নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জাতি, ধর্ম, গোত্র, বর্ণ, রাজনৈতিক পরিচয় সকলের জন্য এই কলমবাজি

মুহাম্মাদ শায়েস্তা খান

মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য-এই শ্লোগানটি আমি লালন করি

মুহাম্মাদ শায়েস্তা খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সবচেয়ে বড় গুনাহ শিরক করা না কুরআনের জ্ঞান না থাকা?

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:২১


>>>সবচেয়ে বড় গুনাহর বিষয়ে Common sense এর তথ্য (উদাহরণ)
একজন ডাক্তার হলো সেই ব্যক্তি যিনি ডাক্তারী প্রাকটিস করেন। এখন কোন মানুষকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, নিম্নের বিষয়গুলোর মধ্যে একজন ডাক্তারের জন্য সবচেয়ে বড় অপরাধ (গুনাহ) কোনটি হবে?-
১. টাইফয়েড রোগের চিকিৎসায় ভুল করা
২. এপিন্ডিসাইটিস অপারেশনে ভুল করা
৩. হার্টের কোন রোগের চিকিৎসায় ভুল করা
৪. পিত্ত পাথরের অপারেশনে ভুল করা
৫. অন্যকোন যে কোন একটি রোগের চিকিৎসায় ভুল করা
৬. সবচেয়ে নির্ভুল গ্রন্থ অধ্যয়ন করে ডাক্তারী বিদ্যার জ্ঞান অর্জন না করে ডাক্তারী প্রাকটিস করা,
পৃথিবীর Common sense জাগ্রত থাকা সকল মানুষ একবাক্যে উত্তর দিবেন যে, একজন ডাক্তারের সবচেয়ে বড় অপরাধ (গুনাহ) হবে ৬ নং ধারার বিষয়টি। কারণ, সবচেয়ে নির্ভুল গ্রন্থ অধ্যয়ন করে ডাক্তারী বিদ্যার জ্ঞান যে ডাক্তার অর্জন করেছে চিকিৎসা করতে গিয়ে মানুষ হিসেবে দু-একটি ভুল তার অবশ্যই হতে পারে। কিন্তু যে ডাক্তার সবচেয়ে নির্ভুল গ্রন্থ অধ্যয়ন করে ডাক্তারী বিদ্যার জ্ঞান অর্জন করেনি সে চিকিৎসা করতে গেলে অনেক ভুল করবে। ফলে তার সব রুগী মারা যাবে বা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং তাকেও অপমানিত হতে হবে ও শাস্তি পেতে হবে।
মুসলিম হল সেই ব্যক্তি যিনি ইসলাম প্রাকটিস করেন। এবার যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, নিম্নের বিষয়গুলোর মধ্যে একজন মুসলিমের জন্য সবচেয়ে বড় গুনাহ (অপরাধ) কোনটি হবে?-
১. সালাত কায়েম না করা
২. সিয়াম পালন না করা
৩. ঘুষ খাওয়া
৪. জিহাদ না করা
৫. মানুষ হত্যা করা
৬. শিরক করা
৭. ইসলামের একমাত্র নির্ভুল গ্রন্থ কুরআনের জ্ঞান অর্জন না করে ইসলাম প্রাকটিস (পালন) করা
৮. অন্য যেকোন একটি গুনাহের কাজ করা
পৃথিবীর Common sense জাগ্রত থাকা সকল মুসলিম ও মানুষ একবাক্যে উত্তর দিবেন যে, একজন মুসলিমের জন্য সবচেয়ে বড় গুনাহ (অপরাধ) হবে ৭ নং ধারার বিষয়টি। কারণ, ইসলামের একমাত্র নির্ভুল গ্রন্থ কুরআন অধ্যয়ন করে জ্ঞান অর্জন করা মুসলিমের ইসলাম পালন (প্রাকটিস) করতে গিয়ে মানুষ হিসেবে দু-একটি গুনাহ (ভুল) অবশ্যই হতে পারে। কিন্তু যে মুসলিম কুরআন অধ্যয়ন করে জ্ঞান অর্জন না করে ইসলাম পালন (প্রাকটিস) করবে সে শিরকসহ অনেক গুনাহ করে যেতেই থাকবে। আর এর ফলে সে নিজে যেমন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে তেমনি সমাজেরও ব্যাপক ক্ষতি করবে। তাই, Common sense এর আলোকে সহজে বলা যায় যে, কুরআনের জ্ঞান না থাকা শিরক করার চেয়ে অনেক বড় গুনাহ হবে।
তাই, এ পর্যায়ে এসে আমরা বলতে পারি যে, পুস্তিকার আলোচ্য বিষয়ে ইসলামের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হলো- কুরআনের জ্ঞান না থাকা শিরক করার চেয়ে অনেক বড় গুনাহ।
>>>>সবচেয়ে বড় গুনাহর বিষয়ে কুরআনের তথ্য
সবচেয়ে বড় গুনাহর বিষয়ে আল-কুরআনের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হলে কুরআন ব্যাখ্যার নীতিমালার দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সকলকে সামনে রাখতে হবে। বিষয় দুটি হলো-
১. আল-কুরআনে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য নেই। এটি আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন সূরা নিসার ৮২ নং আয়াতে,
২. কুরআনের মাধ্যমে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হলে ঐ বিষয়ে যত আয়াত আছে সেগুলোকে পাশাপাশি রেখে পর্যালোচনা করে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। আর ঐ পর্যালোচনার সময় একটি আয়াতের অর্থ বা ব্যাখা অন্য আয়াতের সম্পূরক হতে হবে। বিরোধী হলে চলবে না।
চলুন এখন এ দু’টি বিষয়কে বিশেষভাবে সামনে রেখে সবচেয়ে বড় গুনাহর বিষয়ে কুরআনের তথ্যগুলো পর্যালোচনা করা যাক।
তথ্য-১
إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ.
অর্থ: নিশ্চয়ই শিরক অতিবড় যুলুম।
(লোকমান/৩১: ১৩)
ব্যাখ্যা: শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ বলে যারা বিশ্বাস করেন তাদের প্রায় সকলে সূরা লোকমানের ১৩ নং আয়াতের এ অংশটুকুকে ঐ তথ্যের দলিল হিসেবে জানেন। তাই চলুন তাফসীরের নীতিমালা (উসূলে তাফসীর) অনুযায়ী এ আয়াতাংশ হতে ঐ তথ্য পাওয়া যায় কিনা তা একটু বিস্তারিতভাবে জানা যাক।
সূরা লোকমানের ১৩ নং আয়াতের সম্পূর্ণ বক্তব্য হলো-
وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ ۖ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ .
