নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সেভ দ্যা পেরেন্টস

আমি অনেক কথাই বলতে চাই তার মধ্যে অন্যতম হলো সেভ দ্যা পেরেন্টস। সেভ দ্যা চিলড্রেন এর মতো সেভ দ্যা পেরেন্টস এরও যে প্রয়োজনীয়তা আছে আমি তা 'ই আমার ব্লগের মাধ্যমে বুঝাতে চাই।

নজরুল ইসলাম বিডি

নজরুল ইসলাম বিডি › বিস্তারিত পোস্টঃ

নেশা ছারো সুন্দর জিবন উপভোগ কর

২২ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৫

সম্প্রতি বাংলানিউজে ‘ফতেহপুরে ইয়াবার ছোবল’ শিরোনামে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। ফতেহপুর একটি উদাহরণ মাত্র। সেই প্রতিবেদনে ‍জানিয়েছিলাম কিভাবে রাজধানীর চানঁখারপুল আর আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে ইয়াবা। আবার লঞ্চ, ট্রেন আর পর্যটন এলাকাগুলোতেও ইয়াবার হিংস্র থাবার কথা উঠে এসেছিল প্রতিবেদনে। সমাজের শিরা-উপশিরায় প্রবেশ করেছে এই মরণনেশা।



পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি পলিটিক্যাল শাখা) নিহত ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের মেয়ে ঐশী এখন দেশের সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস পাড়াতেও এখন মেয়ের হাতে বাবা-মায়ের নিহত হওয়ার ভয়ঙ্কর চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক তথ্য নিয়ে আলোচনা! একই সঙ্গে ইয়াবা নামের নেশাদ্রব্য যে তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে তা-ও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাচ্ছে।



পুলিশের দেওয়া বক্তব্যে দাবি করা হচ্ছে, মা-বাবাকে মেয়ে ঐশীই হত্যা করেছে। প্রাথমিকভাবে আমজনতাও সেটাই ধরে নিয়েছে। তবে এখনো আদালত থেকে শেষ কথা জানতে অপেক্ষা করতে হবে নিশ্চয়ই আরো অনেক দিন।



ইয়াবা নিয়েও চলছে জোর আলোচনা। যারা এ নেশা সর্ম্পকে জানতেন না, তাদের আর কিছু জানতে বাকি রইলো না। তবে গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেভাবে ইয়াবার নিরাপদ বিচরণ দেখেছি, তাতে মনে হয় না, তরুণ-কিশোরদের এ নেশা সর্ম্পকে জানা বাকি ছিল। এদের মধ্যে যারা ধূমপানসহ বিভিন্ন মাদকে আসক্ত ছিলো, তাদের একটি বড় অংশ ভালোভাবেই ঝাঁপ দিয়েছে এই মরণনেশায়।



মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমানের হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা ঘুরপাক খাচ্ছে মেয়ে ঐশীকে খুনি বিবেচনা করেই। কিন্তু সরল আর সত্যিকারের দৃষ্টিতে এ দম্পত্তির হত্যাকাণ্ডের জন্যে দায়ী ঐশীর পেছনে ইয়াবার হিংস্র থাবা। ইয়াবাই বয়সন্ধি কাটানো এ কিশোরীকে করে তুলেছে ভয়াল। হতাশায় ডুবিয়ে ঐশীকে দিয়ে লিখিয়েছে সুইসাইড নোট!



মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ মুনতাসীর মারুফ বাংলানিউজকে বলেছেন, ইয়াবার রয়েছে প্রচণ্ড উত্তেজক ক্ষমতা। এটি ক্ষুধা কমিয়ে দেয়, ঘুম কমিয়ে দেয়। এটি সেবনে বাড়তে থাকে ক্ষতিকর নানা উপসর্গও।

ইয়াবা সেবনকারীদের লক্ষণ হিসেবে তিনি বলেন, সেবনকারীদের শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়তে থাকে, গলা-মুখ শুকিয়ে আসতে থাকে, প্রচণ্ড ঘাম আর গরমের অসহ্য অনুভূতি হয়। নাড়ির গতি, রক্তচাপ, দেহের তাপমাত্রা আর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়। মস্তিষ্কের ভেতরকার ছোট রক্তনালীগুলো ক্ষয় হতে থাকে, এগুলো ছিঁড়ে অনেকের রক্তক্ষরণ শুরু হয়। স্মৃতিশক্তি কমে যায়, মানসিক নানা রোগের উপসর্গও দেখা দেয়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, অহেতুক রাগারাগি, ভাঙচুরের প্রবণতা বাড়ে।



