নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানব সেবাই প্রকৃত ধর্ম

আসাদবেস্ট

মানুষের উপকার করার মধ্যেই প্রকৃত সার্থকতা নিহীত

আসাদবেস্ট › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্ধ্রপ্রদেশের দিনগুলি- ২য় পর্ব (তিরুপাতি বালাজী মন্দির দর্শন)

২৪ শে মে, ২০২০ দুপুর ২:৪৯

পরদিন ২৫ সেপ্টেম্বর ছিলো এই ভ্রমণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। আমরা ভোর ৫ টায় লক্ষ্মীপতি বালাজি মন্দিরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। আমাদের হোটেল থেকে মন্দির প্রায় দুই ঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত। মন্দিরটি অন্ধ্রপ্রদেশের তিরোপাতির তিরোমালা শহরে অবস্থিত। তিরুমালার বেঙ্কটেশ্বর মন্দির টিটিটি দেবস্তানাম (TTT Devasthanam) নামক একটি স্বাধীন ট্রাস্টের আওতায় পরিচালিত হয়। এটি একটি অছি পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত হয়। ১৯৫১ সালে এই অছির সদস্য সংখ্যা ছিল ৫। ২০১৫ সালে একটি আইন পাস করে এই সংখ্যা বাড়িয়ে ১৫ করা হয়েছে। চেন্নাই থেকে মন্দিরটি ২৯১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

এটি আয়ের দিক থেকে পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং ভ্রমণার্থীর দিক থেকে পৃথিবীর প্রথম ধর্মীয় তীর্থক্ষেত্র। এই তীর্থস্থানের আয় থেকে অন্ধ্রপ্রদেশের বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয়, সাহিত্যক এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে। মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা হলেন বিজয়নগরের রাজা শ্রীকৃষ্ণ। তামিল ভাষায় তিরুমালা কথার অর্থ হল পবিত্র পাহাড়।

২৫ কিমি পাহাড়ী রাস্তা পেরিয়ে মূল মন্দিরে পৌঁছতে হয়। শহর থেকে বেরিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের গাড়ি মন্দিরে প্রবেশের চেক-পয়েন্টে এসে পৌঁছে। এখানে প্রয়োজনীয় তল্লাশী সেরে ২৫ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে মূল মন্দিরে পৌঁছতে হবে আমাদের। এই তল্লাশী কোনো সামা-মাটা তল্লাশী নয়। সবাইকে গাড়ি থেকে নামতে হয়। সবার শরীর তল্লাশীর পাশাপাশি, প্রতিটি ব্যাগ এবং গাড়ি তন্ন করে চেক করা হয়। যেখানে দৈনিক ৫০ হাজারের বেশি দর্শণার্থী আসে, আবার পুরোটা এলাকা যেহেতু পাহাড় এবং বন-জঙ্গলে ভরা, তাই তল্লাশী সূচারু রুপে করা না হলে যে কোনো সময় বড় ধরনের যে কোনো নাশকতার ঝুঁকি থেকে যায়। তল্লাশী সম্পন্ন হতে প্রায় ২০ মিনিটের মতো লেগে। এই ফাকে আমরা নিজদের স্মৃতির ফ্রেমে বাধতে ক্লিক ক্লিকে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তল্লাশী শেষে শুরু হলো পাহাড়ী পথে আমাদের যাত্রা। যেতে যেত উপর থেকে পাখির চোখে তিরুমালা শহর, চারদিকের পাহাড় আর মনোমুগ্ধকর সব দৃশ্য আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক জগতে। এই পাহাড়ি পথের শোভা আপনার যাত্রাকে এতই মনোমুগ্ধকর করবে যে, পথের ক্লান্তি ভুলিয়ে দিতে তা যথেষ্ঠ।

