নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগ আমার বাসার ড্রয়িং রুমের মত, আমি এখানে যেকোনো কিছু দিয়ে সাজাতে পারি আপনার পছন্দ না হলে বলতে পারেন আমার কোন আসবাবটির অবস্থান বা ডিজাইন আপনার পছন্দ হয় নি এবং কেন হয় নি। তবে তা অবশ্যই ভদ্র ভাষাতে। ভাষার ব্যবহার করতে জানা অনেক বড় একটি গুন

শেখ এম উদ্‌দীন

আমি বাংলাদেশি ....আমি বাঙালী....আমি মুসলিম....আমি বাংলার জন্য জীবন দিতে সর্বদা প্রস্তুত ।

শেখ এম উদ্‌দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

তিন পথিকের গল্প ও আমাদের বাংলাদেশ

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৫২

চৈত্রের প্রখর রোদের মধ্য দিয়ে এক পথ ধরে একজন পথিক (প্রথম পথিক) হাঁটতে ছিলেন। অনেকক্ষণ হাটার ফলে ক্লান্ত পথিক তাঁর সামনে একটি বটবৃক্ষ এবং সুপেয় পানির সন্ধান পেলেন। পানি পান করে বটবৃক্ষের নিচে বিশ্রামের পর তিনি বটবৃক্ষের কিছু পাকা ফল এবং একটি পাত্রে কিছু পানি নিয়ে আবার তাঁর গন্তব্যের উদ্যেশে হাটা শুরু করলেন। অনেকটা পথ হাটার পরে একটা জায়গাতে এসে তাঁর মনে হল আহ আগের বিশ্রামের জায়গাটির মত যদি এখানেও একটি জায়গা তৈরি করা যেত তাহলে আমার মত অনেকেই হয়ত বিশ্রাম নিতে পারত। যেই ভাবা সেই কাজ তিনি তাঁর তেষ্টার পানি টুকুন দিয়ে ঐ রাস্তার পাশে বটবৃক্ষের ফল গুলো পুতে দিলেন। সময়ের পরিক্রমাতে ঐ বটবৃক্ষ এক বিশাল এক ছায়াবৃক্ষে পরিণত হয়।

ঐ একই পথে আরেকজন পথিক (দ্বিতীয় পথিক) হাঁটতে ছিলেন উদ্যেশ্য তাঁর এক পরিচিতজনের বাসাতে দাওয়াত খাবেন। পথের ক্লান্তি দূর করতে নিদ্রিস্ট দূরত্বে বটবৃক্ষের ছায়া পেয়ে তিনি খুব পুলকিত হইলেন এবং এই বটবৃক্ষের রোপণ কারিকে মনে মনে অনেক ধন্যবাদ দিলেন এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে তাঁর মঙ্গলের জন্য দোয়া করলেন। দাওয়াত খেতে খেতে তিনি গৃহকর্তার সাথে বটবৃক্ষের ছায়া থাকাতে তাঁর আসার পথে যে অনেক স্বস্তি পেয়েছেন তা নিয়ে গল্প করতেছিলেন। গল্প শেষে গৃহকর্তা বললেন যে শেষের বটগাছটি তারই লাগানো এবং তাঁর ইচ্ছা ছিল ওখানে একটি সুপেয় পানির উৎসের ব্যাবস্থাও করবেন কিন্তু অসুস্থতার কারনে তা আর করা হয় নি। পথিক মনে মনে চিন্তা করল যে এই ব্যাক্তির কাজের স্বীকৃতি দেয়া উচিৎ। এই ভাবনা থেকেই সে একটা সাইনবোর্ড এ লিখল “এই গাছের রোপণ কারি এক্স সাহেব, তিনি এখন অসুস্থ আপনারা যারা এখানে বসে বিশ্রাম করবেন সকলেই উনার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করবেন” এবং প্রথম পথিকের স্থায়ী ঠিকানাও সে ওখানে যুক্ত করে সাইনবোর্ডটিকে বটবৃক্ষের কাছে স্থাপন করলেন।

