নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......
ছোটমামা আমাদের বাসার জন্য একটা কুকুর আনলেন। মানে আমার কুকুর। এর আগে আমাদের বাড়িতে টমি নামের একটা কুকুর ছিল। ও মারা গিয়েছে অনেক আগে। অনেকদিনপর বাড়িতে কুকুর এলো। তাও আবার আমার। আনন্দের শেষ নাই। কালো রঙের একটা ছোট্ট কুকুর ছানা। লেজ কাটা। কাটা লেজের ঘাঁ শুকিয়ে যাবার পথে। দাদা আবার হোমিওপ্যাথি ওষুধ খাওয়ালেন। কুকুরটার নাম রাখা হলো ভুলু। ভুলুর সাথে আমার দারুন সময় কাটতে লাগলো। আমি তখন ক্লাস টু তে পড়ি। সকালে রুটি টুকরো টুকরো করে ভুলুর দিকে ছুড়ে দেই আর ভুলু দারুন তৎপরতায় রুটির টুকরো শূন্যে থাকতেই মুখে পুড়ে নেয়। দেখার মত একটা ব্যাপার।
দুপুরে খাবার দেয়ার জন্য দুটো মালশা কেনা হলো। একটা ভাতের আরেকটা পানির। বিকালে দেয়া হয় পাউরুটি। মাঝে মধ্যে দুধ। রাতে ভাত /রুটি।
ভুলু ঘেউ ঘেউ করে রাতে চোর তাড়ায়। দিনে অপরিচিত মানুষদের বিনা অনুমুতিতে বাড়িতে ঢুকতে দেয়না। ভুলুর ভয়ে বিড়াল বেল গাছে বসে থাকে। নামে না।
ভুলু তখন একটু বড় হয়েছে। বিকালে আমার সাথে মাঠের ঐপারে চলে যায়। আমার পিছে পিছে দৌড়ে বাড়ি ফেরে।
একদিন সন্ধ্যায় বাড়ির ময়দানে দাঁড়িয়ে দেখি ভুলু মাঠের ঐপাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ডাক দিলাম, ভুলুউউউউউ !
ভুলু আমার ডাক শুনে একদৌড় দিলো। আমিও দৌড়ে বাড়ি ফিরছি। ভুলু দৌড়ে এসে আমার পিঠে উঠে পড়লো। সামনের দুপায়ের দাঁড়ালো নখের আঁচড়ে আমার পিঠে ক্ষত সৃষ্টি হলো। রক্ত বের হতে লাগলো। আমি কাঁদতে লাগলাম।
বিষ যাতে না লাগে দাদা কি সব ঔষধ দিলেন। ডেটল দিয়ে পিঠ পরিষ্কার করে দিলো কেউ। কেউ আবার ভুলুর পেটে লাথিও মারলো। ভুলু কুই কুই করতে করে বাড়ির এক কোণে বসে থাকলো।
ভুলু বাড়ির ওই কোণা থেকে আর নড়তো না। ওকে পানি আর খাবার দেয়া হতো। আমি যে কয়দিন অসুস্থ ছিলাম ভুলু পানি ছাড়া কিছুই খেতো না।
আমি সুস্থ হলাম। বিকালে আব্বা টোস্ট বিস্কুট নিয়ে আসলো। দুইখানা বিস্কুট নিয়ে আমি বাড়ির বাইরে গিয়ে দেখি ভুলু মাঠে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ডাকলাম , ভুলুউউউ !!
ভুলু তিড়িং বিড়িং করে লাফাতে লাফাতে দৌড়োলো আমার দিকে। এবার আর গায়ে উঠলোনা না। আমার সামনে লাফাতে লাফাতে লেজ নাড়াতে লাগলো। আমি টোস্ট বিস্কুট ছুড়ে দিলাম। দারুন কসরতে লুফে নিলো। করমড় শব্দে খেতে লাগল।
ভুলু মাঝে মাঝে আমার সাথে স্কুল গেট পর্যন্ত যেত। স্কুল থেকে ফেরার পথে রাস্তায় বসে থাকতে দেখতাম। ঢাকা আসলে কোচস্ট্যান্ড পর্যন্ত এগিয়ে দিতো। কোচ ছাড়লে পিছে পিছে দৌড়াতো।
ভুলু বেশ কয়েক বছর বেঁচে ছিল। একদিন সকাল থেকে ভুলুকে পাওয়া গেলো না। অনেক খোঁজার পর মাঠের ওই পাশে ভুলুকে পড়ে থাকতে দেখা গেলো। আমরা গিয়ে দেখলাম মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। বিষ খাওয়ানো হয়ে ছিল ওকে।
আসরের নামাজের পর ভুলুকে কবর দেয়া হলো বড় ফুফুর নারিকেল আর লেবু বাগানের একপাশে। প্রিয়জন হারানোর কষ্ট পেলাম খুব। কাঁদলাম।
কাঁদতে কাঁদতে আব্বা কে বললাম , বেহেশতে কি ভুলুকে পাওয়া যাবে ?