অর্থ: আর (স্মরণ কর) যখন লোকমান উপদেশ দেয়ার সময় তার পুত্রকে বলেছিল হে পুত্র! আল্লাহর সাথে শরীক করো না; নিশ্চয়ই শিরক অতিবড় যুলুম (গুনাহ)।
ব্যাখ্যা: আয়াতখানির দুটি দিক পুস্তিকার আলোচ্য বিষয়ের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কযুক্ত-
প্রথমত: আয়াতখানির তথ্যটি আল্লাহর সরাসরি বলা তথ্য বা আদেশ নয়। তথ্যটি হলো লোকমান (আ:) কর্তৃক তার ছেলেকে দেয়া একটি উপদেশ।
দ্বিতীয়ত: মহান আল্লাহ এখানে শিরককে অতিবড় গুনাহ বলেছেন। সবচেয়ে বড় গুনাহ বলেননি। আর عَظِيمٌ শব্দটি অতিবড় বুঝাতে ব্যবহার হওয়ার কুরআনের অন্য অনেক উদাহরণের দু’টি হলো-
إِذْ تَلَقَّوْنَهُ بِأَلْسِنَتِكُمْ وَتَقُولُونَ بِأَفْوَاهِكُمْ مَا لَيْسَ لَكُمْ بِهِ عِلْمٌ وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا ق وَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمٌ . وَلَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ قُلْتُمْ مَا يَكُونُ لَنَا أَنْ نَتَكَلَّمَ بِهَـٰذَا ق سُبْحَانَكَ هَـٰذَا بُهْتَانٌ عَظِيم .
অর্থ: (ভেবে দেখ সে বিষয়টি) যখন তোমরা মুখে মুখে সেই কথাকে বহন করছিলে এবং নিজেদের জিহ্বা দ্বারা এমন কথা বলে বেড়াচ্ছিলে যার (সত্য হওয়ার প্রমাণিত) জ্ঞান তোমাদের ছিল না। তোমরা ওটাকে সাধারণ কথা মনে করছিলে। অথচ আল্লাহর নিকট তা একটি অতিবড় (عَظِيمٌ) বিষয় ছিল। ঐ কথা শুনেই তোমরা কেন বললে না, ‘এ ধরনের কথা মুখে মুখে বলাবলি করা আমাদের উচিত নয়। ত্রুটি মুক্ত থাকা শুধু তোমার গুণ হে আল্লাহ। এটিতো অতিবড় (عَظِيمٌ) মিথ্যা দোষারোপ’।
(নূর / ২৪ : ১৫-১৬)
তাই এ আয়াতাংশ (লোকমান/৩১: ১৩) থেকে শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ অথবা শিরককারী ব্যক্তি সবচেয়ে বড় গুনাহগার ব্যক্তি বলে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর কোন সুযোগ নেই। কিন্তু অবাক কান্ড হলো অধিকাংশ মুসলমান এ আয়াতাংশের বক্তব্যকেই শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ হওয়ার দলিল হিসেবে জানে। শয়তানের ধোঁকাবাজি কত মারাত্মক তা এ আয়াতাংশ থেকেও বুঝা যায়।
এখন চলুন, সবচেয়ে বড় গুনাহ কোনটি এ তথ্য মহান আল্লাহ আল-কুরআনের যে সকল স্থানে জানিয়েছেন তার কয়েকটি জানা যাক-
তথ্য-২
সূরা লোকমানের ১৩ নং আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা যুলুম (ظلم) শব্দটির সাথে আজিম (عظيم) শব্দ জুড়ে দিয়ে শিরকের গুনাহর বড়ত্বের মাত্রা (অতিবড়) জানিয়ে দিয়েছেন। ঐ যুলুম (ظلم) শব্দের সর্বোচ্চ মান (Superlative degree) (اسم تفضيل) হলো আযলামু (اظلم)। এই আযলামু (اظلم) শব্দটি কুরআনের ১৬টি স্থানে ব্যবহার করা হয়েছে। ঐ ১৬টি স্থানের বক্তব্য হলো-
স্থান-১
فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا لِيُضِلَّ النَّاسَ بِغَيْرِ عِلْمٍ ۗ
অর্থ: তাহলে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে যে জ্ঞান না থাকার কারণে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করার জন্য।
(আন’আম/৬ : ১৪৪)
ব্যাখ্যা: আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করার অর্থ হলো কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করা। অন্যদিকে ইসলামে কুরআনের বিপরীত সকল কথাই মিথ্যা। তাই সে কথা কুরআনের জ্ঞান না থাকার কারণে ভুল করে বলা হোকে বা কুরআনের জ্ঞান না থাকার পর ইচ্ছা করে বলা হোক।
এ আয়াতের সরাসরি বক্তব্য হলো কুরআনের জ্ঞান না থাকার দরুণ কুরআন সম্পর্কে ভুল কথা রচনা করা ব্যক্তি ‘সবচেয়ে বড় যালিম’। আবার আয়াতখানিতে সরাসরিভাবে ‘মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়াকে’ ঐ ব্যক্তির ‘সবচেয়ে বড় যালিম’ হিসেবে গণ্য হওয়ার কারণ বলা হয়েছে।
স্থান-২
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِالْحَقِّ لَمَّا جَاءَهُ ۚ
অর্থ: আর তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে যে আল্লাহ (কুরআন) সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে অথবা সত্য (কুরআন) সম্পর্কে মিথ্যা বলে যখন তা (তার নিকট) পৌঁছে গেছে?
