নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি \'স্মৃতিকাতরতা \' নামক ভীষণ এক রোগগ্রস্ত, সেই সাথে বিষাদগ্রস্থ মানুষ। আমার চিকিৎসার প্রয়োজন।

স্বপ্নবাজ সৌরভ

আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......

স্বপ্নবাজ সৌরভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাশিয়ান শৈশবঃ এই শীতে যারা জল ছোঁবেন না বলে পণ করেছেন

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৮





বইয়ের নামঃ কল্পতরু
লেখাঃ কর্নেই চুকোভস্কি
অনুবাদঃ ননী ভৌমিক ( আমার শৈশব আপনার কাছে ঋণী )
'রাদুগা' প্রকাশন - মস্কো



দে ধোলাই


লেপখানা মেলে ডানা,
বালিশটা পালালো,
কম্বল
উড়ে গেলো,
বড়ো দেখি জ্বালালো।
মোমদানিটা , লেড়ে বাবা,
স্টোভের পিছে , যায় না ভাবা !
বই কইরে ,
বইও পালায়
ডিঙি মেরে
খাটের তলায় !

যাক – গে মরুক , যা হয় হোক ,
চা খাওয়া যাক দু-চার ঢোক।
সামোভারটা আঁতকে উঠে
ভুঁড়ি কাঁপিয়ে পালায় ছুটে।
হলো-টা কি ?
বিদিকিচ্ছে !
ঝাঁকে ঝাঁকে
ডাক দিচ্ছে,
হাঁক দিচ্ছে,
পাক দিচ্ছে চরকি পাকে ?
ইস্ত্রি কিনা
জুতোর
পিছে,
বুটজোড়া যে
কেকের
পিছে,
পিঠেটা মিছে
ইস্ত্রি
পিছে,

বেল্ট খুঁজছে
শিক
গাছি –
সব জুটছে,
সব ছুটছে,
ঘুরছে খেয়ে ডিগবাজি।

হঠাৎ মায়ের ঘর খুলে
ল্যাগবেয়ে তার ঠ্যাং তুলে
হুড়মুড়িয়ে ওয়াশ-স্ট্যান্ড
বেরিয়ে এলো ড্যাডাং ড্যাং।


--ওরে তুই কেলেভূত, শাঁখচুন্নির পুত ! –
বলে মাথা দুলিয়ে, --
ঘাড়ে তোর ময়লা ,
নাকখানা কয়লা,
মুখখানা গোমড়া ,
এতো তুই নোংরা ,
রেখে তোকে ন্যাংটা
এমন কি প্যান্টটা,এমন কি প্যান্টটা
ছুটে গেলো পালিয়ে !

সকাল হতেই শত শতই
হাঁসের ছানা , ইঁদুরছানা ,
বেড়ালছানা , ভোঁদরছানা
নিয়ম করে হাত মুখ ধোয়।

একলা তুই-ই মুখ ধূলি না ,
একলা তুই-ই জল ছু’লি না ,
হয়ে রইলো কেলেভূতো ,
তাই পালালো মোজা জুতো।

আমি সেই মহা ওয়াশ-স্ট্যান্ড
বিশ্ববিদিত ধোলাইরাম,
পেছনে আমার ড্যাডাং ড্যাং,
সৈন্য সিপাহি দু-দুম দাম !

এক্ষুনি যদি মেঝেতে পা ঠুকে
ডাক দিয়ে সব সৈন্যদের,
ভিড় করে তারা কামরায় ঢুকে
তুমুল কান্ড বাঁধাবে ঢের ,
লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে এসে রুখে রুখে
ঘোর মজাখানা পাওয়াবে টের।

আর তুই ভুত রাখছি বলে—
মাথাখানা তোর সটান ধরে
সেরেফ জলে,
সেরেফ জলেই
গু’জে দেবে বেশ ঝপাং করে!—

এই বলে শেষে গামলায় ঘাই মেরে
হাঁক দিলেঃ রে-রে- রে-রে !—

এমনি যতো বুরুশগুলো
হুরুশ করে ঝাঁপিয়ে এলো,
চললো কোষে গা ডলানি,
সেই সঙ্গে গুনগুনানি:

--লাগাও ধোলাই, ডলায় , মালাই
ময়লা বলে পালাই পালাই!
নোংরা ছেলের ছাল তুলবো,
ধুইয়ে ছেলের রূপ খুলবো ! --

লাফিয়ে উঠে সাবানখানা
ধরলো চেপে চুলের গোছা,
ফেনায় সে তো আছেই জানা,
চোখে শুধু হুলের খোঁচা।