তিনি বলেন, সব ক্ষেত্রে ব্যর্থতা বা পিছিয়ে পড়তে থাকায় আসক্ত ব্যক্তিরা বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়। কারও কারও মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা দেয়। দৃষ্টিবিভ্রম, শ্রুতিবিভ্রম আর অস্বাভাবিক সন্দেহ প্রভৃতি উপসর্গ থেকে একসময় সিজোফ্রেনিয়ার মতো জটিল মানসিক ব্যাধিও দেখা দেয়। বেশি পরিমাণে নেওয়া ইয়াবা শারীরবৃত্তীয় স্বাভাবিক কার্যক্রমের ব্যত্যয় ঘটিয়ে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে।



মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কথা অনুযায়ী, অতিমাত্রায় ইয়াবা সেবনের কারণে ঐশীর মেজাজ খিটমিটের হয়ে থাকতো। মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলোকে জমাট বাঁধিয়ে দিয়েছিল হয়তো। তার মধ্যে ধ্বংসের প্রবণতা তৈরি করে এই নেশার ট্যাবলেট। রক্তচাপ বৃদ্ধি ছাড়াও তাকে ডুবিয়েছে বিষন্নতায়। হতাশায় সুইসাইড নোটও লিখেছে সপ্তদশী এই কিশোরী। তাহলে পুলিশ দম্পতিকে খুন করতে মেয়ের বুদ্ধি লোপ করা এই মেথাঅ্যাম্ফিটামিন আর ক্যাফেইন মিশ্রিত নেশা উদ্রেককারী ট্যাবলেটই মূল নিয়ামক।



ইয়াবার মরণনেশাই বাবা-মাকে হত্যায় প্ররোচিত করেছে মেয়ে ঐশীকে, এমনটাও বলছেন মানসিক বিশেষজ্ঞরা।



তথ্য ফাইলে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে ইয়াবার আবির্ভাব ঘটে। পরবর্তী সময়ে ২০০০ সাল থেকে সীমান্তপথে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে চোরাচালান হয়ে তা দেশে অনুপ্রবেশ করতে থাকে। প্রথম দিকে উচ্চমূল্যের কারণে ইয়াবার প্রচলন সীমাবদ্ধ ছিল শুধু উচ্চবিত্ত ব্যক্তিদের মধ্যেই। পরে প্রচণ্ড উত্তেজক ও নেশাকারক এ ট্যাবলেটটির উপকরণ চোরাইপথে এনে দেশের ভেতরেই তা তৈরি করা শুরু হয়। দাম কিছুটা কমতে থাকে। ফলে উচ্চবিত্তের গণ্ডি ছাড়িয়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত তরুণ-তরুণীদের মধ্যেও ইয়াবার বিস্তার ঘটে।



২০০৬ সালের দিকে নিকিতা নামে এক নারী মাদক ব্যবসায়ীর গ্রেফতারের ঘটনা প্রথম বেশ আলোড়ন তোলে এই মরণনেশা। এরপর সেটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। ধীরে ধীরে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ-স্কুলেও এখন এটি ছড়িয়ে পড়েছে। এটা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়, নেশাদ্রব্যটির বিচরণ থামাতে ব্যর্থ হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।



নগরীর কোলাহলের ভিড়ে, ঐশীর মতো হাজারো তরুণকে গ্রাস করছে এই ব্যর্থতা। ইয়াবার ছোবলে শুধু নগর নয়, গ্রামের তরুণ সমাজও আজ বিপদের শেষ প্রান্তে।



ইয়াবাকে থামাতে পারলে ঐশী হয়তো এমন হতো না। তাকে হয়তো উচ্চ রক্তচাপ আর বিষন্নতায় ভুগে এ জঘণ্য অপরাধে জড়িয়ে পড়তে হতো না। বেশ কয়েক বছর ধরেইতো ইয়াবার এ মরণ থাবার কথা প্রচার হচ্ছিল গণমাধ্যমে। তাহলে কেন থামানো যায়নি ইয়াবাকে!



