নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।
নয়
ছাদের দাঁড়িয়ে আছি ।
ভেজা মেঘের দল সার বেঁধে মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে পূব থেকে পশ্চিমে । যতদূর চোখ যায় দিগন্ত জোড়া সবুজ ধান ক্ষেতে মাতাল হাওয়া গড়াগড়ি খাচ্ছে আপন মনে । ঝাঁকে ঝাঁকে অচেনা পাখির দল বহু উপর দিয়ে মেঘের শরীর ছুঁয়ে নি:শব্দে উড়ে যাচ্ছে অজানায় । মুগ্ধ হয়ে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করছি আর ভাবছি, যেনো কোন যাদুর কাঠির ছোঁয়ায় হুট করে উপস্থিত হয়েছি এমন একটি জায়গায়। এ যেন স্বর্গেরই আরেক রূপ। কখনো দেখেনি এমন আর। মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না । দূরে কোথাও খুব মৃদু ল'য়ে মাদল বাজছে । কান খাড়া করে শুনতে হয় সে শব্দ । সেই তালে তালে মৃদু মন্দ সমীরণে দেহ মন জুড়িয়ে যাচ্ছে । পার্থিব জীবনের দু:খ কষ্ট, ক্লেশ, জরাজীর্ণতা দূর হয়ে যায় তাতে ।
সময়-ক্ষণ ঠাহর করতে পারছি না । সব কিছুর ই শেষ আছে । এক সময় অতি সুস্বাদু খাবারও বিস্বাদ লাগে । ধীরে ধীরে কোন কারণ ছাড়াই বিষণ্ণতায় ছেয়ে যেতে লাগলো মন । মনে হতে লাগলো অনন্ত কাল ধরে প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পরেছি । শত চেষ্টা করে ও বুঝতে পারছি না কোথায় আছি, কেন আছি । কোন কিছুই যেনো নিয়ন্ত্রণে নেই আমার । যা দেখানো হচ্ছে, তাই দেখছি, যা করানো হচ্ছে তাই করছি । যেনো কলের পুতুল,অদৃশ্য কারো ইশারায় নাচছি । হালকা অথচ তীব্র শীতল হাওয়ায় শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো ।
ঠিক সে সময় হঠাৎ পেছনে দুপ করে কিছু একটা পড়ার শব্দে চমক উঠে পেছনে তাকাতেই দেখতে পেলাম, শ্যাওলা পরা সিমেন্টের ছাদে কবুতর সদৃশ একটি অচেনা পাখি ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে নিস্তব্ধ হয়ে গেলো । তারপর আরেকটা একটা পাখি এসে পড়লো ঠিক তার পাশে। সেটিও আগের পাখিটির মতো ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে থেমে গেলো একসময়। মুহূর্তে অসংখ্য মৃত পাখিতে ভরে উঠলো পুরো ছাদ । মাথার উপর তাকিয়ে দেখি আকাশ থেকে চারিদিকে বৃষ্টির ফোটার মতো নেমে আসছে অসংখ্য মৃত পাখির প্রাণহীন নিথর দেহ। আকাশের নীল রং বিবর্ণ হতে হতে মুহূর্তে রক্ত বর্ণ ধারণ করে খয়েরী হয়ে গেলো । দূরের দিগন্ত শেষে মনে হলো আগুন লেগে গেছে । শো শো শব্দ করতে করতে চারিদিক থেকে এগিয়ে আসছে আগুনের লেলিহান স্রোত । সবুজ ধান ক্ষেতগুলো চোখের পলকে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে ।
আগুনের স্রোত যতোই কাছে আসছে ততোই ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি । লাগামহীন আগুনের স্ফুলিঙ্গ এই বুঝি গ্রাস করে নিলো আমায়। এ স্রোত থামানো না গেলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে সব । তীব্র আতংকে ছুটে পালাতে চাইলাম,কিন্তু না, এক চুল ও নড়তে পারলাম না। দু'পা আটকে আছে । ছাদের শক্ত কংক্রিটের সাথে। ছাদের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শ্যাওলা দড়ির মতো দু পায়ে জড়িয়ে রয়েছে । যতোই ছাড়াতে চেষ্টা করছি ততোই শক্ত হচ্ছে সে বাঁধন । চিৎকার করে হাত পা ছুড়তে লাগলাম ।
