নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি \'স্মৃতিকাতরতা \' নামক ভীষণ এক রোগগ্রস্ত, সেই সাথে বিষাদগ্রস্থ মানুষ। আমার চিকিৎসার প্রয়োজন।

স্বপ্নবাজ সৌরভ

আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......

স্বপ্নবাজ সৌরভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার প্রথম \'ইন্টারন্যাশনাল\' ক্রিকেট ম্যাচ এবং আমার ইমরান খান , আমার ইমরান খান ব্যাট...

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৬






বেশ ছোট। প্রাইমারীতে পড়ি। তখন কেউ যদি জিজ্ঞেস করতো বড় হয়ে কি হতে চাও?
অনেক কিছুই হতে চাইতাম। বৈমানিক, নাবিক, মহাকাশচারী এর বাইরে আরেকটা নাম বলতাম সেটা হচ্ছে ইমরান খান। ক্রিকেট খেলতাম কাঠের বানানো ব্যাট দিয়ে। পরে আব্বা ইমরান খানের নাম লেখা ব্যাট কিনে দিয়েছিলেন । আমরা ওটাকে বলতাম ইমরান খান ব্যাট। সোভিয়েত বইয়ের পাশে সযত্নে আগলে রাখতাম এই ব্যাট টা। বিকেলবেলার সঙ্গী। সন্ধ্যা হয়ে গেলে, খেলা শেষে বাড়ি ফিরতাম ব্যাট ঘাড়ে করে। বীরদর্পে। কারণ ইমরান খান ব্যাট যখন আছে তখন দুই তিনটা বাউন্ডারী অনায়াসেই মেরে দিতে পাড়তাম আর সাথে একটা ওভার বাউন্ডারী।
প্রতিপক্ষ ভাবতো, ওর তো ইমরান খান ব্যাট আছে । ওতো পারবেই। আমার এই ব্যাটটা প্রতিপক্ষকে দিতাম না। কেন দেব? উল্টো চার ছয় খেয়ে ম্যাচ হারার কোন মানে হয়?
তাই অনেকেই এই ব্যাট দিয়ে ব্যাটিং করার জন্য আমি যেই দলে ভাগে পড়েছি সেই দলে আসতে চাইতো। প্রতিপক্ষকে যে একেবারেই দিতাম না তা কিন্তু না। একবার বড় ভাইয়া(চাচাতো ভাই) আমার প্রতিপক্ষ হলো। আমার ব্যাট দিয়ে সে কি মাইর। ওদের তালকানা প্লেয়ার রোকিনও দুইটা ছয় মেরে দিল। মারবে আমি শিওর ছিলাম। মারবেই তো!


বাড়ির সাথেই খেলার জায়গাতে আমাদের খেলা চলতো। বড়রা আমাদের খেলা দেখতো। সবাই ক্রিকেট ভক্ত। আমার ছোটচাচা আবার কুষ্টিয়া জেলা টিমের খেলোয়াড় ছিলেন। তার মাধ্যমেই ব্যাট ধরা শুরু। আমরা খেলি আর টিভিতে খেলা দেখি। পাকিস্তানের খেলা হলে মিস দেই না। আমাদের টিভি ছিল না। ভেড়ামারাতে টিভির সংখ্যা কম। ছোটচাচা কাঁধে নিয়ে চলে যেত প্রেসক্লাবে। সাদা কালো টিভিতে রঙিন এক প্লেয়ার কে দেখতাম! ইমরান খান।

প্রতিদিন বিকেলে আমাদের খেলা চলে। নিজেদের মধ্যেই ভাগাভাগি করে খেলি। ভাগাভাগির ব্যাপারটাও ছিল মজার। আমরা বলতাম 'বাঁটা'। দুইজন অধিনায়ক থাকতো। আর আমরা জোড়া বেঁধে অধিনায়কের সামনে দাঁড়াতাম। জোড়া বাঁধা হতো সমমানের প্লেয়ার নিয়ে। দুইজনের মান যেন সমান থাকে। এবার ক্যাপ্টেনর সামনে গিয়ে বলতাম, কাকে চাও। আকাশ না বাতাস?
কে আকাশ আর কে বাতাস সেটা দুজন মিলে ঠিক করে নেয়া হতো। এবার ক্যাপ্টেনের চাওয়ার পালা।
আমি আবার বেশিরভাগ ভাগ সময়ই ইমরান খান হতাম। পরে নিয়ম করা হলো ইমরান খান হওয়া যাবে না!