এর অনেকদিন পরে একজন খুব বুদ্ধিমান এবং মেধাবী (তিনি নিজেকে মনে করেন) পথিক (তৃতীয়) ঐ একই পথদিয়ে যাচ্ছিলেন। স্বভাবতই তিনি প্রথম বৃক্ষের ছায়া এবং পানি পান করে অভিভূত হইলেন। দ্বিতীয় বৃক্ষের কাছে গিয়ে পানি না পেয়ে তিনি কিছুটা ক্ষুব্ধ হলেন যে কেমন নিরবুদ্ধিমান লোক এই কাজ করল যে শুধু একটি গাছ রোপণ করল? এইটুকুন বুদ্ধি নাই যে গাছের সাথে পানিও রাখতে হয়? এই বলে সে যখন মনে মনে ঐ ব্যাক্তির বুদ্ধিমত্তা নিয়ে হাসাহাসি করছিল সেই মুহূর্তে তাঁর চোখে সাইনবোর্ডটি পড়ল। এর লেখা পরে তো বুদ্ধিমান পথিকের মাথা আরও খারাপ হয়ে গেল। নিজের দেশের মানুষদের এমন নির্বুদ্ধিমাণ এক লোকেকে এত শ্রদ্ধা দিতে দেখে তিনি মনে মনে চিন্তা করলেন তিনি পরিকল্পিত একটি বিশ্রামস্থল তৈরি করবেন এবং তখন ঐ ব্যাক্তিকে এবং অন্যদেরকে বুঝিয়ে দিবেন যে সত্যিকারের প্রশংসা কারা পেতে পারে। তিনি তার ঝোলা থেকে বৃক্ষের বীজ নিয়ে পূর্বের গাছটির বিপরীত পার্শ্বে রোপণ করিলেন এবং পরিচর্যা করতে লাগলেন। একদিন এক সাধারন বৃদ্ধ পথিক ঐ পথে যাচ্ছিলেন এবং তিনি বুদ্ধিমান পথিক কে জিজ্ঞেস করলেন তুমি বাপু এখানে কিসের পরিচর্যা করছ? বুদ্ধিমান পথিক উত্তর করলেন আমি এই গাছের ছায়ার চেয়ে অনেক বড় ছায়া এবং আরও ভালো বিশ্রামস্থল তৈরির কাজ করছি। বৃদ্ধ বললেন এখানে একটা গাছ থাকতে আরেকটা গাছের কি দরকার? জবাবে বুদ্ধিমান পথিক উত্তর দিলেন বুড়ো হতে হতে আপনার বুদ্ধি তো সব নষ্ট হয়ে গেছে যান নিজের পথে হাঁটেন আমাকে জ্ঞান দেয়া লাগবে না, আমি অনেক বুঝি। বৃদ্ধ পথিক যাবার পর তার মেধাবী মাথাতে আরেকটা বুদ্ধি হইল যে সে এই গাছ টাকেও মেরে ফেলবে তা না হলে এই বৃদ্ধের মত অনেক নিরবুদ্ধিমান লোক তার মহৎ উদ্যেশ্যটা উপলব্ধি ই করতে পারবে না। যেই ভাবা সেই কাজ বুদ্ধিমান পথিক প্রতি রাতে বটবৃক্ষের একটি একটি করে শিকড় কাটতে থাকল। এত দিনে তার রোপণ করা গাছ ও এক হাতের মত বড় হয়েছে কিন্তু বটবৃক্ষটি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছিল। এমন অবস্থা দেখে যখন কোন পথিক বুদ্ধিমান পথিকে জিজ্ঞেস করত কি হে ভাই এত বড় গাছটা মরে যাচ্ছে যে কিছু যান নাকি? প্রতিউত্তরে বুদ্ধিমান পথিক বলত আরে এই গাছটা যে ব্যাটা লাগিয়েছে সেতো বোকা ছিল তাই গাছের বাঁচার জন্য যে পানি দরকার সেই ব্যাবস্থা সে করে নাই, আর আমি তো আমার গাছ বড় করা নিয়েই ব্যাস্ত ওর গাছে আমি পানি দেব কেন? কিছুদিন অপেক্ষা কর আমার এই গাছ অনেক বড় হবে এবং আমি এখানে সুপেয় পানির ও ব্যাবস্থা করব। এভাবে দিন যায় মাস যায় কিন্তু বুদ্ধিমান পথিকের গাছ আর বড় হয় না। কিন্তু এত দিনে পূর্বের বটবৃক্ষ ও মরেগেছে। এমনি এক সময় ঐ বৃদ্ধ পথিক আবার এলেন এবং বুদ্ধিমান পথিককে জিজ্ঞেস করলেন কিহে বাপু কোথায় তোমার বিস্রামস্থল? এই বলে তিনি বুদ্ধিমান পথিকের রোপণ করা গাছের কাছে এসে দেখে বললেন এত দেখি পাকুন্দ গাছ (একধরনের গুল্ম জাতীয় গাছ যার পাতা দেখতে বটবৃক্ষের মত এবং ভেষজ ঔষধ হিসেবে কাজে লাগে) এটা কীভাবে ছায়া দিবে? এই কথাতে বুদ্ধিমান পথিক খুব খেপে গিয়ে বলল তোমাদের এই এক দোষ কোন ভালো কাজের স্বীকৃতি দিতে জান না আমি যে এত কষ্ট করে এত জরুরী একটা ঔষধি গাছ এখানে রোপণ করে পরিচর্যা করে এত বড় করালাম এর কোন স্বীকৃতি ই দিলে না? জবাবে বৃদ্ধ পথিক বললেন এইপথের কাছে আমাদের ছায়া এবং পানির দরকার এখানে এই ঔষধি গাছ দিয়ে আমরা কি করব বাপু?

