নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।
গতকাল সন্ধ্যায় একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার এডিটর আর নিউজ এডিটরের সঙ্গে কথা বলছিলাম পত্রিকাটির অফিসে । এ প্রসঙ্গ ও প্রসঙ্গ নানা প্রসঙ্গে নানা ঢং এর কথা হচ্ছিল । দেশের বর্তমান, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যে যার মতো বলছিলাম শুনছিলাম । বেশে জমে উঠেছিল আড্ডা । হঠাত করে অভিজিতের প্রসঙ্গ চলে আসায় । নিউজ এডিটর সাহেব বললেন,সাখাওয়াত ভাই আপনি ও তো ব্লগার । আমি ব্লগার শুনে এডিটর সাহেব চমকে উঠে বললেন, তাই নাকি ? আগে তো বলেননি । নিউজ এডিটর সাহেব বললেন, স্যার জানেন না । সাখাওয়াত ভাই তো দারুণ লেখে । আমি প্রশংসায় সবে মাত্র লাল, নীল বেগুনি, আকার ধারণ করছিলাম। কিন্তু এডিটর সাহেব সাদা কালো গলায় গলা খাঁকারি দিলেন । বললেন, তাই নাকি । আপনিও কি নাস্তিক নাকি ? আমাকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তিনি আবার বললেন, এই পরিচয় কাউকে দিয়েন না ।
কেন স্যার ? আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম । চোখ মুখ কুচকে গেছে অপমান বোধ করতে শুরু করেছি ।
তিনি বললেন, ব্লগার শব্দটি বাংলাদেশে এখন একটি গালি এবং অতন্কজনক শব্দ । দেখেন না চারিদিকে খুন-জখম,চাঁদাবাজি, মারামারি কাটাকাটির সঙ্গে কি ভাবে এ শব্দটি জড়িয়ে গেছে । একদল আস্তিক, অন্য দল নাস্তিক । আবার মাঝখানে একদল চান্দা-মান্ধা তুলে একাকার ।
আমি বুঝতে পারছিলাম, উনি চাঁদাবাজ বলতে কাদেরকে বোঝাতে চাচ্ছিলেন তবুও একটু নিশ্চিত হবার জন্য বললাম, কারা চাঁদা তুলছে ?
আরে ভাই আপনি তো দেখছি কোন খবরই রাখেন না, শাহবাগিদের কথা কি ভুলে গেলেন । ঐ যে ইমরান না কি যেন নাম ।
স্যার, ব্লগাররা চাঁদা বাজি করে না । অন্তত আমার জানা মতে না । আর যে ইমরানের কথা বলছেন ও ব্লগার না আমি রাগ চেপে রেখে বললাম ।
তাহলে উনি কে ? ব্লগার না হয়ে ব্লগারদের নেতা সাজল কি ভাবে ?
ইমরান ব্লগারদের নেতা না । ওনার পেছনে কোন ব্লগার নেই । যারা আছে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের । যে ইমরানের নাম বললেন, ওর জন্যই আজ আপনার কাছে ব্লগার শব্দটি একটি গালি । ব্লগার শব্দটি একটি আতঙ্ক জনক শব্দ ।
আমি এডিটর সাহেবের কথা একেবারে ফেলে দিতে পারলাম না । ফিরে গেলাম শাহবাগের আন্দোলনের শুরুতে যখন কাদের মোল্লার ফাঁসি না হয়ে যাবজ্জীবন হওয়ার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছিলাম, একটা মিছিলে শরিক ছিলাম যে মিছিলটি, শাহবাগ হয়ে যাদুঘরের আশপাশ দিয়ে গুরছিল । মিছিলের লোকসংখ্যা ছিল হাতে গোনার মতো । আমরা মিছিল করছিলাম আর রিকশা ওয়ালারা মজা দেখছিল । দাঁত কেলিয়ে হাসছিল । এভাবে মিছিল ঠিক না জমাতে কেউ একজন ছুটল মাইক ভাড়া করে আনতে । আমারও বেশ খিদা পেয়েছিল । চলে যাবো, চলে যাবো করেও যেতে পারছিলাম না ।
টিএসসি থেকে একদল ছেলে-মেয়ে এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পরে মিছিল জমে উঠল । সবাই বসে পরলাম । জন্ম হল শাহবাগের আন্দোলনে । মাইক আসার পরে দেখি অন্য চিএ । ধীরে ধীরে মিডিয়া আসতে লাগল । ইমরান নামের এক শয়তান মাথা চাড়া দিয়ে উঠল । মাইক এর মাউথ আর কারো হাতে দিচ্ছিল না । একে ওকে বতৃত্তা দিতে দিলেও ইমরান হয়ে উঠল উপস্থাপক । মাইকের দখল রাখছিল নিজের হাতে ।
১০টার পর বাসায় চলে গেলাম । কিছু টিভিতে দেখলাম সমাবেশ সারারাত চলেছে । পরের দিন ১২টায় এসে দেখি ও রে বাস ! এতো দেখি এলাহিকাণ্ড । লোকে লোকারণ্য । ইমরানের হাতে তখনও সেই মাইক । ব্যাটা মাইক ছাড়ে নাই । এ নিয়ে বেশে কয়েকজনের সঙ্গে ঝগড়াও হয়েছে । কিন্তু মাইক ইমরানের হাতে । আমাকে দেখে ইমরান বলল, আপনি ব্লগারদের দিকটা দেখেন । একটু একটু করে জমে উঠল শাহবাগ । মিডিয়ায় মিডিয়ায় জেগে উঠল শাহবাগ । সারা বিশ্বে জেগে উঠল শাহবাগ ।
