তে থাকে, তাই দেখে অনল জিগেস করে, তুই তো আমার কাছে বাড়ি যাবার ভাড়াটাই চেয়ে নিতে পারতি? বিশ টাকা চাইলি ক্যান?
সে উত্তর দেয়; চার পাচ জনের কাছে বিশ টাকা করে বেশি নিয়ে দ্রুত আড়াইশ/ তিনশ টাকা কামাই হইলে বাড়ি চলে যাইতাম। রিক্সা না চালাইয়া বাপ মরনের কথা কইয়া টাকা চাইলে কেউ বিশ্বাস করত আবার কেউ করত না, তাহলে সময় নষ্ট হইত আব্বার মরা মুখ টা দেখন যাইত না। কথা না বাড়িয়ে অনল বলল, তুই চলে যা, সাবধানে যাস, নে টাকা টা নে। ছেলে টা অনলকে জড়িয়ে ধরে পায়ে সালাম করতে আসে।
- আরে কি করছিস, যা দেরী না করে রিক্সা গ্যারেজে জমা দিয়ে সোজা গাবতলী গিয়ে বাসে উঠে বাড়ী যাবি। ছেলেটি দ্রুত রিক্সা নিয়ে গ্যারেজের দিকে চলে যাচ্ছে, ওর চলে যাওয়া অনল অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে। অনল বাসায় ঢুকে তার রুমে এসে শুয়ে পড়ে। অনলের শুধ রিক্সাওয়ালা ছেলেটির কথা মনে পড়ছে। খুব অস্থির লাগছে তার। ভাবছে ও কি বাড়ি যাবার গাড়ি পেল! কখন সে তার বাবার মুখটা দেখতে পাবে! ভাবতে ভাবতেই কয়েক ঘন্টা তন্দ্রার মধ্যে কেটে যায় অনলের। এই শহরের কত ঘটনাই আমাদের চোখে পড়ে না, কত যন্ত্রনা নিয়ে মানুষ এ শহরে ঘুরে বেড়ায়। কত চোখের জল নীরবে ঝড়ে পড়ে। সেই বোরকাওয়ালা রমনীর কাছে অনল পুরুষ না! সেই চা দোকানীর কাছে কলা খেয়ে টাকা না দিয়ে চলে যাওয়া পুলিশের কলার দাম না দেবার কথা জানতে চেয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বোকা ছেলে হয়ে থাকা! ট্রাফিক পুলিশের অদৃশ্য বস্তু অনল চেনে না, যা দিয়ে নিষিদ্ধ রাস্তাও হালাল হয়ে যায়! ফুটওভার ব্রিজে শুয়ে ঘুমানো ছোট্ট শিশুর ঘুম অনল ভাঙাতে পারে না কিংবা বাবা মরে যাওয়ার সংবাদ শুনেও ভিক্ষা না করে বরং রিক্সা চালিয়ে টাকা রোজগার করে বাড়ি গিয়ে মরে যাওয়া বাবার মুখ দেখতে চাওয়া যুবকের যে বিবেক আছে, সে বিবেক টুকুও আজ কারো মাঝে জেগে উঠে না! অনল রোজই সুর্য উঠা দেখে, সে যেমন সকাল চায়, সে সকাল তার আসে না!

/সরকার পল্লব

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.