এই বুদ্ধিমান পথিক এতটাই বুদ্ধিমান যে তার মাথাতে এই টুকুন বুদ্ধি আসলোনা যে আমি প্রথম পথিক যে পর্যন্ত তৈরি করেছে সেইটুকুর চারদিকে সুন্দর করে বাধিয়ে দিয়ে একটি সুপেয় পানির উৎসের ব্যাবস্থা করে দিলেও লোকে আমার নামেও ধন্যবাদ সূচক এমনি একটা নামফলক এখানে লাগাতে পারে এবং একই সাথে প্রথম ও দ্বিতীয় দুই পথিকের জন্য ই দোয়া করবে। আমরা বাঙ্গালিরা আসলে কারো ভিত্তির উপর দাড়িয়ে নিজের দেশকে এগিয়ে নেয়ার চেয়ে এই তৃতীয় পথিকের মত ভিত্তি তৈরি করতেই বেশী পছন্দ করি।

আমাদের বাংলাদেশের ৫% লোক হল প্রথম পথিকের, ১০% লোক হলাম দ্বিতীয় পথিকের, ৭৫% লোক হলাম তৃতীয় পথিকের এবং ২০% লোক অন্যান্য চরিত্রের মতন। যার ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও আমরা ঐ একই জায়গাতে দারিয়ে আছি। একই কাজ বার বার করে আত্মস্বীকৃত মেধাবী বা বুদ্ধিমান অথবা পরোপকারী হবার চেষ্টাতে লিপ্ত আছি। অথচ উন্নত দেশসমুহে বেশীর ভাগ লোক ই প্রথমশ্রেণীর (প্রথম পথিকের মত) বাকি ৫% বাদে সবাই দ্বিতীয় শ্রেণীর (দ্বিতীয় পথিকের মত)। তৃতীয় শ্রেণী বা তৃতীয় পথিকের মত ৫% লোক তাই এদের উন্নয়ন বা সামনে এগিয়ে যাওয়া ঠেকাতে পারে না। যেই দিন আমাদের দেশেও এমন প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর লোক যথাক্রমে ৭০ এবং ২৫ % হবে সেই দিন হতে ১০ বছরের মধ্যে আমরা উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হব ইনশাআল্লাহ্‌। কিন্তু ৫% থেকে ৭৫% হওয়া আসলেই অলিক কল্পনার মত একখানা কথা। তাই সত্যিকারে আমাদের যা করা উচিৎ তা হল এই গল্পের তৃতীয় পথিকের মত নতুন গাছ না লাগিয়ে যে গাছ আছে তার সৌন্দর্য বর্ধনে মনযোগী হওয়া। এতে করে ১০ বছরে না হোক আগামি ১৫ বছরে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২৫ বছরের মধ্যে আমরা উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারব। অন্যথায় এই তৃতীয় শ্রেণীর লোকজনের এমন আগ্রাসী মনোভাবের কারনে সকল বটবৃক্ষ ধ্বংসের ফলে পরবর্তী প্রজন্মকে আমরা বটের সুশীতল ছায়া তো দিতেই পারবনা বরং পাকুন্দ গাছ দেখিয়ে তাঁদের বট গাছ সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। উপরন্তু সকল চৈত্রের খরতাপ রৌদ্র এবং শ্রাবণের বর্ষার মধ্যেই ছায়া ব্যাতিত এক দুঃস্বপ্ন ময় পথ তদের পারি দিতে হবে।

আমাদের পূর্ব পুরুষ গন ১৯৫২ তে বাংলাতে কথা বলার অধিকার, ১৯৬৯ এ গণঅভ্যুত্থান এবং সর্বোপরি ১৯৭১ এ স্বাধীন সর্বভৌম একটি দেশ উপহার দিয়ে গেছেন আর আমরা যা করেছি তা হল এই ৪৩ বছর সেই ১৯৭১ সালের ইতিহাস বিক্রিতি বা কখনো মিথ্যা ইতিহাস তৈরির চেষ্টা করে নষ্ট করেছি মূল্যবান সময়। হারিয়েছি লাখো তাজা প্রান। এর পরেও আমরা কি বলব আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি? তাই এখনো সময় আছে আমদের ভাববার যে আমরা আমাদের উত্তর পুরুষদের জন্য কি ধরনের একটা বাংলাদেশ রেখে যেতে চাই। তাই আর সময় নষ্ট না করে আজি হতে কোমর বেঁধে নেমে পড়ুন দেখবেন জয় আমাদের হবেই।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৫০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ভাল বলেছেন।

+++

২| ২২ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১২:১৬

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.