গা রগড়াবার ছোবড়া তো নয়,
পিঠেতে বিছুটি, কত আর সয়,
পিঠটান দিয়ে সোজা রাস্তায়,
ছোবড়া কি ছাড়ে , সেও পিছে ধায়।

বড় পার্কটার রেলিং টপকে
ভাবলাম, যাই ওপাশে সটকে।
যত ছুটি তত তেড়ে আসে জোরে
পিঠ জ্বলে গেলো আঁচড়ে আঁচড়ে।

ভাগ্যিটা ভালো , কুমির মশায় ,
সেজে গুজে সাথে নিয়ে ছেলেপিলে,
পার্কে স্বাস্থ্যলাভের আশায়
হাওয়া খাচ্ছিল তিনজনে মিলে ,
হটাৎ হা করে , ছোবড়াকে ধরে ,
ছোবড়াকে ধরে স্রেফ খেলো গিলে।

তারপর সেকি খেঁকালো
আমায়,
থাবখানা তুলে ঝাঁকালো
আমায়:
--এক্ষুনি ঘরে ফিরে যা ---
বলছি
--নইলে, নইলে অল্প –
বলছি,
--আস্তোই গিলে ফেলবে!—
বলছি।

সত্যি যদি খেয়েই ফেলে পাছে ,
দে-ছুট সোজা ওয়াশ-স্ট্যান্ডের কাছে।
সাবান ঘসে,
সাবান ঘসে,
সাবান ঘসে কাদার ছাপ ,
দাগ দাগালি,
ঘাড়ের কালি
এক্কেবারে ধুয়ে সাফ।

ট্রাউজারটা অমনি ওরে
এগিয়ে এলো সোহাগ ভরে ,
তার পেছনে কেকটি লাফায় :
--এই তো আমি , খান না আমায়!-

স্যান্ডউইচটা ভারি তৎপর
ঢুকলো সোজা মুখের ভেতর।

বই ফিরলো , খাতা ফিরলো,
পাটিগণিত , ব্যাকরণ
হাত-পা ছুড়ে শুরু করলো
নাচন , কুঁদন।

হটাৎ পেছনে ড্যাডাং ড্যাং
সৈন্য সিপাহি দু-দুম দাম
নিয়ে ছুটে এলো নাচিয়ে ঠ্যাং
বিশ্ববিদিত ধোলাইরাম ,
আমাদের সেই ওয়াশ-স্ট্যান্ড,
চুমুটুমু খেয়ে উঠলো বলেঃ
--এই তো দিব্যি লক্ষি ছেলে,
মিছিমিছি এতো ঝক্কি খেলে!
শেষটা যা হোক অক্ষি মেলে
আদর পাবার যুগ্যি হলে!—


সন্ধ্যা সকাল ধুতে হবে
ময়লা যত গা-মুখ-হাতের।
নোংরা মতো
চ্যাংড়া যত, --
ছিছি তাদের!
ছিছি তাদের!

জয় জয় জয় গন্ধী সাবান,
ধন্যি নরম তোয়ালেখান,
খুরুশ-খুরুশ-খা
দাঁতের বুরুশটা !

এসো ভাই সব গা ধুয়ে যাই ,
লাফায় , ঝাঁপায় , ডিগবাজি খায়
টবেতে, বেসিনে, ঘরের ভেতরে,
পুকুরে, দীঘিতে, নদীতে, সাগরে
আর বাথরুম আর কলঘরে
লক্ষ বার , লক্ষ বার
জলের জয় জয়কার !



মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি আর কতদিন রাশিয়া নিয়ে থাকবেন?
শেকসপিয়ার তো শীত নিয়ে অনেক কথা বলের গেছেন। এরপর মিল্টন, বায়রন এবং রবাট ফ্রস্ট শীত নিয়ে দামী দামী কথা বলে গেছেন।

আজ বাসায় শীতের পিঠা তৈরি হচ্ছে। বিবিখানা, দুধ চিতই আর ভাপা। ৭ কেজি চালের গুড়া। তিনটা নারকেল। দশ কেজি দুধ। আসল খেজুরের গুড়। গুড় এসেছে বগুড়া থেকে।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:৫০

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
আপনি যাদের কথা বললেন তাঁদের বেশি পড়া হয়নি। তাই ঘুরে ফিরে রাশিয়ান শিশুসাহিত্য।


