নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি \'স্মৃতিকাতরতা \' নামক ভীষণ এক রোগগ্রস্ত, সেই সাথে বিষাদগ্রস্থ মানুষ। আমার চিকিৎসার প্রয়োজন।

স্বপ্নবাজ সৌরভ

আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......

স্বপ্নবাজ সৌরভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছুটি কিংবা ফেরা

২০ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৭



রোদের তেজ ক্রমশ বাড়ছে। বাড়ছে গরম। পুরো পরিবেশ আবদ্ধ যেন তপ্ত গোলোকে। বৃষ্টি নেই অনেক দিন। দেখা নেই কালো মেঘের। পুকুরের পানিটুকু চুষে নিচ্ছে জ্বলজ্বলে সূর্য। ছড়িয়ে দিচ্ছে সাদা রোদ। আচ্ছা সূর্য কি নিচে নেমে আসছে দিনে দিনে?
আজ বৃহস্পতিবার। হাফ স্কুল। ভেড়ামারা বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায়লয়ের গেট পেরিয়ে আছি লাল দক্ষিণ কেবিনে ছায়ায়। বড় ক্লাসের দু এক জন লুকিয়ে সিগারেট ফুঁকছে। আমি না দেখার ভান করি। পিঠে ঝোলানো স্কুল ব্যাগ টা গরম হয়ে গেছে। পিঠটা জবজবে ভেজা , লেপ্টে আছে গায়ের সাথে। রেললাইনের ধাতব আর পাথর ভাপ ছড়াচ্ছে আরো বেশি। সূর্যের তেজ দ্বিগুন হয়ে প্রতিফলিত হচ্ছে , শরীরে বিঁধছে গরম হাওয়া।

আমি গুটি গুটি পা চালায় ,পার হচ্ছি এবড়োথেবড়ো নুড়ি পাথর। কেউ কেউ দু হাত প্রসারিত করে ভারসাম্য বজায় রেখে হেটে যাচ্ছে রেললাইন ধরে। কাল শুক্রবার। ছুটি। তাই আনন্দ হয়তো একটু বেশীই। আমি অবশ্য দুয়েকদিন চেষ্টা করে ছিলাম , দু এক পা হেঁটে নেমে পড়তে হয়েছে। আসলে তাল সামলাতে পারিনা। কেউ কেউ রেললাইনের উপর দশ পয়সা ফেলে ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষন পরেই ডাউন পড়বে ছুটে আসবে হয়তো আন্তঃনগর। অদূরে কৃষ্ণচূড়া গাছে গনগনে আগুন। রেললাইনের উপর থেকেই দেখা যায়। গাছটা রয়েছে শহীদমিনারে পাশে। ভেড়ামারা হাইস্কুলের শদীদ মিনার। আর একটু বড় হলেই আমি ওই স্কুলে ভর্তি হবো। স্কুলের পাশে পুকুর , ওই পুকুরের পানিতেও নিশ্চয় কৃষচূড়া আগুন লাগাচ্ছে , লাল কমলা আগুনের প্রতিচ্ছবি। আচ্ছা পানিতে কি আগুন লাগে কখনো ?

পানিতে আগুন লাগে কিনা এই মুহূর্তে না জানতে পারলেও বুকের ভেতর ঠান্ডা পানির তৃষ্ণা অনুভব করলাম। আমাদের চল্লিশটা নারিকেল গাছ , সেই গাছের টলটলে ঠান্ডা মিষ্টি পানি তৃষ্ণা বাড়িয়ে দিলো দ্বিগুন। আমাদের জাম গাছটার পাড় ঘেঁষে ছোট্ট পুকুরের ঠান্ডা পানিতে গা ভেজাতে ইচ্ছে হলো খুব। পুকুরে তেলাপিয়া বাচ্চা ছেড়েছে , ছোট ছোট পুঁটির আনাগোনা। ইচ্ছে হলেই ছিপ হাতে বসে পরা যায়। আমি ছোট তাই ছিপটাও ছোট , আমার বড়শিতে শুধু ছোট মাছ ঠোকরায়। যখন বড় হবো , তখন বড়শি ফেলবো ঠিক পুকুরের মাঝখানে,ধরবো বড় বড় রুই আর মৃগেল। গত বছরের ছাড়া মাছ গুলো নিশ্চয় অনেক বড় হয়েছে।

