নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যুদ্ধ এবং শান্তি পাশাপাশি থাকতে পারে না।

দয়িতা সরকার

একজন সাধারণ মানুষ।

দয়িতা সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

নতুন বাড়ি

১০ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৮:২৫

আমার বোঝার বয়স হবার পর থেকেই আমাদের বাড়িতে ক্যাসেট প্লেয়ার, কালার টিভি, ভিসিয়ায় থাকায় খেলা-ধুলার পাশাপাশি বিনোদনের কোন অভাব বোধ করিনি। বাড়ির সব পিচ্চিরা দাদুর সাথে টি ভি দেখতাম, বিকাল হলে বাইরে খেলতে যেতাম। পড়া-লেখার বাইরে এ ছিল আমাদের রোজকার রুটিন । সেজো কাকা বাড়িতে থাকলে লাউড স্পেকারে গান শুনতেন । বেশি শুনতেন আধুনিক বাংলা, হিন্দি। বাড়িতে কোন রিলেটিভ আসলে তাদের জন্য মুভি দেখার কাজটা আমরা পিচ্চিরাই করতে পারতাম। বাড়িতে যে শুধু গান-বাজনা, সিনেমা চলত তা না। সকালে ভাইয়ারা, ছোট কাকা, ছোট দুই ফুপু আরবি পড়তে যেত। আমরা যারা খুব ছোট তারা মায়েদের কাছে পড়তাম। দুপুরের পর এক হিন্দু টিচার আসতেন আমরা সবাই উনার কাছে পড়তাম। উনার নাম আমার মনে নেই। শুনেছি উনি বিকম পাস ছিলেন সেই সময়। জাতিতে ব্রাহ্মণ ছিলেন। নাক উচু স্বভাবের কারণে কোন জব করেন নি। বাড়িতে এক লজিং মাষ্টার ও ছিলেন। দাদু উনার কাছে আমাদের কাউকেই পড়তে দিতেন না। কি কারণে আমাকে অন্য আরেক হিন্দু টিচারের কাছে পড়তে দিলেন জানিনা। উনার নামও মনে করতে পারছি না। তবে উনি আমার বাবাও টিচার ছিলেন। আমি সেই বয়সে কাজী নজরুল ইসলাম সঠিক ভাবে উচ্চরন করতে পারতাম না। উনি বুঝতে পারেননি সব বাচ্চার কম বয়সে প্রনাঞ্চিয়েসান সঠিক হয় না। উনি আমাকে এতো মেরেছিলেন যে আমার হাত কেটে গিয়েছিল। আমাদের বাচ্চাদের এতো সুখ বিধাতা বেশি দিন দেননি।