(আনকাবুত/২৯ : ৬৮)
ব্যাখ্যা: কুরাআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করা যেতে পারে কুরআনের জ্ঞান না থাকার কারণে ভুল করে বা কুরআনের জ্ঞান থাকার পর ইচ্ছা করে। আর কুরআনের আয়াত নিজের নিকট পৌঁছার পর তাকে মিথ্যা বলার অর্থ হলো কুরআনের জ্ঞান থাকার পর কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা বলা। তাই এখানে কুরআনের জ্ঞান থাকা বা না থাকা কোন অবস্থার কথা উল্লেখ না করে কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করা ব্যক্তি এবং কুরআনের জ্ঞান থাকার পর কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা বলা ব্যক্তিকে ‘সবচেয়ে বড় যালিম’ বলা হয়েছে। তবে কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করা ব্যক্তির কথা প্রথমে এবং কুরআনের জ্ঞান থাকার পর কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা বলা ব্যক্তির কথা পরে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ দু’ধরণের ব্যক্তি কেন ‘সবচেয়ে বড় যালিম’ হিসেবে গণ্য হবে তা এখানে সরাসরিভাবে বলা হয়নি। কিন্তু সহজে বুঝা যায়, কুরআনের জ্ঞান না থাকা বা থাকা উভয় অবস্থায় কুরআন সম্পর্কে ভুল রচনা করা বা বলা, ভুল বা মিথ্যা কথা মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যায়। তাই মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়াই হলো এ দু’ধরণের ব্যক্তিদের ‘সবচেয়ে বড় যালিম’ হিসেবে গণ্য হওয়ার কারণ। স্থান-১ এর আয়াতখানিতে কুরআনের জ্ঞান না থাকার কারণে যারা কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে তাদের সম্বন্ধে এ কথাটি সরাসরিভাবে বলা হয়েছে।
স্থান-৩
فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ كَذَبَ عَلَى اللَّهِ وَكَذَّبَ بِالصِّدْقِ إِذْ جَاءَهُ ۚ
অর্থ: তাহলে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে যে আল্লাহ সম্পর্কে (কুরআন সম্পর্কে) মিথ্যা বলে এবং সত্য সম্পর্কে (কুরআন সম্পর্কে) মিথ্যা বলে যখন তা (তার নিকট) পৌঁছে গেছে?
(যুমার/৩৯ : ৩২)
ব্যাখ্যা: দ্বিতীয় অবস্থাটি হলো কুরআনের জ্ঞান থাকা অবস্থা। তাহলে প্রথম অবস্থাটি হবে কুরআনের জ্ঞান না থাকা অবস্থা। তাই এখানে কুরআনের জ্ঞান না থাকা এবং জ্ঞান থাকা উভয় অবস্থায় কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা বলা ব্যক্তিকে সবচেয়ে বড় যালিম বলা হয়েছে। তবে জ্ঞান না থাকা ব্যক্তিদের কথা প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্থান-৪
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِآيَاتِهِ ۗ
অর্থ: আর তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে যে আল্লাহ সম্পর্কে (কুরআন সম্পর্কে) মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর আয়াতকে (কুরআনের আয়াতকে) মিথ্যা বলে?
(আন’আম/৬ : ২১)
ব্যাখ্যা: এখানে কুরআনের জ্ঞান না থাকা বা থাকা কোন অবস্থার কথা উল্লেখ না করে কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করা এবং কুরআনের আয়াতকে মিথ্যা বলা ব্যক্তিদের ‘সবচেয়ে বড় যালিম’ বলা হয়েছে। আর এখানেও ‘কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করা’ কথাটি আগে এবং ‘কুরআনের আয়াতকে মিথ্যা বলা’ কথাটি পরে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্থান-৫
فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِآيَاتِهِ ۚ
অর্থ: তাহলে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর আয়াতকে মিথ্যা বলে?
(আ’রাফ/৭:৩৭)
ব্যাখ্যা: এ আয়াতখানির বক্তব্য ৩নং স্থানের আয়াতখানির বক্তব্যের অনুরুপ।
স্থান-৬
فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِآيَاتِهِ ۚ
অর্থ: তাহলে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর আয়াতকে মিথ্যা বলে?
(ইউনুস/১০ : ১৭)
ব্যাখ্যা: এ আয়াতখানির বক্তব্যও ৩নং স্থানের আয়াতখানির বক্তব্যের অনুরুপ।
স্থান-৭
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا ۚ
অর্থ: আর তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে যে আল্লাহ সম্পর্কে (কুরআন সম্পর্কে) মিথ্যা রচনা করে?
(হুদ/১১ : ১৮)
ব্যাখ্যা: এখানে শুধুমাত্র কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করা ব্যক্তিকে ‘সবচেয়ে বড় যালিম’ বলা হয়েছে। তবে কুরআনের জ্ঞান না থাকা বা থাকা কোন অবস্থায় ঐ ধরণের আচরণ করা ব্যক্তি ‘সবচেয়ে বড় যালিম’ হিসেবে গণ্য হবে তা সরাসরিভাবে বলা হয়নি।
স্থান-৮
فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا.
অর্থ: তাহলে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে যে আল্লাহ সম্পর্কে (কুরআন সম্পর্কে) মিথ্যা রচনা করে?
(কাহাফ/১৮ : ১৫)
ব্যাখ্যা: এ আয়াতখানির বক্তব্য ৬নং স্থানের আয়াতখানির বক্তব্যের অনুরুপ।
স্থান-৯
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ قَالَ أُوحِيَ إِلَيَّ وَلَمْ يُوحَ إِلَيْهِ شَيْءٌ وَمَنْ قَالَ سَأُنْزِلُ مِثْلَ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ ۗ
অর্থ: আর তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে যে আল্লাহ সম্পর্কে (কুরআন সম্পর্কে) মিথ্যা রচনা করে অথবা বলে- আমার নিকট ওহী অবতীর্ণ হয় অথচ তার প্রতি কোন ওহী অবতীর্ণ করা হয়নি এবং যে বলে- আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন আমিও তার অনুরুপ অবতীর্ণ করব?
(আন’আম/৬ : ৯৩)
ব্যাখ্যা: এখানেও কুরআনের জ্ঞান থাকা বা না থাকা কোন অবস্থার কথা উল্লেখ না করে কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করা ব্যক্তিকে ‘সবচেয়ে বড় যালিম’ বলা হয়েছে।
স্থান-১০
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ وَهُوَ يُدْعَىٰ إِلَى الْإِسْلَامِ ۚ
অর্থ: আর তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে যে আল্লাহ সম্পর্কে (কুরআন সম্পর্কে) মিথ্যা রচনা করে অথচ তাকে ডাকা হচ্ছে ইসলামের দিকে?
