![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাত ১টা২০। ঘুমিয়ে পড়ার জন্য যথেষ্ঠ পরিমাণ রাত। যাদের নিশি জাগরনের ইচ্ছে নেই, তারা ইতিমধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে। ফরিদ সাহেবের নাতি-নাতনি, ছেলে-মেয়েরাও ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু ফরিদ সাহেবের ঘুমাননি। ইদানীং রাতে তার ঘুম আসে না। তবে এ রাত জাগাটা তার কাছে নতুন কিছু নয়। আগে যখন অ্যাকাউন্ট্যান্ট অফিসার ছিলেন, তখন হিসেব মিলানোর জন্য প্রায়ই রাত জাগতে হত। এখন জেগে জেগে তিনি হিসেব মেলান। গত ৬০ বছরের জীবনের পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব, কথা রাখা-না রাখার হিসাব। প্রতদিনই মিলানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু হিসেব মেলে না। শুধু সৃতিগুলো ভেসে আসে। অনেক মান-অভিমানের সৃতি, ঘটন-অঘটনের সৃতি, কোনো তুচ্ছ ঘটনার সৃতি। সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে স্কুল জীবনের কথা। প্রথম স্কুলে যাওয়ার থেকে শুরু করে একেবারে বিদায় নেওার দিন পর্যন্ত সব মনে পড়ে। ছায়াছবির মতো এক একটি ঘটনা ভেসে যায়। ফরিদ সাহেবের স্কুলটা ছিল সাদামাটা একটা আধা পাকা বিল্ডিং। কিন্তু এর সামনের বিশাল মাঠটার কারনে স্কুল্টা কে বড় দেখাত। এই মাঠটা তার খুব প্রিয় ছিল। তারচেয়েও প্রিয় ছিল স্কুলের শিক্ষকরা, তার সহপাঠীরা। পুরো স্কুলে তাদের ব্যাচ এর একটা আলাদা সুনাম ছিল। সেই সুনামটা যতটুকু পড়ালেখার জন্য, তার চেয়ে বেশি ছিল তাদের মধ্যেকার মিলের কারণে। ক্লাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবার সাথেই সবার বন্ধুত্ব ছিল। ভাল ছাত্র খারাপ ছাত্র এরকম কোনো বিভেদ ছিল না। অন্য কন ক্লাসে ঝগড়া লাগলে স্যাররা তাদের সাথে তুলনা করত। সবাই বলত দুনিয়া উল্টে গেলেও ওদের ব্যাচ কোনোদিন ভাঙবে না। অবশ্য তাদের ভাঙনের ডাক আসতে দেরি হয়নি। এস.এস.সি পরীক্ষার পর থেকেই তাদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। তারপর নানা কারণে একে একে সবাই দূরে সরে যেতে থাকে। অনেক ছোটো খাটো ব্যাপারেও ঝগড়া বেধে যেতো। সেই ঝগড়াগুলোর সমাপ্তি হয়েছিলো দূরত্ব দিয়ে। আর কখনোই সেগুলো মেটে নি। তারপর ব্যাস্ততার উছিলায় যে কয়জন একসাথে ছিলো, তারাও দূরে সরে যায়। এমনই অবস্থা হয় যে তাদের পুনর্মিলনী ও হয় নী। কথাগুলো মনে আসতেই একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে ফরিদ সাহেবের বুক থাকে। তাদের পুনর্মিলনী ও হয় নি এ কথাটা ভাবতেও তার খুব কষ্ট লাগে। কত কিছুই না করার কথা ছিলো তাদের পুনর্মিলনী তে। কিন্তু পুনর্মিলনীটাই শেষ পর্যন্ত হল না। আবার একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি।
“আজকে আর ঘুম আসবে না।” আপনমনেই আওড়ালেন ফারিদ সাহেব। বিছানায় উঠে বসে সাইড লাইট জ্বালালেন। সামনের দেয়ালটার দিকে তাকিয়ে বিড় বিড় করে বললেন “পুনর্মিলনী পুনর্মিলনী পুনর্মিলনী।”
©somewhere in net ltd.