নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি \'স্মৃতিকাতরতা \' নামক ভীষণ এক রোগগ্রস্ত, সেই সাথে বিষাদগ্রস্থ মানুষ। আমার চিকিৎসার প্রয়োজন।

স্বপ্নবাজ সৌরভ

আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......

স্বপ্নবাজ সৌরভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিভ্রম..কিংবা মায়ার আলোছায়া

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৪০






''ওগো পাখি, ওগো নদী,
এতোকাল ধরে দেখেছ আমারে- মোরে চিনে থাকো যদি,
আমারে হারায়ে তোমাদের বুকে ব্যথা যদি জাগে ভাই,-
যেন আমি এক দুখ-জাগানিয়া, -বেদনা জাগাতে চাই!
পাই নাই কিছু, ঝরা ফসলের বিদায়ের গান তাই
গেয়ে যাই আমি,- মরণেরে ঘিরে এ মোর সপ্তপদী।।''

১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৪। গুনগুন করতে করতে কোলকাতা শহরের বালিগঞ্জের ব্যস্ত রাস্তা ধরে কবি হেঁটে যাচ্ছেন। এই ব্যস্ত লোকারণ্য শহরে কবি সম্ভবত একা। তিনি একা বলেই পাখি , নদী , প্রকৃতিকে সাথী করেন। কথা বলেন , গল্প করেন। নদীর স্রোত ঢেউ খেলে , কবিও সেই ঢেউয়ে ভাসেন। নির্জন দুপুরে পাখির কলতান কবিকে ঘুম পাড়ায়। এই নিঃসঙ্গ জাগতিকতায় এরাই কবির আপনজন , কাছের মানুষ।
রাস্তার পাশের ডাব বিক্রেতার কাছে থমকে দাঁড়ালেন কবি। ডাব কেনা কি খুব জরুরি ? এই অক্টোবরে ডাবের পিপাসায় কবি কি তৃষিত ? নাকি অন্য কিছু ?
দুই হাতে ডাব নিয়ে কবি রাস্তা ধরলেন। ঠিক করলেন ট্রাম লাইন পার হবেন।

''ওগো পাখি, ওগো নদী,
গেয়ে যাই আমি,- মরণেরে ঘিরে এ মোর সপ্তপদী।।''

ট্রামের ক্যাচারে আটকে যায় কবির শরীর , ভেঙ্গে যায় ঊরু ,পাঁজরের হাড়। দলিত শরীর নিয়ে কবি পড়ে থাকেন কোলকাতার রাস্তায়। পরজন্মে শঙখচিল , হাঁস হয়ে কলমীর গন্ধভরা জলে ভাসার তীব্র আকাঙ্খায়, কবি এই জাগতিক নিঃসহায়তাকে বিদায় জানান -- ২২শে অক্টোবর, ১৯৫৪। কোলকাতা ইতিহাস বলে , গত একশ বছরে ট্রাম দুর্ঘটনায় কোলকাতায় মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র একটি এবং তিনি হচ্ছেন কবি জীবনানন্দ দাশ।

আমরা যাকে 'রূপসী বাংলার কবি ' বলে আমার কাছে তিনি 'বিষণ্ণতার কবি'। আমি বিশ্বাস করি তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। তাঁর কল্পনার জগৎ সম্ভবত আরো সুন্দর ছিল। জাগতিক নিঃসঙ্গতা তার বেঁচে থাকার ইচ্ছাকে শূন্য করে দিয়েছিল। তিনি কি যেতে চেয়েছিলেন অন্য কোনো জগতে , তিনি কি অন্যকিছু কল্পনা করতেন ?

আমি জানি না। তবে কল্পনা , বিষন্নতা , নির্জনতা , একাকিত্ব আমাকে তাড়া করে। খুব। রাতে ঘুম হয় না, একা লাগে , ভয় হয় । এই গুলো কারো সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছে হয় না আর। এই বিষয়ে সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ আসগরের গিয়েছিলাম একবার। তিনি কয়েকটা ওষুধ দিয়েছিলেন। দুয়েকদিন খেয়েই ছেড়ে দিয়েছি।তবে ডাক্তার কে আমি অনেক কথা বলতে চেয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত বলা হয়ে ওঠেনি। ডাক্তার জানেনা আমি কবিতা লিখি। যে কবিতা গুলো বিষাদমাখা। যেই লেখা গুলো লিখি সেগুলো ভীষণ বিষণ্ণতায় বিকেলের শেষ রোদে মিলিয়ে যায়। ডাক্তার কে আমি একটা কবিতার কয়েক লাইন শোনাতে চেয়েছিলাম। শোনাতে আর ইচ্ছা হয়নি। ডাক্তার আমার একটা সুন্দর স্মৃতির কথা শুনতে চেয়েছিলেন। আমি বলিনি। কিছু কথা আমি আটকে রাখবো কাউকে আর বলবো না।

