![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বাংলাদেশি ....আমি বাঙালী....আমি মুসলিম....আমি বাংলার জন্য জীবন দিতে সর্বদা প্রস্তুত ।
অনেক দিন আগের কথা। এক প্রতন্ত্য অঞ্চলে আবদুল্লাহ নামক এক কৃষক ছিল। জমির আয় দিয়ে তার চার জনের সংসার ভালই চলে যেত। প্রতি বছরের সংসার খরচের পরে উদ্ধৃত টাকা আবদুল্লাহ ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার খরচের জন্য জমিয়ে রাখত। তার অনেক দিনের স্বপ্ন সন্তানগুলো বড় হয়ে অনেক শিক্ষিত এবং নামকরা মানুষ হবে। মানুষকে আলোর পথ দেখাবে। যেহেতু অর্থাভাবে নিজে পড়াশুনা করতে পারেন নাই সেহেতু এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিল না।
গ্রামের মেঠো পথের ক্লান্তি যেন সন্তানদের জ্ঞানার্জনের পথে বাধা না হতে পারে সেজন্য নিজের সাধ্যের মধ্যে দুটো গাধা কিনে ঘোড়ার গাড়ির মত গাড়ি তৈরি করে দিলেন। গাধা দুটোকে আবদুল্লাহ নিজের হালের গরুর চেয়েও অনেক বেশি যত্ন করতেন। কারন হালের গরু অসুস্থ হলে অন্যের গরু দিয়ে হাল চাষ করা যাবে কিন্তু গাধা অসুস্থ হলে সন্তানদের লেখাপড়া বাধাগ্রস্থ হবে। তবে গাধা গুলোকে খেতে দিয়ে কিছুক্ষন পরে তিনি ওগুলোকে চাবুক মারতেন যার ফলে গাধা গুলো সর্বদা তার নির্দেশ মেনে চলত।
এভাবে আবদুল্লাহর দিন গুলো ভালো ভাবেই কেটে যাচ্ছিল। ছেলে মেয়েও পড়াশুনাতে ভালো ফলাফল করছিল। তার স্বপ্ন আরও সুদৃঢ় হল। ছেলেমেয়ের সফলতার এবং ভবিষ্যৎ জ্ঞানের বহর চিন্তা করে গর্বে তার বুক ফুলে উঠত। আবদুল্লাহর এক বন্ধু দেশের নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে এখন খুব বড় মানের মানুষ। তাঁর কথা শুনলে যেকোনো মানুষ পরিবর্তন হয়ে যেতে বাধ্য বলে আবদুল্লাহর ধারণা। কি তাঁর বাচন ভঙ্গি, কি তাঁর জ্ঞানের বহর! আব্দুল্লাহর ইচ্ছা ছেলেটা এইচ এস সি পাশ করলেই বন্ধুর বাড়িতে নিয়ে যাবেন বন্ধু যেভাবে বলে সেই ভাবেই পড়াবেন।
আব্দুল্লাহর এমন স্বপ্ন বুননের মধ্যেই ছেলে এস এস সি পাশ করল। গ্রামের ছেলে এ+ পেয়েছে শুনে আব্দুল্লাহর বন্ধু বলল ওকে এইচ এস সি তে ঢাকা ভর্তি কর যেন এইচ এস সি তেও এমন ভালো ফলাফল করতে পারে। আবদুল্লাহ বন্ধুর কথা মেনে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল টাকা যায় যায় যাক ছেলেকে ঢাকাতেই ভর্তি করাবে।
পরদিন ছেলেকে ডেকে বলল "ওমর তোমার একটা ইচ্ছা আমি পুরন করব যদি আমার সাধ্যের মধ্যে হয়"।
ওমরঃ তাহলে বাবা আমাদের গাধার গাড়িটা পরিবর্তন করে ঘোড়ার গাড়িতে রুপান্তর করে দাও। ক্লাসের সবাই এটা নিয়ে হাসা হাসি করে।
আব্দুল্লাহঃ এটা আমার সাধ্যের বাইরে বাবা। দুঃখিত আমি পারলাম না।
ছেলে মন খারাপ করে চলে গেল। আব্দুল্লাহরও মন অনেক খারাপ হল। সে আশা করেছিল ছেলে শহরে পড়তে যেতে চাইবে। তা না করে ছেলে এটা কি চাইল! ঘোড়া কেনা তার সাধ্যের বাইরে ছিল না কিন্তু ছেলে যে কারনে ঘোড়া চাইল তা আব্দুল্লাহর কাছে নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক মনে হল। সে বুঝতে পারল ছেলে এখনও অতটা জ্ঞানের অধিকারি হয় নি যে তাকে ঢাকা পড়াশুনা করতে পাঠানো যাবে। বিকালে বন্ধুকে জানিয়ে দিল ছেলেকে সে এইচ এস সি গঞ্জের কলেজেই পড়াতে চায়। আব্দুল্লাহর বন্ধু ঐ গঞ্জের কলেজে পড়েই উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতে মেধা তালিকার শীর্ষে ছিল, সুতরাং ওমর ও চেষ্টা করলে এমন কিছু করতে পারবে বলেই তার বিশ্বাস।
