![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বাংলাদেশি ....আমি বাঙালী....আমি মুসলিম....আমি বাংলার জন্য জীবন দিতে সর্বদা প্রস্তুত ।
আমার এক স্যার (হাই স্কুলের) আমার ক্লাসের প্রথম হওয়া বন্ধুটিকে বললেন " তুমি যদি তুলনা কর এই ক্লাসের ছাত্রদের সাথে তাহলে তুমি সত্যিই ভালো ফলাফল করছ কিন্তু তুমি যদি একটু দূর থেকে তুলনা শুরু কর তাহলে দেখবে তোমাকে আরও পরিশ্রম করতে হবে'
(কৈশোরের স্বভাবসুলভ দাম্ভিকতা নিয়ে) বন্ধু উত্তর করলঃ স্যার আমি তো থানাতে জুনিয়র বৃত্তিতে প্রথম হয়েছি তার মানে আমি এই থানাতে সেরা।
স্যার বল্লেনঃ এই থানা তোরে পাগল অনেক ছোট জায়গা জেলার তুলনাতে, আবার জেলা খুবই ছোট জায়গা যখন তুই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবি। আর যদি একবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারিস তাহলে তো সারা পৃথিবীই তোর প্রতিদন্ধি। তাই যখন তুলনা দিবি তখন সর্বদা যারা অনেক বেশী আগানো তাঁদের চেয়ে তুই কতটুকুন পিছানো তার তুলনা দিবি। এতে করে তুই আগাবি আর তা না হলে তুই পিছাতেই থাকবি। কারন তোর মনে এগিয়ে থাকার একটি আত্মতৃপ্তি বোধ চলে আসবে, আর এই আত্মতৃপ্তি যদি চূড়ান্ত সাফল্যের আগে কখনো আসে তাহলেই তুই আমার মত এস এস সি তে স্ট্যান্ড করে বরহানুদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হবি। (আমি উক্ত বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক গণকে শ্রদ্ধা করি, এটা স্যার বলেছিলেন কারন স্যার হয়ত তার নিজের অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না)
কথাগুলো আমার বন্ধু বুঝেছিল কিনা জানিনা হয়ত বুঝেছিল কারন ও এখন প্রতিষ্ঠিত। তবে ক্লাসে কতজন মনে রেখেছে তা আমার জানা নাই। আমার ঐ স্যার ও অকালে মারা গিয়েছিলেন, আল্লাহ্ তাহাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন।
গল্পটি বলার একটি কারন আছে আর তা হইল এই স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরেও আমাদের শুনানো হয় আমরা নাকি অনেক এগিয়েছি। তুলনা করা হয় পাকিস্তানের/ ভারতের ঝাড়খণ্ডের সাথে। আমার মতে এই তুলনা গুলো স্যারের বলা সেই অসম আত্মতৃপ্তির মত যা দিয়ে আমাদের ঘুম পারিয়ে রাখা হচ্ছে। আমরা যদি পাকিস্তানের মত হইতে চাইতাম তাহলে তো ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধই করা হইত না, আর যদি আমাদের স্বপ্নের দেশ ভারত হইত তাহলে তো মুক্তিযুদ্ধ হইত ভারতের অঙ্গরাজ্য হওয়ার জন্য। এই দুটির একটিও আমাদের পূর্বসূরিরা করেন নাই তার মানে আমরা ঐ দুটি দেশের মত হইতে চাই নাই আমরা ওদের থেকে উন্নত হইতে চেয়েছি। তাই তো আজো ভারতে ৬০ বছরের বৃদ্ধাও ধর্ষিত হয় এবং এটা করে ওরা আত্মতৃপ্তিতে ভুগে কিন্তু বাংলাদেশে ধর্ষণ একটি নিকৃষ্ট অপরাধ। আবার পাকিস্তানে এমন কোন বছর নাই যে বছর কট্টরপন্থী হামলা না হয়। তাহলে আমরা কেন ওদের সাথে তুলনাতে যাব?