ইদানিং আমার রাস্তা পার হতে ভয় হয়। যদিও আমি ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহার করি। ভয় হয় এ কারণে , মাঝে মাঝে আমি আনমনে গুনগুন করি। ছাপার অক্ষরের কবিতা গুলো মাথায় ঠাঁই নিয়েছে , দখল করে নিচ্ছে ক্রমশ। আমি যখন আনমনে হাঁটি তখন আমার পাশে কেউ থাকে না। মনে হয় ইরেজার দিয়ে আশেপাশের সব কিছু মুছে দেয়া হয়েছে। এটাই সম্ভবত প্রকৃত জগৎ । মানুষ আজন্ম একা , আশেপাশের মানুষ গুলো শুধু মায়া -- বিভ্রম।

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৫৩

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনি সুস্থই আছেন। নিউরো ডাক্তারের দেয়া ওষুধ খাবেন না। একবার খেলে ওগুলি আপনার নার্ভকে দুর্বল করে দেবে। ওগুলির উপর নির্ভরশীল হয়ে যাবেন। ঐ ওষুধগুলি খুব পাওয়ার ফুল তাই এগুলি ধীরে ধীরে আপনাকে নিস্তেজ করে দেবে। ওগুলির উপর নির্ভরশীল হবেন না। ঐ ওষুধগুলো হল শেষ চিকিৎসা। বরং সৃষ্টিশীল কাজে জড়িয়ে থাকলে ভালো থাকবেন। আপনার জন্য শুভকামনা।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:০৭

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
আমি সুস্থ আছি, ভালো আছি প্রিয় ব্লগার ! আপনি ভালো থাকবেন।
ব্যস্ততা আর ঝামেলায় দিন যাচ্ছে। ব্লগে সময় দিতে পারছি না তাই।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। এটা একটা লেখা মাত্র ,এর বেশি কিছু না।

২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৫৭

জুল ভার্ন বলেছেন: একালের নন্দলাল =p~

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:০৯

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:

নন্দ বাড়ির হ’ত না বাহির, কোথা কি ঘটে কি জানি;
চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি,
নৌকা ফি-সন ডুবিছে ভীষণ, রেলে ‘কলিশন’ হয়;
হাঁটিতে সর্প, কুক্কুর আর গাড়ি-চাপা-পড়া ভয়,
তাই শুয়ে শুয়ে, কষ্টে বাঁচিয়ে রহিল নন্দলাল
সকলে বলিল- ‘ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক্ চিরকাল।’


৩| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:০৮

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


জীবনানন্দ ট্রামে আত্নহত্যা করেছিলো কি না জানি না,তবে আপনি মৃত্যুর পর জীবনানন্দের সাক্ষাৎ পাবেন সহসাই।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৩৭

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
আহা! কি মন্তব্য।

৪| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:০৩

কামাল৮০ বলেছেন: মানুষ দুই ভাবে বাঁচে।কেউ বাস্তবে কেউ কল্পনায়।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৮:২১

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
কথাটা ঠিক বলেছেন।

৫| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১১

পোড়া বেগুন বলেছেন:
আমি ভাবছিলাম সত্য ঘটিনা।
যাক দুঃশ্চিন্তা দূর হলো।
ভালো থাকুন;যুস্থ্য থাকুন।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৮:২১

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ঘটনা তো সত্য। তবে ভালো আছি, সুস্থ আছি।
ধন্যবাদ আপনাকে।

৬| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১৬

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: মানুষ আসলেও আজন্ম একা---। আপনন তো আপনার লেখাতও মায়ার জাল বিছিয়েছেন। অনেক দিন পরে আপনার লেখা পড়লাম।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:০৫

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
এটাই সত্য। মানুষ একা।
আপনি অনেকদিন পর মন্তব্য করলেন। ভালো থাকবেন। মায়ায় থাকবেন।

৭| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৪৫

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: সত্যি চমৎকার পোস্ট।ভালো লাগলো।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:১০

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
অনেক ধন্যবাদ ভাই। নিশ্চয়ই অনুভব করেন ব্যাপারটা।

৮| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫৩

অপ্‌সরা বলেছেন: মানুষ তো একাই ভাইয়া। :(

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:১৪

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: খুঁজে নিয়ে মন নির্জন কোণ
কি আর করে তখন.....

৯| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ৮:০৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: সুন্দর শিরোনামে চমৎকার একটি চিত্রসহ অসাধারণ একটি গদ্যকাব্য লিখেছেন কবি, একজন প্রকৃত কবির গদ্য। এ ব্লগের আরেক কবি জাহিদ অনিক বলতেন, কবিদের লেখা গদ্য পড়লেই বোঝা যায়, এটা একজন কবির লেখা গদ্য। অন্ততঃ আমাকে উনি এ কথাটা বলেছিলেন।
ছবিটির সূত্র কী?
সাড়ে চুয়াত্তর এর পরামর্শের সাথে আমি একমত।
কষ্ট না পেয়ে কবি কিংবা সৃজনশীল শিল্পী হওয়া যায় না। কষ্ট ও সৃষ্টি কারণ ও পরিণাম (cause and effect) এর মত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.