নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হলাম ইচ্ছে ঘুড়ি। মা ডাকেন, যাদুর কাঠি। বাবা ডাকেন, মণি বুড়ি।

ফারহানা শারমিন

আমি হলাম ইচ্ছে ঘুড়ি মা ডাকেন যাদুর কাঠি বাবা ডাকেন মণি বুড়ি

ফারহানা শারমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুপার হিরো

১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:১৭

ছেলে বই নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে।
তার পড়ালেখা করতে মন চাইছে। বইটা আমার হাতে দিয়ে বলল,
বই -এ কি লিখা বল?
আমি: তোমার নাম কি?
ছেলে ঝটপট তার নাম বলল।
তোমার বাবার নাম?
ওম্! ভুলে গেছি। তুমি বল।
তার বাবার নাম বললাম।
তোমার মায়ের নাম কি?
ওম্!ভুলে গেছি! তুমি বল।
আমি নিশ্চুপ! কারণ, নাম মনে করতে পারছি না। চুপচাপ বসে মগজের এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত সার্চ দিচ্ছি। সমগ্র মস্তিস্কময় শুধু একটা শব্দ।
করোনা!
পাঁচ মিনিটের আপ্রাণ চেষ্টার পর শেষমেষ আমার নামটা করোনাকে কনুই মেরে মেরে ঠ্যালেঠুলে বেরিয়ে এসেছে। সাথে সাথেই আমার সে কি বিশ্বজয়ের আনন্দ! চিৎকার দিয়ে বললাম,সারমিন! আমার নাম সারমিন। ফারহানা সারমিন!
ছেলে: চেহারায় যতটা সম্ভব বিরক্তি নিয়ে,একবার বল! এতবার বল কেন?(আমার ছেলে এক কথা বারবার বলা পছন্দ করে না। যদিও সে নিজেই একটা ভাঙা টেপ রেকর্ডার!)
দুঃখিত বাবা!আর বলব না।এখন তুমি নিজে নিজে পড়ার চেষ্টা কর। বলে, ছেলেকে বই ধরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াই। পেছনে ঘুরতেই বরের চোখের দিকে চোখ পড়ল। সে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বেচারা গত ছয় বছর ধরে শক্ খেয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের কেইস, মানে মানুষের সাথে তার আগে কখনো সাক্ষাৎ হয়নি।
কিন্তু আমার হয়েছে, আর ব্যারামটাও সেইখান থেকে পাওয়া।
আমার নানা। জীবনে কারো নাম মনে রাখতে পারেননি। শেষমেষ একটা নাম আবিষ্কার করেছিলেেন। ভুডভুডি! তার ছেলে মেয়ে, ভাতিজা, ভাতিজি, সবাই ভুডভুডি, আর আমরা নাতি নাতনিরা ভুডভুডি বা’র নাতি/ নাতনি( ভুডভুডির বাবার নাতি/নাতনি)।
উনারা পাঁচ ভাইয়েরা এক ভিটাতেই থাকতেন। প্রত্যেক ভাইয়ের এত এত ছেলেমেয়ে, এত এত নাতি নাতনি।সবার ছেলেমেয়েদের প্লাস নিজের ছেলেমেয়েদের উনি ঐ ভুডভুডি নামে ডেকেই চালিয়ে দিতেন। কোন সমস্যা হত না। ভেজালটা বাঁধত ছেলেমেয়েদের স্কুলে গেলে। শুনেছিলাম,উনি প্রধান শিক্ষকের চোখে প্রধান শিক্ষক উনার চোখের দিকে অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকতেন। আমরা নাতি নাতনিরা অবশ্য খুবই মজা পেতাম উনি যখন আমাদের ঐ নামে ডাকতেন।
নানার এই মজার দোষটা তার কোন ছেলেমেয়ে,নাতি নাতনি কেউই পায়নি।
আমি পেয়েছি। পেয়েছি বলতে এক ধাপ এগিয়ে পেয়েছি। আমার শুধু নাম না, অনেক কিছুই মনে থাকে না। আর তাতে আমার চেয়ে আমার চারপাশের মানুষের ভোগান্তিই হয় বেশি। বিশেষ করে আমার বরের। বেচারাতো এই ছয় বছরে কোনদিন সাহস করে আমার কাছে তার এক টুকরো কাগজ রাখারও সাহস পায়ইনি। উল্টো আমার কোন্ জিনিস কোথায় আছে মনে রাখতে রাখতে তার অবস্থা কেরোসিন। আর অসুখ হলে তো কথাই নেই। ওষুধ খাওয়ার কথা, এটা সেটা কতোকি।
ঝামেলায় ভোগা দ্বিতীয়জন আমার ছেলে। এই ব্যাপারে আর না এগুই।
আমার নানা, খুব অসাধারণ একজন মানুষ ছিলেন।খুবই সাধারণ জীবন যাপন করা অসাধারণ একজন মানুষ। আমার চোখে একজন সুপার হিরো।
এই হিরো, সুপার হিরো হওয়া আমার সেই ছোট্টবেলার স্বপ্ন।
ছোটবেলায় আমার আজগুবি ভাবনাচিন্তার মধ্যে অন্যতম একটা ভাবনা ছিল, আমি ভাবতাম, এই পৃথিবীকে দুষ্ট লোকদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে আমার জন্ম হয়েছে। আমি আমার সুপার পাওয়ার দিয়ে সব দুষ্ট লোকদের শেষ করে ফেলব।
আর সেই সুপার পাওয়ার একটু বড় হলেই আমাকে দেয়া হবে। যখন বড় হলাম, তখন বুঝলাম, সুপার হিরো হওয়ার জন্যে সুপার পাওয়ারের দরকার নেই। শুধু বিশাল বড় মন থাকলেই হয়।
এই করোনার ক্রান্তিকালে যত সুপার হিরোদের দেখলাম, সত্যিই অবিশ্বাস্য!
আর লিখতে ইচ্ছে করছে না।
এই সব সুপার হিরোদের জন্যে অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৫৫

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: এই করোনাময় সময়ে আমাদের এমন সুপার হিরোদের খুবই প্রয়োজন।

২২ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৭:২৩

ফারহানা শারমিন বলেছেন: সত্যিই খুব প্রয়োজন। মন্তব্যের জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ।শুভ কামনা রইল।

২| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৮:০৭

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: আপনার জন্যও শুভ কামনা সব সময়।

৩| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৫০

আহমেদ জী এস বলেছেন: ফারহানা শারমিন ,




ঠিক বলেছেন- সুপার হিরো হতে সুপার পাওয়ার লাগেনা, লাগে বিশাল বড় মন।
লেখার সুর কোথা থেকে কোথায় নিয়ে গেছেন! ভালো লাগলো করোনায় নিবেদিত মানুষগুলোকে সম্মান দেখিয়েছেন বলে।

৪| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৮:২৬

ফারহানা শারমিন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্যে। আমি লিখতে বসলে সুর সবসময়ই বানের পানির মত কোথায় থেকে কোথায় চলে যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.