রেল লাইন পার হয়ে নেমে গেলাম পিচের রাস্তায়। ভেড়ামারা - কুষ্টিয়ার সড়ক। রাস্তাটা পার হতে হয় খুব সমাধানে।
''রা-শা.... গাঙ শালিকের বাসা।''-- পেছনে কোলাহল শুনতে পাই। এটা নিত্যদিনের ঘটনা। ক্লাসের রাশা নামের মেয়েটাকে ক্লাসের ছেলেরা ভেঙাচ্ছে। খুব হাসাহাসি হচ্ছে। আমাকে কেউ ভেঙ্গায় না ! কেউ কিছু বলার আগেই ছলছল করে উঠে চোখ। নিজের নামের সাথে মিলিয়ে ছন্দ খুঁজি ,বিদঘুটে একটা ছন্দ মাথায় আসতেই দ্রুত পা চালাই । ছেলেদের মাথায় ছন্দটা ঢুকলে বিপদ আছে।
সজনী সিনেমা হলের সামনে আমার সেজো চাচা দাঁড়িয়ে আছে। আমি ঠিক মত বাড়ি ফিরছি কিনা দেখার জন্য হলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। আমার সেজো চাচা সজনী সিনেমা হলের ম্যানেজার। - "কিরে কিছু খাবি ?" 'কিছুটা' হল মিরিন্ডা। সেজো চাচা মাঝে মাঝে মিরিন্ডা খাওয়াতো। কাছের বোতলের ছোট বোতলের মিরিন্ডা। সাত টাকা নেয়।
- "না। থাক। আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি যাবো।" - '' যা যা.... ছাতা আনিস নি কেন ?।'' সেজো চাচা আর আটকান না।

বাড়ি ফিরছি। কাল শুক্রবার। ছুটি। ছুটি, ফেরা এই শব্দ গুলোতে কেমন যেন আনচান করে মন। কোথায় যেন প্রশান্তি। যখন নাকি বড় হব , অফিস হবে আমার , তখনও কি এমন হবে ? আরো একটু বড় হলেই ভেড়ামারা হাইস্কুলে পড়বো আমি। সেই স্কুলের হেডমাস্টার আমার আব্বা। তখন হাফ প্যান্টের বদলে ফুলপ্যান্ট হবে। বদলে যাবে স্কুলে যাওয়ার রাস্তা। লাল দক্ষিণ কেবিনের ছায়ায় দাঁড়ানো হবে না আর। দুই হাত প্রসারিত করে ছেলেমেয়ের দল রেললাইন ধরে গাঙচিল হয়ে উড়বে কি ? আর আমার সেই মালাইওয়াল ! টাটকা , সরেস গাছে ধরা মালাই। সেই মালাইওয়ালা কি আমার জন্য অপেক্ষা করবে কি বাড়ির সামনে ? ইমরান খান লেখা ব্যাটটার কি হবে? ছোট হয়ে যাবে নিশ্চয়! স্কুল ছুটির পরে সেজো চাচা নিশ্চয় আর দাঁড়িয়ে থাকবেন না সজনী সিনেমা হলের সামনে।
অদ্ভুত সব ভাবনায় অনুভূতি গুলো কালো মেঘ হয়ে দানা বাঁধে মনের কোনো একখানে। ছায়া ফেলে। ঝাপসা হচ্ছে চোখ। কিন্তু আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা নেই, হলুদ রোদ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। বৃষ্টির কোনো দেখা নেই।

দশতলা অফিসের শার্সিতে দাঁড়ালেই হলুদ রোদ ঝলকানি দেয় চোখে। চোখ ধাঁধানো হলুদ রোদে খুঁজে ফিরি কবেকার হারিয়ে যাওয়া মালাইয়ালা, পুঁটিমাছ ধরা বড়শি কিংবা ইমরান খান লেখা ক্রিকেট ব্যাট। খুব ইচ্ছে হয় দুহাত প্রসারিত করে রেললাইন ধরে হেঁটে যায় দূর থেকে দূরে। ভাবতে ভাবতে ফিরে আসি ডেস্কে। অনেক কাজ বাকি আছে। আমার সামনে নিরেট অনুভূতিহীন কম্পিউটার। চোখ রাখি হলুদ ডেস্কটপ ব্যাকগ্রউন্ডে, কেমন জানি ঝাপসা লাগে । নিজেকে ইদানিং কাঠঠোকরা মনে হয়। কাজে নিমগ্ন কর্পোরেট কাঠঠোকরা। কয়েক ঘন্টা পরে ছুটি হবে। বাসায় ফিরবো। বড় হয়েছি অনেক আগে , তবুও ছুটি ,ফেরা এই শব্দ গুলোতে আজও আনচান করে মন। ড্রয়ারে রাখা নোট বুকটা বের করি। বিক্ষিপ্ত অনুভূতি গুলো সংকলিত করি গুটি গুটি অক্ষরে ।
হয়তো কর্পোরেট কাঠঠোকরারো নিজস্ব একটা জগত আছে ।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১:২৩