আরেকটা ব্যাপার। যদি কেউ জোড়া না পায় , তাকে আমরা বলতাম 'পেটকাটা' । সে দুইদিকেই ব্যাটিং করবে আবার দুইদিকেই ফিল্ডিং করবে। বল দুরে চলে গেলে, ঝোপের মধ্যে পড়লে, চালে বাঁধলে আনার দ্বায়িত্ব ওর। সবচেয়ে দূর্বল প্লেয়ার 'পেটকাটা'র কাতারে পড়তো। এই যেমন ধরুন রোকিন তবে সেইদিন দুইটা ছয় মারার পড় থেকে তাকে আমরা বিশেষ বিবেচনা করতাম।

আমাদের মধ্যে বিষু জোড়ে বল করতো। বেশির ভাগই চাকিং। আমরা বলতাম 'ঢেল'। মানে ঢিল ছোঁড়ার মত করে বল করতো তাই।
ওর বল এসে একদিন আমার মুখে এসে লাগলো। আমি হাউমাউ করে কেঁদে ফেললাম। বড় আপা কোথার থেকে এসে বলল, "তোর আর ইমরান খান হবার দরকার নাই।" কত বড় অপমান! এই অপমানের শোধ তুলবো ভেবেছিলাম। কিন্তু আফসোস বিষুর বোলিংই নিষিদ্ধ হয়ে গেল তারপর থেকে।

বাড়ির পাশে খেলতাম। কিন্তু আমাদের খুব ইচ্ছা হতো অন্যদের সাথে একটা ম্যাচ খেলি। টিভিতে যেমন খেলে। সবাই খেলা দেখবে। অনেক দর্শক হবে। করতালি দেবে। ছবি তুলবে। পেপারে লিখবে। লাঞ্চ ব্রেক হবে। পুরস্কার বিতরণী হবে।
আমাদের এমন আগ্রহ দেখে। আব্বা একটা ম্যাচের উদ্যোগ নিলেন। হাইস্কুল মাঠে খেলা হবে। আব্বা ঐ স্কুলের হেডমাস্টার। আমাদের পরিচিত মাঠ। আমি তখন প্রাইমারীতে পড়ি। ভেড়ামারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। সবাই বলতো বোর্ড স্কুল।আমাদের প্রতিপক্ষ হলো আরেকটা প্রাথমিক বিদ্যায়ল। বেশ জমজমাট আয়োজন। হাড্ডাহাড্ডা প্রতিপক্ষ। ডিসেম্বরের ছুটির আগের শুক্রবার ম্যাচ। মাইকিং চলল। মাইকিংয়ে বাজলো 'বাঘে সিংহে লড়াই', 'বাঘে সিংহে লড়াই'। বড় ভাইয়া আমাদের ক্যাপ্টেন। সেরা ব্যাটসম্যান। তাকে বললাম, আচ্ছা সিংহ কারা? বড় ভাইয়া উত্তর দিল, তোমার কি মনে হয়?
আমার তো ধারণা ছিল আমরাই সিংহ! কেন যে জিজ্ঞেস করতে গেলাম।

ম্যাচের আগের দিন ঘুম এলো না। লাল পলো টিশার্ট আর সাদা টাউজার আব্বা রেখে দিলেন মাথার কাছে। আমি বললাম, আর ইমরান খান ব্যাট? আব্বা বললেন, ওটাও লাগবে?
ব্যাট পাশে নিয়ে শুয়ে পড়লাম। আমাদের খড়ের চালার ঘর। সেই ঘরে একজন ইমরান খান ভীষণ টেনশন নিয়ে ঘুমাচ্ছে।

উঠে পড়লাম ভোরে। তাড়াতাড়ি তৈরি হতে হবে। আম্মা আবার খেলা উপলক্ষে ফরজের নামাজ পড়েছে। সকালের নাস্তা ডিম পরোটা সুজি।
টেনশনে আমি কিছুই খেতে পারছি না। উঠোনে জটলা। চাচাতো ভাইয়েরা সব একই স্কুলের পড়ি। একই টিমের প্লেয়ার। ভীষণ উৎকণ্ঠা।
বড়রা সবাই উৎসাহ দিচ্ছে। বড়ফুফু বুকে ফুঁ দিয়ে যাচ্ছে।
দাদা জানালায় বসে ডাকলেন, 'কুটি ভাআআই? '
জ্বী দাদা।
'কাছে আসো একটু দোয়া করি। ব্যাটটাও আনো।'
দাদা দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে দিলেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে দাদা আমার ইমরান খান ব্যাটেও 'ঝাড়া' দিয়ে দিলেন। এরপর বাঁকিরা একে একে দাদার কাছে গেল।

হাইস্কুল চত্বরে গিয়ে দেখি টিভির মতোই অবস্থা। শুক্রবার। অনেক লোক। বাচ্চাদের এমন আয়োজন তারা আগ্রহ নিয়ে দেখতে এসেছে । ক্লাস রুমের বেঞ্চ গুলো ক্লাসের বাইরে বের করা হয়েছে। স্কুলের দুইটা বিল্ডিং। উপড় নিচে দিয়ে দুইটাতেই বসার ব্যবস্থা। আমাদের বাড়ির সবাই (দাদা দাদী, বড়ফুফু আর কাজের লোক বাদে) চলে এসেছে। অন্যরকম পরিবেশ। ঠিক যেন টিভির ম্যাচ।

