নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগ আমার বাসার ড্রয়িং রুমের মত, আমি এখানে যেকোনো কিছু দিয়ে সাজাতে পারি আপনার পছন্দ না হলে বলতে পারেন আমার কোন আসবাবটির অবস্থান বা ডিজাইন আপনার পছন্দ হয় নি এবং কেন হয় নি। তবে তা অবশ্যই ভদ্র ভাষাতে। ভাষার ব্যবহার করতে জানা অনেক বড় একটি গুন

শেখ এম উদ্‌দীন

আমি বাংলাদেশি ....আমি বাঙালী....আমি মুসলিম....আমি বাংলার জন্য জীবন দিতে সর্বদা প্রস্তুত ।

শেখ এম উদ্‌দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সবাই অসৎ আমি সৎ থেকে কি করব বা ছোট চাকুরী করি তাই সৎ থাকতে পারলাম না, এই কথা গুলো যুক্তি হিসেবে কতটা যুক্তিযুক্ত?

১৫ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৩২

১৯৯৪/৯৫ সালের একদিনের ঘটনা। ঘটনা টি ঘটেছিল কোন এক জেলার অগ্রণী ব্যাংক এর কোন এক থানা শাখাতে। ঘটনাটি লেখার কারন এখান থেকে হয়ত আমরা যারা বলি “ছোট পজিশনে চাকুরী করি তাই রাজনৈতিক নষ্টামি মেনে নিতে হয়” তাঁদের কিছু শিখার থাকতে পারে।

শহীদ সাহেব তার চাকুরী জীবনের প্রথম দিন হইতে শেষ দিন পর্যন্ত কোন দিন এক মিনিট লেট করে অফিসে যান নি। ঐ শাখার ব্যাবস্থাপক হিসেবে এটা তার দ্বিতীয়বার দায়িত্ব নেয়া। ঐ থানার মানুষের একটা বাজে স্বভাব ছিল (এখনো আছে কিনা জানি না) এরা কৃষি ঋণ নিয়ে ঐ টাকাতে আরজু হোটেল বা এই মানের হোটেলে সকালে নাস্তা বাবদ বকেয়া টাকা পরিশোধ করতেন। শহীদ সাহেব শাখার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এই কৃষি ঋণ নেয়া অনেকটা দুস্কর হয়ে পরল। কারন তিনি নিজে ঋণ দেয়ার আগে সরেজমিন তদন্ত করেন। ঐ থানার কৃষি ঋণের বিতরনের নিয়ম ছিল (শহীদ সাহেব দায়িত্ব নেয়ার পূর্বে) ৫০০০ টাকা ঋণের ১০০০ টাকা চেয়ারম্যান ১০০০ টাকা ম্যানেজার ৫০০ টাকা আয়ু এবং বাকি ২৫০০ টাকা যিনি ঋণ নিচ্ছেন তিনি (যদি আরও কোন মধ্যসত্মভগি না থাকেন) পেতেন।

তৎকালীন সরকার দলীয় একজন প্রভাবশালী চেয়ারম্যান চিন্তা করলেন এই ম্যানেজারকে বশ না করলে তো আর চলছে না। একদিন শহীদ সাহেব অফিসে ঢুকার মুহূর্তে দেখলেন তার এক আয়ু একজন চকচকে ড্রেস পরিহিত ব্যাক্তিকে নিয়ে গেটের সামনে দাড়িয়ে আছেন। শহীদ সাহেব কে দেখেই দুজনে সালাম দিলেন সালামের জবাব দিয়ে শহীদ সাহেব দ্রুত নিজের ডেস্কে চলে গেলেন। ডেস্কে গিয়ে পূর্বের কৃষি ঋণ (যা আদায় করতেই মুলত তিনি প্রথম বারের মত দ্বিতীয়বার ও দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন) এর লেজার বুক চেক করতে লাগলেন। এমন সময় গেটে দেখতে পাওয়া ভদ্র লোক রুমের দরজাতে এসে শহীদ সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলেন। শহীদ সাহেব লোকটিকে ভিতরে এসে বসতে বললেন। উনি বসতে বসতে বললেন ম্যানেজার সাহেব আমি “ক” আমি “খ” ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং সরকারী দলের রাজনীতি করি। আসলে এখানে পোস্টিং হলে সকল ম্যানেজার স্যারেরাই আমার বাসাতে এক দু বেলা আতিথ্য গ্রহণ করেন। শহীদ সাহেব বললেন আমি আসলে পরিচিত বন্ধু বা আত্মীয় বাদে কারো আতিথ্য গ্রহণ করি না, তো বলেন আপনার কি সমস্যা।

