নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইচ্ছে থাকিলে উপায় হয়, আমার কেবল উপায় থাকিলেই ইচ্ছে হয়

শিস্‌তালি

Stay Hungry, Stay Foolish!Stay Sexy, Stay Virgin!!!

শিস্‌তালি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈদ উল পয়দা

১৭ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৯

১৯৮৪ সালের পবিত্র ঈদ উল ফিতরের দিন আমার জন্ম... অবশ্য আমার পৃথিবীর আলো দেখবার কথা ছিল ঈদের আরও তিনদিন পর কিন্তু বিধাতার প্ল্যান ছিল অন্যরকম... আমার জন্ম রাত নয়টার সময় হলেও জন্মের সুসংবাদটি সবাইকে জানানো হয় তারও তিন ঘণ্টা পর .... তিনদিন আগে জন্মগ্রহণ করবার তিন ঘণ্টা পর কেন সবাইকে তা জানানো হয়েছিল সে কথা বলবার আগে তিনজন মানুষ সম্পর্কে একটু বলে নেই :)
আমার মা খুব চঞ্চল প্রকৃতির মানুষ... আমার চরিত্রের চঞ্চলতার সম্পূর্ণটাই আমার মার কাছ থেকে পাওয়া... আজ থেকে সাড়ে একত্রিশ বছর আগে স্বাভাবিকভাবেই আমার মা আরও অনেক বেশী চঞ্চল ছিল... ঈদের আগের দিনও মেডিকেল চেকআপ করানোর পর তাকে জানানো হয়েছিল সব ঠিকঠাক... বাবু আসতে আরও দিন কয়েক বাকি ... তাই চটপটিপাগল আম্মু ঈদের খুশীতে ঈদের দিন সকালে কয়েক বাটি চটপটি আর বেশ কয়েকটি কাবাব খেয়ে ফেলেছিল (এই কারণেই খুব সম্ভবত কাবাব আমার সবচেয়ে প্রিয় খাবারগুলোর একটি) :)
আর দশ ভাইবোনের মধ্যে আমার বাবার অবস্থান ২য় এবং ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি, একমাত্র আমার জ্যাঠা ছাড়া বাকি আট ভাইবোনই দাদার চেয়েও আমার বাবাকে বেশী ভয় পেত... এবং আমার কেন যেন মনে হয় আজ থেকে সাড়ে একত্রিশ বছর আগে আমার বাবার পারসোনালিটি অনেকটা দিলওয়ালে দুলহানিয়ার কাজলের বাবার মত ছিল ;)
এবং তৃতীয়জন হচ্ছেন আমার নানীজান ... আমার নানী সেই ২০০১ সালে মারা যান এবং আজ পনের বছর পরও তাঁর প্রতি আমার অনুভূতির এতটুকু পরিবর্তন হয়নি... আমার নানু (মানে নানী) হচ্ছেন আমার দেখা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ
ঈদের দিন সন্ধ্যায় একদম হুট করেই আম্মুর খারাপ লাগতে শুরু করে ... যেহেতু ঈদের দিন তাই আমার নানুর বাসা ভর্তি তখন মেহমান ... সেই ঘরভর্তি মেহমানদের কাউকে কিছু না জানিয়ে আমার নানু অনেকটা জোর করে আম্মুকে রাজী করিয়ে আব্বুসহ বেবি ট্যাক্সি করে চট্টগ্রামের মেহেদীবাগ থেকে রহমতগঞ্জের ডাঃ সালমা সিরাজের ক্লিনিক/হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়... আম্মু প্রথমে রাজী হচ্ছিলনা কারণ আগের দিনইতো ডাক্তার বলেছেন সব ঠিকঠাক!
যে তিনজন মানুষের সাথে আপনাদের একটু আগে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি সে তিনজনের কেউই ট্যাক্সিতে বসে কল্পনা করেনি একটু পরই তাদের জন্য ঈদ উপহার অপেক্ষা করছে ...
ডাঃ সালমা সিরাজ সেই ক্লিনিকের উপরেই একটি ফ্ল্যাটে ফ্যামিলি নিয়ে থাকতেন... সৌভাগ্যক্রমে তাকে পাওয়া গেলে তিনি কিছুক্ষণ পরীক্ষা করে বুঝতে পারলেন আমার কোন মুভমেন্ট নেই ...খুব সম্ভবত পাপের দুনিয়ায় আসবার আগে আমি শেষবারের মত মায়ের গর্ভে গভীর শান্তির ঘুম দিয়েছিলাম ;) ডাক্তার বললেন খুব দ্রুত অপারেশন করতে হবে খুব দ্রুত... তিনি নিজেও বুঝতে পারছিলেন না ২৪ ঘণ্টা আগেও সব স্বাভাবিক ছিল হুট করে কেন এমন হল এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার জন্য নানুকে বারবার ধন্যবাদ দিলেন! স্বাভাবিকভাবেই ঈদের দিন সেই সময় ক্লিনিকে অপারেশনের জন্য যথেষ্ট লোকবল ছিল না আর সেই সময় মোবাইলও ছিল না... তাই টিএনটিতে একটার পর একটা ফোন দিয়ে সবাইকে যোগাড় করার চেষ্টা চলতে থাকল! অতঃপর রাত সাড়ে আঁটটার দিকে আম্মুকে এবং আমাকে (আজ্ঞে ইয়ে মানে আম্মুকে নেওয়া আর আমাকে নেওয়াতো সেই মুহূর্তে একই কথা)অপারেশন রুমে ঢুকানো হল! যেহেতু আমার আসার কথা ঈদের কয়েকদিন পরে তাই সেইসময় ঈদ করতে আমার দাদুর বাড়ির সবাই এমনকি আমার একমাত্র বোনও আমাদের গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছিল... আমার জন্মের সময় আপুর বয়স ছিল চার বছর দশ মাস... আপু ভেবেছিল দাদুর বাড়িতে ঈদ করেই পরদিন অন্যদের সাথে শহরে চলে আসবে কিন্তু আব্বু ঈদের দিন আম্মুর (এবং আমার wink emoticon ) পাশে থাকবার জন্য নানুর বাসায় থেকে যায় ... অপরদিকে ঈদের দিন মেহেদীবাগে আমার নানুর বাসায় নানুর সাথে দেখা করতে এসে ওনাকে না পেয়ে সবাই ডাঃ সালমা সিরাজের সেই ক্লিনিকে জড়ো হতে শুরু করে ... দেখতে দেখতেই অপারেশন রুমের ফ্লোরে আমাদের আত্মীয় স্বজনদের বিশাল একটা বাহিনী হয়ে যায় সেই বিশাল বাহিনী যখন জল্পনা কল্পনা করছিল ছেলে হয়েছে না মেয়ে হয়েছে অপারেশন রুমে তখন ডাক্তার ও সহযোগীরা ব্যস্ত আম্মুকে বাঁচানোর লড়াইয়ে ... ... আম্মুর ননস্টপ বমি (খুব সম্ভবত চটপটির প্রভাব :) )কিছুতেই থামানো যাচ্ছিল না... সিজার অপারেশনের পর যা ছিল খুবই রিস্কি... আমার অবস্থাও সেসময় আশ্নকামুক্ত ছিল না... একটা পর্যায়ে নাকি ডাঃ সালমা সিরাজ নিজেই কোরআন শরীফ পড়ে মা-ছেলের জন্য দোয়া করতে থাকেন, ওনার বেশী খারাপ লাগছিল আগের দিন পরীক্ষা করবার পরও একদিনেই এত সিরিয়াস পরিস্থিতি হয়ে যেতে পারে সেটা বুঝতে পারেননি বলে!!! আর অপারেশন থিয়েটারের ফ্লোরে স্ত্রী ও সন্তানের জন্য ভয়ংকর নার্ভাস অবস্থায় পায়চারিরত আব্বুকে দেখে নাকি দিলওয়ালে দুলহানিয়ার কাজলের বাপের পারসোনালিটি টাইপের সাথে কোনভাবেই মেলানো যাচ্ছিল না! ক্লিনিকে আমাদের আত্মীয়স্বজনের সংখ্যা যেই গতিতে বাড়ছিল তার চেয়েও অনেক দ্রুতগতিতে বাড়ছিল সবার টেনশন আর অস্থিরতা...... মুরুব্বীদের অনেকেই নাকি আশংকা করছিল হয়তোবা শেষ পর্যন্ত শিশুসন্তানটিকে বাঁচানো যায়নি নাহয় ডাক্তার সুসংবাদটি জানাতে এত সময় নেবার কথা না ... অতঃপর আম্মুর দীর্ঘ বমি বন্ধ হবার বেশ কিছুক্ষণ পর মা-ছেলে দুজনই আশঙ্কামুক্ত হলে রাত প্রায় বারোটার দিকে আমার জন্মের সুসংবাদটি জানানো হয় ... আমার একমাত্র জ্যাঠার দুই মেয়ে এবং আমার আপুসহ ছেলের ঘরে তিনজন নাতনীর পর প্রথম নাতি হয়েছিল বলে আমার দাদাদাদীরা একটু বেশীই খুশী হয়েছিল... সুংবাদ পেয়ে ঈদের পরদিনই আপুসহ দাদাদাদীরা সবাই গ্রাম থেকে আমাকে দেখতে রওনা হয় ...
খুব সম্ভবত আমার মেজখালা (কিংবা অন্য কেউ) মজা করেছিল বলেছিল, বাপরে বাপ এই ছেলে জন্মানোর সময়ই সবাইকে এত টেনশন দিল বড় হয়ে নাজানি কি হয়! এখনও পর্যন্ত আমি খুব সফলভাবেই মেজখালার আশংকা পুরোপুরি সত্য প্রমান করে চলেছি... নানারকম পাগলামি আর খামখেয়ালীর কারণে এই বয়সেও আম্মুর সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তাগুলোর একটি হলাম আমি :)
কোনদিন কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে আপনার সবচেয়ে স্মরণীয় ঈদ কোনটি তাহলে নিশিচতভাবেই বলব, আমার সবচেয়ে স্মরণীয় ঈদ কোনটি ঠিক নিশ্চিত নই তবে আমার বাবামার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঈদ যে আমার জন্মদিন ছিল সেই ব্যাপারে আমি পুরোপুরি নিশিচত!!!

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৩

বিজন রয় বলেছেন: বাহ! আপনি সৌভাগ্যবান।
+++

১৭ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৮

শিস্‌তালি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই

২| ১৭ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৯

শিস্‌তালি বলেছেন: ‪#‎বঙ্গবন্ধুর_জন্মদিনে_নিজের_জন্মের_কাহিনী :)

৩| ১৭ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:১০

নেয়ামুল নাহিদ বলেছেন: মজা পেলাম ;)

১৭ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৩

শিস্‌তালি বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ১৭ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:১৪

মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: চমৎকার :P

১৮ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:৫৩

শিস্‌তালি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

৫| ১৭ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৪

এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন:
একোটি জন্ম তারিখ ঘটনাকে কত সুন্দর করে পরিবেশন। লেখকের প্রতি সুভেচ্ছা রহিল।

১৮ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:৫৪

শিস্‌তালি বলেছেন: আপনার মন্তব্য পড়ে অনেক খুশী হলাম.. অনেক ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.