(আস্-সাফ/৬১ : ৭)
ব্যাখ্যা: এখানেও কুরআনের জ্ঞান থাকা বা না থাকা কোন অবস্থার কথা উল্লেখ না করে কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করা ব্যক্তিকে ‘সবচেয়ে বড় যালিম’ বলা হয়েছে।
স্থান-১১
فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ كَذَّبَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَصَدَفَ عَنْهَا ۗ
অর্থ: তাহলে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে যে আল্লাহর আয়াতকে (কুরআনের আয়াতকে) মিথ্যা বলে এবং তা (আয়াতের বক্তব্য) থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকে?
(আন’আম/৬: ১৫৭)
ব্যাখ্যা: এখানে কুরআনের জ্ঞান না থাকা বা থাকা কোন অবস্থার কথা উল্লেখ না করে কুরআনের আয়াতকে মিথ্যা বলা এবং আয়াতের বক্তব্য থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা ব্যক্তিকে ‘সবচেয়ে বড় যালিম’ বলা হয়েছে।
স্থান-১২
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ ثُمَّ أَعْرَضَ عَنْهَا
অর্থ: আর তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে যাকে তার রবের আয়াত (কুরআনের আয়াত) স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় অত:পর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়?
(সাজদা/৩২ : ২২)
ব্যাখ্যা: কুরআনের আয়াত স্মরণ করিয়ে দেয়া ব্যক্তির কুরআনের জ্ঞান আছে। তাই এখানে কুরআনের জ্ঞান থাকার পর কুরআনের আয়াতকে মিথ্যা বলা এবং আয়াতের বক্তব্য থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা ব্যক্তিকে ‘সবচেয়ে বড় যালিম’ বলা হয়েছে।
স্থান-১৩
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ فَأَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ ۚ
অর্থ: আর তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে যাকে তার রবের আয়াত (কুরআনের আয়াত) স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়?
(কাহাফ/১৮ : ৫৭)
ব্যাখ্যা: এখানেও কুরআনের জ্ঞান থাকার পর আয়াতের বক্তব্য থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা ব্যক্তিকে ‘সবচেয়ে বড় যালিম’ বলা হয়েছে।
স্থান-১৪
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ كَتَمَ شَهَادَةً عِنْدَهُ مِنَ اللَّهِ ۗ
অর্থ: তার চেয়ে বড় যুলুমকারী আর কে হতে পারে যার নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে কোন সাক্ষ্য বর্তমান আছে কিন্তু সে তা গোপন করে।
(বাকারা /২ : ১৪০)
ব্যাখ্যা: আল্লাহর পক্ষ হতে কোন সাক্ষ্য বর্তমান থাকার পর তা গোপন করার অর্থ হলো কুরআনের তথ্য জানা থাকা কিন্তু মানুষকে তা না জানানো। তাই এখানে কুরআনের জ্ঞান থাকার পর তা মানুষকে না জানানো ব্যক্তিকে ‘সবচেয়ে বড় যালিম’ বলা হয়েছে। কুরআনের তথ্য না জানতে পারলে মানুষ ভুল পথে চলে যাবে। তাই কুরআনের তথ্য জানার পর তা গোপন করার অর্থ হলো কুরআনের জ্ঞান থাকার পর মানুষকে ভুল পথে চলে যেতে সহায়তা করা। তাই ফলাফলের দিক থেকে এ কাজটি কুরআনের জ্ঞান থাকার পর কুরআন সম্পর্কে ভুল রচনা করা বা মিথ্যা বলার সমতুল্য কাজ।
স্থান-১৫
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ مَنَعَ مَسَاجِدَ اللَّهِ أَنْ يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَىٰ فِي خَرَابِهَا ۚ
অর্থ: আর তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে যে আল্লাহর মসজিদে তাঁর নাম স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলো ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালায়।
(বাকারা/২ : ১১৪)
ব্যাখ্যা: মসজিদের প্রধান কাজ হলো সালাত আদায় করা। আর সালাতের প্রধান বিষয় হলো পুন: পুন: তেলাওয়াত করার (রিভিশন দেয়া) মাধ্যমে কুরআনের বক্তব্যকে স্মরণ রাখার ব্যাবস্থা করা এবং বাস্তবে পালন করার মাধ্যমে (Practical training) কুরআনের বিধানগুলোর বাস্তব প্রয়োগ শিখানো। তাই মসজিদে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে বাধা দেয়া এবং সেগুলো ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালানোর প্রধান অর্থ হলো কুরআনের জ্ঞান থেকে দুরে সরানোর চেষ্টার মাধ্যমে মানুষকে ভুল পথে চলে যেতে সহায়তা করা। তাই ফলাফলের দিক থেকে এ কাজটিও কুরআনের জ্ঞান থাকার পর কুরআন সম্পর্কে ভুল রচনা করা বা মিথ্যা বলার সমতুল্য কাজ।
স্থান-১৬
وَقَوْمَ نُوحٍ مِنْ قَبْلُ ۖ إِنَّهُمْ كَانُوا هُمْ أَظْلَمَ وَأَطْغَىٰ.
অর্থ: আর তাদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায়কেও (ধ্বংস করেছি); তারা ছিল আরো বড় যালিম ও অবাধ্য।
(নজম/৫৩ : ৫২)
ব্যাখ্যা: এ আয়াতে আযলামু (اظلم) শব্দটি দ্বারা অন্য অনেক নবীর সম্প্রদায়ের তুলনায় নূহ (আ:) এর সম্প্রদায় অধিকতর বড় যালিম ছিল- এটি বুঝানো হয়েছে।
সম্মিলিত শিক্ষা: উপরোক্ত ১৬ টি অবস্থানে থাকা ১৬ খানি আয়াত পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ১টি স্থানে আযলামু (اظلم) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে অনেক নবীর সম্প্রদায়ের তুলনায় নূহ (আ:) এর সম্প্রদায় অধিকতর বড় যালিম ছিল- এ কথাটি জানানোর জন্য। বাকি ১৫টি স্থানে আযলামু (اظلم) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে ‘সবচেয়ে বড় যালিম’ কে তা জানানোর জন্য। ঐ ১৫টি স্থান পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে সেখানে কুরআন সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা বা থাকা উভয় অবস্থায় কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করা ব্যক্তিদের অথবা কুরআন সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা বা থাকা উভয় অবস্থায় কুরআনের আয়াতকে মিথ্যা বলা ব্যক্তিদের ‘সবচেয়ে বড় যালিম’ বলা হয়েছে। আর এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে তারা মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যায়। এখন প্রশ্ন হলো কুরআনের জ্ঞান না থাকা অবস্হায় কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করা বা আয়াতকে মিথ্যা বলা ব্যক্তিরা অধিকতর বড় যালিম বলে গণ্য হবে না কুরআনের জ্ঞান থাকা অবস্হায় কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করা বা আয়াতকে মিথ্যা বলা ব্যক্তিরা অধিকতর বড় যালিম বলে গণ্য হবে?
