নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইচ্ছে থাকিলে উপায় হয়, আমার কেবল উপায় থাকিলেই ইচ্ছে হয়

শিস্‌তালি

Stay Hungry, Stay Foolish!Stay Sexy, Stay Virgin!!!

শিস্‌তালি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পের পেছনের গল্প (আমার মায়ের লেখা)

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৮

গল্পের পেছনের গল্প

আজ থেকে কয়েক বছর আগে ‘মৌচাকে ঢিল’ এর বিশেষ সংখ্যায় আমার একটি গল্প উঠেছিল ‘বিয়ের গল্প’ নামে। ভুলক্রমে গল্পের শেষে আমার নামসহ মোবাইল নম্বর ছাপা হয়ে যায়। এরপর গল্প পড়া শেষে পাঠকদের কাছ থেকে এতবেশী ফোন এসেছিল যা আমাকে বিস্ময়ের পর বিস্ময় উপহার দেয়! মধ্যপ্রাচ্য, লন্ডন, আমেরিকা থেকে যেমন ফোন কল এসেছে, তেমনি বাংলাদেশের পঞ্চগড়, টেকনাফ ও অন্যান্য সদর জেলা কোনটাই মনে হয় বাদ যায়নি। গল্পটা সবার মনে দাগ কেটেছিল বলে প্রথমেই সবাইকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। তবে ফোন করে প্রশংসাসূচক সেসব মন্তব্যের কথা না লিখে আমি পাঠকদের সাথে বিচিত্র কিছু মজার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবার লোভ সামলাতে পারছিনা। আশা করি পাঠকরাও বেশ মজা পাবেন। তবে আমি সংগত কারনেই কারও আসল নাম প্রকাশ করছি না।
ময়মনসিংহ থেকে হাফিজ নামে একজন ফোন করে জিজ্ঞেস করল, আপু আপনার প্রথম সন্তান কি মেয়ে? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কেন?
- আসলে আপু আমিও আমার প্রথম বাচ্চাটা মেয়ে হলে বেশী খুশী হব। বললাম, ভালইতো, নিশ্চয় হবে। এরপরই আমার অবাক হবার পালা।
- আপু আমিত বিয়েই করিনি। মাস্টার্স পড়ছি কেবল।
এবার হাসি পেল খুব! বললাম, এত আগেই চিন্তা করে রেখেছেন?
বলল, আপু আপনাকে একটি গোপন কথা বলি। আমি ঠিক করে রেখেছি আমার মেয়ের নাম ‘বৈশাখী’ রাখব। সুন্দর না নামটা? আসলে বন্ধুদের বললে ‘বৈশাখী’র বাপ বলে ক্ষেপাবে! তাই আপনাকে বললাম- আপনি লেখিকা মানুষ, আপনি বুঝবেন!
তার এই অদ্ভুত গোপন কথা শোনার পর আমার কি মন্তব্য করা উচিত বেশ অনেকক্ষণ বুঝতে পারছিলাম না!
ঠাকুরগাঁও থেকে নাসের নামে একজন ফোন করে বলল, আপনার গল্পের নায়িকা যেমন বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছে আমিও তেমনি বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছি! কারণ জিজ্ঞেস করতেই অনুরোধ করল, আন্টি আমার পুরো কথাটি আপনাকে আগে ধৈর্য ধরে শুনতে হবে। মনে মনে হাসলাম, এখন দেখি কাউন্সেলিংও করতে হচ্ছে! এরপর যা জানলাম তার সারমর্ম হচ্ছে, সে বাবামা’র একমাত্র সন্তান এবং ওনারা এখন তার জন্য পাত্রী দেখছেন। ছেলের নিজের কোন পছন্দ নেই। কিন্তু সমস্যা হল তার অনেক বন্ধুবান্ধব নিজের পছন্দে বিয়ে করে এখন অসুখী। কারো কারো ইতিমধ্যেই সংসার ভেঙ্গে গেছে আবার যারা বাবামা’র পছন্দে বিয়ে করেছে তারাও অনেকেই অশান্তিতে আছে। তাই সে অজানা আশঙ্কায় বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছে।
বললাম, তোমার যেহেতু নিজের পছন্দ নেই তাহলে বাবামা’র পছন্দেই বিয়ে কর আর আগে থেকেই অসুখী হবে ধরে নিচ্ছ কেন? চারপাশে কিন্তু বিয়ে করে সুখী হবার মানুষের সংখ্যাই বেশী। আর আমার গল্পের দাদাদাদুর মত একে অন্যকে ভালবাসবে, সমীহ করবে আর সবসময় পারস্পরিক স্রদ্ধাবোধ রেখ, দেখবে তোমাদের মত সুখী আর কেউ চাইলেও হতে পারবে না। আরও বেশ কিছু মাতৃসুলভ উপদেশ দিয়ে সেদিন ফোন রেখেছিলাম। জানি না সেই ছেলেটি বিয়ে করেছিল কিনা কিংবা বিয়ে করে সুখী হতে পেরেছিল কিনা!