জুন বলেছেন: খুব ভালোলাগলো বিশেষ করে আপনার শৈশবের ঘটনাগুলো স্বপ্নবাজ সৌরভ।
সেই রেল লাইন ধরে হাটা, সেই নিস্তব্ধ দুপুরে ছিপ ফেলে পুকুরে পুটি মাছ ধরা । বড় নষ্টালজিক লেখা ।
+

২০ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১:২৯

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: অনেক দিন পর সামুতে ঢুকতে পারলাম।
ধন্যবাদ জুন আপু। সামু পরিবারকে অনেক মিস করেছি।
প্রচন্ড স্মৃতিকাতরতা খুব কষ্ট দেয়। অসহ্য লাগে। গলা আটকে আসে।

২| ২০ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১:৫৯

ইসিয়াক বলেছেন: কে আছেন?

২০ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ২:০২

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: জ্বি , আমি আছি !!
কেমন আছেন আপনি

৩| ২০ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল ভাষায় খুব সুন্দর লিখছেন।
অনেকদিন পর আপনার পোষ্ট পেলাম।

২০ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:০০

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: অনেকদিন পর যে সামুতে ঢুকতে পারলাম। ধন্যবাদ রাজীব ভাই।

৪| ২০ শে জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: অনেকদিন পর যে সামুতে ঢুকতে পারলাম। ধন্যবাদ রাজীব ভাই।

ভালো থাকুন।

২১ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৯:১৯

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: নিরন্তর শুভকামনা।

৫| ২০ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৮:৩২

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: রেললাইন দিয়ে কত হেঁটেছি !

ধন্যবাদ এক টুকরো শৈশবের দিকে আলোকপাত করার জন্য :)

২১ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৯:২০

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: আমি স্মৃতিকাতরতা নামক ভীষণ এক রোগগ্রস্ত, সেই সাথে বিষাদগ্রস্থ মানুষ। আমার চিকিৎসা প্রয়োজন। :(

৬| ২০ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৮:৩৮

সায়ন্তন রফিক বলেছেন: সবারই একটা নিজস্ব জগৎ থাকে । সেখানে অধিকার নেই অন্য কারও। ভালো লেগেছে লেখাটি।

২১ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৯:১৮

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ধন্যবাদ স্যার। অনেক ভালো থাকবেন। কর্পোরেট কাঠঠোকরারা ভালো থাকুক।

৭| ২০ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:১৭

মুক্তা নীল বলেছেন:
খুবই ভালো লাগলো আপনার শৈশবের আনন্দমাখা সুন্দর
স্মৃতিময় দিনগুলো পড়ে । ধন্যবাদ আপনাকে +++

২১ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৯:২১

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইলো।
স্মৃতি গুলো বেঁচে থাকুক।

৮| ২১ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৩:০২

তারেক ফাহিম বলেছেন: আমার শৈশবের সাথে কিছুটা মিল আছে।

কিছু সময়ের জন্য শৈশবে ফিরে গেলাম।

২১ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৩:১৩

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: মালাইওয়ালার কথা মনে পরে খুব। আর মাছ ধরায় পটু ছিলাম। খুব মিস করি।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ফাহিম ভাই।

৯| ২১ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:০২

মা.হাসান বলেছেন: আপনার আগের একটা পোস্টে ভয় পাবার একটা ঘটনার কথা লিখেছিলেন। আগে পড়া হয়নি, সম্প্রতি পড়লাম। ভালো লেগেছে। ওটার ২য় পর্ব লেখার কোনো প্ল্যান আছে কি?

এ লেখাটাও খুব ভালো লেগেছে। আপনাকে নিয়মিত পেলে ভালো লাগবে।

২১ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:৪০

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: আগের পোস্ট পড়েছেন এবং ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ জানবেন। আমার জীবনে আবার ভয়ানক কিছুর সম্মুখীন হলে আবার লিখে ফেলবো। :)
হা হা হা

এই লেখাটাও আমার মনে ধরেছে !! শুভেচ্ছা নিরন্তর। আশাকরি সাথেই থাকবো। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.