ওমর এইচ এস সি পাশ করার পড়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করবে বলে বায়না ধরল কারন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি সেশনঝটের ফলে ৪/৫ বছরের কোর্স ৭/৮ বছর লেগে যায়। ওমর বাবার এই কষ্টের ভার খুব দ্রুত কমাতে চায় তাই সে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে দ্রুত চাকুরি নেওয়ার কথা বাবাকে জানায়। কিন্তু আবদুল্লাহ নাছোড় বান্দা ব্যক্তি। তার একই কথা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ বছর লাগলে আমি ১০ বছর পড়েই তোমাকে গ্র্যাজুয়েট হিসেবে দেখতে চাই। অগত্য ছেলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য চেষ্টা করতে লাগল। প্রস্তুতি ভালো না থাকার কারনে ওমর কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাতে ফেল করল। আব্দুল্লাহর বন্ধু যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণীবিজ্ঞান বিষয়ে সে ভর্তি হল। বন্ধু আবদুল্লাহকে বুঝাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যনকৃত বিষয় একটু গৌণ ব্যাপার ওমরকে ভালভাবে পড়তে বল যেন এই বিষয়ের শিক্ষক বা আরও ভালো কিছু হতে পারে। কিছু না বুঝলে আমাকে জানাতে বলিস। ছেলেকে হলে উঠিয়ে দিয়ে আবদুল্লাহ গ্রামের পথে রওয়ানা দেয়। পথ চলতে চলতে অজানা আশঙ্কার সাথে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা তাকে দোলা দিতে থাকে।
ওমর একেবারে দেড় বছর পরে প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ করে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যায়। আব্দুল্লাহর মনে আজ খুব আনন্দ বহুদিন পরে ছেলে এসেছে। ওমরের মা ছেলের পছন্দের অনেক খাবার তৈরি করে। রাতে খেতে খেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্প শুনছিল আবদুল্লাহ। কত বড় বড় শিক্ষক, কত জ্ঞানী ব্যক্তির ছাত্র তার ওমর আজ। শেষের দিকে ওমর বলছিল আসলে তোমরা অনেক কিছুই জান না আমাদের স্যাররা কত কিছু জানে। আবুল স্যার তো একজন জিনিয়াস আমি ওনার মত নামকরা শিক্ষক হতে চাই। ওনাদের মত হতে গেলে অনেক জানতে হয় আমি উনার কাছ থেকে ধার করে ক্লাসের বইয়ের বাইরে অনেক বই পড়ি। স্যার বলেছেন আমার জ্ঞান চক্ষুর উন্মচনে নাকি এই বই অনেক জরুরী। আব্দুল্লাহঃর বুকটা গর্বে ভরে যায়, ছেলে এখন ঠিক পথেই আগাচ্ছে।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ছেলে দেখল বাবা গাধা গুলোকে খাবার দিয়ে কিছুক্ষণ পরে চাবুক নিয়ে আসছে। ছেলে বাবাকে থামিয়ে বলল বাবা এই প্রানিকে মারা খুব অন্যায় কাজ। আমি ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি তুমি কখনো গাড়ি টানার সময়ও গাধা গুলোকে মার না কিন্তু এই খাবার এর মাঝে এগুলোকে মার এটা আমার পছন্দ না। এটা একটা অবিবেচকের মত কাজ কর তুমি। আব্দুল্লাহ প্রমোদ গুনল বলল, তো তুমি কি চাও?
