![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের ভাল লাগা থেকে লিখতে পছন্দ করি। আপনার ভাল লাগবে_এই উদেশ্যে লিখি না।
খুব চঞ্চল আর ফাজিলের সংঙ্গা কেউ জানতে চাইলে মহল্লার সবাই একবাক্যে উৎসের কাজ গুলো দেখতে বলার জন্যে অনুরোধ করে। প্রচন্ড চঞ্চল ছেলেটি। সারাক্ষন ফাজলামি করে বেড়ায়। ওর আসেপাশের মানুষ গুলো বেশ মজাই পায় এসবে। ক্ষেত্র বিশেষ বিরক্ত হলেও উৎস ঠিকই তাকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে পারে। "লজ্জা" মেয়েদের ভূষণ হলেও, উৎসের অন্যতম দুঃর্বল দিক। খুব লজ্জা পায় ছেলাটি। তবে সব ক্ষেত্রে নয়। অপরিচিত মেয়েদের মুখোমুখি হলে, সেটা কাজের জন্যেই হোক কিংবা ভুল করে হোক। তাই ছোট বেলা থেকেই মেয়েদের থেকে দুরে দুরে থাকতে পছন্দ করে।
কলেজে পদার্পণ করার পরের লাইফটা একটু আলাদা করে নিতে হয় ওর। অনেকের সাথে ফ্রেন্ডশিপ হয় ওর। মেয়ের সংখ্যা অবশ্যই কম। আর হ্যাঁ, রিলেশনশিপ এর ব্যাপারে ঘোরতর বিরোধি। শুধু ও একা নয়, ওর বেশি ভাগ ফ্রেন্ডগুলোই ঘোরতর বিরোধি। আস্তে আস্তে কলেজ লাইফ শেষ হয়ে গেল।
ভর্তি কোচিং শুরু হল। প্রচন্ড পড়া লেখার ব্যস্ততা বেড়ে গেল। কিন্তু এর ফাঁকে একটা মেয়েকে কেমন যেন লাগে ওর। একই কলেজে ছিল, দেখা হয় নি, কিন্তু কোচিং এ দুজন একই ব্যাচে পড়ে, যাইহোক, ওর সামনে আসলেই কথা বলার জড়তা বেড়ে যায়। কি খবর, কেমন আছো? এবং হাসিমুখে উত্তর দেওয়া নেওয়া, একসাথে শীট ছাপানো, টুকটাক এরকম কাজ চলতে থাকে। মোটামুটি একটা ফ্রেন্ডশিপ দাঁড়িয়ে যায় ওদের মধ্যে। উৎসের নোট নিয়ে মেয়েটা একবার পচানি মার্কা একটা বাক্যা লিখে দেয়। এতে ছেলেটা রাগ হলেও মনে মনে অন্যরকমের অনুভূতি অনুভব করে। এভাবেই চলতে থাকে দিন গুলো, ব্যস্ততার মাঝে হঠাৎ করে উৎস তার লুকিয়ে থাকা কথা গুলো বলার পরিকল্পনা করে। ব্যপারটা প্রথমে ফ্যামিলিকে জানাবে, এর পর ফ্যামিলির মাধ্যমে। এই সব ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ে ভয়াবহ ভর্তি পরিক্ষার কথা। যেভাবেই হোক, চান্স পেতে হবে। সব কিছু ভুলে গিয়ে সোজা পড়ার টেবিলে। কিন্তু মীমর সাথে দেখা হলেই হারিয়ে যায় কোন এক নিস্তব্ধময় রাজ্যে। মুখোমুখি হলেই লজ্জিত ভঙ্গিতে মিট মিট করে হাসিতে থাকে উৎস। মেয়েটা যে হাসে না তা নয়, উৎসের থেকেই বেশি হাসতে জানে ও। হঠাৎ করে ভর্তি পরিক্ষা শুরু, ছেলেটা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়। ভর্তি ও হয়ে যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য, মীমর সাথে যোগাযোগ করার কোন মাধ্যম ও সংগ্রহ করতে পারে নি। :-( :-( :-(
লাইফ পার্টনার হিসেবে কাউকে পছন্দ হলে মীমকেই পছন্দ হয়েছেল। কোন রিলেশন ঠিলেশন নয়। সরাসরি লাইফ পার্টনার। ওর কথা খুব মনে পড়ল। খুব করে.... যোগাযোগ করার আর কোন উপায় পেল না। :-( :-( :-(
অনেক সন্ধান করে প্রায় এক বছর পর মীমর আইডি ফেবুতেই পেল এবং সাথে সাথেই ফোন নাম্বর নিয়ে নিল। চ্যাট হত, মাঝে মধ্যে কথা। এতটুকই। ফ্রেন্ডশিপ মোটামুটি মজবুত ছিল। কিন্তু চ্যাট আর টুকটাক কথায় আরো মজবুত হল। কিন্তু না বলা কথাটুকু না বলেই থাকতে হল উৎসকে। :-( :-(
প্রায় ২ বছর ৪ মাস ধরে কোন দেখা হয় নি ওদের। হঠাৎ করে উৎস নক করে মীম কে,
*উৎসঃ- তোমাদের ক্যাম্পসে আসব, একটা কাজ আছে।
মীমঃ- আচ্ছা, আমিও আসব। দেখা করবে?? কালকে আমি ২ ঘন্টার মত ক্যাম্পাসে থাকব।
*উৎসঃ- কাল কখন??
