নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হলাম ইচ্ছে ঘুড়ি। মা ডাকেন, যাদুর কাঠি। বাবা ডাকেন, মণি বুড়ি।

ফারহানা শারমিন

আমি হলাম ইচ্ছে ঘুড়ি মা ডাকেন যাদুর কাঠি বাবা ডাকেন মণি বুড়ি

ফারহানা শারমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈদ মোবারক

১২ ই জুলাই, ২০২২ রাত ৯:১০

এই ঈদটা প্রতি ঈদের মত আশা করছি ভালো কেটেছে।
আমার এ বছরের ঈদটা(ঈদুল ফিতর)একটু অন্য রকম ছিলো।
হালকা পরিবর্তনও এসেছে। গত নয় বছর ঈদের দিন মাকে খুব মনে পড়তো। লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতাম। এ বছর তালিকায় আরেকজনের নাম যোগ হয়েছে।
গত বছর জুলাই এ করোনায় শাশুড়িকে হারিয়েছি।তাই এই ঈদে দুই মায়ের জন্যে কান্না যেন থামতে চাইছিলো না। আমাদের বাসায় মানে আমার বাপের বাড়িতে ঈদে আমার স্মৃতির কথা বলে নিই।
বাবা তখন পুলিশ কর্মকর্তা। ঈদ যদি নানা বাড়িতে করতে হতো,
(দাদা, দাদী বেঁচে নেই। তাই দাদা বাড়ি যাওয়া হতো না)যাওয়ার পথে মানে ভ্রমণটা খুব উপভোগ করতাম।
নানা বাড়িও খুব প্রিয়।কোন অসুবিধা নেই। বিপত্তিটা শুধু সালামিতে। সবাই শুধু পাঁচ, দশ টাকা সালামি দেয়। আর সবার বাসায় শুধু নুডলস, আর সেমাই।

নুডলস, সেমাই নিয়ে ততটা দূঃখ লাগত না। যতটা দূঃখ পাঁচ, দশ টাকার সালামি নিয়ে লাগতো। এত এত মানুষের কদম মুচি করে দিন শেষে মাত্র পঁয়তাল্লিশ টাকা।! আহ্! কি কষ্ট!! আর কোয়ার্টারে থাকলে?
কি রমরমা!! সবাইকে সালাম করে সোজা দোকানে চলে যেতাম। একবার পঁয়ত্রিশ টাকায় একটা পার্স কিনেছিলাম। এখনো আছে। সাথে সবার জন্যে টুকটাক গিফট। আম্মার জন্যে,আপুর জন্যে, খালাদের জন্যে। মনে আছে এক খালার জন্যে ছোট্ট একটা কাঁচি, আরেক খালার জন্যে চাবির গোছা। আর নিজের জন্যে ভিউ কার্ড। অনেক অনেক ভিউ কার্ড। অনেক আন্টি করত কি, ভাইয়া আর আমারটা একসাথে দিয়ে দিতো। বলতো তোমারা ভাইবোন ভাগ করে নিও। ভাই তো ভাগ দিতো নাা। বলতো, আমি পিস্তল কিনে ফেলছি। তোকে দুইবার গুলি মারতে দিবো, যা!
ঈদ নিয়ে আরেক দুঃখের কথা বলি, আম্মা বের হওয়ার সময় শিখিয়ে দিতো কারো বাসায় গেলে, কিছু খেতে দিলে তিনবার না করে, চতুর্থবার হ্যাঁ সূচক ঘাড় নেড়ে তারপর খাবার খেতে। উপর তলায় গেলাম। আন্টিকে সালাম করলাম। আন্টি জর্দা শাধলেন! আহ্! কী যে লোভনীয়। আমার সাথের সব পিচ্চিরা বসে গেলো খেতে। আমারতো জিভ পানিতে সাঁতার কাটে! কিন্তু ঐ যে আম্মা বলল তিনবার! আন্টিও শাঁধছেন। আমি মনে মনে গুণছি। গুণে গুণে তিনবার না করলাম। মনের খুশিতে চতুর্থবার ঘাড় কাত করে পিরিচটা হাতে নেবো। আন্টি পিরিচ নিয়ে হাঁটা দিলেন। আমার তো কলিজা ফেটে কান্না আসে। আম্মার উপর খুব রাগ হয়েছিলো সেদিন।কেন জানি এখন পর্যন্ত আমার মন থেকে ঐ কষ্ট যায় না। বড় হওয়ার পর যখন চট্টগ্রামে আসলাম। তখনো দেখা যেতো দু একজন আত্মীয় এসছে। অথবা আমরা ভালো জামা কাপড় গায়ে দিয়ে টিভি ছেড়ে দিয়ে বসে আছি। আম্মার হাতের চটপটি খাচ্ছি। অথবা খালা আমাদের বাসায় চলে এসছে বা আমরা বাসায় তালা মেরে খালার বাসায় চলে গেছি।
বা ঈদের পরপর আম্মা তার মামা, খালাদের নিয়ে চমৎকার একটা পিকনিক এর প্ল্যান করলো। রান্নার ভার আম্মার মামী নিলেন।
মোটকথা ঈদ সবার জন্যেই আনন্দের ছিলো। সবাই সমানভাবেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করতেন। আমি জানতাম ঈদ এমনই হয়।

বিয়ের পর যখন শ্বশুর বাড়িতে ঈদ করা শুরু করলাম, সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা। পুরুষরা নামাজ পরে একটু খেয়ে দেয়ে বেড়ানোর জন্যে বেরিয়ে পরে। সারাদিন গ্রামের মানুষ আসতে থাকে। আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা সবাই। মহিলাদের কাজ হচ্ছে সারাদিন ধরে নুডলস, বিরিয়ানি খাওয়াবে। আর এঁটো বাসন ধোবে। ঈদের দিন সকালে আমার কি হয় জানি না। নড়তে চড়তে মন চায় না।মা (শাশুড়ি) কাজের ফাঁকে এক দৌড়ে গরম পানি নিয়ে বালতিতে ঢেলে দিতেন। বলতেন একটু পরে গ্রাম ভর্তি মানুষ আসবে তাড়াতাড়ি গোসল সেরে নাও।গোসল সেরে বের হয়ে মা কে সালাম করতাম। পরে বাবা(শ্বশুর) নামাজ সেরে আসলে তাঁকে সালাম করতাম।মা'র হাতের বিরিয়ানি রান্না খেতাম। কোন মেহমানকে জোর করে খাওয়াতে বসাবো, কাকে হালকা একবার আাসেন না বসেন না, বলবো। মাথায় ঢুকতো না। তাই সেইফ সাইডে থাকতাম। মানে থালা বাসন ধুয়া ধুয়ি। ওফ্! মারাত্মক রকম পিঠ ব্যথা করতো। মাকে ঈদের দিনও ভালো শাড়ি পরাতে পারতাম না। জোর করে পরালেও একটু পরে খুলে ফেলতেন। বলতেন এত কাজ! নতুন কাপড় পরলে সুবিধা লাগে না।
গত বছর কোরবানি ঈদে মা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিলেন। আমার হাজব্যান্ড আই সি ইউ তে মা' র সাথে
দেখা করে এসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছে। আজকে যে ঈদ সে তার মা' কে বলেনি। বললেও মা কতটুকু বুঝতো সে জানে না। জীবনে এই প্রথম আমার শাশুড়ী ঈদের দিন কাজ করেন নি। আমি আমার আম্মা র সাথে অনেক সময় ঝগড়া করতাম। আপনি নিজের কথা কখন ভাবেন? নিজের কি ভালো লাগে, নিজের শরীর কি চায়, নিজের মন কি চায় সেটা দেখেন না কেন? আমার শাশুড়িকেও অনেক বার বলেছি, আপনার কোথায় ঘুরতে মন চায়, আপনার কি ভালো লাগে সেটা করেন না। উনি কথা শুনতেন না।
এ বছর কোরবানিতে উনাকে ছাড়া সবার খুব অসহায় লাগছিলো। কোন কিছুই উনার মতো নিখুঁত হচ্ছিলো না।আমাদের দেশে সব গ্রামে বা সব পরিবারে নাকি জাানি না আমার শ্বশুরবাড়িতে দেখেছি মেয়েদের জীবন বলতে ঘর গোছানো, রান্নাবান্না, ধুয়াধুয়ি সহ হাজারটা কাজ। সে তার বাবা মা, আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করবে কি করবে না, বাবা, মায়ের সাথে কয় ঘন্টা বা কয়দিন থাকবে সেটাও শ্বশুর বা শাশুড়ী নির্ধারণ করে দেন।
আমি এইসব ভুক্তভোগী মহিলাদের মানসিক সমস্যায় ভুগতে দেখেছি। আপনি কিন্তু চাইলে আপনার মা, বোন বা স্ত্রীর ঈদটা একটু আনন্দময় করতে পারেন। ঈদের সময় তাকে কাজে সাহায্য করে, বা ঘুরতে যাওয়ার সময় তাকে বা তাদের নিয়ে গেলে, বা অন্য অনেক ভাবে। আর বউ, শাশুড়ী, ননদের যুদ্ধ এইগুলিও মনে হয় বছর কে বছর বিভিন্ন না পাওয়ার ফল। (কিছু শয়তানের কথা আলাদা)। আর লিখতে পারবো না। সময় নাই। ঈদ মোবারক।

এবারের ঈদে শ্বশুর বাড়িতে৷ তোলা কিছু ছবি।



মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুলাই, ২০২২ রাত ৯:৪৩

জুল ভার্ন বলেছেন: ঈদ মুবারক ❤
চমৎকার স্মৃতিচারণ।

১৩ ই জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১০

ফারহানা শারমিন বলেছেন: ঈদ মোবারক। অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার ঈদ কেমন কাটলো?

২| ১২ ই জুলাই, ২০২২ রাত ৯:৪৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
কোরবানীর গোস্ত ভূনার সাথে
চিতই পিঠা! আহ কি মজার
মেন্যু!
আপনার মা ও শাশুড়ির আত্মার
শান্তি কামন করছি। একদিন এ শোক
কেটে যাবে।
বিগত তিন বছর করনোর কারণে ঈদের
আনন্দ ছিলোনা বললেই চলে। এবার
একটু সাচ্ছন্দ বোধ হয়েছে!

১৩ ই জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৫

ফারহানা শারমিন বলেছেন: সত্যিই মজার। আমরা ঈদে চালের রুটি দিয়ে খাই। করোনা সত্যিই অনেক বড় খল নায়ক।

৩| ১২ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১১:৩৬

স্বাধীন বাংলা ৭১ বলেছেন: ঈদ মোবার।

১৩ ই জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৫

ফারহানা শারমিন বলেছেন: ঈদ মোবারক।

৪| ১৩ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১২:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার শ্বশুর বাড়ি আর বাপের বাড়ি কোথায় ঈদ করতে বেশি ভালো লাগে?

১৩ ই জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২২

ফারহানা শারমিন বলেছেন: বেঁচে আছি তাতেই ভালো লাগে।

৫| ১৩ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৪:৩৫

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ঈদ মোবারক , শুভ কামনা রইলো .....।

১৩ ই জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২৩

ফারহানা শারমিন বলেছেন: ঈদ মোবারক। আপনার জন্যেও অনেক অনেক শুভকামনা।

৬| ১৩ ই জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: ঈদের স্মৃতিচারণ ভালো লেগেছে। কুরবানীর মাংস আর চালের রুটি/চিতই পিঠা- একটি মারাত্মক কম্বিনেশন!
দুই মাকে হারানোর দুঃখ কাটিয়ে উঠবেন দ্রুত, এ কামনা রইলো।
ঈদ মুবারক!

৭| ১৩ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১০:৩৮

ফারহানা শারমিন বলেছেন: ঈদ মোবারক। ঈদ কেমন কাটলো? এই শোক কাটিয়ে উঠার মতো না। তাাও দুই বাবা বেঁচে আছে। ওদের দেখে শান্তি পাই

৮| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:৪৪

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
স্মৃতিচারণ আমাকে টানে। বিষন্নতা কাজ করে। ভালো লাগলো পড়ে।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩০

ফারহানা শারমিন বলেছেন: পাঠ এবং মন্তব্যের জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.