ওমরঃ আমি ১৫ দিন বাড়ি থাকব এই ১৫ দিন এই গাধার যত্ন আমি করব। আমি তোমাকে এগুলোকে মারতে দেব না।
আব্দুল্লাহঃ ঠিক আছে এখন থেকেই দায়িত্ব নিয়ে নাও। তবে আমি কিন্তু গাধা গুলোকে পরিস্কার পানি পান করাই এবং আমার ভয়ে ওরা ঐ পানি ই পান করে। এটা যেন ঠিক থাকে।
ওমর গাধাগুলোর খুব যত্ন করে কারন তার আবুল স্যার বলেছে "জীবে দয়া করে যেজন সেজন সেবেছি ঈশ্বর"। বাবা গাধাগুলোর প্রতি খুব নির্দয় আচরন করে। করবে না কেন, বাবার যে শিক্ষা নেই, আবুল স্যারের দেয়া বইগুলোর মত জ্ঞানের ভাণ্ডার কি বাবা কখনো পেয়েছে? বাবাকে আস্তে আস্তে এই জ্ঞান গুলো দিতে হবে। সে যাই হোক প্রথম কয়েকদিন গাধা ওমরের কথা মতই কাজ করতে লাগল। কিন্তু দিন যেতে যেতে গাধাগুলো কেমন যেন বেয়াড়া হয়ে যাচ্ছিল। একদিন ওমর আদর করে পানি খেতে দিলে একটা গাধা ভো দৌড় দিয়ে পাশের গোবরের ডোবার পানি ঘোলা করে খেতে যেয়ে ওর মধ্যে পড়ে ত্রাহি স্বরে চিৎকার করতে লাগল। চিৎকার শুনে আব্দুল্লাহ এবং বাড়ির কাজের লোক দৌড়ে এসে দেখল ওমর নিজেও গাধাকে বাঁচাতে ঐ গোবরের ডোবাতে নেমে পড়েছে। একটা নিরীহ প্রানির জীবন বাঁচাতে ছেলের এই কাজ তার ভালো লাগলেও প্রাণীটির আজকের এই অবস্থার জন্য ছেলের অবদান এবং ছেলের বুদ্ধির স্বল্পতা আব্দুল্লাহ ভুলতে পারছিল না। বহু কষ্টে দুজনকে উদ্ধার করে ঘরে ফিরে এলো।
রাতে ছেলেকে খেতে দিয়ে গাধা মারার চাবুক দিয়ে পিছন থেকে দু ঘা মেরে দিল ছেলের পিঠে। ছেলে তো ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে বাবাকে অশিক্ষিত খ্যাত, মূর্খ, গোঁড়া বলে গালি দিয়ে উঠে চলে গেল। ওমর খুব ভোরে উঠে ঢাকা চলে গেল। আর বাড়ি ফিরবে না বলে পণ করল। শিক্ষা নিয়ে আবুল স্যারের মত বড় মানুষ হয়ে বাবাকে বুঝিয়ে দিবে তার বন্ধুর মত গোঁড়া শিক্ষিত নয় সঠিক শিক্ষিত হতেই সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে।
দুদিন পরে আব্দুল্লাহ বন্ধু নেয়ামতের কাছে গিয়ে সব খুলে বলল।
আব্দুল্লাহঃ দুঃখের কথা কি বলব, নেয়ামত ও এমন জ্ঞান লাভ করেতছে যে গাধা আর গরুর সাথে আচরণকে আলাদা করতে পারছে না! এগুলো নাকি ওদের শিক্ষক শিক্ষা দেয়!
নেয়ামতঃ বন্ধু, তোর ছেলে যে শিক্ষকের কথা বলেছে সে আমার ইয়ারমেট। ছাত্র জীবন থেকেই সে ধর্মকর্মকে অজ্ঞানতার অভিশাপ হিসেবে দেখত। আমি ওকে ভালো করেই চিনি। ওর কথাবার্তাই হয়ত তোর ছেলেকে আমাদের মত ধার্মিকদের খারাপ মানুষ হিসেবে চিন্তা করতে প্রলুব্ধ করেছে।
আব্দুল্লাহঃ তাহলে, এদের মত শিক্ষকদের কাছে পড়ানোর জন্য আমি সাড়া জীবন এত কষ্ট করলাম!
