নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।
দশ
ঈদের ছুটি চলছে ।
ঢাকা শহর প্রায় ফাকা হয়ে গেছে।পঙ্গপালের মতো মানুষ দল বেঁধে শহরে আসে। নাক,মুখ বুঝে কাজ করে। ঈদ,পার্বণে একটুখানি সুখের আশায় গ্রামে ফিরে যায়। ঢাকা শহরের মতো মধুমিতা মেসও এখন পুরোপুরি খালি। আমি ছাড়া আর কেউ নেই । তাতে, অবশ্য আমার খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না। সত্যি বলতে, কোনটা সুবিধা আর কোনটা যে অসুবিধা সেটাই ধরতে পারছি না। এ ক'দিনে আমার অবস্থা হয়েছে পাগলের মতো। দিনের বেশিটা সময় ক্যামন একটা ঘোরের মধ্যে থাকি। চোখের সামনে নানান কিসিমের অদ্ভুত সব জিনিস পত্র, জন্তু- জানোয়ার ঘোরাফেরা করে। কোথায় আছি,কিভাবে আছি, কিছুই বুঝতে পারি না।
রাস্তায় বের হলে আকাশের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি চোখের সামনে পুরো আকাশটা শূন্য হয়ে যায় । স্বাভাবিক আকাশ দেখতে পাই না । আকাশের রং হুটহাট বদলে ক্যামন ভিন্ন ধরনের হয়ে যায় । বাটির মধ্যে অনেক সময় নিয়ে ডিম ফেটালে কুসুর আর জলিয় অংশ মিলেমিশে যে ধরনের ঘোলাটে রং ধারণ করে অনেকটা ঠিক সে রকম । খুব ঘোলাটে নয় আবার খুব বেশি পরিষ্কারও নয় । ধূমকেতুর পুছের মতো দীর্ঘ লম্বা,লম্বা রেখা চলে যায় আকাশের এ মাথা থেকে অন্য মাথা পর্যন্ত । অসংখ্য ছোট,বড় জীবন্ত বুদবুদ তাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভেসে বেড়ায় । সে এক অদ্ভুত দৃশ্য বলে বর্ণণা করা যাবে না ।
এখন আর বুঝতে বাকি নেই যে, আমার মস্তিষ্কে কিছু একটা সমস্যা হচ্ছে । হয়তো পাগল হবার পূর্ব লক্ষণ এটা। ইংরেজিতে একে, ভিজুয়াল হ্যালোসিনেশন বলা হয়ে। এসব ক্ষেত্রে রোগী কোন কারণ ছাড়াই এলোমেলো অলিক জিনিসপত্র চোখের সামনে ভেসে উঠতে দেখে । আমিও তাই দেখছি। পুরোপুরি পাগল হবার পূর্বে বিষয়টা নিয়ে কারো সাথে আলোচনা করা দরকার । কিন্তু কার সাথে আলোচনা করবো ? এক ইতি ছাড়া আর কারো সাথে আমার তেমন আলাপ নেই । ইতির সাথে দেখা নেই আজ প্রায় পোনেরো দিন হবে । কোন কারণ ছাড়াই মেয়েটা আসছে না । কেন আসছে না, বুঝতে পারছি না । যতদূর মনে পরে, সেদিন ওর সাথে পুরানো ঢাকায় মল্লিক সাহেবের বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। কিন্তু এর পরের ঘটনাগুলো আর কিছুতেই মনে করতে পারছি না । বারবার মনে হচ্ছে, মনে না পরার সময়গুলোতে এমন কিছু ঘটেছে যে কারণে ইতি আর আসছে না ।
গত এক সপ্তাহ যাবত ইতি'র খোজে পুরো ঢাকা শহর চোষে বেড়াচ্ছি । এরই মধ্যে পরপর কয়েক দিন পুরানো ঢাকায় এসেছি মল্লিক সাহেবের খোজে কিন্তু তার বাসাটাও খুঁজে বের করতে পারিনি ।
ইতি যে কলেজে পড়ে একদিন সেখানে গিয়েও উপস্থিত হলাম কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না৷ ইতি কিংবা মল্লিক সাহেব কাউকেই খুঁজে পেলাম না । সাইকোলজি ডিপাটমেন্টে খোজ নিয়ে জানতে পারলাম, সেখানে মল্লিক সাহেব নামে কোন শিক্ষক নেই । খুঁজে না পাওয়ার অবশ্য অন্য একটি কারণ আছে, কারণটা হচ্ছে,দু'জনের কারোই পুরো নাম আমার জানা নেই বা মনে করতে পারছি না । সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে । মনে হচ্ছে,কেউ জোর করে সব ভুলিয়ে দিচ্ছে।
সকাল আনুমানিক ন'টা ।
পুরানো ঢাকার কাঠের পুলের পাশে মোবারক মিয়ার চায়ের দোকানে বসে গরম গরম বাকরখানি আর চা খেতে খেতে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা লোকজন দেখছি।