এর ঠিক দুইমাস পরে বান্দরবানের নীলগিরিতে গিয়েছিলাম। বান্দরবানের নীলগীরি যাওয়ার পথের রাস্তার সৌন্দর্য তিরুমালার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। কিন্তু অত্যন্ত আফসোসের সাথে লক্ষ্য করেছিলাম, এতো সুন্দর দৃশ্য কিন্তু সেটাকে ফুটিয়ে তোলার চিন্তা যেন কারো মধ্যে নেই। রাস্তাঘাটের ভগ্নদশা যদি দূর করে আকর্ষণীয় এবং নিরাপদ করা যেত, তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম পর্যটন স্পট হিসেবে বিশ্বের ভ্রমণপিপাসুদের তালিকায় অন্যতম স্থান করে নিতো। কেননা, রাস্তার দুইপাশে রয়েছে পাহাড়, লেক, নদী, বনানীসহ নানাবিধ মনোহর দৃশ্য।

তিরুমালা শহরটির আয়তন প্রায় ২৭ কিমি। তিরুমালা পাহাড়টি শেষাচলম পর্বতমালার অংশবিশেষ। এই পাহাড় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৫৩ মিটার (২৮০০ ফুট) উঁচুতে অবস্থিত। এই পাহাড়ের সাতটি চূড়া রয়েছে। হিন্দুরা এই সাতটি চূড়াকে আদিশেষের সাতটি মাথা মনে করেন। বেঙ্কটেশ্বর মন্দির তথা বালাজী মন্দির সপ্তম চূড়া বেঙ্কটাদ্রিতে স্বামী পুষ্করিণীর পাশে অবস্থিত। এই জন্য এই মন্দিরটিকে ‘সপ্তগিরির মন্দির’ও বলা হয়।

বেঙ্কটেশ্বর মন্দিরটি দ্রাবিড় স্থাপত্যশৈলীর একটি নিদর্শন। অনুমান করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দ নাগাদ এই মন্দির নির্মিত হয়েছিল।

সংগৃহীত দানের হিসেব অনুসারে, তিরুপতি বেঙ্কটেশ্বর মন্দির বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী মন্দির। দৈনিক প্রায় ৫০,০০০ থেকে ১০০,০০০ (বছরে গড়ে ৩ থেকে ৪ কোটি) তীর্থযাত্রী এই মন্দির দর্শন করতে আসেন। ব্রহ্মোৎসবম্ প্রভৃতি বার্ষিক উৎসবগুলিতে এই মন্দিরে তীর্থযাত্রীর সংখ্যা ৫০০,০০০ ছাড়িয়ে যায়। এই কারণে বলা হয়, এই মন্দির বিশ্বের সেই ধর্মস্থান, যেখানে তীর্থযাত্রীর সমাগম সর্বাধিক সংখ্যায় হয়ে থাকে। টিটিডি ২০১৭-১৮ আর্থিক অর্থবছরের জন্য ২৮৫৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করে। তবে ২ কোটি ৬৮ লক্ষ ভক্তের সমাগম ঘটেছিলো মন্দিরে এবং তাদের দেয়া নগদ প্রণামীর পরিমাণ ছিলো ১০৩৮ কোটি টাকা। এছাড়া উৎসর্গ করা চুল বিক্রি করে আয় হয় ১০০ কোট টাকা। লাড্ডু বিক্রি থেকে আয় হয় ১৬৫ কোটি টাকা।
বাইরে থেকে মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশের জন্য তিনটি প্রবেশদ্বার রয়েছে। প্রথম প্রবেশদ্বারটির নাম ‘মহাদ্বারম্’ বা ‘পদিকাবলি’। দ্বিতীয় প্রবেশদ্বারটির নাম ‘বেন্দিবাকিলি’ বা রৌপ্যদ্বার। গর্ভগৃহে প্রবেশের দরজাটির নাম হল ‘বঙ্গারুবাকিলি’ বা স্বর্ণদ্বার।

আমরা জুতো খুলে মন্দিরে প্রবেশ পরিদর্শন করতে লাগলাম। মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রদীপের স্বল্প আলোয় দেবদর্শন করলাম। মনিমুক্তা, স্বর্ণালঙ্কার ও পুষ্পমালায় সজ্জিত ২ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট কষ্ঠিপাথরের চতুর্ভুজ দেবতা বালাজি দণ্ডায়মান, দুইহাতে শঙ্খ ও চক্র, অন্য হাত অভয়মুদ্রা ও আর এক হাত কোমরে ন্যস্ত, পাশে শ্রীদেবী ও ভূদেবী।