কত শত অপরিচিত মুখের মাঝে, "প্রথম আলো ব্লগ","বিডি নিউজ ব্লগ","সময় ব্লগের অনেক ব্লগারদের দেখলাম । সেই সঙ্গে দেখলাম ছাত্রলীগের ছেলেদের । তারা সমাবেশের চারদিকে বেশ জায়গা করে বসতে শুরু করছে । এ নিয়ে বাসায় ফিরে আমি ব্লগে লিখলাম, "শাহবাগের আন্দোলন ভবিষ্যত নিয়ে আমি আশঙ্কা বোধ করছি ।" আমার ধারণাই ঠিক হল, তিন দিনের ভেতরই পুরো আন্দোলনের কেন্দ্রে চলে এলো ছাত্রলীগ । ইমরান যেহেতু মাইক ছাড়ছিল না তাই ওর সঙ্গে আপোষ করেই ছাত্রলীগ জমে বসল । আন্দোলন এগিয়ে চলল । ব্লগে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ইমরানের কোন ব্লগ খুঁজে পেলাম না । আসলে এই ব্যাটা নিজেরে ব্লগার হিসাবে পরিচয় দিলেও ব্লগে লেখা তো দূরে থাক ব্লগ জিনিসটা কি এটাও জানতো না ।
আমি কথাটি সবার কাছে তুলে ধরলাম, ব্যাপারটা ইমরানের পছন্দ হল না । দেখল ওর মিথ্যা ধরা পরে গেছে , ব্যাটা তখন ছাত্রলীগের ছেলেদের জোরে আন্দোলনের নাম পরিবর্তন করে ফেলল । প্রথমে blogger and online activist নামে আন্দোলন শুরু হলেও পরে ব্লগারদের নামটি উঠিয়ে দেওয়া হল ।
রাজীবের হত্যাকাণ্ডের পর আমি পুরোপুরি সরে গেলাম । একজন নাস্তিকের যখন বিশাল করে জানাজা দেওয়া হল । রাজীবের জানাজার দিনই শাহবাগের আন্দোলনেরও জানাজা পড়া হয়ে গেল। ধীরে ধীরে মানুষের মুখে মুখে ফিরত লাগল, ব্লগার মানেই নাস্তিক । আল্লাহ্-খোদা মানে না । ইমরানের চাঁদাবাজি ধরা পরার পর ব্লগাররা হয়ে গেলে চাঁদাবাজ । গতকাল ও আমাকে সেই গালি শুনতে হল । ইমরান পরে ফেসবুকে একটা একাউন্ট খুলে খুব কপি পেস্ট করে যাচ্ছিল । সরকারী খানা , ফ্রি হোটেল আহ কি ,মাস্ত দিন ছিল ।
পরিশেষ : বাংলাদেশের প্রকৃত ব্লগাররা এখনও লিখে চলেছে । তারা অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করে না ।তারা অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে না । তারা চাঁদা বাজি করে না কেননা তারা ব্লগার । ব্লগার কোন গালি নয় । ব্লগার একটি শক্তির নাম । একটি অহংকারের নাম । ব্লগার মানেই নাস্তিক নয় ।
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৭
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: আপনার, আমার কষ্ট এক । প্রকৃত ব্লগাররা আজ অসহায় হয়ে পরেছে ।
২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:১৭
মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: সহমত!
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:৫৭
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাল থাকুন ।
৩| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
কিছু না জেনেও অনেক লেখা যায়, দেখছি।
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:৫৫
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ধন্যবাদ চাদগাজী । কি করবো বলেন, আপনারা জানার পরেও লিখবেন তাই আমাদের মতো অজানাদের লিখতে হয় ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:১৩
রুপম হাছান বলেছেন: বাবন ভাই, চমৎকার লিখেছেন। পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। আপনার লিখাটি পড়ে আমার ও কথাটি পুনরায় মনে পড়লো। গতকালকে আমার ভাতিজা বলে, চাচা আপনি কি ব্লগ-এ লিখেন। আমি বললাম হ্যাঁ কিন্তু কেনো জিজ্ঞেস করলা!? উত্তরে বললো, এ কথা কাউকে বলার দরকার নাই! আমি আশ্চর্য হলাম কিন্তু আর কোনো কারণ জানতে চাইলাম না, সেখানে আরো দুজন লোক ছিল।
সন্ধ্যায় খালার বাসায় গেলাম, সেখানে খালু-খালাসহ আমার আরো দুই বন্ধু আমাকে ঠিক একই কথা বললো, বন্ধ করো আপাততো। পরিস্থিতি ঠিক হলেই তবেই আবার লিখো! কেমন যেনো লাগলো কথাগুলো। ব্লগে লিখলে কি সবাই খারাপ কথা লিখে, তাই মনে করে সবাই!? নাকি অন্যায়ের বিরোধিতা করা পাপ!
ধন্যবাদ বাবন ভাই, আপনার লিখাটির জন্য। সবার প্রতি আমিও উদ্বার্ত আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা (আমিসহ) সকল ব্লগাররা (অনলাইন এক্টিভিস্টিরা) সঠিক ও গ্রহণযোগ্য লিখা উপহার দিয়ে দেশ ও জাতির মননশীল উন্নয়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন।