নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এটা আমার ক্যানভাস। এখানে আমি আমার মনের কোণে উঁকি দেয়া রঙ-বেরঙের কথাগুলোর আঁকিবুঁকি করি।
আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি, কে কী খেতে চায় না, অন্যের বাচ্চারা সবকিছু খায় আমরা কেন খাই না, কেন মাছের কাঁটা বেছে খেতে পারি না, কেন দুধ খাই না, কেন বেলা গড়িয়ে খাবার খাই, কেন এককথায় সব কাজ করি না, কেন এত ভুলোমনা, এত অগোছালো, বাবা কেন এটা করেন না, ওটা করেন না। এত্তসব কেন, কেন ছাড়াও মা’র কথা বলার আরও অনেক কারণ ছিল। জীবন বলতে তার শুধু এতটুকুই ছিল—স্বামী, সন্তান আর সংসার। এর বাইরে গিয়ে কিছু ভাবতেই পারতেন না তিনি। তাই সারাক্ষণ এসব নিয়ে কথা বলতেন।
বাবা-মা’র অনেক আদরের মেয়ে ছিলেন আমার মা। মায়ের মুখে শুনেছি, নানা নাকি মায়ের সমস্ত আবদার পূরণ করতেন। খুব যত্ন করে বড় করেছিলেন মাকে। নানা নিজ হাতে মায়ের চুল আঁচড়ে দিতেন; যাতে মা চুল আঁচড়ে ছিঁড়ে একাকার করে না ফেলেন। নানাজানের এত আদুরে মেয়ে একদিন আমাদের একান্নবর্তী পরিবারের বউ হয়ে আসে। যে মেয়ে নিজ হাতে তুলে খাবার খেত না, সে মেয়ে বড় বাড়ির বড় ছেলের বউ। দায়িত্ব তার অনেক।
মা আনাড়ি হাতে সংসার সামলানো শুরু করেন। এভাবে সংসার করতে করতে মা কখন যে তার বাবা-মা’র আদুরে মেয়ে থেকে একটা একান্নবর্তী পরিবারের ঠিকে-ঝি হয়ে গিয়েছিলেন, টেরও পাননি। নানাজান হুটহাট তার আদুরে মেয়েকে মানে আমার মাকে দেখতে এবং নাইয়র নিয়ে যেতে আমাদের বাসায় চলে আসতেন। কিন্তু মা ঘরকন্নায় এতটা ব্যস্ত থাকতেন, নানাজানের হাতে একগ্লাস পানি তুলে দেওয়া তো দূরের কথা—এক পলক দেখা করারও সুযোগ পেতেন না। ওদিকে নানাজানও দাওয়ায় বসে দাদাজানের সাথে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি মেরে মেয়েকে খুঁজতে থাকতেন।
বেলা গড়িয়ে এলে মা সাংসারিক কাজবাজ গুছিয়ে নানাজানের সামনে এসে দাঁড়ালেও মানুষজনের ভয়ে দুটো সুখ-দুঃখের কথা বলার সাহস পেতেন না। মা শ্বশুরবাড়িতে এতটাই অসহায় ছিলেন, প্রাণপ্রিয় বাপজানকে নিজের মতো করে রেঁধেবেড়েও খাওয়াতে পারতেন না। নানাজানের বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসত, কিন্তু মা আমাদের বাড়ির চৌকাঠ মাড়িয়ে বাবার বাড়ি যাওয়ার অনুমতি পেতেন না। নানাজান কেঁদে বুক ভাসিয়ে মেয়ের কাছ থেকে বিদায় নিতেন। মা-ও আঁচলে মুখ ঢেকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতেন।
মা যখন অসুস্থ হয়ে চুপ করে যেতেন, আমার তখন ভীষণ খারাপ লাগত। সারা বাড়ি জুড়ে যেন নেমে আসত নিঝুম রাত। মনে হতো, বাড়িতে কোনো মানুষ নেই। আমি তখন মা’র পাশে বসে তাকে কথা বলানোর চেষ্টা করতাম। কে আমাকে বকা দিয়েছে, আমার অন্য ভাইয়েরা কে ঘর নোংরা করেছে, মাকে নিয়ে কে কী বাজে উক্তি করেছে, বাবা বাহিরে কী কী করেছে—এসব বিষয় মাকে বলতাম। আমার উদ্দেশ্য একটাই—মাকে কথা বলাতে হবে। কারণ আমার বিশ্বাস ছিল, কথা বললেই মা ভালো হয়ে যাবে। তারপর মা কথা বলতে শুরু করতেন, সবাইকে বকা দিতেন। আমি আনন্দ নিয়ে সেসব দেখতাম আর ভাবতাম—আমার মা ভালো হয়ে গেছেন।
কিন্তু শেষের দিকে আমার এই বিদ্যা কাজে লাগেনি। শত চেষ্টা করেও আমি আমার মাকে কথা বলাতে পারিনি। আমার মা আর কথা বলেননি। তখন থেকেই আমাদের স্নিগ্ধ সকাল, নিদাঘ দুপুর, রোদেলা বিকেল আর কাজল সন্ধ্যার মুহূর্তগুলো রূপান্তরিত হলো নিকষ কালো নিঝুম রাতে।
ছবিঃ গুগল
১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২
শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া
২| ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৩
মনিরা সুলতানা বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন মায়ের চৌহদ্দি!
মায়েদের জন্য ভালোবাসা।
১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২
শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপু
৩| ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫২
বিষাদ সময় বলেছেন: তবু ভাল আপনি আপনার মায়ের কথাগুলো সুন্দর করে লিখতে পারছেন আর আমি লিখতে না পারায় কষ্টগুলো বুকের মধ্যে জমাট বেঁধে আছে।
সকল মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা।
১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৩
শাওন আহমাদ বলেছেন: কষ্টগুলো আসলে আমাদের বুকে জমাট বেঁধেই থাকে।
৪| ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২১
রানার ব্লগ বলেছেন: কিছু কিছু বিষয় ভাষা খুঁজে বের করা টা কঠিন হয়ে যায় । তাই কেবল লাইক দিয়ে চুপ থাকলাম !!!
১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৯
শাওন আহমাদ বলেছেন: জীবনের ভাঁজে ভাঁজে বিষাদের চিঠি লেখা থাকে।
৫| ১১ ই জুন, ২০২৪ রাত ১:০৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: অত্যন্ত মর্মস্পর্শী একটা লেখা! শিরোনামটাই তার আভাস দিয়েছিল।
অভিভূত হ'লাম। আগেকার মায়েদের চৌহদ্দি এতটুকুই ছিল; উদয়াস্ত কাজকর্ম করা আর মাঝে মাঝে চৌহদ্দির ভেতরে থেকে সংসার নিয়েই যত কথা বলা! এখন অবশ্য অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে, হচ্ছে।
পোস্টে ষষ্ঠ প্লাস। + +
০৭ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ২:০৬
শাওন আহমাদ বলেছেন: ভাইয়া, ভালোবাসা নিবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৬
নয়ন বিন বাহার বলেছেন: মায়ের জন্য ভালোবাসা।