![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ বলে ভুল করলেও নিজেকে মানুষই বলব আমি।
পশ্চিমবঙ্গের নগাঁও জেলার ডিমরুগুড়ির বাসিন্দা শাহনুরের বিয়ে হয়েছিল ১৫ বছর বয়সে। স্বামী তবিউল হোসেন মাছ বিক্রেতা। নিবাস গোলাঘাটের তিন নম্বর ওয়ার্ড, শান্তিপুর এলাকার জানপুর গ্রামে। বিয়ের পরেই শাহনুর দেখেন তাদের বাড়ি শ্মশানঘাটের গা ঘেঁষে। আশপাশে কোনো বাড়িও নেই। তাই তাদের ধর্মপরিচয় না জেনেই দিনভর শ্মশানে আসা মানুষজন কখনও জল, কখনও কাঠ কাটার জন্য কুড়ুল, কখনও বা বালতি-মগ চাইতে আসতেন। সব দাবি মেটাতেন সদ্যবিবাহিতা কিশোরী। এভাবেই শান্তিবন শ্মশানের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন শাহনুর। আগে আবর্জনার স্তূপ জমে থাকত শ্মশানে। একা হাতে সেই আবর্জনা সাফ করে শান্তিবনের ভোল বদলেছেন তিনি।প্রতিটা রাতই প্রায় নির্ঘুম যায় শাহনুর বেগমের। কখনো তন্দ্রায় চোখ দুটো বুজে এলেও হঠাৎই ঘুম ভাঙে শবযাত্রীদের ‘বল হরি, হরিবোল’ ধ্বনিতে। তন্দ্রা ভেঙে যায় কর্তব্যের টানে। শীত হোক বা বর্ষা, শান্তিপুরের ‘শান্তিবন’ শ্মশানের ভরসা শাহনুর বেগমকে এক নামেই চেনে আশপাশের মানুষ!
অসহিষ্ণুতা আর জঙ্গিবাদে যেখানে সারাবিশ্ব উন্মাতাল সেখানে একজন শাহনুর বেগম দৃষ্টান্তই বটে। হিন্দু-মুসলমানে হানাহানির খবর জানে না অখ্যাত গ্রামের শাহনুর। সেসব খবর জানার সময় কোথায় তার? তার সারাটাদিনই কেটে যায় হিন্দুদের শ্মশানঘাটে কাঠ জোগাতে, ফুল ফোটাতে। একাজ করছে সে তিন দশক ধরে।ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের সাক্ষাৎকারে শাহনুর বলেন, ‘কত অসহায় অবস্থায় মানুষ শ্মশানে আসে। একে স্বজন হারানোর দুঃখ, তার উপরে এত নিয়মকানুন, সরঞ্জাম। লেখাপড়া না শিখলেও, মানুষ হিসেবে তাদের পাশে না দাঁড়ানো যে অন্যায় হতো সেটা বুঝতাম। তাই আর পেছন ফিরে তাকাইনি। ভাবিনি ধর্মীয় অনুশাসনের কথা। শ্মশানে আসা মানুষকে সাহায্য করায় আমার কোনো ক্লান্তি নেই।’
শাহনুরের পরিবারও এখন তার কাজের শরিক। স্বামী তবিউলের কথায়, ‘মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই বড় ধর্ম। শাহনুর সেটাই করে। তাই বাধা দেয়ার প্রশ্নই ছিল না।’
গভীর রাতে শবদেহ এলেও নির্ভীক শাহনুর একলাই বেরিয়ে পড়েন। কাঠের জোগাড় করা থেকে দাহ শেষে শ্মশানঘাট পরিষ্কার করা পর্যন্ত তার ছুটি নেই। আমরাও এখন সাধ্যমতো হাত লাগাই।’
৪৫ বছরের শাহনুর বেগম এখন এক পুত্র ও দুই কন্যার মা। ছেলে ফিরোজ, মেয়ে সুমিরাও মায়ের পথে হেঁটে শ্মশানঘাট পরিচ্ছন্ন রাখছে। অনেক সময়ই মৃতের পরিবার শাহনুরকে টাকা দিতে চায়। কিন্তু আজ পর্যন্ত দাহকার্যে সাহায্য করার জন্য কারও কাছ থেকে টাকা নেননি শাহনুর। শান্তিবন শ্মশান কমিটির সাধারণ সম্পাদক লখি সিংহ গগৈ বলেন, ‘১৯৮৬ সাল থেকে এক হাতে শ্মশান দেখভাল করা ওই দরিদ্র পরিবারকে একাধিবার অর্থ সাহায্যের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এমনকী শ্মশান সাফ রাখার বিনিময়ে শাহনুরকে মাসিক ভাতা দেয়ার প্রস্তাবও পাঠিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু সব প্রস্তাবই ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। শুধু জেলা নয়, গোটা রাজ্যে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির জীবন্ত নির্দশন শাহনুর।’
সংখ্যালঘু প্রধান জানপুরের মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছ থেকেও বাধা পাননি শাহনুর। তার কথা জেনে প্রজাতন্ত্র দিবসে তাকে সংবর্ধনা দেন জেলাশাসক আনোয়ার-উল-হক। সভায় প্রথমে আসতেই চাননি শাহনুর। শেষ পর্যন্ত গ্রামের মানুষের চাপে মঞ্চে ওঠেন তিনি, বলেন- ‘সবাই সবার পাশে দাঁড়ালে সম্প্রীতির জন্য মিটিং-মিছিলের প্রয়োজন হয় না।’
২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৪১
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: সত্যিই তাই।
৩| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৪২
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ‘সবাই সবার পাশে দাঁড়ালে সম্প্রীতির জন্য মিটিং-মিছিলের প্রয়োজন হয় না।’
একাবের নির্যাস কথা। এক বাক্যের কথাতেই সব বলা হয়ে গেছে।
সত্যি অতুলণীয় শাহনূরের ত্যাগ, সেবা এবং সম্প্রীতিবোধ। স্যলুট।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫২
চাঁদগাজী বলেছেন:
ভালো, ভালো উদাহরণ; তবে, মোটামুটি ব্যতিক্রম।