সূত্রমতে, দেশে ইয়াবা চালানের হোতা কক্সবাজারের এক সরকার দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি)। দাপটের সঙ্গেই রক্ত গোলাপের মতো দেশের কয়েকটি প্রজন্মকে ধ্বংস করছেন তিনি। যেমন, ইয়াবার ছোবলে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল থাইল্যান্ডের কয়েকটি তরুণ প্রজন্ম। তবে শহর আর মফস্বলের অলি-গলির ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ধরলেও সেই এমপির ইয়াবার ধ্বংসলীলা বন্ধ করতে পারেনি সরকার। হেসে-খেলে দেশের তরুণদের মৃত্যুমুখে টেনে এনে কোটি টাকা বানিয়ে নিয়েছেন তিনিসহ রাঘব বোয়ালেরা।



সরকার দলীয় এই এমপি এবং তার সিন্ডিকেটের ব্যবসার বলি হয়েছে ঐশী, বলি হচ্ছে আরো হাজারো তরুণ। আদরমাখা মুখগুলো শুকিয়ে আসছে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তাদের। যৌবনকে আত্মাহুতি দিয়ে জড়িয়ে পড়ছে বিকৃত যৌনাচারে। নেশার অর্থ জোগাড় করতে হতবিহ্বল হলে নিজের আপনজনকেও চিনছে না। সিজোফ্রেনিয়ায় ভুগতে ভুগতে, নিজের বাবা-মাকেও শত্রু ভাবতে শুরু করছে। হত্যার মতো অপরাধ সংঘটিত করছে। এসবই ইয়াবার হিংস্র থাবা।



এই ঘটনায় জমে উঠেছে সমাজের একান্নবর্তী পরিবারের আলোচনা, সুন্দর শৈশবের প্রয়োজনীয়তার কথা, পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে গিলে খেয়ে নিজেদের ভুলে যাওয়ার সমালোচনা, আরো অনেক অনেক কিছু। পুরনো গ্রাম্য প্রবাদ, ‘যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ।’



একবিংশ শতাব্দীর এ সময়ে তথ্য-প্রযুক্তিতে বলিয়ান আধুনিক সমাজ দৌড়াচ্ছে রেসের ঘোড়ার মতো, লাগামহীন হয়ে উঠেছে ব্যস্ততা। ঐশীর ঘটনায় একদল বলে উঠেছে ইতিহাসে নিজেদের ভালো থাকার কথা, সুন্দর ছবির মতো সমাজ ব্যবস্থার স্মৃতিচারণ। কিন্তু আমরা সকলেই জানি, সেই ইতিহাসও পূর্বের ইতিহাসকে অধিক উত্তম বলে জ্ঞান করেছে।



বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী ইয়াবা সেবনে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। পরিবার থেকে বুঝতে পেরে তাকে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হয়। বর্তমানে সুস্থ এই শিক্ষার্থী জানান, অন্য সব নেশা ছাড়ার চাইতে এটি ছাড়া বেশ কঠিন। কারণ, এসবে হেরোইনের গুঁড়া মিশিয়ে দেওয়া থাকে। আর একবার খেলে তা মাথায় বেশ বাজেভাবে কাজ করে। যখন নেশার প্রভাব কেটে যায় তখন আবারো সেবন করতে ইচ্ছে করে।



তিনি বলেন, প্রথমে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে খাওয়া শুরু করি। পরে ধীরে ধীরে নিজে কিনে খেতে শুরু করি। প্রথমে একটি দু’টি, পরে দিনে চার থেকে পাঁচটি সেবন করতাম। এর পেছনে দিনে গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা খরচ করে নিজের জীবনকে বিপন্ন করে দিয়েছি। এক সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা চুরি করতে শুরু করি, এমনকি মায়ের অলঙ্কার বিক্রি করে জোগাই ইয়াবার অর্থ। শিক্ষাজীবনে দীর্ঘ বিরতি হয়ে গেছে, অনুশোচনা প্রকাশ করে বলেন তিনি।



এই শিক্ষার্থীর অপরাধ, মায়ের গয়না চুরি আবার বাবা-মায়ের খুনে জড়িয়ে নিজেকে ঘৃণ্য অপরাধে লেপন করেছেন ঐশী। আর এ অপরাধে তাদের নিমজ্জিত করেছে ইয়াবার হিংস্র থাবা। যে হিংস্র থাবার নিরাপদ বিচরণ থামাতে পারেনি রাষ্ট্র।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.