নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সেভ দ্যা পেরেন্টস

আমি অনেক কথাই বলতে চাই তার মধ্যে অন্যতম হলো সেভ দ্যা পেরেন্টস। সেভ দ্যা চিলড্রেন এর মতো সেভ দ্যা পেরেন্টস এরও যে প্রয়োজনীয়তা আছে আমি তা 'ই আমার ব্লগের মাধ্যমে বুঝাতে চাই।

নজরুল ইসলাম বিডি

নজরুল ইসলাম বিডি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘুম ভেঙে মা দেখেন মেয়ের হাতে রক্তাক্ত ছুরি

১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:৩২

গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী হত্যার ভয়ংকর বর্ণনা দিয়েছেন মেয়ে ঐশী ও কাজের মেয়ে সুমী। তবে,হত্যার সময় ঐশীর বন্ধুর উপস্থিতি থাকা নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন গোয়েন্দারা।



আটকদের বক্তব্য ভিন্ন হওয়াতে এই বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এখনো হাতে ৫ দিন রয়েছে সেহেতু পুরো বিষয় পরিস্কার হওয়া যাবে বলে ধারণা করছেন তারা।



এদিকে, ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার পর আদালত থেকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে এনেই শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ।



জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে জড়িত গোয়েন্দা এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনার দিন বুধবার রাতে ঐশী প্রথমে মা স্বপ্না রহমানকে কফির সঙ্গে নেশা জাতীয় ট্যাবলেট খাওয়ায়।এরপর মা ঘুমিয়ে পড়েন।



রাত ১২টার দিকে বাবা মাহফুজুর রহমান বাসায় এসে দেখেন তার স্ত্রী ঘুমিয়ে আছেন।পরে তিনি আর না ডেকে নিজেই খাওয়া দাওয়া করেন।এরপর ঐশী তার বাবাকেও নেশা জাতীয় ট্যাবলেট মেশানো কফি এনে দেন।এ কফি খাওয়ার পরই ঘুমিয়ে পড়েন তিনি।



গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, রাত ২টার দিকে হিংস্র হয়ে ওঠে ঐশী। প্রথমে তার বাবাকে গলা ও পেটের মাঝামাঝি জায়গাতে ছুরি দিয়ে আঘাত করে।কোনো শব্দ না হওয়াতে ঐশী মনে করেন এতেই তার বাবা মারা গেছেন। তবে, তার বাবা কিছুক্ষণ গোঙরান।



গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, ঐশী যখন তার মা স্বপ্না রহমানকে ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করছিল তখন অচেনতন অবস্থা থেকে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে ওঠেন স্বপ্না। ঘুম ভেঙে মা দেখতে পান মেয়ের হাতে রক্তাক্ত ছুরি! ‘তুই আমার মেয়ে না’ বলতেই ঐশী আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মায়ের প্রতি।



এরপর শরীরের ১১টি স্থানে ছুরি দিয়ে আঘাত করলে ক্রমেই নিস্তেজ হওয়া মা ও মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন। পরে রান্নাঘর থেকে বটি দিয়ে মায়ের কোমর থেকে চাবি খুলে সেটি দিয়ে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নেয় ঐশী।

জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী ও সুমির কাছ থেকে এমন লোমহর্ষক খুনের বর্ণনা পেয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তবে, রিমান্ডে আনা ঐশীর অপর বন্ধু মিজানুর রহমান রনির উপস্থিতি থাকা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। সুমি ও ঐশীর ছোট ভাই ওহী বন্ধু রনির উপস্থিতির কথা বললেও ঐশী বলছে রনি ছিল না।



রনিও গোয়েন্দাদের কাছে বলেছে ঘটনার সময় সে ছিল না। তবে হত্যার সম্পর্কে আগে তাকে জানিয়েছিল ঐশী। এ সময় রনি ঐশীকে এ কাজ না করতে নিষেধ করেছিল।



গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, খুনের ঘটনার সঙ্গে ঐশীর আরও ৩ বন্ধু জড়িত রয়েছে। এদের মধ্যে একজনকে আটক করা হয়েছে। বাকি দু’জনকে খোঁজা হচ্ছে। তাদের আটক করতে পারলে আরও বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যাবে। এই দুই বন্ধু ঘটনার আগে ও পরে সবকিছু জানে।



এই বন্ধুরা ঐশীকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সাহায্য করার কথা ছিল। কিন্তু ঘটনার পর তারা ঐশীর নাম তারা বলে দিতে পারে এমনকি তাকে খুন করতে পারে এই ভয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে ঐশী। তবে, বাবা-মার ওপর ক্ষোভের কারণে এ হত্যাকাণ্ড সেটি পরিস্কার।



