নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নির্ভাণা

নির্ভাণা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বকাপ ফুটবল ও আমার কিছু কথা

২৯ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:০৫

আমার শৈশবের বেশ খানিকটা স্মৃতি জুরে আছেন ‘মেজো দাদা’। উনি আসলে ছিলেন আমার বাবার মেজো চাঁচা, তাই আমিও ডাকতাম ‘মেজো দাদা’। দাদার আদর কাকে বলে তার সবটাই জেনেছি, মেজো দাদার অতলান্তিক আদরে। এক টাকার সি-ভিট থেকে শুরু করে, দুই টাকার আঁচার, ফুঁপির হাজার বকুনি খেয়েও, আমার প্রত্যাশা মিটাতে চুপি চুপি হাতে ধরিয়ে দিতেন বাজার থেকে আনা পুরি, যেঁটা ছিল আমার প্রায় প্রতিদিনের আবদার। এখানেই কি শেষ? বাজার থেকে আলতা আন রে, খেলন বাটি আন রে, পুতুল বিয়ের ডেড লাইন দিয়ে আল্টিমেটাম…… তার আগে পুতুল এর পালকী চাই, আরও কত হাবিজাবি!!! দুপুরেও কি আর চোখ লাগানোর উপায় আছে??? একটু ঝিমুনি আসলো তো, হাত ঝাঁকিয়ে, ‘ও দাদা এরপর গল্পে কি হল বল না’……

দাদার সাথে সারা বছর ঝগড়া চলত একটা জিনিষে নিয়েই, ‘ক্রিকেট নাকি ফুটবল?’
আমি ছিলাম ঘোর ক্রিকেট ফ্যান, তাই ফুটবল ছিল দুই চোখের বিষ!!!
আর দাদা?? ছাত্র জীবনে নাকি খুব ভাল ফুটবল খেলতেন, তাই ফুটবল-টাই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ খেলা।
বিশ্বকাপ ফুটবল বলে যে একটা কিছু আছে, সেটাও প্রথম জেনেছিলাম দাদার কাছ থেকেই।

এত তর্ক বিতর্কের পরেও, বিশ্বকাপ ফুটবল টা কিন্তু ঠিকই দেখা হতো। কিন্তু কাকে সাপোর্ট করা উচিত, এই ব্যাপারে আমি এখন পর্যন্ত অশিক্ষিত!!! দাদার বাসায় বসতো বিশ্বকাপ ফুটবল দেখার জমজমাট আসর। একই আসরে আকাশী নীল আর হলুদ-রা তর্ক জুড়ত, আর তিন রঙা কালো, হলুদ আর লাল-রা সংখ্যালঘিষ্ঠ থাকায়, কিছুটা চুপ করেই থাকতো। আমার তো এমনিতেই এই ব্যাপারে শিক্ষা দীক্ষা কম, তাই শৈশবের কোন এক বিশ্বকাপ ফুটবলে, আকাশী নীল-দের প্রভাবে সেজেছিলাম আকাশী নীল, আবার পাল্টা প্রভাবে কোন এক সময় গালে এঁকেছিলাম হলুদ দলের পতাকা। তবে ২০০২-এর বিশ্বকাপ ফুটবলে কিছুটা বুঝে শুনে সাপোর্ট করেছিলাম গোটা বিশ্বকে অবাক করে দেওয়া সাউথ কোরিয়া-কে, সেটা কিছুটা আবেগও বলা যেতে পারে, হাজার হলেও সাউথ এশিয়ান কোন দেশ এই প্রথম আসলো সেরা চার-এ।

এবার ঈদের খুশীর সাথে এডেড বোনাস হয়ে আসলো বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮। চার বছর পর টি ভি-র স্ক্রিন জুরে আসন পেতে বসলেন এই বিশেষ অতিথি, তাকে সঠিক আমন্ত্রণ তো করা চাই!!!! বাঙ্গালি বরাবরই অতিথি পরায়ণ, তাই দেশটা কে আর নিজেকে সাজিয়ে, এই বিশেষ অতিথিকে আমন্ত্রণ যানাতে কার্পণ্য করে না। আর বাঙ্গালীর মাঝে ফুটবল উন্মাদনা তো নতুন কিছু নয়, যুগে যুগে এমনটাই হয়ে আসছে।

ঈদের সন্ধ্যায় আমাদের বাসায় বেশ একটা জম্পেশ গেট টু গেদার হল। তাদের মাঝে আকাশী নীল আর হলুদ-রা তখন মহা ব্যস্ত বলের তালে চোখ নাচাতে। শুধু চোখ নাচানোতে কি আর তৃষ্ণা মিটে??? চোখের সাথে মুখটাও নাচানো চাই যুক্তি তর্কে !!! না হয় কি আর আসর জমে??? তাদের মাঝে ছিল এক বালক বয়সের ছেলে, বেচারা মাথা চুলকে কুল পায় না কোন দলে ভিড়বে।

চার বছর পর পর এই উৎসবটা বেশ ভালোই লাগে। অলি গলি, দালান বাড়ি অথবা সুউচ্চ কোন ছাঁদে, দুলতে থাকে রঙবেরঙের পতাকা, যেখানে আকাশী নীল আর হলুদের প্রাধান্যটা স্বাভাবিক ভাবেই বেশী। পছন্দের দলের জার্সি পেয়ে, ৪০ ছুঁই ছুঁই এক লোকের মাঝে যেমন কৈশোরের উচ্ছ্বাস দেখি, তেমনই আবার আরও এক ফেভারিটের লাস্ট মোমেন্ট গোল দেওয়া দেখে, উচ্ছ্বাসে খাট থেকে এক লম্ফে ফ্লোরে নেমে, দেয়ালে বারি দিয়ে দেখি খুশীর প্রকাশ। রাত একটা দেড়টায়, হই হই শুনে জানালা দিয়ে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করি, আকাশী নীল চিল্লায় নাকি হলুদ চিল্লায়? গোল দিয়ে চিল্লায় নাকি গোল খওয়া দেখে চিল্লায়?

