নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কে আমি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজি...!!

সরকার পল্লব

কবি বা লেখক হয়ে অর্থ কামানো আমার জন্য একদম নিষিদ্ধ!!!

সরকার পল্লব › বিস্তারিত পোস্টঃ

থার্টি ফাস্ট নাইট ও বাংলিশ তরুন তরুনীর গল্প

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:২০

-হ্যালো, কোথায় তুমি?
-এই তো নীলক্ষেতে।
-টিএসসি তে আসবা না?
-হুম আসবো তো, কেন কি হইছে?
-না, বছরের শুরুতেই যদি তোমায় না দেখি, তাইলে কেমন হয় বলো? আর হোস্টেলের বড় আপুরা একটু বিয়ারের ব্যবস্থা করছে, আমরাও.....
-হুম, তোমরাও খেয়ে নিউ ইয়ার সেলিব্রেট করবা তাই তো?
-প্লিজ, কিছু মনে কইরো না, এই টা তো জ্যাস্ট নিউ ইয়ারের জন্য, প্লিজ...
-ইটস ওকে বেবী।
-তুমি একা আসবা?
-আরে নাহ, বন্ধুরা সবাই থাকব
-ওকে, ফোন দিও, দেরী কইরো না।
-হুম, ঠিক সাড়ে এগারটায় টিএসসি তে পাবা।
-বাই
-হুম বাই।
ফোন রেখে নিলয় তার বন্ধু অনল কে বলে, কি রে কি ভাবছিস?
-কই কিছু না তো, তুই কথা বলছিলি তাই চুপ করে ছিলাম।
-দোস্ত জানিস ই তো, মাত্র রিলেশন টা হইছে, আর এইটাই ফাস্ট নিউ ইয়ার, তাই বুঝতেই পারছিস, বার টা এক মিনিটে দেখা না কইরা উইশ করলে কেমন হয়, তাই....
- আরে বোকা, ঠিক আছে, তুই যাবি এখন?
-হুম দোস্ত, ওদিকে সাজ্জাদ, টুটুলরা একটু ব্যবস্থা করছে, তাই সাথে থাকতে হবে, আজ থেকে তো সব বন্ধ হয়ে গেছে, তাই আগে থেকে কিছুই ব্যবস্থা করতে না পারার কারনেই আজকে এই অবস্থা হইছে। তুই তো জানিস দোস্ত আমি এই গুলা খাই না, শুধু থার্টি ফাস্ট নাইটের জন্যই... বলেই নিলয় থেমে যায়।
-ওকে দোস্ত, তুই যা।
নিলয় হ্যাপি নিউ ইয়ার বলে চলে যায়।
অনল তাকে হ্যাপি নিউ ইয়ার বলে না, কারণ নিলয় ও জানে যে অনল তাকে বলবে না, অনল ধর্মীয় ব্যাপারে যতটা অসাম্প্রদায়িক ঠিক বাঙালী সংস্কৃতির ব্যাপারে ততটাই সাম্প্রদায়িক। অনল বাঙালী কাউকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানায় না। ইংরেজী নিউ ইয়ারের শুভেচ্ছা সে শুধু ইংলিশদেরই জানায়। সে পহেলা জানুয়ারীতে তার ফেসবুকে শুধু মাত্র ইংলিশ ফ্রেন্ডদেরই শুভেচ্ছা জানায়, গতবার পহেলা জানুয়ারীতে নিলয় দেখেছিল যে, অনল তার ফেসবুকে লিখেছিল, "হ্যাপি ইংলিশ নিউ ইয়ার" ফর মাই অল ইংলিশ ফ্রেন্ডস"।
মদের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে গতকাল থেকে, আর এইটা বন্ধ থাকবে ইংরেজী নববর্ষের দিন থেকে পরের দিন রাত পর্যন্ত। মাতাল অবস্থায় থার্টি ফাস্ট নাইটে গাড়ি চালানো নিষেধ। হোটেল, মোটেল, রেস্তোরা গুলোও বন্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছে শহরের পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় থেকে। বাঙালী এখন মদ না খেলে ইংরেজি নববর্ষকে বরণ করতে পারে না। ভার্সিটির ভিতরে তরুন তরুনীরা নেচে গেয়ে মদ খেয়ে নতুন বছর বরণ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।
অনলের বন্ধু সুমন ফোন দিয়ে বলল, কিরে সব রেডি তো থার্টি ফাস্টের জন্য?
-সব রেডি মানে?
-আরে শালা তুই কি ছাগল নাকি? মানে........ আগে থেকে স্টোক করে রাখিস নি?
-এই গুলো দিয়ে কি করবি? আর থার্টি ফাস্টে এই গুলো খেতে হবে কেন?
-ধুরর ব্যাটা তুই তো ক্ষ্যাত রে, থার্টি ফাস্ট কি এই গুলা ছাড়া হয় নাকি!
-তার মানে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে থার্টি ফাস্ট পালন করতে হবে! এ কথা শুনেই ওপাশ থেকে