অধিকতর বড় যালিম কে হবে সে বিষয়ে Common sense
Common sense এর রায় হলো-
১. যে ব্যক্তি কুরআন জানার পর ভুল বলে মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যায় তার জানার ফরজটি আদায় হয় কিন্তু ভুল বলার মাধ্যমে মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য গুনাহ হয়। অর্থাৎ তার একটি গুনাহ হয়। কিন্তু যে ব্যক্তি কুরআন না জানার কারণে ভুল বলে মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যায় তার কুরআন না জানার জন্য একটি গুনাহ হয় এবং মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য আর একটি গুনাহ হয়। অর্থাৎ তার দুটি গুনাহ হয়।
২. যে ব্যক্তি কুরআন জানে তার ভবিষ্যতে একদিন সঠিক কথাটি বলা এবং সে অনুযায়ী আমল করার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে কথা ও কাজের মাধ্যমে তারা মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার গুনাহ এবং নিজের ভুল কাজ কারার গুনাহ থেকে মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যে কুরআন জানে না সে সারা জীবন শিরকসহ নানা বিষয়ে ভুল বলে মানুষকে শিরক ও নানা ধরণের কবীরা গুনাহে লিপ্ত করাবে এবং নিজেও সারাজীবন শিরকসহ নানা ধরণের গুনাহ করবে।
৩. না জানার কারণে কুরআন সম্পর্কে ভুল বলা থেকে জানার পর কুরআন সম্পর্কে ভুল বলা অধিক গুনাহ কথাটি মানুষকে কুরআনের জ্ঞান অর্জন থেকে দূরে সরায়। আর না জানার কারণে কুরআন সম্পর্কে ভুল বলা থেকে জানার পর কুরআন সম্পর্কে ভুল বলা অধিক গুনাহ তথ্যটি মানুষকে কুরআনের জ্ঞান অর্জন করতে বাধ্য করে।
তাই Common sense অনুযায়ী সহজে বলা যায় যে, কুরআন না জানার কারণে কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করা বা আয়াতকে মিথ্যা বলা ব্যক্তি কুরআন জানার পর কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করা বা আয়াতকে মিথ্যা বলা ব্যক্তির চেয়ে অধিকতর বড় যালিম। আর যেহেতু তাদের ‘সবচেয়ে বড় যালিম’ হিসেবে গণ্য হওয়ার কারণ হলো কুরআনের জ্ঞান না থাকা সেহেতু কুরআনের জ্ঞান না থাকা সবচেয়ে বড় যুলুম বা গুনাহ।
অধিকতর বড় যালিম কে হবে সে বিষয়ে আল-কুরআন
তথ্য-ক
উপরে বর্ণিত যে ১৫টি স্থানে কুরআন ‘সবচেয়ে বড় যালিম’ সম্পর্কে বক্তব্য উপস্থাপন করেছে তা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়-
 ১ম স্থানের আয়াতখানিতে জ্ঞান না থাকার কারণে কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করা ব্যক্তিকে ‘সবচেয়ে বড় যালিম’ বলা হয়েছে।
 ৩টি স্থানে (১২, ১৩ ও ১৪ নং স্থান) জ্ঞান থাকার পর কুরআনের আয়াতকে মিথ্যা বলা ব্যক্তিকে ‘সবচেয়ে বড় যালিম’ বলা হয়েছে।
 যে সকল স্থানে (অবস্থান ২ ও ৩) জ্ঞান না থাকার কারণে বা জ্ঞান থাকার পর কুরআনের আয়াতকে মিথ্যা বলা কথা দু’টি একসাথে এসেছে তার সবখানে ‘জ্ঞান না থাকার কারণে কুরআনের আয়াতকে মিথ্যা বলা’ কথাটি প্রথমে উল্লেখ করা হয়ছে।
 যে সকল স্থানে (অবস্থান ৪, ৫ ও ৬) ‘কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করা’ এবং ‘কুরআনের আয়াতকে মিথ্যা বলা’ এ উভয় অবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার সবখানে ‘কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করা’ কথাটি আগে এবং ‘কুরআনের আয়াতকে মিথ্যা বলা’ কথাটি পরে উল্লেখ করা হয়ছে। প্রথম স্থানের আয়াতখানিতে ‘কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করা’ কথাটিকে কুরআনের জ্ঞান না থাকা অবস্থার সাথে সরাসরিভাবে সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে।
 ১ম স্থানের আয়াতখানি বাদে অন্য যে সকল স্থানে (অবস্থান ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১৫) ‘কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করা’ বা ‘কুরআনের আয়াতকে মিথ্যা বলা’ কথা দু’টির যেকোন একটি এসেছে সেখানে কুরআনের জ্ঞান না থাকা বা থাকা কোন কথা উল্লেখ করা হয়নি।
তাই আল-কুরআনের এ ১৫টি স্থানের বক্তব্য পর্যালোচনা করলে বলা যায় যে, কুরআন অনুযায়ী, কুরআন না জানার কারণে কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করা বা কুরআনের আয়াতকে মিথ্যা বলা ব্যক্তি কুরআন জানার পর কুরআন সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করা বা আয়াতকে মিথ্যা বলা ব্যক্তির চেয়ে অধিকতর বড় যালিম।
তথ্য-খ
পরে আসা আল-কুরআনের তথ্যগুলোয় থাকা আয়াতসমূহের মাধ্যমে আল্লাহ তা’য়ালা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, কুরআনের জ্ঞান থাকা সবচেয়ে বড় গুনাহ।
♥♥ তাই নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, আল-কুরআনের এ ১৫টি স্থানের বক্তব্যের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, কুরআনের জ্ঞান না থাকা ব্যক্তি কুরআনের জ্ঞান থাকা ব্যক্তির চেয়ে অধিক বড় যালিম। অর্থাৎ কুরআনের জ্ঞান না থাকা ‘সবচেয়ে বড় গুনাহ’।
তথ্য-৩.১
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ . خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ . اِقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ . الَّذِيْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِ. عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ.