এত আনন্দের মাঝেও আমার মনে ভিড় করে হাজারও প্রশ্ন। আকাশী নীল আর হলুদের এত দ্বন্দ্বের ইতিহাস টা কি? এই দুই দল যেহেতু আলাদা দুই গ্রুপে, তাই প্রথম রাউন্ডে এঁদের মাঝে কোন প্রতিযোগিতা থাকার প্রশ্নই উঠে না, তার পরেও এই দুই দলের ফ্যানদের মাঝে কেন এত শত্রুতা? ফেইসবুকের হোম পেইজে যখন দেখি আকাশী নীল হলুদকে অথবা হলুদ আকাশী নীল কে, অকথ্য ভাষায় গালা গাল করছে অথবা যতটা পারছে ছোট করছে। যুক্তি খুঁজে পাই না… কাঁদেরকে উঁচু করতে নিজেরা এত ছোট হচ্ছি? নাকি ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দকে আমরা সম্মান করাই ভুলে গেলাম?
কেন বন্ধুকে সান্ত্বনা দিয়ে বলতে পারি না, ‘আমার ফেভারিট তো গেছে, দোয়া করি তোর টা যেন থাকে।‘
প্রথম ফেভারিট আকাশী নীল তো দ্বিতীয় ফেভারিট হলুদ অথবা প্রথম ফেভারিট হলুদ তো দ্বিতীয় ফেভারিট আকাশী নীল… কেন এমন হয় না???
পত্রিকায় যখন দেখি, অমুক দলের ফ্যান অমুক দলের ফ্যান-কে কুপিয়েছে…… আবার অমুক দল হেরে যাওয়ায় সেই দলের ফ্যান আত্মহত্যা করেছে…… আঁতকে উঠি !!!! যেই দেশের খেলোয়াড়দের জন্য এত কিছু, সেই দেশের মানুষ গুলো অন্তত এই ক্ষেত্রে যথেষ্ট সভ্য।

আমি আগেই বলেছি, এই ক্ষেত্রে আমি চিরকেলে অশিক্ষিত, তাই এই ২০১৮ তেও প্রশ্ন করি, ‘এইটা কি নেইমার?’ ‘ম্যারাডোনা এখনও বেঁচে আছে?’
এই কথা শুনে ফুটবল ফ্যান-রা চোখের সাইজ দিগুণ করে বলবেন, ‘আপনার জীবন তো তাহলে ষোলো আনাই বৃথা।’
মেজো দাদা পৃথিবী ছেঁড়ে চলে গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। এখন থাকলে কি ভাবতেন জানি না, কারণ তাদের সময় নিজের পছন্দকে জাহির করতে, এমন উগ্র উন্মাদনায় কেও জড়াত না। আর মেজো দাদার ফেভারিট কে ছিল? আকাশী নীল নাকি হলুদ? সেটা নাহয় নাই বললাম, কারণ উগ্র ফ্যানদের গালা গালে উনি অসম্মানিত হোক আমি তা চাই না। উনার সম্মান টা না হয় অটুট থাকুক। সেই সাথে অটুট থাকুক ভক্তদের সম্মান সূচক সুস্থ প্রতিযোগিতা।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:৪০

মনিরা সুলতানা বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন!!!!
আমি নিজেও কাকে যে সাপোর্ট করছি ,প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছি এবারের উগ্রতায় :(
অথচ গতবারের বিশ্বকাপের সময় প্রায় প্রতিদিনের আপডেট ছিল।

৩০ শে জুন, ২০১৮ রাত ১:০৩

নির্ভাণা বলেছেন: আমিও কাকে সাপোর্ট করছি ,প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছি!!!

২| ২৯ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: এই বার বিশ্বকাপে একটাই দুয়া করতেছি। সেমিফাইনাল যেন আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিল হয়। আহা। চক্ষু জুড়ায় যাইতো।

৩০ শে জুন, ২০১৮ রাত ১:০৫

নির্ভাণা বলেছেন: একদম মনের কথাটা বলেছেন, আমার খুব ইচ্ছা এমন একটা ম্যাচ দেখার!!!!

৩| ২৯ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৫১

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: বিশ্বকাপ নিয়ে লেখা আপনার স্মৃতিকথাগুলো চমৎকার হয়েছে। পড়তে পড়তে নিজের অতীতে চলে গিয়েছিলাম। পোস্টে লাইক দিলাম।

৩০ শে জুন, ২০১৮ রাত ১:০৫

নির্ভাণা বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.