নোয়াখালী থেকে অম্লান নামে একজন ফোন করে বলেন, উনি প্রবাসে থাকেন। বছরে দুবার দেশে আসেন। উনি আমার গল্প ভালো লাগার কথা বলে বললেন, আমার দুটো বাচ্চাও আছে, কিন্তু আমার স্ত্রী কখনোই আমার পরিবারের কাউকে সহ্য করতে পারে না। আমার দাদী আমাকে খুব ভালবাসেন কিন্তু ও বাপের বাড়ি থেকে আসতেই চায় না। আপনি কি আমার স্ত্রীকে একটু বুঝিয়ে বলবেন? আমি অবাক হয়ে বললাম, উনিতো আমাকে চিনেন না কাজেই আমার কথা হয়তোবা শুনবেন না। তার চেয়ে ওনাকে আমার গল্পটি পড়তে দিন। বললেন, পড়তে দিয়েছিলাম... পড়ে বলল যতসব ফালতু ব্যাপার, গল্প আর বাস্তব কখনও এক হয় না! কিছুটা আহত হলাম, বুঝলাম এই অহংকারী মহিলা নিয়ে বেচারাকে ভালোই ঝামেলা পোহাতে হবে! বললাম, তাহলে আমার আর ওনাকে বুঝিয়ে কোন লাভ হবে না, তার চেয়ে খোদার কাছে দোয়া করছি উনি যেন আপনার স্ত্রীকে সুমতি দেন।
ঢাকা ভার্সিটির ল’ এর ছাত্র বলল, দেখুন আপনার গল্পের মত আমার বাবা-মাও সবসময় ঝগড়া করেন। বললাম, আমার গল্পটা পড়তে দেন। বলল, পড়িয়েছি দুইজনকেই কিন্তু এই জীবনে আর সংশোধন হবে বলে মনে হয় না। বললাম, তাঁদের দুজনকে বদলাতে না পারলেও আপনার জীবন যেন সুন্দর হয় এই কামনা করি।
ডিফেন্সের টিটু ফোন করে বলেছিল, সে কঠিন ডিউটির মাঝে অবসর পেলে ম্যাগাজিন পড়ে। আমার গল্পটা পড়ে তার দাদীর কথা মনে পড়ে গেছে। ছোটবেলা থেকেই সে ভয়ংকর দাদীভক্ত! ভবিষ্যতে গল্প লিখলে আমি যেন অবশ্যই তাকে জানাই। লিখেছি ঠিকই কিন্তু জানানো হয়নি কখনও।
একজন রক্ষণশীল মানুষ ফোন করে বললেন, আপনার স্বামী জানে আপনি যে গল্প লিখেন? হেসে বললাম, জানবেনা কেন! আমার স্বামী আমাকে রীতিমতো উৎসাহ দেন গল্প লেখার জন্য! অবাক হয়ে ওনার পাল্টা প্রশ্ন, এই যে আমরা এতজন আপনার লেখা পড়ি আবার ফোনও দিলাম রাগ করেন না উনি? হাসতে হাসতে বললাম, ওতো পাশেই আছে, কথা বলবেন? লোকটি দ্রুত লাইন কেটে দিলেন। ভাবলাম কত আজব মানুষই না আছে দুনিয়াতে!
অনেক এসএমএস এসেছে প্রতিদিন। এক ছেলে নিরলসভাবে প্রতিদিন বাংলা কিংবা ইংরেজিতে হাদীস, কবিতা, বানী লিখে এসএমএস করত। দিনের পর দিন আমার কোন রিপ্লাই না পেয়ে শেষে একদিন লিখেছিল, আপনি এত কিপ্টুস কেন! একটা রিপ্লাইও দিলেন না।
নাহ তারপরও আমি সেই ছেলেটিকে নিরাশ করেছিলাম, কোন রিপ্লাই দেইনি। কারণ এসব ছেলেমানুষি করবার বয়সটা সেই কবেই পার করে এসেছি! তাই আজ এ লেখার মাধ্যমে যারা এসএমএস এর রিপ্লাই আশা করেছিলেন কিংবা যাদের ফোন ধরা হয়নি তাদের সবার কাছেই আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি!
- গুলনাহার ইসলাম মনু
জাকির হোসেন রোড, চট্টগ্রাম।
২৩শে আগস্ট, ২০১৪ ইং

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৩

জোহরা উম্মে হাসান বলেছেন: বড় বিচিত্র আর অদ্ভুত সব অভিজ্ঞতা । পড়ে খুব মজা পেলাম , এও এক অভিজ্ঞতা !

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৯

শিস্‌তালি বলেছেন: ধন্যবাদ আপু :)

২| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৫৭

মামুন রশিদ বলেছেন: আপনার মায়ের প্রতি সালাম । ঐ গল্পটা শেয়ার দিয়েন ।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২৯

শিস্‌তালি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। দিচ্ছি।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৩

শিস্‌তালি বলেছেন: Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.