কঃ সমস্যা না আবার সমস্যা ও, আসলে আপনি চার্জে আশার পর থেকে কৃষি ঋণ অনেক কম যাচ্ছে।
শহীদ সাহেবঃ আপনি কি ঋণ নিবেন? পাল্টা প্রশ্ন শহীদ সাহেবের।
কঃ না, আল্লাহ্ দিলে আপনাদের দোয়াতে আমার কোটি টাকার সম্পদ আছে লন আমি নিতে যাব কেন?
শহীদ সাহেবঃ তাহলে তো এতে আপনার কোন সমস্যা হওয়ার কথা না।
কঃ আপনি তো এখানে আরেকবার নাকি চার্জে ছিলেন আপনার তো জানার কথা ঋণ কম হলে আমাদের কি সমস্যা। স্যার আগের স্যার ৫০০০ এ ১০০০ নিত আপনি না হয় আরও ৫০০ বেশী নিয়েন আমি ৫০০ কম নিব। সরকারী টাকা স্যার আপনারা এভাবে আটকে রেখে কি লাভ। আর আমরা তো ক্ষমতা তে যেকোনো সমস্যা হইলে আমি রাজনৈতিক ভাবে শেল্টার দিব।
শহীদ সাহেব কিছু না বলে নিজের কাজে মণ দিলেন। এভাবে অনেকক্ষণ যাওয়ার পর অস্থির হয়ে লোকটি বলল স্যার কোন জবাব দিলেন না?
শহীদ সাহেব তার চামড়ার স্যান্ডেল পরিহিত পা টেবিলের নিচ থেকে বের করে আনলেন এবং লোকটিকে পায়ের সামনে এসে দাড়াতে বললেন।
কঃ আপনার জুতা দেখে কি লাভ স্যার। পুরনো হলে আরেক জোড়া আমার ভাইয়ের দোকান থেকে পাঠিয়ে দিব।
শহীদ সাহেবঃ না পুরনো না দেখেন তো জুতাগুলো কবে কালি করিয়েছি?
কঃ মনে হয়ত স্যার আশার পথেই করিয়েছেন।
শহীদ সাহেবঃ না আসলে জুতাগুলো কিনা হয়েছে ৬ মাস পূর্বে এবং এই ৬ মাসে একবারও কালি করাইনি।
কঃ কি যে বলেন স্যার, আমার সাথে মজা করতেছেন। (প্রসস্থ হাসি)
শহীদ সাহেবঃ নাহ মজা না আসলে আপনাদের এই ব্রাঞ্চে আশার পর থেকে দৈনিক এই আপনার মত চেয়ারম্যানরা এসে আমার জুতাগুলো চেটে দিয়ে যায় তাই আর কালি করানোর প্রয়োজন পরে না। আপনি চাইলে চেটে দেখতে পারেন কোন ময়লা নাই। আর কৃষি ঋণ এর টাকা ভাগ এর ব্যাপারে বলছিলেন না, ওটা আসলে তাদেরই দরকার হয় যারা জুতা কালি করায় আর আমার জুতা তো আপনারা চেটে দেন তাই কালির ও দরকার পরেনা আর ভাগ বাটোয়ারার ও দরকার নাই।

ক মুখ কাঁচুমাচু করে দৌড়ে পালাল আর কোনদিন ঐ লোক ব্যাংকের ত্রিসীমানাতে আসেন নাই।

আজকের দিনে ভিসি/ প্রোফেসর গন দলীয় পরিচয় পেলে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ান। অনেকে তো চড় খেয়ে চড় হজম করেন। দেখেন এই গল্প থেকে কিছু শিক্ষাগ্রহণ করা যায় কিনা। একজন ব্যাংকের ব্যাবস্থাপকের প্রশাসনিক তেমন কোন ক্ষমতা না থাকার পরেও তিনি কিন্তু তার মাথা বিক্রয় না করেই ২৫ বছর বিভিন্ন শাখার ব্যাবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাকে এই জন্য যে মাসুল গুনতে হয় নি তা নয়। তিনি কিন্তু এত সততার সাথে দায়িত্ব পালন করার পরেও ২৫ বছর একই পোষ্টে (প্রিন্সিপ্যাল অফিসার) কর্মরত ছিলেন প্রোমোশন পান নি। তাই বলে প্রোমোশনের জন্য নিজের বিবেক অন্যের হাতে তুলেও দেন নি।