অর্থ: পড় তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি আলাক থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। পড় এবং তোমার রব বড় অনুগ্রহশীল। যিনি কলমের সাহায্যে জ্ঞান (অর্জন পদ্ধতি) শিখিয়েছেন। মানুষকে এমন বিষয় শিখিয়েছেন যা সে জানত না।
(আলাক/৯৬ : ১-৫)
তথ্য-৩.২
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنْ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِج
অর্থ: রমযান (হলো সে) মাস যে মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে; (কুরআন) মানব জাতির জন্য পথনির্দেশিকা ও স্পষ্ট তথ্যধারণকারী পথনির্দেশিকা এবং সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী।
(বাকারা/২ : ১৮৫)
সম্মিলিত ব্যাখ্যা: তথ্য ৩.১ এর পাঁচখানি আয়াত রাসূল (সা:) এর উপর প্রথম নাযিল হয়। এরপর বেশ কয়েক মাস (কোন কোন বর্ণনা অনুযায়ী কমপক্ষে ছয় মাস) কুরআনের কোন আয়াত নাযিল হয় নাই। আর ঐ লম্বা সময় কুরআন নাযিল বন্ধ থাকায় রাসূল (সা:), তাঁকে রাসূল হিসেবে বাদ দেয়া হয়েছে মনে করে অত্যন্ত পেরেশান হয়ে পড়েছিলেন।
তাহলে আল-কুরআনের নাযিল হওয়া প্রথম শব্দটি হলো ‘পড়’। অর্থাৎ ‘জ্ঞান অর্জন কর’। এটি একটি আদেশমূলক কথা। তাই আল-কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহর দেয়া প্রথম আদেশ হলো জ্ঞান অর্জন করার আদেশ। এখানে অন্য যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হলো- আয়াত পাঁচখানিতে জ্ঞান ও জ্ঞানের সাথে সম্পর্কযুক্ত বিষয় ছাড়া আর কোন বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
তথ্য ৩.২ আয়াতাংশের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, কুরআন হল সত্যমিথ্যার পার্থক্যকারী। অর্থাৎ কুরআনের বক্তব্য সত্য (নির্ভুল) এবং কুরআনের বিপরীত বক্তব্য বা তথ্য যে গ্রন্থেই থাকুক তা মিথ্যা। সে গ্রন্থ হাদীস, ফিকাহ, ফাজায়েলে আমল, বিজ্ঞান অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি যাই হোক না কেন।
কোন বিষয়ের জ্ঞান অর্জনের চিরসত্য নিয়ম হল ঐ বিষয়ের সর্বাধিক নির্ভুল গ্রন্থটির জ্ঞান প্রথমে অর্জন করা। তাই সহজেই বলা যায় যে, জীবন সম্পর্কিত নির্ভুল জ্ঞান অর্জন করতে হলে সর্বপ্রথম কুরআনের জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
তাই এ দুটি তথ্যের বক্তব্য মিলালে যা জানা যায় তা হলো- আল-কুরআনের প্রথম নির্দেশ হচ্ছে কুরআনের জ্ঞান অর্জন করার নির্দেশ। বুঝা মোটেই কঠিন নয় যে, কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তথা সবচেয়ে বড় ফরজ এবং কুরআনের জ্ঞান থেকে দূরে থাকা সবচেয়ে বড় গুনাহ বলে আল্লাহ তাঁর প্রথম নির্দেশ হিসেবে এ কথাটিকে বেছে নিয়েছেন।
‘শিরক করো না’ কথাটি প্রথম নির্দেশ হিসেবে না জানানো, ‘পড়’ কথাটি প্রথম নির্দেশ হিসেবে জানানো এবং কুরআনের প্রথম পাঁচখানি আয়াতে শুধু জ্ঞান অর্জন সম্পর্কিত কথা উল্লেখ করা কিন্তু শিরক সম্বন্ধে কোন কথা উল্লেখ না করার মাধ্যমেও আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন যে, কুরআনের জ্ঞান না থাকা শিরকের চেয়ে অনেক অনেক বড় গুনাহ।
তথ্য-৪
فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ .
অর্থ: যখন তোমরা কুরআন পড়বে (পড়া আরম্ভ করবে) তখন অভিশপ্ত শয়তান (শয়তানের ধোঁকাবাজি) থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইবে।
(নাহল/১৬ : ৯৮)
ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ সালাত, সিয়াম বা অন্য কোন কাজ শুরু করার আগে শয়তানের ধোঁকাবাজি থেকে তাঁর কাছে আশ্রয় চাইতে উপদেশও দেননি। কিন্তু এ আয়াতের মাধ্যমে তিনি কুরআন পড়া শুরু করার সময় শয়তানের ধোঁকাবাজি থেকে তাঁর নিকট সাহায্য চাইতে আদেশ দিয়েছেন। তাই জানার পরও কেউ যদি কুরআন পড়া আরম্ভ করার আগে আউজুবিল্লাহ না পড়ে তবে তার আল্লাহর আদেশ অমান্য করার গুনাহ তথা কবীরা গুনাহ হবে।
আল্লাহ তাঁর এ কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন সালাত, সিয়াম ইত্যাদি আমল থেকে দূরে সরানো শয়তানের কাজ। তবে কুরআনের জ্ঞান থেকে দূরে সরানো শয়তানের সবচেয়ে বড় কাজ। তাই আল্লাহ যদি সাহায্য না করেন তবে কুরআন পড়েও কেউ কুরআনের সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারবে না।
যেটি শয়তানের সবচেয়ে বড় কাজ সেটিই সবচেয়ে বড় গুনাহ। তাই মহান আল্লাহ এ আয়াতের মাধ্যমেও জানিয়ে দিয়েছেন, সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো কুরআনের জ্ঞান না থাকা।
তথ্য-৫
قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ ۗ
অর্থ: বল যারা জানে (জ্ঞানী) আর যারা জানে না (অজ্ঞ) তারা কি কখনও সমান হতে পারে?