গৃহকর্মী সুমী গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ওহী তার মায়ের কাছে ঘুমিয়ে ছিল। ছুরি মারার সময় তার মায়ের চিৎকারে সে জেগে ওঠে। এ সময় আমি তাকে সেখান থেকে নিয়ে আসি। সে রক্তের কথা জিজ্ঞেস করলে তাকে আমি জানাই, বাবা তার মাকে মেরেছে। পরে তাকে একটি বাথরুমে আটকে রাখা হয়।



ঐশীর হাতে ছুরি দেখে তার মা ঐশীকে উদ্দেশ্য করে বলে, তুই আমার মেয়ে না। এরপর আর খালা আম্মার কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি। এর আগেই খালুর (ঐশীর বাবা) গলায় ছুরি মারা হয়। সে সময় খালু গোঙরাচ্ছিল।



গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরও বলেন, ঐশী ও সুমী হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে এমন তথ্য দিলেও এখনই তা পুরোপুরি বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাছাড়া হত্যাকাণ্ডের আগে-পরে ঐশী যাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছে- তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে যাচাই করা হবে।



এদিকে,পুলিশ কর্মকর্তার একমাত্র ছেলে ওহী এখনও জানে না সে এতিম। খুন করার পর একমাত্র বোন ঐশী তাকে জানিয়েছে, বাবা-মা ঝগড়া করেছে। মাকে মেরেছে বাবা। তাই মা হাসপাতালে। বাবাও সেখানে। সেই বিশ্বাসেই আছে ৮ বছর বয়সী ওহী। ওহী এখন তার এক স্বজনের কাছে রয়েছে। ডিবি পুলিশ তার কাছ থেকে সেই রাতের ঘটনা জানার চেষ্টা করছে।



ওহীর বাবার সহকর্মীরা পিতৃ আদরে, কখনও খেলার ছলে সেই ভয়ংকর রাতের কথা জানার চেষ্টা চালাচ্ছে। ওহী শুধু বলছে, বাসায় রক্তে ভরা। বাবা মাকে মেরেছে। বোনের সঙ্গে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বোন ঐশী তাকে বলেছিল, বাবা-মা আর না আসলে আমরা লন্ডন চলে যাব।



ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করা হয়েছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে ওই দম্পতির একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমান এ হত্যাকাণ্ডে পুরোপুরি জড়িত।



এছাড়া বাসার কাজের মেয়ে সুমী ও ঐশীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিজানুর রহমান রনির সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তিনজনকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।



তিনি বলেন, উচ্ছৃঙ্খলতায় ঐশীকে তার বাবা-মা শাসন করতে গেলে ঐশী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এর জের ধরেই হত্যাকাণ্ড ঘটে।



উল্লেখ, শুক্রবার রাজধানীর চামেলীবাগের চামেলী ম্যানশনের ষষ্ঠতলার বাসা থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে বুধবার রাতে তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার পর এ দম্পতির মেয়ে ঐশী রহমান ছোট ভাই ওহি রহমান এবং গৃহকর্মীকে নিয়ে পালিয়ে যায়।



শনিবার ঐশী পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করলে পুলিশ বাবা-মাকে হত্যার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার দেখায়।



ঐশীর অন্ধকার জীবন

বাবা-মা হত্যাকারী পুলিশ কর্মকর্তার একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমান গত ২ দুই বছর ধরে বেপরোয়া চলাফেরা শুরু করে। বার, ড্যান্সপার্টি, ডিজে পার্টি থেকে এমন কোনো কাজ ছিল না যার সঙ্গে তার সম্পৃক্তা নেই। ইয়াবা, মদসহ বিভিন্ন নেশায় আসক্ত থাকতো সে।



পড়াশোনার চাইতে ঐশীর কাছে এগুলোর প্রধান্যই ছিল বেশি। মূলত অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর ক্লাস এইট থেকে তার অন্ধকার জগতে পা দেওয়া শুরু হয়। স্কুলের বন্ধুদের হাত ধরেই এই পথে পা বাড়ায় সে।



এক সময় ডিজে পার্টির নিয়মিত ড্যান্সারে পরিণত হয়। ঐশীর সঙ্গে আটক মিজানুর রহমান রনি ছিল ঐশীর ড্যান্স পার্টনার। রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে তার ছিল তার অবাধ যাতায়াত।



গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, ঐশীর ঘনিষ্ট বন্ধু যারা তারা সবাই মাদকাসক্ত এবং ডিজে পার্টির ড্যান্সার। তারা ধারণা করছেন, মাদকাসক্ত বন্ধুদের সঙ্গে থেকেই ঐশী তার অন্ধকার জীবনে ডুবে ছিল। যার কারণে সে তার বাবা-মাকে খুন করতে দ্বিধাবোধ করেনি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.