হঠাৎ ছাদের বাঁপাশে তাকাতেই দেখতে গেলাম অসংখ্য সাপ একে বেকে এগিয়ে আসছে আমার দিকে । আতংকে চিৎকার করতে করতে হাত পা ছুড়তে লাগলাম । প্রচণ্ড ভয়ে মনে হলো হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যাবো । বাচার শেষ আকুতি নিয়ে চারপাশে তাকাতে লাগলাম ।
ঠিক সে সময় দেখতে পেলাম ছাদের শেষ প্রান্তে দু'জন লোক দাড়িয়ে আছে। একজন'কে দেখা মাত্রই চিনতে পারলাম । এফডিসির সামনে দেখা সেই লোকটা । পলকহীন দৃষ্টিতে লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে । অন্য লোকটি আমার দিকে পিঠ ফিরিয়ে ছাদের বাহিরে তাকিয়ে থাকায় তাকে চিনতে পারলাম না।
ঠিক সে সময় ঘুম ভেঙ্গে গেল । হাপরের মতো লাফাচ্ছে বুক। মনে হচ্ছে, বুকের ভেতর থেকে হৃদপিণ্ডটা মুখ দিয়ে বের হয়ে যাবে। ঘামে ভিজে জবজব করছে পুরো শরীর । তীব্র পানির তেষ্টায় ফেটে যাচ্ছে বুকের ছাতি। ঢোক গিলতে পারছি না । গলার ভেতরটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে ।
ধীরে ধীরে সব পরিষ্কার হয়ে আসতে লাগলো। বুঝতে পারলাম এতক্ষণ যা ঘটেছে সব স্বপ্ন । কিছুই বাস্তব নয়। দেহে যেন প্রাণ ফিরে এলো । বেঁচে থাকার মধ্যে যে এতো আনন্দ, তা এই মাত্র ঘুম ভেঙ্গে দু:স্বপ্ন থেকে মুক্তি পাওয়ায় জন্য উপলব্ধি করতে পারলাম ।
হাত পায়ে প্রচণ্ড জ্বলুনি হচ্ছে । বিছানা থেকে নামতে গিয়ে মেঝের দিকে চোখ যেতেই চমকে উঠলাম । মা গো, মুখ দিয়ে অস্ফুট শব্দ বের হয়ে এলো। ঘরের ঠিক মাঝখানে বিছানা বরাবর কুচকুচে কালো একটি সাপ আমার দিকে তাকিয়ে ফণা তুলে আছে । লাঙ্গলের ফলার মতো চিরে দুখণ্ড হয়ে যাওয়া জিহ্বা মুখ থেকে বের হয়ে গুল্ম লতার মতো লকলক করেছে। ফোঁস ফোঁস শব্দ করতে করতে সেটা ছোবল মারার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে । সঙ্গে সঙ্গে মা গো বলে চিৎকার করে বিছানার উপর দাড়িয়ে গেলাম ।
আমাকে দাড়াতে দেখে সাপটা ফোঁস ফোঁস করে পরপর দু'বার বিছানার ছোবল মারল তারপর কালো কুচকুচে জিহ্বা'টা বের করতে করতে বিছানার চাদর বেয়ে উঠে আসতে লাগলো । ভয়ে আতংকে মূর্তির মতো স্থির হয়ে গেলাম । নড়াচড়া করার শক্তি যেনও লোপ পেয়েছে ।
আমাকে নড়াচড়া করতে না দেখে যেন অস্থির হয়ে উঠে দ্রুত এগিয়ে এসে পায়ে ছোবল মারল । চোখের পলকে আমি পা সরিয়ে ফেলতে আবারো ছোবল পরল বিছানায় । ঠিক সেই সময় ডান পাটা দিয়ে আমি সাপের মাথায় প্রচণ্ড এক আঘাত করলাম , তারপর আরো একটা ।
বুঝতে পারলাম পায়ের তলায় সাপের নরম মাথাটা থেঁতলে গেলো । মৃত্যু যন্ত্রণায় সাপটার শরীর বিছানার উপর দড়ির মতো ডানে-বামে পাক খাচ্ছে । আমি থামলাম না হিস্টিরিয়া রোগীর মতো চিৎকার করতে করতে আঘাতের পর আঘাত করে চললাম । রক্তে ভেসে যাচ্ছে বিছানার চাদর ।