(যুমার/৩৯ : ০৯)
ব্যাখ্যা:
তথ্য-৬
قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الْأَعْمَىٰ وَالْبَصِيرُ ۚ أَفَلَا تَتَفَكَّرُونَ .
অর্থ: বল অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি কখনও সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা-ভাবনা কর না?
(আন্‌‘আম / ৬ : ৫০ এবং কুরআনের আরো অনেক স্থানে)
ব্যাখ্যা:
আয়াতের শেষে ‘তোমরা কি চিন্তা-ভাবনা কর না?’- প্রশ্নটির মাধ্যমে আল্লাহ মানুষকে তিরষ্কার করেছেন। অন্ধ এবং চক্ষুষ্মান কোন দিক দিয়ে সমান হতে পারে না বিষয়টি এবং এ তথ্যটি ব্যাখ্যা করে শিরক নয় বরং কুরআনের জ্ঞান না থাকা সবচেয়ে বড় গুনাহ বিষয়টি বুঝা অত্যন্ত সহজ। তাই আল্লাহ এখানে মানুষকে তিরষ্কার করেছেন এ কারণে যে, যে মানুষকে তিনি Common sense (আল্লাহ প্রদত্ত সাধারণ জ্ঞান) দিয়ে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে তৈরী করেছেন সে মানুষ এত সহজ একটি বিষয় কেন বুঝতে পারবে না? অর্থাৎ বলা যায় শিরক নয় বরং কুরআনের জ্ঞান না থাকা সবচেয়ে বড় গুনাহ, এ বিষয়টি যারা বুঝতে বা মানতে পারবেনা তাদেরকে আল্লাহর তিরষ্কারের সম্মুখীন হতে হবে।
তথ্য-৭
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ ۚ
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে মাফ করেন না; আর উহা ভিন্ন (অন্য গুনাহ) যাকে ইচ্ছা মাফ করেন।
(নিসা/৪ : ৪৮)
অসতর্ক ব্যাখ্যা: যারা শিরককে সবচেয়ে বড় গুনাহ হিসেবে জানেন বা প্রচার করেন তাদের অনেকে শুধু এ আয়াতখানির অসতর্ক ব্যাখ্যাকে ঐ তথ্যের দলিল হিসেবে জানেন। আর অনেকে ১ নং তথ্যের আয়াতখানির সঙ্গে এ আয়াতখানিকেও দলিল হিসেবে জানেন।
এ আয়াতের দু’টি ব্যাখ্যা মুসলিম সমাজে চালু আছে-
১. আল্লাহ এখানে বলেছেন তাঁর সাথে শরীক করার গুনাহকে তিনি মাফ করেন না। আর শিরক ব্যতীত অন্য সকল গুনাহ যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন। তাই এ আয়াত থেকে জানা যায় শিরক করা সবচেয়ে বড় গুনাহ।
২. অন্য আয়াতে আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন তাওবার মাধ্যমে শিরকসহ সকল গুনাহ (মানুষের হক ফাঁকি দেয়ার গুনাহ বাদে) দুনিয়ায় মাফ হবে তাই এ আয়াতের প্রয়োগস্থল হবে পরকাল। অর্থাৎ পরকালে আল্লাহ শিরক ব্যতীত অন্য সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন।
আয়াতখানির চালু প্রথম ব্যাখ্যাটির কারণ হলো ‘মাফ হওয়া না হওয়াকে গুনাহ বড় বা ছোট হওয়ার একমাত্র মাপকাঠি ধরা’ এবং ‘আল্লাহর ইচ্ছা’ কথাটির সঠিক অর্থ বুঝতে না পারা। মাফ হওয়া না হওয়া যদি গুনাহ বড় বা ছোট হওয়ার একমাত্র মাপকাঠি হয় তবে মানুষের হক ফাঁকি দেয়ার গুনাহ শিরকের চেয়ে বড় গুনাহ হবে। কারণ, শিরক তাওবার মাধ্যমে মাফ হয় কিন্তু মানুষের হক ফাঁকি দেয়ার গুনাহ তাওবায় মাফ হবে না যদি হক আগে ফেরত দেয়া না হয়। ‘আল্লাহর ইচ্ছা’ কথাটির সঠিক অর্থ নিয়ে আলোচনা পরে আসছে।
আর আয়াতখানির চালু দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটিও গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ আয়াতখানির প্রয়োগস্থল পরকাল হলে পুরো আয়াতের বক্তব্য পরকালের জন্য গ্রহণযোগ্য হতে হবে। আয়াতখানির প্রথম অংশের ব্যাখ্যা যদি এটি হয় যে, ‘পরকালে আল্লাহ শুধু শিরকের গুনাহ মাফ করবেন না’। তবে আয়াতখানির দ্বিতীয় অংশের ব্যাখ্যা হবে, ‘পরকালে আল্লাহ শিরক ভিন্ন সকল ধরণের কবীরা গুনাহ মাফ করে দিবেন’। এ তথ্য আল-কুরআনের অনেক আয়াত ও অনেক সহীহ হাদীসের সরাসরি বিরুদ্ধ। কারণ সেখানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বলা হয়েছে পরকালে কোন ধরণের কবীরা গুনাহ মাফ হবে না। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে ‘কবীরা গুনাহসহ মৃত্যুবরণকারী মু’মিন দোযখ থেকে মুক্তি পাবে কী?’ নামক বইটিতে।
আমরা এখন বিস্তারিত ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করবো এ আয়াতে কারীমার প্রকৃতশিক্ষা কী। এ ব্যাখ্যার সময়ও মনে রাখতে হবে কুরআনের সর্বোত্তম ব্যাখ্যা কুরআন এবং কুরআনে পরস্পরবিরোধী কোন কথা, বক্তব্য বা তথ্য নেই।
প্রকৃত ব্যাখ্যা:
ক. শিরকের গুনাহ মাফ হওয়া না হওয়া
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَـٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا .وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ ۚ أُولَـٰئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا. অর্থ : অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওরা কবুল করবেন, যারা জাহালত
অর্থ: অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা জাহালত (অজ্ঞতা, ধোঁকা, লোভ-লালসা ইত্যাদি) এর কারণে গুনাহের কাজ করে বসে। অত:পর অনতিবিলম্বে তাওবা করে নেয়। এরাই হল সেসব লোক, যাদের আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে অভিজ্ঞ ও অতীব বুদ্ধিমান। আর এমন লোকদের জন্যে কোন তাওবা (ক্ষমা) নেই, যারা (যে মু’মিনরা) অন্যায় কাজ করে যেতেই থাকে যতক্ষণ না মৃত্যু উপস্থিত হয়। তখন তারা বলে, আমি এখন তাওবা করছি। অনুরূপভাবে তাদের জন্যেও কোন তাওবা (ক্ষমা) নেই যারা মৃত্যু পর্যন্ত কাফির থেকে যায়। এদের জন্যে আমি কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।