আপনি যদি শুধু ঘুষ না খেয়েই মনে করেন আপনি সৎ তাহলে আমি বলব আপনার মধ্যের কপটতাই এই কথা আপনাকে দিয়ে বলাচ্ছে। কারন সৎ সেই যার এই ঘুষ না খাওয়ার সাথে সাথে সৎ সাহস আছে। যে ব্যাক্তি মিথ্যা কে মিথ্যা বলতে জানে। সামাজিক অবস্থানের ভয়ে মিথ্যাকে সত্য বলে না।

(যা শিক্ষণীয় ছিল এখানেই শেষ। একান্ত ইচ্ছা না থাকলে নিচের অংশ না পরলেও চলবে)

এই শহীদ সাহেবের পরিচয় জানতে যদি কেউ আগ্রহী হন তাঁদের জন্য বলছি তিনি আমার বাবা। তার যে গুনটি আমি আমার মধ্যে দেখতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করি এই ঘটনাটি তেমন একটি গুনের বহিঃপ্রকাশ তাই শেয়ার করলাম যদি আরও কারো জন্য তিনি প্রেরনা যোগা

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মে, ২০১৫ সকাল ১০:২৪

সাঈদ মোহাম্মদ ফাহিম আবরার বলেছেন: ইনশাল্লাহ আপনার বাবা সততার জন্য পুরস্কৃত হবেন। হতে পারে পুরস্কারটি একজন সুপুত্র পাওয়া। এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর হয় না।

১৭ ই মে, ২০১৫ সকাল ৭:০৯

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: হতে পারে হয়ত। আমার মনে হয় পুরুষকারের তুলনাতে তিনি সৎ এই আত্মতৃপ্তি ই তিনি বেশী চেয়েছিলেন। এই আত্মতৃপ্তি যে কেবল একজন সৎ লোকই অনুধাবন করতে পারেন।

২| ১৬ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০০

শামছুল ইসলাম বলেছেন: বড্ড কঠিন সময় পার করছি আমরা-তবুও আপনার বাবা,আপনি-সকল অপ্রাপ্তিকে মেনে নিয়ে,স্রোতের বিপরীতে চলছেন-উত্তম পুরস্কার তো মহান আল্লাহ্ ছাড়া কেউ দিতে পারেন না!!!!
ভাল থাকুন,সবসময়!!!

১৭ ই মে, ২০১৫ সকাল ৭:০৯

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: ধন্যবাদ সামছুল ভাই

৩| ১৬ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৪

মনসুর-উল-হাকিম বলেছেন: মাশাআল্লাহ, সুন্দর লিখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ, জাজাকাল্লাহু খাইরান। শুভেচ্ছান্তে ধন্যবাদ।

এই দুনিয়াতে শহীদ সাহেবের সম্পদের প্রাচুর্য না থাকলেও মহান আল্ললাহ জান্নাতে তাকে অনেক মর্যাদা দিবেন ইনশাআল্লাহ।

আমার বাবাও একইভাবে বহুবছর একই পোষ্টে (প্রিন্সিপ্যাল অফিসার) কর্মরত ছিলেন, প্রোমোশন পান নি। আমার বাবার বস তাকে বলতেন যে, আমার বাবা আধুনিক দুনিয়া বোঝেন না !!

এক জন সৎ মুসলমান যখন বিশ্বাস করে যে, সকল রিজিক ও সম্মনের মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ তখন এই দুনিয়ায় সৎ থাকার সংগ্রাম তার জন্য হয়ে যায় পবিত্র জিহাদ।

মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।

১৭ ই মে, ২০১৫ সকাল ৭:১২

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।

আপনার বাবার বসকে এবং আপনার বাবাকে আমি পরিষ্কার কল্পনা করতে পারি। আমার বাবার ও এমন একজন বস ছিলেন এবং তাকে ডিমশন করাতে আমার বাবা অগ্রণী ব্যাংক করতিপক্ষকে বাধ্য করিয়েছিলেন।
দোয়া করবেন আমিও যেন সৎ এবং সৎ সাহসী হয়ে বাঁচতে পারি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.