পাঁচ থেকে ছ'ফুট দোকানের একপাশে দু'জন বসে আটা ময়দায় মাখামাখি হয়ে বাকরখানি বানাচ্ছে । অন্য পাশে দুটো টেবিলে চারজন বসায় জায়গা নিয়ে চায়ের দোকান । লুঙ্গি,গেঞ্জি পড়া মোবারক মিয়া ঘামতে ঘামতে কন্ডেসমিল্কের কোটায় চা বানাতে বানাতে গ্রাহকদের দিচ্ছে। ফাকে ফাকে বাকরখানি ও চা বলেন বিক্রির টাকা রাখছে যেখানে বসে আছে, তার নিচে বিছানে চটের বস্তার ভেতরে । ছোটখাটো দোকানটায় বেশ ভিড় লেগে আছে । বেশির ভাগ লোকই চা,বাকরখানি কিনে নিয়ে যাচ্ছে । ১০ থেকে ১২ বছরের একটা ছেলে ফুটফরমাশ খাটছে। কখনো গরম গরম বাকরখানি ডোঙ্গায় ভরে দিচ্ছে । কেউ খেয়ে উঠে গেলে দ্রুত গিয়ে নোংরা কাপড় দিয়ে টেবিল পরিস্কার করছে। চায়ের কাপ ধুয়ে রাখছে । এক মুহূর্ত দাঁড়াবার ফুরসত পাচ্ছে না ।
সকাল থেকে আকাশ মেঘলা হয়ে আছে । আষাঢ় মাস। একটু পরপর ঝরঝর করে বৃষ্টি পরছে । সকালে এক পশলা ভারি বৃষ্টি হয়ে গেছে । রাস্তাঘাট ভিজে ক্যাতক্যাতে হয়ে আছে। হাটতে গেলে কাদার ছিটে লাগছে কাপড়ে। মাঝে মাঝে দু'একটা রিকশা,বাস,ট্রাক, প্রাইভেট শব্দ করতে করতে দোকানের সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হলো আজ সারাদিন ই বৃষ্টি হবে ।
আমি দোকানে ঢুকে একটা খালি চেয়ারে বসে পরায় দোকানের সবাই আড় চোখে আমাকে দেখতে লাগলো । বাখরখানি কিনতে আসা লোকজনও আমার দিকে তাকিয়ে আছে । হয়তো আমার বেশভূষা ওদের পছন্দ হয়নি । এটা অবশ্য আমার জন্য নতুন কিছু না রাস্তায় বের হলে ইদানীং অনেকেই আমার দিকে এভাবে তাকায় । ওদের দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে একটা কচকচে পাঁচশো টাকার নতুন নোট মোবারকের সামনে বাড়িয়ে ধরে বললাম, মোবারক চা,বাখরখানি খাওয়াও । অনেক ভুক লেগেছে । তারপর একটা খালি চেয়ারে বসে পরলাম, আমার মুখে নিজের নাম শুনে লোকটা প্রথমে চমকে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে টাকাটা হাত বাড়িয়ে নিয়ে ছোট ছেলেটির উদ্দেশ্যে বলল, ওই নান্টু তাড়াতাড়ি রুটি দে । তারপর খুব দ্রুত এক কাপ চা বানিয়ে সেটা আমার সামনে টেবিলের উপরে রাখল । আজকাল আমি অপরিচিত যে কারো মুখ দেখে তার নাম, ঠিকানা বলে দিতে পারি। চোখ বন্ধ করলে তার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ দেখতে পাই। একে ইনটুইশন পাওয়ার বলে । আমার বর্তমান ইনটুইশন বা অন্তর্দৃষ্টি লেভেল এখন হান্ডেডে হান্ডেড।
খেতে খেতে মোবারক লোকটাকে খুব ভাল করে পর্যবেক্ষণ করে বুঝলাম,ব্যাটা আস্ত একটা হারামি। সুযোগ পেলেই এই ছোট বাচ্চাটাকে হেনস্তা করে । লোকটা ভয়াবহ পেডোফিলিয়ায় আক্রান্ত । এদের টার্গেট হচ্ছে ছোট ছোট শিশু। ইতিমধ্যে অনেকগুলো শিশু মোবারকের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। দু'জন মারা গেছে । ডজন খানেক মামলা নিয়ে ফেরার হয়ে আছে । মোবারকের শিশু নির্যাতনের দৃশ্যগুলো সিনেমার পর্দায় দেখা দৃশ্যের মতো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আমি রাগে ফুসতে ফুসতে মোবারকের দিকে তাকিয়ে আছি। এদের দেখে বুঝা যায় না যে এরা সমাজের জন্য কতটা ভয়ংকর । পেডোফিলিয়ার কোন চিকিৎসা নেই। এ ধরনের রোগীদের হয় মেরে ফেলতে হয়,না হয় সারাজীবন বন্ধি করে রাখতে হয়।
হারামিটাকে একটা শিক্ষা দেবার জন্য হাত নিশপিশ করতে লাগলো। ইচ্ছে করছে এক্ষুনি ধাক্কা দিয়ে ট্রাকের নিচে ফেলে দেই । নিজেকে সংযত করে মোবারকের দিকে তাকিয়ে বললাম,বাড়িতে যাও না ক্যান মোবারক ? আমার প্রশ্নে মোবারক ভয়ানক চমকে উঠলো ।
চা বানানো বন্ধ রেখে আমার দিকে তাকিয়ে, আমতা আমতা করে জিজ্ঞাসা করলো, আপনে, আপনে কে ? আমারে চিনেন ক্যামনে ?