টস হয়ে গেল। টসে জিতে আমরা ব্যাটিং নিলাম। ১৬ ওভারের খেলা। প্রথমেই উইকেট পতন। এরপর ওয়ানডাউনে নেমে বড়ভাইয়ার দুর্দান্ত ব্যাটিং। মেজ ভাইয়াও মোটামুটি ভালোই করলো। আমি নামলাম ৬ ওভার হাতে থাকতে। কোচ ছোটচাচা বললেন, ইমরান খানের জন্য মোক্ষম সময়।
'মোক্ষম সময়' টা আমি কাজে লাগালাম। একেতে ইমরান খান ব্যাট আর সেই সাথে দাদার 'ঝাড়া'। ১৬ বলে ৩৩! শেষ বলে চার। ছোটচাচা দৌড়ে এসে কোলে নিলো। যেন ম্যাচ জিতে গেছি।

লাঞ্চ ব্রেকে দুইদলের প্লেয়ার কে ডিম, কলা, পাউরুটি, রসগোল্লা খেতে দেয়া হয়েছিল। পরে জানতে পারলাম এই আয়োজনটা আব্বাই করেছিলো। জেনে একটুও অবাক হয়নি।
ফিল্ডিংয়ে নামার আগে মেজচাচা সবাইকে চুইংগাম কিনে দিলেন। এতে নাকি টেনশন থাকে না। আর বললেন, খালি আপিল করবি।
আমরা ভিভ রিচার্ডের মত চুইংগাম চিবোতে চিবোতে মাঠে নামলাম। কার কতো জোড়ে শব্দ হয় সেটাও দেখার বিষয়।

ম্যাচটা আমরা জিতেছিলাম অনায়াসেই। টার্গেট ১৬ ওভারে ১৩৫ রান। অনেক। আমাদের ফাস্ট বলার 'মনো ভাই' প্রথম ওভারেরই নিলো ৫ উইকেট। এরপর ম্যাচে আর কিছু থাকে না। আর স্পিনার মেজভাইয়া নিল ৩ টা। টিমের ইমরান খান বল করার সুযোগই পেল না। কত বড় অপমান!

জিতে হৈচৈ করতে করতে বাড়ি ফিরছি। আমার প্রথম 'ইন্টারন্যাশনাল' ম্যাচ খেলার আনন্দ। জেতার আনন্দ। আহ 'ইন্টারন্যাশনাল' ম্যাচ ! স্বপ্নের মত।

বাড়ি ফিরলাম। হৈ হৈ করে দাদার কাছে গেলাম। দাদা খুশি হলেন এবং বললেন--
"এইযে আজ জিতে আনন্দ করছো। খুশি হচ্ছো। কিন্তু পরে হেরে যেতো পারো, এটা মনে রাখবা। তখন আবার মন খারাপ করবা না। কারণ আবার তোমরা জিতবা। "

দাদার এই কথাটা স্পষ্ট মনে আছে আমার,কোনদিনই ভুলবোনা। কথাটাই মনে রেখেছি শুধু, কথার মানেটা না।


ছবিঃ
ম্যাচের আগে তোলা। ষ্টুডিও থেকে লোক এসেছিলো। আমাদের টিম বসে আছে। ইমরান খান ব্যাটটা আমার হাতে নেই।





ছোটবেলায় এই পোস্টার টা আমার ছিল। ঢাকা নিউমার্কেট থেকে কিনে দিয়েছিলো।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:১৬

জেনারেশন৭১ বলেছেন:



গার্মেন্টস'এর অবস্হা কি?

২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৯

পদ্মপুকুর বলেছেন: আপনার স্মৃতিলিখনী পড়ে ড. জাফর ইকবালের বাচ্চাদের নিয়ে লেখা বইয়ের ঘটনার মত মনে হলো। আহা, কি আনন্দময় ছোটবেলা আমরা কাটিয়েছি!

৩| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪

মেহবুবা বলেছেন: আমার কেন যেন মনে হচ্ছে তোমার এ লেখাটা আমি আগেও পড়েছি!
সে যাই হোক্, ভাবছি বর্তমানের কিশোর যুবকেরা ভবিষ্যতে কি নিয়ে স্মৃতি কাতর হবে?

৪| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৫

আজব লিংকন বলেছেন: যদি কেউ জোড়া না পায় , তাকে আমরা বলতাম 'পেটকাটা'
আমরা দুধ ভাত বলি।।
বেচারা ইমরান খান, শুনলাম তাঁকে মুক্তির জন্য অন্দোলন হচ্ছে।।

৫| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২২

রাজীব নুর বলেছেন: ক্রিকেট নয়, আমি বেশি খেলেছি ফুটবল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.