যমুনার মরণ থাবায় আমাদের বাড়ি ভেঙ্গে গেল। যমুনার ভয়ে তাকে ছেড়ে নতুন এলাকায় বাড়ি করা হোল যেখানে নেই ইলেক্ট্রিসিটি, নেই কোন মানুষের কলাহল। সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিবেশ। আমি এই প্রথম মাঠের পর মাঠ ধান, গম, সরিষার ক্ষেত দেখতে পেলাম। প্রথম দেখতে পেলাম শ্যাল মেশিন, অনেকে ডিপ মেশিন বলে। আমাদের আগের সেই ব্যস্ততম , কলাহলপূর্ণ, ঘনবসতি এলাকা ছেড়ে সম্পূর্ণ নিরব-নিস্তদ্ধ পরিবেশে এলাম। রাস্তার সাথে ৭২ ডিসিমাল জায়গায় আমাদের বাড়ি করা হল।আসে-পাশের গ্রামের কাছে আমাদের বাড়ি নতুন বাড়ি হিসেবে পরিচিত পেল। আগের বাড়ি ছিল ছোট, আমরা দাদুর সাথে একটু দূরে গিয়ে খেলতাম। এখানে আমাদের সেই সমস্যা হোল না। রাস্তার সাথে মাঠের মতো অনেক টা জায়গা রেখে বাড়ি করা হোল। এ জায়গা টা আমাদের খেলার জন্যই দাদু রেখেছে কি না বুঝতে পারি নি। শীতে বড় ভাইয়া একপাশে টেনিস ( গ্রামে আমরা বলতাম রেকেট খেলা) খেলত। আগে আমরা অনেকটা যান্ত্রিক ছিলাম, এখানে এসে প্রকৃতির কাছাকাছি চলে এলাম। আমরা নিজেদের টিফিন খরচ বাঁচিয়ে সেই টাকা দিয়ে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন গাছ কিনে বাড়িতে লাগাতাম। কে কয়টা কিনতে পারলাম, কারটা তারাতারি বাড়ছে প্রতিযোগিতা চলত। আমরা চার ভাইবোন চারটা নারিকেল গাছ লাগালাম, আমারটা , আমার ছোট ভাইটা লাগলো, বাকি দুইটা মরে গেল। দাদু মজা করে বলল তোর গাছে নারকেল ধরলে কি করবি, তুই তো শ্বশুর বাড়ি চলে যাবি। আমি বললাম আমি সব নিয়ে যাবো। পরে এ নিয়ে আমাকে অনেক খেপাত। আবার গাছের কথায় আসি- সব গাছে সার দেওয়া, তাদের পরিচরচা সব কিছু বড় ভাইয়াই করত। আমি আর আমার ছোট ভাই শ্যাল মেশিন থেকে পানি এনে সকাল বিকাল দিলাম । আমাদের বাড়ির অংশে (দাদু সব ছেলেকে ভাগ করে দিয়েছিলেন) আমরা এতো গাছ লাগালাম যে কোথাও হাফ ফুট, কোথাও ১ ফুট পরপর হয়ে গেল। একদিন সেজো খালা- খালুজান এলেন। এতো গাছ দেখে বললেন গাছে ফল ধরবেনা। তিনি আমদের সাথে নিয়ে মাটি কেটে চটের বস্তা দিয়ে পেঁচিয়ে একটা আমগাছ উঠিয়ে অন্য জায়গায় লাগালেন। এরপর আমরা একটা একটা করে গাছ উঠিয়ে অন্যত্র লাগালাম। সব ধরনের গাছ লাগালাম। ফুলের বাগানও করলাম। যা লাগাই সেটাই এতো দ্রত বেড়ে যায়। শাক-সবজি কিনতেই হয় না। আশেপাশের অনেক মানুষ আমাদের বাড়ি থেকে শাক-সবজি নিয়ে যায়। ভাইয়া একদিন স্কুল থেকে এসে বলল টিচার বলেছে আজকাল ছেলেরা নিজেদের বাড়ির সবজি বিক্রি করতে লজ্জা পায়, কিনতে লজ্জা পায় না। ভাইয়া সেদিন কয়েকটা লাউ নিয়ে বাজারে গেলেন। বিক্রি করতে তবু লজ্জা। ভাইয়া লাউগুলো রেখে দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। লোকজন ঘুরে ঘুরে ভাইয়ার লাউয়ের কাছেই আসে, বিক্রেতা পায়না। কীভাবে বিক্রি করবে বুঝতেও পারে না। পরে দূর থেকেই অন্য জন বিক্রেতা বলে ক্রেতা যে দাম বলেছে সেই দামেই বিক্রি করে দিয়েছে।নতুন বাড়িতে আমরা সবাই কৃষকদের মতো বেগুন পোড়া হয়ে গেলাম। যে রিলেটিভই আসে সবাই প্রথমেই বলবে কি কালো হয়েছ ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:৪৪

নীল আকাশ বলেছেন: লেখার লাস্ট লাইন ২টা আমি বুঝিনি। ব্যাখ্যা করুন।
যৌথ পরিবারে বড় হওয়া অনেক আনন্দের ব্যাপার।

২| ২৩ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৫২

রাসেল বলেছেন: Thanks to share your nice experience.

৩| ২৭ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: এই সমাজের কেউ ভালো নেই। ভালো না থাকার জন্য আমরাই দায়।
ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকলে কিছুটা শান্তি পাওয়া যায়। ভালো থাকা যায়।

২৭ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৩

দয়িতা সরকার বলেছেন: ভাইয়া, এই সমাজের কেউ ভালো নেই , আমি আপনার সাথে দ্বিমত । অনেকেই ভাল আছে।
ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকলে কিছুটা শান্তি পাওয়া যায়। ভালো থাকা যায়। সহমত

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.