মীমঃ- সাকাল ১০ টায়।
উৎসঃ- ওকে।
ওর সাথে দেখা হবে এই প্রতিক্ষায় ঘুম পর্যন্ত ভাল ভাবে আসল না। প্রতি বার ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথেই সময় দেখলছিল। না, সকাল ১০ বাজে না। উফ দেরি। ও তার ২০ বছর লাইফে এরকম ভাবে কারো জন্যে সময় দেখে নি। কিন্তু আজ হল। খুব নার্ভাস ফিল করছিল। আচ্ছা যদি কাল দেখা হয়, কি ধরনের কথা হতে পারে?? কি নিয়ে কথা বলবো?? ও কি আগের মতই হাসি ভরা মুখ নিয়েই থাকবে?? যেমন টা দেখেছিলাম প্রায় আড়াই বছর আগে!!!! ধুর কি চিন্তা করছি এসব?? যা হবার হবে। আমি বরংচ ঘুমাতে যাই।
আবার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সময় দেখে নিলাম। এখনো সময় আসে নি। কিন্তু প্রশ্ন?? প্রশ্ন করেই যাচ্ছে নিজেকে। যেই ছেলে কখনো কোন অনুষ্ঠানে তার গেট আপ নিয়ে ভাবে নি, আজ ভাবছে। কোন শার্ট পড়বে সে??? কোন প্যান্ট পড়লে মানাবে???? চশমা কি ব্যবহার করবে???
এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে ছেলেটা। সকাল ৯ টায় ঘুম ভাঙ্গে। দেরি না করে ফ্রেশ হবার জন্যে উঠে পড়ে। হাল্কা নাস্তা করে অপেক্ষা করতে থাকে কখন ১০ টা বাজবে।
ডার্ক ব্লু গ্যাবাডিং প্যান্টের সাথে ডিপ নেভি ব্লু শার্ট পড়ে। আর কিছুক্ষন পর পর নিজের ফেইস চেক করতে থাকে। আজকের উৎস আর বাকিদিন গুলোর উৎসের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য।
সকাল ১০ বাজে, কোন সড়া শব্দ নেই। প্রতিক্ষার সময় বেড়ে চলছে। হঠাৎ করে ১০: ৩০ মীমর কল?
মীমঃ- তুমি কোথায়??
উৎসঃ- এফ রহমান হলের কাছে।
মীমঃ- আমি FBA এ ফ্যাকাল্টির পিছনে আছি, তুমি আসবে?
উৎসঃ আমি আসছি।
১০ মিনিটের মধ্যেই পৌছে যায়। কিছু দুর থেকেই মীমকে দেখতে পায় উৎস। স্টাডিতে একটু ব্যস্ত মেয়েটা। একবার ওর দিকে তাকায়, আরেকবার নীচের দিকে। মুখে ফিরে আসে ২ বছর আগের হারানো সেই হাসি।
উৎসকে দেখা মাত্রই মীম হাত নাড়িয়ে হায় জানাচ্ছে।।।। হাত নাড়িয়ে উৎস উত্তর দিল।
সেই হাসিমাখা মুখে কথা বলা শুরু করল ওরা দুজন। মীমর একটা ফ্রেন্ড ছিল, ও দর্শকদের মত শুনতে থাকে ২ বছর আগে ঘটে যাওয়া কাজ নিয়ে।
একটা দুইটা থেকে শুরু করে হাজার কথার ফুলছড়ি। আইসক্রিম খেতে খেতে মীমের বকা খাওয়া। মীমর প্লেট থেকে ফুচকা চুরি করে খাওয়া। ফটশেসন এ সময় কাটানো, টি, এস, সি থেকে রিকশায় করে নীলক্ষেত গিয়ে একসাথে বই কিনা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎসের সাথে পড়া জান্নাত, দিনা, ফাহিম, তারেক নাম গুলোর সাথে মীমকে পরিচয় করিয়ে দেয় উৎস। ডেসটিনেশন নিয়ে কথা ইত্যাদি ইত্যাদিতে দেড় ঘন্টার সময় টুকু মনে হয় ১০ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে গেল।
অতঃপরঃ ভাল থেক। আর চট্টগ্রাম গিয়ে নিজের প্রত একটু বেশি যত্ন নিও বলে হাসতে লাগল মীম।
এর মধ্যে না বলা কথা টা, না বলাই রয়ে গেল। গভীর ভাবে ঘুমিয়ে গেছে না বলা কথাটুকু। আর ঘুম থেকে জেগে উঠবে না। কখনোই না। কারন.... থাক। কারনটা অনেক বিশাল।।।।।
©somewhere in net ltd.