-আমি ফোন রাখলাম" বলেই ফোনটা কেটে গেল অনলের বন্ধু সুমনের।
অনল সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয়ে পাড়ার চা দোকানে গেল চা খেতে, মাঝে মাঝে সে চা খাওয়ার পরও বসে থাকে, আজো সে চা খেয়ে বসে আছে, পাশেই দুই যুবক বসে সিগারেট ফুকাতে ফুকাতে গল্প করছে, বয়স দেখে অনলের মনে হলো, ছেলে দুটো কলেজ পড়ুয়া। একজন অপরজনকে বলছে,
-মাম্মা সব রেডি করছি!
-কি কস মাম্মা, মেনু কি কি?
বলেই তার চোখ দুটো চকচক করে উঠল। রাতের বেলা অন্ধকারে কুকুরের চোখ যেমন জলজল করে জ্বলে ঠিক তেমন।
-সব আছে মাম্মা!
-ইশ রে আমি তো বাসা থেকে বের হতে পারুম না।
-তাইলে তোর থার্টি ফাস্ট করন লাগবো না।
-তাইলে কি আমার এই বছরটা ভাল যাইবো না রে দোস্ত?
-কি আর করার, তুই সকালে আসিস, যদি থাকে তো.....!
অনলের দিকে চোখ পড়তেই কথা থেমে দিল যুবক। অনল বুঝতে পেরে উঠে এল চা দোকান থেকে, সে রাস্তা দিয়ে হাটছে, রাস্তাটা বেশ ফাকা ফাকা লাগছে, অন্যদিনের তুলনায় আজ বেশ ফাকা রাস্তা। মাঝে মাঝে পুলিশের গাড়ি চলে যাওয়া দেখা যাচ্ছে, গুলশান, শোলাকিয়া হামলা পর পুলিশ বেশ সতর্ক, ইংরেজি নববর্ষে যেন কোন প্রকার নাশকতা জঙ্গিরা করতে না পারে সে জন্য সারা শহরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সাদা পোষাকেও দায়িত্ব পালন করছে।
হঠাৎ অনলের কানে ভেসে এল, মামা লাগবে নাকি? অনল তাকিয়ে দেখে মাঝ বয়সী হালকা গড়নের এক ব্যক্তি তাকে এই প্রশ্ন করেছে।
-জি, বুঝলাম না
-সিদ্ধি লাগবে মামা, এক পুরিয়া।
-জি না, লাগবে না।
-কি কন মামা, আজ তো যে খায় না হেয় খাইবো।
- ক্যান খাবে?
মুচকি হেসে উত্তর দেয় লোকটি
-জানেন না, আইজ রাইতে হোটেল গুলাতে নাচ গান হইব, বড়লোকেরা মদ খাইব, ইয়াং পোলা মাইয়ারা নেশা কইরা মাতাল হইয়া ডিজে পার্টি করে নতুন বছর শুরু করবো।
-অহ, আমার লাগবে না মামা, বলে অনল সামনে হাটতে থাকে।
সামনে কিছু পথচারীর ব্যাগ তল্লাসী করছে পুলিশ, একজন যুবকের ব্যাগ থেকে দুই বোতল মদ পেল। যুবক হেসে হেসে পুলিশকে বলছে, বস বুঝেনই তো আজ থার্টি ফাস্ট নাইট, তাই আর কি একটু... আমরা আসলে রেগুলার না, জাস্ট ইটস ফর থার্টি ফাস্ট, সো... পুলিশ সদস্য যুবককে নিয়ে সামনে গিয়ে অফিসারের কাছে তার মদের ব্যাপারে কিছু একটা বলছে, যুবক কিছুক্ষন তার কথা শুনে মুখ নিচু করে সোজা সামনে চলে গেল।
রাত ১২ টা! চারিদিকে আতশবাজি, পটকার শব্দে পুরো শহর নির্ঘুম, উঁচু স্বরে হিন্দি, ইংলিশ গান ভেসে আসছে, অনল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে ঝলঝলে শীতের আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, তার ঘর থেকে গান ভেসে আসছে " এসে হে বৈশাখ, এসো এসো" এই গানটা তার এখন খুব শুনতে ইচ্ছে করছিল, তাই মিউজিক প্লেয়ারটা অন করে বারান্দায় এসেছে, এদিকে হিন্দি, ইংলিশ, ডিজে গানের উচ্চ শব্দে সে ঘরের গানটা ঠিক মত শুনতে পাচ্ছে না, আবার ঘরে গিয়ে অনল ফুল ভলিউম দিয়ে বারান্দায় এসে চেয়ারে হেলান দিয়ে পৌষের আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, "বাংলা নববর্ষের সিরাজ-উদ-দ্দোউলারা, থার্টি ফাস্ট নাইটে লর্ড ক্লাইভ হয়ে যায়"!
/সরকার পল্লব
৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ঢাকা

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৭

বর্ষন হোমস বলেছেন: দুঃখ জনক হলেও সত্যি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.