(নিসা / ৪: ১৭,১৮)
ব্যাখ্যা: এ আয়াত দুখানির মাধ্যমে মহান আল্লাহ স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, শিরকসহ সকল গুনাহ (মানুষের হক ফাঁকি দেয়ার গুনাহ বাদে) তাওবার মাধ্যমে মাফ হবে। তবে ঐ তাওবা, গুনাহ করার সঙ্গে সঙ্গে অথবা মৃত্যু আসার যুক্তিসংগত সময়ের পূর্বে করতে হবে। অর্থাৎ মৃত্যুর এতটুকু সময় পূর্বে তাওবা করতে হবে যখন ব্যক্তির গুনাহ করার শক্তি-সামর্থ আছে কিন্তু সে স্বেচ্ছায় গুনাহর কাজ করবে না।
وَعِبَادُ الرَّحْمَـٰنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا . وَالَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَقِيَمًا . وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ ۖ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا. إِنَّهَا سَاءَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا . وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَٰلِكَ قَوَامًا. وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَـٰهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ ۚ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًا .يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا .إِلَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا. صَالِحًا فَأُولَـٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا.
অর্থ: রহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মূর্খদের কথা হয়, তখন তারা বলে, সালাম এবং রাত্রি যাপন করে পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সেজদাবনত ও দন্ডায়মান হয়ে এবং বলে, হে আমার পালনকর্তা, আমাদের কাছ থেকে জাহান্নামের শাস্তি হটিয়ে দাও। নিশ্চয় এর শাস্তি নিশ্চিত ধ্বংস। বসবাস ও আবাসস্থল হিসেবে তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট জায়গা। আর তারা যখন ব্যয় করে, তখন অযথা ব্যয় করে না এবং কৃপণতাও করে না। তাদের অবস্থান হয় এ দুয়ের মধ্যবর্তী। আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের ইবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না, এবং ব্যভিচার করে না। যারা এ কাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কেয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং তথায় (দোযখে) লাঞ্চিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু যারা তাওবা করে ঈমানের পথে ফিরে এসে সৎকর্ম করবে আল্লাহ তাদের গুনাহকে সওয়াবে পরিবর্তিত করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
(ফুরকান /২৫ : ৬৩-৭০)
ব্যাখ্যা: রহমানের বান্দা তথা মু’মিনদের লক্ষ্য করে মহান আল্লাহ আয়াতগুলোর বক্তব্য আরম্ভ করেছেন। আয়াতে কয়েকটি বড় নিষিদ্ধ কাজের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে ‘আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত করা’। অর্থাৎ শিরক করা। আয়াতের শেষে আল্লাহ বলেছেন যারা আয়াতে উল্লিখিত নিষিদ্ধ কাজগুলো তথা শিরকসহ অন্য কবীরা গুনাহগুলো করার পর তাওবা করে, তাদের ঐ সকল গুনাহ শুধু মাফই করা হবে না ঐ গুনাহ সওয়াবে পরিবর্তন করে দেয়া হবে।
তাহলে কুরআনের এ দুটি তথ্য থেকে নিশ্চিৎভাবে জানা যায় যে, শিরকসহ সকল গুনাহ তাওবার মাধ্যমে মাফ হয়।
খ. শিরক করলে যে সকল ধরণের গুনাহ হতে পারে
ইসলামে একটি নিষিদ্ধ কাজ করার পর গুনাহ হবে কি হবে না এবং হলে কি ধরনের গুনাহ হবে তা নির্ভর করে তিনটি বিষয়ের উপর। বিষয় ৩টি হল-
ক. ওজর, বাধ্য-বাধকতা বা কৈফিয়ত
খ. অনুশোচনা
গ. উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা
তাই একটি বড় নিষিদ্ধ কাজ করলে ইসলামে পাঁচ ধরনের অবস্থা বা গুনাহ হতে পারে। যথা-
১. কোন গুনাহ হবে না ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা নিষিদ্ধ কাজটির সমান গুরুত্ব বা পরিমাণের হলে এ ধরনের অবস্থা হবে।
২. ছগীরা গুনাহ হবে ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা নিষিদ্ধ কাজটির প্রায় সমান গুরুত্ব বা পরিমাণের হলে এ ধরনের গুনাহ হবে।
৩. না ছগীরা না কবীরা (মধ্যম) গুনাহ ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা নিষিদ্ধ কাজটির গুরুত্ব বা পরিমাণের ৫০% (মাঝামাঝি) হলে এ ধরনের গুনাহ হবে।
৪. সাধারণ কবীরা গুনাহ ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা নিষিদ্ধ কাজটির গুরুত্ব বা পরিমাণের তুলনায় প্রায় না থাকার মত হলে এ ধরনের গুনাহ হবে।
৫. কুফরী কবীরা গুনাহ ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা মোটেই না থাকলে তথা খুশী মনে করলে এ ধরনের গুনাহ হবে।
বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ‘কুরআন, হাদীস ও Common sense অনুযায়ী গুনাহের সংজ্ঞা ও শ্রেণী বিভাগ’ নামক বইটিতে।
তাই, ইসলামে শিরক করলে গুনাহ হওয়া বা না হওয়ার ব্যাপারে পাঁচটি অবস্থান হতে পারে। যথা-
১. কুফরী ধরনের কবীরা গুনাহ
২. সাধারণ কবীরা গুনাহ
৩. না কবীরা না ছগীরা ধরনের গুনাহ
৪. ছগীরা গুনাহ
৫. কোন গুনাহ নয়

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.