হঠাৎ মনে হলো দরজায় কেউ খুব জোরে জোরে আঘাত করছে । দরজায় শব্দ হতে মনে হলো চারপাশের সব কিছু স্থির হয়ে এলো । বিছানা থেকে নেমে ছুটে গেলাম দরজার কাছে ।
কাঁধে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে মোস্তফা মল্লিক সাহেব দাড়িয়ে আছেন দরজার কাছে । আমি দরজা খুলে দিতেই উনি তড়িঘড়ি করে ঘরে প্রবেশ করে অত্যন্ত রাগান্বিত কণ্ঠে বলতে লাগলেন, তুমি দরজা বন্ধ করেছো কেন ? কেন বন্ধ করেছো । আমি কিছু বলতে চেয়েও পারলাম না ।
সব কিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে । মল্লিক সাহেব ঘরের ভেতরের অবস্থা দেখে একটু থমকে দাঁড়ালেন । তারপর এগিয়ে গেলেন বিছানার কাছে , বিছানায় তখনো মৃত সামটার শরীর একটু একটু নড়ছে । মল্লিক সাহেব আমার কাছে এগিয়ে হাত ধরে নিয়ে চেয়ারে বসালেন । তারপর সঙ্গে থাকা ঝুলাটা থেকে একটা বোতল বের করে মুখটা খুলে আমাকে বললেন, খেয়ে নাও । পানিটা মুখে দেবার সাথে সাথে আমার ইতি'র কথা মনে হলো । আমি চারদিকে তাকিয়ে ওকে খুঁজতে লাগলাম ।
কিন্তু কোথায় ইতি । কেউ নেই আশেপাশে । একটু আগে দেখা মল্লিক সাহেবও নেই । বিছানার উপর তখনো পরে আছে মৃত সাপের দেহটা ।
তৎক্ষণাৎ মনে পড়ে গেলো, "আরে, আমি তো ইতির সাথে পুরানো ঢাকায় গিয়েছিলাম,তাহলে মেসে আসলাম কখন ?" কিছু মনে করতে পারছি। তাহলে ইতি'র সাথে পুরনো ঢাকায় যাবার বিষয়টা ও স্রেফ স্বপ্ন? ইতি কোথায় ? ওর কোন ক্ষতি হয়নি তো? ইতি'র ক্ষতির আশংকায় অস্থির হয়ে উঠলাম। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো । আত্মাটা ধকধক করে কাপছে । মনে হচ্ছে মেয়েটিকে না দেখলে আমি মরে যাবো।
পোষা জীব জন্তুর মতো, মানুষও বড্ড ভালবাসার কাঙ্গাল। যেখানেই একটু স্নেহ,একটু ভালবাসা পায় সেখানেই বারংবার ফিরে আসে । এই প্রথম খুব গভীর ভাবে অনুভব করলাম,"আমি, ইতি নামের মেয়েটির প্রেমে পরেছি ।"
চলবে ............
২২ শে জুন, ২০২২ রাত ১২:২৫
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: বন্যাকবলিত সিলেট বাসীর জন্য রইলো সহমর্মিতা। ইনশাআল্লাহ তারা এই বিপদ কাটিয়ে উঠবে। গল্প পরে ও পড়তে পারবেন। গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
২| ০২ রা জুলাই, ২০২২ রাত ৮:০৬
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: এই পর্বটা কিছুটা খাপছাড়া মনে হলো।
৩| ২৬ শে জুলাই, ২০২২ রাত ১:১৭
অপু তানভীর বলেছেন: এই পর্বটা সত্যিই কেমন একটু খাপছাড়া মনে হল । যাক পরের পর্বে গিয়ে দেখি কি লেখা আছে !
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে জুন, ২০২২ রাত ১২:১৩
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার লেখাটা মন দিয়ে পড়তে পারলাম না।
সিলেটের বন্যার ছবি গুলো দেখে মন ভীষন খারাপ হয়েছে।