আব্বা কিছু বললেন না। শুধু পিঠে হাত বুলিয়ে দিলেন।
ইদানিং একটা স্বপ্ন ঘুরেফিরে দেখছি :
বাড়ির বাইরে এসে দেখি ভুলু মাঠের ঐপাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি চিৎকার করে ডাক দেই , ভুলুউউউউ।
ভুলু আমার ডাক শুনে দৌড়ে ছুটে আসছে। আমিও দৌড়াচ্ছি , ভুলুও দৌড়াচ্ছে। আমরা দৌড়াচ্ছি।
নিহালের জন্য এইবার কোরবানির ছাগল কিনেছিলাম। ও ছাগল কে বলে 'শীপ'। ভেড়া আর ছাগল দুটোই ওর কাছে 'শীপ'। ঈদের দুদিন আগে ছাগল কিনে আনার পর থেকে শীপের আসে পাশে ঘুরঘুর করতে চায় শুধু। দুপুরে ঘুম বন্ধ। একবার পাতা দিতে যায় , একবার পানি। কোরবানি দিতে হবে শুনে খুব কাঁদলো। তারপর বোঝানো হলো কেন কোরবানি দেয়া হবে , পশু কোরবানি না হলে কাকে কোরবানি দেয়া হতো। তারপরেও কান্না একেবারে থামেনি। দিনের মধ্যে ফুঁপিয়ে উঠেছে কয়েকবার। ঈদের দিন সকালে গোসল করতে গেলো ছাগলকে। ছাগলকে দেখে আবার কান্না শুরু করলো। ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলল , বাবা.. আমার শীপ কি জান্নাতে যাবে ? জান্নাতে পাবো ?
আমি কিছু বললাম না। শুধু পিঠে হাত বুলিয়ে দিলাম। বহু বছর আগে আব্বা যেভাবে দিয়েছিলো। তখন আমি বয়স ছিল ৮ আর আমার ছেলের বয়স এখন ৪ বছর। অনুভুতিটা এক।
২৪ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ১:১৪
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার নতুন কবিতার কথা বলছেন ? পড়েছি। দারুন লেখা ছিল। আমি সময় করে মন্তব্য করে আসবো।
আর ওই লাইনটার কথা বললেন না। সেটা হলো এই কবিতাটা ----
আমি সম্ভবত খুব ছোট কিছুর জন্য
–হুমায়ুন আজাদ
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো
ছোট ঘাসফুলের জন্যে
একটি টলোমলো শিশিরবিন্দুর জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো চৈত্রের বাতাসে
উড়ে যাওয়া একটি পাঁপড়ির জন্যে
একফোঁটা বৃষ্টির জন্যে।
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
দোয়েলের শিসের জন্যে
শিশুর গালের একটি টোলের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো কারো চোখের মণিতে
গেঁথে থাকা একবিন্দু অশ্রুর জন্যে
একফোঁটা রৌদ্রের জন্যে।
আমি সম্ভবতখুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
এক কণা জ্যোৎস্নার জন্যে
এক টুকরো মেঘের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো টাওয়ারের একুশ তলায়
হারিয়ে যাওয়া একটি প্রজাপতির জন্যে
এক ফোঁটা সবুজের জন্যে।
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
খুব ছোট একটি স্বপ্নের জন্যে
খুব ছোট দুঃখের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো কারো ঘুমের ভেতরে
একটি ছোটো দীর্ঘশ্বাসের জন্যে
একফোঁটা সৌন্দর্যের জন্যে।
২| ২৪ শে জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯
হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: চমৎকার কবিতা, আগে পড়া হয়নি, পড়লে আর আমার সে কবিতা লেখা হতো না, ভালো থাকবেন।
২৪ শে জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৬
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
আপনাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
৩| ২৪ শে জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৫
অপু তানভীর বলেছেন: পোষা প্রাণী মারা গেলে সত্যিই যে কষ্ট লাগে সেটা কেবল যাদের মারা গেছে তারাই জানে ।
কুকুরের প্রতি আমার খুব একটা টান নেই । আমার পছন্দের হচ্ছে বেড়াল ! তবে টান নেই মানে এটা না যে তাদের আদর করি না । কোভিডের সময় যখন পাড়ার কুকুর গুলোর বেহাল দশা তখন আমি নিয়মিত বিস্কুট খেতে দিতাম । তারপরই ওরা আমাকে চিনে ফেলল । তাদের ভেতরে একটা এখনও পাড়াতে আছে । এখন মাঝে মাঝে খাবার দেই ।
নিহাল নামটা আমার কাছে অনেক বেশি পরিচিত । বাচ্চা বয়সে সবাই বুঝি এমনই করে !
২৫ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ২:০৪
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
আমি বিড়াল পছন্দ করিনা। ভুলুর পরে আমার আরেকটা কুকুর ছিল। চায়ের দোকানে একটা টোষ্ট বিস্কুট খেতে দিয়েছিলাম। এরপর পিছে পিছে বাড়ি চলে এলো। আর যায়নি। ওকেও বিষ খাইয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল।
৪| ২৫ শে জুন, ২০২৪ রাত ১২:১৯
আরইউ বলেছেন:
সৌরভ,
কী সুন্দর ঝরঝরে লেখা। নিয়মিত লেখেন না কেন?
নিহাল কিন্তু একদম ভুল বলেনা। গোট আর শিপ বেশ ক্লোজলি রিলেটেড, একই পরিবারের সদস্য।
ভালো থাকুন সবসময়!
২৫ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ২:০৬
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: আমি ব্লগে আগের মত আসিনা। আগের মত লিখতেও পারিনা। নিহাল গোট আর শিপ এর পার্থক্য করতে পারে , তারপরেও শিপ বলে। ওর হয়তো ভালো লাগে বলেই।
আপনি ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে জুন, ২০২৪ রাত ৮:২৯
হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন। আমাদেরও লালু নামের কুকুর ছিল, একদিন সে হারিয়ে যায়, মাইকিং করা হয়েছিল, কিন্ত পাওয়া যায়নি। বাই দা ওয়ে, আমি একটা কবিতা ধরনের একটা লেখা লিখেছি, সেখানে আপনার অবদান আছে।