বালাজি ছাড়াও মন্দিরের অন্য আকর্ষণগুলো আমার ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। দান করা টাকা পয়সার গণনা ঘর, দেবতার পালকি, উৎসবে ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র, রাজা মহারাজাদের তৈলচিত্র, পেল্লায় সাইজের দাঁড়িপাল্লা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। মানত করলে, পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে সকলের মস্তক মুণ্ডনের প্রথা রয়েছে। আগেই বলেছি এই চুল বিক্রি থেকে প্রতি বছর প্রচুর মুদ্রা আয় হয়ে থাকে। এখানে ফুল ফলের ডালি দিয়ে পূজো দেওয়ার রীতি নেই, ভগবানের উদ্দেশে প্রণামী হিসাবে অর্থ দান করাই নিয়ম।

ভক্তদের মন্দিরের বাইরে একটি স্থানে কর্পূরের দীপ জ্বালিয়ে, নারকেল ফাটিয়ে অর্ঘ্য দিতে দেখলাম । বালাজি দর্শনের পর প্রত্যেক দর্শনার্থীকে লাড্ডু অথবা পোলাও প্রসাদ দেওয়া হয়। অতিরিক্ত লাড্ডু প্রসাদ নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে এক জন ৫০ টাকার বিনিময়ে সর্বাধিক দুটি ক্রয় করতে পারেন। এ ছাড়া দর্শন টিকিটে মাথাপিছু দুটি করে লাড্ডু ফ্রি পাওয়া যায়। বিশাল লাইন ধরে এই লাড্ডু সংগ্রহ করতে দেখলাম দর্শণার্থীদের। তবে আমাদের দলে যেহেতু সবাই মুসলমান ছিলাম, তাই এদিকে আমাদের কোনো আগ্রহ ছিলো না।

মন্দিরের অদূরে বিশাল চারটি ডাইনিং হলে প্রতিদিন দুই বেলা নিঃশুল্ক অন্নপ্রসাদের ব্যবস্থা রয়েছে (ভাত, সাম্বার, রেশম, সবজি, চাটনি, নলেন গুড়ের পায়েশ ও ঘোল। অমৃতসম এই প্রসাদ প্রতিদিন ৫০,০০০ মানুষ গ্রহণ করে। একসাথে এতো লোককে খাওয়ানোর সুন্দর ব্যবস্থাপনা, কলাপাতায় খাদ্য পরিবেশন আমাদের যারপরনাই মুগ্ধ করে।

এছাড়া মূল মন্দিরের আশেপাশে নানা দেব দেবীর মন্দির যেমন বেণুগোপাল স্বামী মন্দির, পাপবিনাশম তীর্থ, জপালী হনুমান মন্দির, শ্রী হরি পাদালু, মিউজিয়ামসহ বিভিন্ন স্থাপনা দর্শন করি। এছাড়া মন্দিরের অভ্যন্তরে রয়েছে বিশাল মার্কেট। এখানে সব রকমের সামগ্রী কেনা-বেচা হয়।
আস্তে আস্তে বেলা ফুরিয়ে আসে। এবার আমাদের ফেরার পালা। একরাশ ভালো লাগা ও মুগ্ধতা নিয়ে বালাজী মন্দিরকে পেছনে রেখে আমাদের গাড়ি চললো ফিরতি গন্তব্যে। সময় স্বল্পতায় আরো কিছু স্থাপনা না দেখার অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে আমাদের ফিরে আসতে হলো। কখনো সুযোগ হলে চমৎকার এই জায়গাটি ভ্রমণ করতে পারেন আপনিও।


(প্রথম পর্বের লিংক : Click This Link)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:১০

রাজীব নুর বলেছেন: বাহ বেশ।
অন্ধ্রপ্রদেশের লোকজন কেমন? শিক্ষিতের হার কেমন? দরিদ্র মানুষ বা বেকার কি রকম আছে?

২| ২৪ শে মে, ২০২০ রাত ৯:২১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুন্দর ছবি ও ভ্রমন কাহিনী

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.