তোর নাম মোবারক ঢালি, বাপের নাম আকরাম ঢালি, গ্রাম কান্দা পাড়া,থানা চৌগাছা জেলা যশোর।
আমি ওর দিকে না তাকিয়েই চায়ের কাপে বাখরখানি চুবাতে চুবাতে বললাম ।
আমার কথা শেষ না হতেই লোকটা ভয়াবহ একটা কাণ্ড করে বসলো । লাফ দিয়ে দোকান থেকে নেমে সোজা রাস্তায় উঠে দৌড়ে পালিয়ে যেতে লাগলো । বদমায়েশটা মনে করেছে, আমি পুলিশ। ছদ্দবেশে ওকে ওকে ধরতে এসেছি । মোবারক'কে দৌড় দিতে দেখে যে দু'জন বাকরখানি বানাচ্ছিলো তারাও ভয় পেয়ে দৌড় লাগালো ।
বোবারক !
আমি উচ্চ স্বরে মোবারকের নাম ধরে ডাক দিলাম। মোবারক ততোক্ষণে রাস্তার অর্ধেকটা ক্রস করে ফেলেছে । আমার ডাকে একটু থেমে পেছন ফিরে তাকাল, সঙ্গে সঙ্গে পাশ থেকে একটা ট্রাক এসে প্রচণ্ড জোড়ে আঘাত করলো। হঠাৎ আঘাতে মোবারকের দেহ'টা ডিগবাজি খেয়ে হাত তিনেক শূন্যে উঠে আছড়ে পড়লো ট্রাকের পেছনের চাকার নিচে। খটাশ করে খুলি ফাটার শব্দ শুনতে পেলাম । মনে হলো, একটা মাটির হাড়ি কেউ হাত থেকে ফেলে দিয়ে ভেঙ্গে ফেললো।
চলবে...........
২৭ শে জুন, ২০২২ রাত ৮:৩৬
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: দুঃখিত ভাই ব্যস্ততাই কারণে সময় হয়ে উঠে না। মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ
২| ২৭ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৫:০৬
ভার্চুয়াল তাসনিম বলেছেন: ভালো লাগলো।
২৭ শে জুন, ২০২২ রাত ৮:৩৭
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ
৩| ২৮ শে জুন, ২০২২ রাত ১২:৫৫
রাজীব নুর বলেছেন: এত দেরী করে পোষ্ট দিলে হবে? আগে কি পড়েছি ভুলে গেছি।
২৮ শে জুন, ২০২২ সকাল ১০:০২
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: শুভ সকাল ।
ভুলে গেছেন ! তাহলে পড়া বাদ দিন ভাই । শুধ ব্লগিং, ভাল থাকুন ।
৪| ২৮ শে জুন, ২০২২ সকাল ১০:২৪
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: বাপরে কী ভয়ংকর দৃশ্যগুলা।
ভালো লাগলো
২৮ শে জুন, ২০২২ সকাল ১১:১১
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: শুভ কামনা আপনার জন্য । সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ । ভাল থাকুন ।
৫| ২৮ শে জুন, ২০২২ সকাল ১১:২৬
জুল ভার্ন বলেছেন: প্রতিটা পর্বই পড়ি কিন্তু ভৌতিক রহস্য থেকে বের হতে পারছিনা- শুধু একটার পর একটা রহস্যের বেড়াজালে আটকে যাচ্ছি!
২৮ শে জুন, ২০২২ দুপুর ১২:৫৯
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ম্যান্টাল ডিসঅর্ডার বা মানসিক সমস্যা নিয়ে লেখা উপন্যাস । এ সব কাহিনীর কোন শেষ নেই । কারণ মস্তিষ্কের কোষে কোষে ছড়ানো ছিটানো রয়েছে লাখ, লাখ, কোটি, কোটি অনুভূতি জনিত ঘটনা। তবে আগামী পর্বে ই কনকুলেশন পেয়ে যাবেন । সুন্দর মন্তব্যের জন্য এবং সঙ্গে থাকার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ । শুভ ব্লগিং
৬| ০২ রা জুলাই, ২০২২ রাত ৮:১২
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: দেখা যাক, শেষ পর্বে ঘটনা পরম্পরা জোরা দিতে পারি কি না...
১৮ ই জুলাই, ২০২২ রাত ৮:২৯
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: জানাবেন ভাই পেরেছেন কিনা। অপেক্ষায় রইলাম
৭| ২৬ শে জুলাই, ২০২২ রাত ১:২৮
অপু তানভীর বলেছেন: এই পর্ব দেখি আবার অন্য দিকে টার্ন নিল ।
২৮ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:১২
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: এতোদিন পরে পড়ছেন !!!!
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৪:২৮
খাঁজা বাবা বলেছেন: দেরি করে পড়লে মজা পাওয়া যায় না