মালয়শিয়া ১৯৬৫ সালে স্বাধীনতা পায় আমাদের মাত্র ৭ বছর আগে। আর ওদের প্রাকৃতিক সম্পদ আমাদের তুলনাতে নগন্য। সিঙ্গাপুর একই সময়ে স্বাধীন হয়।ওদের সম্পদ তো নাই ই। আর আমর আজো ওদের দেশে কামলা দিতে যাওয়াটাকে পরম সৌভাগ্য এর বিষয় রুপে গন্য করি। এখানে আমি আমার দেশের কোন শ্রমিক ভাইদের ছোট করছি না কিন্তু আমার দেশের সম্পদ থাকতে আমরা কেন নিজের দেশকে সিঙ্গাপুরে রূপান্তরিত না করে সিঙ্গাপুর বা মধ্যপ্রাচ্যে অদক্ষ শ্রমিক পাঠানোতে এত ব্যাস্ত? এর কারন একটাই তোমরা গরু ছাগলের মত জীবন যাপন করে হইলেও যেই বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাও তাই দিয়েই আমাদের অর্থনীতির সিঙ্ঘভাগ চলে। তাই অন্যান্য দেশ যেখানে নিজেদের দেশের উন্নয়ন এবং দক্ষ জনগোষ্ঠী রপ্তানিতে ব্যাস্ত তখন আমরা গ্রিহকরমি কাম পতিতা (বাধ্যতামুলক ঐচ্ছিক নয়, যদিও দুটিই খারাপ) সাপ্লাই দিতে ব্যাস্ত তাও আবার ভারত বা ফিলিপাইন এর অর্ধেক মজুরিতে। আমাদের এই মেকী আত্মতৃপ্তি এবং এহেন দশার একমাত্র কারন আমাদের বর্ণচোরা রাজনীতিবিদ এবং আমরা (আমরাও কম বর্ণচোরা নই) তাই আমার মতে আমি আগে নিজে ঠিক হই আসে পাশের ১০ জনকে ঠিক করি জাতী এমনিতেই বদলে যাবে। অন্য দেশ চাইলেই আমাদের দেশের শান্তি বিনষ্ট করতে পারে আমরা কেন পারি না? সহজ উত্তর আমরা কান কথা ধরা জাতী আর ওরা কান পরামর্শ দেয় কিন্তু নেয় না। তাই আমরা ঠিক হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
আরেকটা ব্যাপার আমাকে সর্বদা মনঃপীড়া দেয় তা হল-
এমন কিছু গান আছে যা মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিত। আজ আমরা যারা এই গানগুলো শুনছি বা শুনেছি তারা কতজন এর অন্তর্নিহিত অর্থ মনের গভির হতে উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছি তা আমার জানা নাই। আমার কাছে কেন যেন মনে হয় কালের পরিক্রমাতে আমাদের যুব সমাজের এই গানের অন্তর্নিহিত অর্থ অনুধাবনের ক্ষমতা কমতে কমতে শূন্যের কোটায় চলে এসেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয়তাবোধ তীব্র ছিল বলেই এই দেশাত্মবোধক গানগুলো তাঁদের অন্তরাত্মা কাপিয়ে তুলেছিল। অথচ সেই একই গান আজ আমাদের শুধু বিনোদনের চাহিদা মিটায় তাও আবার বিশেষ বিশেষ দিনে। কেন বললাম এমন কথা তার কিছু উদাহরণ নিচে দিব।
১. আমাদের উচ্চবিত্তদের বিয়ের মার্কেট আজ কাল ভারত হতে না করলে তাঁদের মাণ ইজ্জত নষ্ট হয়ে যায়।
২. বিয়ে বাড়িতে আমার বাংলার ঐতিহ্য জামদানি/টাঙ্গাইল শাড়ি না পরে গুজরাটের শাড়ি পরে যাওয়া কেই শ্রেয় এবং রুচিশীলতার পরিচয় মনে করিনা এমন বাংলাদেশী হাতে গুনা যাবে।
৩. ভারতীয় থ্রি পিস/ পাঞ্জাবি থ্রি পিস আমাদের যত টুকুন আত্মতৃপ্তি দেয় নিজেদের দেশের থ্রি পিস ততটুকুনই আত্মগ্লানিতে ভোগায়।
৪. দেশি পাঞ্জাবি যেখানে বিদেশে রপ্তানি হয় সেখানে শেরওয়ানী/ পাঞ্জাবি পাঞ্জাব বা গুজরাট এর না হলে আমাদের ভাইদের তো আত্মসম্মানই যায় যায় অবস্থা।
৫. নিজেদের নাটক যেখানে বিশ্বমানের দাবি রাখে সেখানে ভারতীয় সিরিয়াল বা আরও উচ্চ বিত্ত কেউ কেউ হলিউডের সিরিয়াল না দেখলে ঘুম আসে না।