নেয়ামতঃ বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কেবল আবুলদের মতই শিক্ষক রয়েছে তা কিন্তু নয়। ভালো কিছু মানুষও আছে। যারা সত্যিকারের জ্ঞানী, যারা জ্ঞানার্জন আর ধর্মকে পরস্পরের প্রতিদন্ধি ভাবে না। সমস্যা হল, আবুলেরা মনে করে জ্ঞানী হওয়ার প্রথম লক্ষন হল সৃষ্টিকর্তা কে বা তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করা। আর পূর্ণ জ্ঞানী হবার অর্থ হল ইসলাম ধর্মকে অবমাননার সাথে সাথে এই ধরনের কথা বার্তা বলা বা বইপুস্তক লেখা। কলাম লিখে আল্লাহ্র অস্তিত্ব নিয়ে মশকরা করা এদের জ্ঞানের মুকুটে নতুন পালক। বিভিন্ন সূক্ষ্ম ছলচাতুরীর আড়ালে আবডালে এরা সর্বদা ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানোকে এদের পবিত্র দায়িত্ব মনে করে। ওমরের বয়সের একটি ছেলে খুব জ্ঞানী না হলে এদের এই সকল ফাঁদ ধরতে পারে না। ফলে সহজেই বিগড়ে যায়। যদিও আবুলদের ভাষাতে ওরা জ্ঞানের পথে প্রবেশ করে। এমন কথা বলতে পারলে তাদের ধীরে ধীরে খ্যাতিও বাড়ে। মিডিয়া তাদের নিয়ে অনেক ফিচার করে। ধীরে ধীরে তারা জ্ঞানের বা জ্ঞানী লোকের উদাহরণ হয়ে যায়!
মজার ব্যাপার হল, এরা নিজেদের লিবারেল বললেও যে সকল ছেলেপেলে এদের এই সূক্ষ্ম জালিয়াতি ধরতে পারে তাদের এরা দুচোখে দেখতে পারেনা। আমিও এমন একজন। আমি ছাত্র অবস্থাতে এদের এই সকল বিষয়ের প্রতিবাদ করাতে আমাকে ঐ বিভাগের শিক্ষক হতে দেয়া হয় নি! যদিও এখন আল্লাহ্ আমাকে ভালই রেখেছেন তাদের অনেকের তুলনাতে।
আব্দুল্লাহঃ তাহলে এখন আমার ছেলের কি হবে?
নেয়ামতঃ ওকে নিয়ে আমার কাছে চলে আয়, আমি বুঝিয়ে দিব। আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে। ওকে বুঝাতে হবে "ধর্ম ছাড়া জ্ঞান পঙ্গু"। পঙ্গুত্ব নিয়ে কখনো স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায় না।
আব্দুল্লাহ বন্ধুর বাসা থেকে ছেলের হলের পথে পা বাড়ায়। কেন যেন তার মনে হতে থাকে ছেলেকে এই সব শিক্ষকের কাছে পড়তে না দিয়ে তার নিজের বাবার মত চাষা বানালেও খারাপ হত না। অন্তত এই সব আবুলদের খপ্পরে তাকে পড়তে হত না। কিছুক্ষণ পরেই আবার চিন্তা করে নেয়ামত ও তো ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র। যেহেতু নেয়ামত এমন বিগড়ে যায় নি সেহেতু তার ছেলেও হয়ত ধীরে ধীরে ঠিক হবে। তবে এই আবুলগণের খপ্পরে পরে কত আব্দুল্লাহদের স্বপ্নের এমন অপমৃত্যু হয় তা কি এরা জানে? এরা কি জানে এই অপমৃত্যুর অব্যাক্ত যন্ত্রণা কত ভয়াবহ?
১৩ ই মার্চ, ২০১৭ ভোর ৬:০৯
শেখ এম উদ্দীন বলেছেন: উদ্দেশ্য নিয়েই থাকি তাহলে বাখোয়াজ থেকেই হয়ত ভালো কিছু আসবে একদিন। কি বলেন?
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:১১
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: উদ্দেশ্য ঠিক ছিল, কিন্তু গল্পটা বাখোয়াজ...