দুধ চিতই এর লোভ হচ্ছে খুব। রাতে ভিজিয়ে সকালে খাওয়ার মজাই আলাদা। সবচেয়ে ভালো চামচ না দিয়ে খেয়ে ঠান্ডা রসে হাত ডুবিয়ে খাওয়া।
বারে বারে ঘুরে ফিরে খাওয়া। শ্রদ্ধেয় ব্লগার শাহ আজিজ স্যারের ফ্রিজে রাখা আছে , তিনি ঘুরে ঘুরে খাচ্ছেন।


আজ দুপুরে অফিস থেকে একটা দাওয়াত ছিল। প্লেন পোলাও , রোস্ট , গরু ,জর্দা। খাবোনা খাবোনা করেও ২১ টুকরা গরুর মাংস খেয়েছি। পেট ভরা। তার পরেও দুধ চিতই টানছে।

২| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৭

শাহ আজিজ বলেছেন: বাহ চমৎকার ছড়া ।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:৫১

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
ছোটবেলায় অনেকটাই মুখস্থ ছিল। ধন্যবাদ।

৩| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:১২

রাজীব নুর বলেছেন: আমি মনে করি খাওয়াটা ভীষন গুরুত্বপূর্ন। যদিও আমি খুব সামান্য খাই। কিন্তু টেবিল ভরতি খাবার না থাকলে আমার ভাল লাগে না। চার টুকরোর বেশী গরুর মাংস খাই না। গরুর মাংস বেশি খেলে প্রেসার বেড়ে যায়।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০২

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: আমিও খুব সামান্য খাই।

৪| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫১

সোনাগাজী বলেছেন:



পুরানো বইগুলো কি এখনো আছে?

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০১

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
৩০/৪০ বই বেঁচে আছে এখনো।

৫| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:২৫

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


আপনার ছেলের শৈশবে এসবের প্রভাব থাকুক, আপনি চান?

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০২

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:

নিশ্চয়ই !!

৬| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: শৈশবে ফিরে যেতে ইচ্ছা করে আপনার?

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৮

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:

আমি তো শৈশবেই থাকি ব্রাদার। তাই তো এইসব নিয়ে পড়ে থাকি।
শৈশবের সব কিছুই আমাকে টানে। সন্ধ্যায় খেলা শেষে মন খারাপ করে ঘরে ফেরার দিনগুলো এখনো আছে রাজীব ভাই। আমার প্রায় লেখায় সেই বিষণ্ণতা পাবেন।

৭| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৫২

হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: ছোটবেলায় রাশিয়ান গল্প পড়তাম। বড় হয়ে প্রথম উপন্যাস 'ক্যাপ্টেনের মেয়ে' পড়ি।

০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:১১

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
ক্যাপ্টেনের মেয়ে। অসাধারণ একটা বই ছিল। রাশিয়ান শৈশবে আপনাকে স্বাগতম। মন্তব্যে অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

আমার সোভিয়েত শৈশব :

মানুষ উঠল আকাশে : গল্প সত্যি করার গল্প ।
নববর্ষের রাশিয়ান শৈশব : ফার গাছ
রাশিয়ান শৈশবঃ এই শীতে যারা জল ছোঁবেন না বলে পণ করেছেন
রাশিয়ান শৈশব : বাবা যখন ছোটো - ২
রাশিয়ান শৈশব : বাবা যখন ছোটো - ১
সাহসী রাশিয়ান শৈশব : বীর ছেলে কলিয়া ( শেষ অংশ )
সাহসী রাশিয়ান শৈশব : বীর ছেলে কলিয়া ( ১ম অংশ )
ঝলমলে সোভিয়েত শৈশব: আপেল
ঝলমলে সোভিয়েত শৈশব: বিপদ তারণ পাঁচন
রাশিয়ান শৈশব: ছবি ব্লগ ( বাচ্চা এবং বাচ্চাদের বাবা মায়েদের জন্য )
রুটির ফুল --- আমার সোভিয়েত শৈশব (আমার শৈশবের স্কুল !)
সাত বন্ধু ইয়ুসিকের - ( আমার সোভিয়েত শৈশব )
রূপের ডালি খেলা - (আমার সোভিয়েত শৈশব)
জ্যান্ত টুপি (আমার সোভিয়েত শৈশব)
সভ্য হওয়া - (আমার সোভিয়েত শৈশব)
মালপত্র (আমার সোভিয়েত শৈশব)
শেয়ালের চালাকি ১ (আমার সোভিয়েত শৈশব)
মোরগ ভাইটি (আমার সোভিয়েত শৈশব)
বীরব্রতী ভাসিয়া -- আমার সোভিয়েত শৈশব (আমার শৈশবের স্কুল !)
আমার সোভিয়েত শৈশব - আমার শৈশবের স্কুল !
শুনছি , ঘাস বাড়ছে...



আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.