এমন উদাহরণ দিলে হয়ত উদাহরনের একটি বই লিখা যাবে।
মাগো ভাবনা কেন এই গানের একটি লাইন “শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি” এই একটি লাইনের অর্থ যদি আমরা বুঝতে চেষ্টা করি তাহলে আমাদের প্রথমেই জানতে হবে কারা আমাদের শত্রু। এই শত্রু ব্যাক্তিগত নয় এই শত্রু জাতীয় শত্রু। যাঁদের খুব ভালো করেই চিনেছিলেন এবং দমনও করেছিলেন আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাগন।
তাঁরা ছিলেন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক এবং তাঁরা দেশমাতৃকার সর্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে এতই বিভোর ছিলেন যে তাঁদের স্ত্রী, সন্তান এবং পিতামাতা সবার ভালবাসাকে তুচ্ছ বিবেচনা করে নিজের বুকের ছাতিকে ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করে থ্রি নট থ্রি রাইফেল হাতে নিয়ে মর্টারের গুলির মোকাবেলা করেছিলেন।
যত সহজে কথা গুলো লিখলাম ব্যাপারটা কিন্তু তত সহজ নয়। একটু ভাবুন কতটুকুন ত্যাগী বা কতগুণ মনবলের অধিকারী হলে বুলেটবিদ্ধ দেহে সিপাহী মোস্তফা কামাল (বীরশ্রেষ্ঠ এবং ভোলা জেলার সর্বকালের সর্বসেরা সন্তান) দুই হাতে দুই স্টেন নিয়ে এক প্লাটুন সৈন্যের জীবন বাঁচাতে নিজের শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত ট্রিগার চেপে গিয়েছিলেন?
কতটুকুন আত্মবিশ্বাস এবং মাতৃভূমির প্রতি টান থাকলে শত্রু বাহিনীর বিমান ঘাটি হতে বিমান ছিনিয়ে শত্রু বাহিনীর আকাশ পথে দেশে ফিরার কথা চিন্তা করা যায়?
আমরা যারা নিজেদের তাঁদের প্রজন্ম বলি আমাদের কি লজ্জিত হওয়া উচিৎ না? আমরা কি তাঁদের প্রজন্ম হওয়ার যোগ্য? কি করেছি আমরা?
আজ আমাদের চারদিকে শত্রু কিন্তু আমরা সেই শত্রুকে কেউ দুধ কলা খেতেদিচ্ছি কেউবা তার মনরঞ্জনে ব্যাস্ত আছি। আসুন শত্রু চিনি এবং তার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের মত ঝাঁপিয়ে পরি। তবে এবার আর আমাদের অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে না, কারন এই জীবন বাজি রেখে দেশমাতৃকার সর্বভৌমত্ব আনার মত কঠিন কাজ টুকুন মুক্তিযোদ্ধারা হাসি মুখে জীবন দিয়ে সমাপ্ত করে গেছেন। কিন্তু আমরা তা রক্ষা এবং দূষণ মুক্ত রাখতে ব্যারথ হচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধাগণ দেশ হতে বাঘ মেরে তাড়িয়ে দিয়েছেন আর আমরা সেই দেশের সন্তান হয়ে হায়েনা বা শিয়ালের ভয়ে উটপাখির মত গর্তে মাথা লুকিয়ে আছি। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয় না। তাই আসুন আমারা ঝাঁপিয়ে পড়ি দেশাত্মবোধ এবং সততার অস্ত্র হাতে।
একটি সত্যিকারের উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যাশাই এবারের স্বাধীনতা দিবসে আমাদের প্রত্যাশা হোক যেখানে এমন মেকী আত্মতৃপ্তি নয় সত্যিকারের চূড়ান্ত সাফল্য অর্জনের আত্মতৃপ্তি থাকবে। আসুন দেশাত্মবোধ এবং সততা দিয়ে দেশটাকে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের বাংলাদেশে রূপান্তরিত করি।
©somewhere in net ltd.