নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি \'স্মৃতিকাতরতা \' নামক ভীষণ এক রোগগ্রস্ত, সেই সাথে বিষাদগ্রস্থ মানুষ। আমার চিকিৎসার প্রয়োজন।

স্বপ্নবাজ সৌরভ

আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......

স্বপ্নবাজ সৌরভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাবা বৃষ্টির কি গন্ধ হয়?

০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:২০





১.
দ্যাখ্ , গাছ গুলোও একেবারে তাজা হয়ে উঠেছে। '
বাতাসে দোল খাচ্ছে শীষ , খেতময় ঢেউ। বৃষ্টিও আসছিলো ঘনঘন। এই সামনে খেতের ওপর দেখা গেল ঘুঘুরঙা বাঁকা ধারা , হঠাৎ তা ধেয়ে আসতে লাগল আমাদের দিকে। আসছে , আসছে , এসে গেল গাছের মাথায়। ভেজা পাতায় জল আর আটকালো না , অঝোরে ঝরে পড়ল আমাদের খোলা মাথায় , কাঁধে।
মাথা আর ভেজা মুখখানায় হাত বুলাল ও।
'আহ!'
'চমৎকার!'
আমি ওর হাত ধরে সোজাসুজি এগিয়ে এলাম বৃষ্টির মধ্যে। ওম-ওম বৃষ্টি , জলে ধুয়ে যাচ্ছে রোদপোড়া মুখ, কি ভালোই না লাগছে, চারপাশের সব কিছু হয়ে উঠছে তাজা, রসালো , জ্বলজ্বলে , যেন নতুন করে জন্ম হল। আর খালি পায়ে নরম ভেজা মাটির ওপর দিয়ে , টাপুর-টুপুর জমা জলগুলোর উপর দিয়ে হাঁটতেও আনন্দ। জোরে জোরে ছপ ছপ করতে লাগলাম আমরা , ভিজে যাওয়ার ভয় তো আর নেই , কিছুরই ভয় নেই।
এক দুই , ছপ, ছপ, ছপ, ছপ !
হেসে উঠলাম আমার , কে জানে কেন। অনেকদিন এমন খুশি লাগে নি।
'আয় বৃষ্টি ঝেঁপে!'
আয় বৃষ্টি আয় ! আরো ঝেঁপে , আরো ঝেঁপে ! ঢাল , কেপটামি করিস নে। মাটি আর তার গাছপালা সবার তেষ্টা মিটুক।
হটাৎ বৃষ্টির ধারা কমে এল , ঝিমিয়ে এল। ঘেসো মাঠটায় যখন গিয়ে পৌঁছলাম , তখন একেবারেই থেমে গেছে। আবছা ঝিকঝিক করছে মাঠটা , জলে ধোয়া ফুলগুলোর ওপর , জ্বলজ্বলে সবুজ গাছগুলোর ওপর হালকা ভাপ ভাসছে।

২.
বাবা , বাবা.... বৃষ্টির কি গন্ধ হয়?
কেন বলতো?
আমি একটা গন্ধ পাচ্ছি।
কেমন? ভালো না খারাপ?
অন্য রকম।
অন্য রকম মানে?
জানি না বাবা।
হ্যাঁ গন্ধ হয়। অদ্ভুত একটা গন্ধ, না?

ছেলেটা মাথা নাড়ায়।


বাবা, আমি কি বৃষ্টিতে ভিজতে পারবো?
হ্যাঁ পারবি?
যদি অসুখ হয়?
হবে না। বাড়িতে থাকলে একটা দারুণ জিনিস শোনাতাম।
কি সেটা?
ঘাস বাড়ার শব্দ।

জানিস, ছোটবেলায় বৃষ্টি শেষে আবছা ঝিকমিকে মাঠটার দিকে চেয়ে তন্ময় হয়ে তাকাতাম। কান পাততাম মাটিতে।
' শুনতাম , ঘাস বাড়ছে!'
সত্যিই ভারি আবছা নরম , প্রায় ধরা যায় না কী সব শব্দ। হয়ত ঘাসের ওপর জলের ফোঁটার শব্দ। হয়ত ফুলগুলোর শেকড়ে জল টানার শোঁ শোঁ।
বৃষ্টির পরে তাজা ঘাস কী ভাবে বাড়ে!


৪.
বৃষ্টিশেষে আমরা খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে আছি।
বৃষ্টি থেমে ছিল কেবল কিছুক্ষণ। বনের ওপার থেকে আবার এগিয়ে এল ঘুঘুরঙা বৃষ্টির ধারা , মাঠের ওপর দিয়ে এগিয়ে আসতে লাগল সোজা আমাদের দিকে।
উঠে দাঁড়ালাম আমরা , এগিয়ে গেলাম বৃষ্টির দিকে। ইচ্ছে হচ্ছিল হাতের ওপর , মুখের ওপর বৃষ্টির স্নিগ্ধ ছোঁয়া নিই আবার। আর বৃষ্টি যখন একেবারেই এসে পড়ল ,
তখন গেয়ে উঠলাম আমরা :
' আয় বৃষ্টি ঝেঁপে!'


এখন আর মনে নেই আরো কী কী গেয়েছিলাম। এইটুকু শুধু মনে আছে যে খুশি লেগেছিল । লাগবে না আবার ! আমরা যে শুনেছি বৃষ্টি শেষে কী ভাবে ঘাস বাড়ে। আমরা যে দেখেছি কী ভাবে চোখের সামনে চারিদিকটা জীবন্ত আর নতুন হয়ে ওঠে।

৫.
ইশশ। এমনটা যদি লিখতে পারতাম।









মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:১৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: চমৎকার! ছেলেকে নিয়ে বৃষ্টিভেজার অভিজ্ঞতা লিখে রেখেছেন। একদিন ও বড় হয়ে পড়বে, পড়ে আনন্দ পাবে। পুরনো স্মৃতি স্মরণ করার চেষ্টা করবে।

বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতির শোভা বড় মনোহর, বড় স্নিগ্ধ। বৃষ্টি প্রকৃতিকে এক ধরণের পবিত্রতা এনে দেয়।

০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৪১

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
এটা আসলে রাশান শিশুতোষ গল্পের টুকরো অংশ। সাথে জুড়ে দেয়া আমার কয়েক লাইন।
অনেকদিন ধরে ছেলে নিয়ে বৃষ্টির কিছু লিখবো ভেবেছিলাম। হয়ে উঠেনি।তাই ঘুরে ফিরে রাশিয়ান শৈশব।
খুব পছন্দের একটা গল্প।

ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১০:৩৯

ইসিয়াক বলেছেন: বৃষ্টির গন্ধ মাখা পোস্টে ভালো লাগা রেখে গেলাম। ভালো থাকুন সবসময়।

০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৪১

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: আপনাকে মিস করি ভোরের পাখি।
ভালো থাকবেন।

৩| ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:০৬

এম ডি মুসা বলেছেন: চমৎকার!

০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৪৩

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
এমন আমি কোনদিনই লিখতে পারবো না।
প্রথম মন্তব্যে কিছুটা বলেদিয়েছি।

আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.