নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নির্ভাণা

নির্ভাণা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাষা বিভ্রাট

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৫৭

শহরের একটা ঘিঞ্জি গলি, তার মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি আর রিক্সা পাল্লা পাল্লি দিয়ে বানিয়ে ফেলল তিনটি লাইন। ব্যাস !!! হয়ে গেল একটা জগা খিচুড়ি অবস্থা। দুই রিক্সার চাকায় লাগলো টক্কর, আর কে পায় ‘তুই আগে না মুই আগে’, ‘তুই আগাইলি কেন, তো, তুই ডাইনে ঘুরাইলি কেন’। এরপর এর বাক্য গুলো আর লেখার মত নয়, যদিও এই বাক্য গুলো আমরা রাস্তায় অহরহই শুনতে পাই, যেগুলো প্রধানত জন্ম পরিচয় অথবা অপরজন এর মা কে সম্বোধন করে বলা হয়। গাড়ীতে বসে থাকা এক ভদ্রলোক মাথা বের করে বলে উঠলেন, ‘কি ভাষা… ছোটলোক কোথাকার।

সবে এইচ.এস.সি র গণ্ডি পার হওয়ে, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হল, মফস্বল থেকে আসা রেজাউল। মফস্বলের ছেলে, তাই শহুরে হালচালের সাথে নিজেকে খাপ খওয়াতে বেশ কিছুদিন সময় লাগলো। সার্টের হাতার বুতাম লাগালে সবাই বলে খ্যাঁত, সাইড সিঁথি করে চুল আঁচড়ানটাও নাকি খ্যাঁত, সিগারেটে দুই এক টান না দিলে বন্ধুরা বলে, ‘বাবু সোনা ঘরে যেয়ে ফিডার খাও’। এই সব কিছুর সাথেই রেজাউল মোটামোটি এঁটে উঠল। প্রথমে একটু খচ খচ লাগলেও আরও একটা জিনিষের সাথে রাজাউল অভ্যস্ত হল, সেটা একটা শব্দ !!!! একটু পান থেকে চুন খসলেই, অথবা ঠাট্টার ছলে বন্ধুরা, মধ্যমা প্রদর্শন করে, ইংরেজি শব্দে ‘এফ’ দিয়ে চার অক্ষরের একটা শব্দ বলে। রেজাউল বুঝে নিলো এভাবে না বললে জাতে উঠা যাবেনা।

একদিন বাচ্চাদের স্কুল থেকে আনতে, রাস্তা পারাপারের জন্য দাঁড়ালাম, আমার পাশে একটি মেয়ে দাঁড়াল। বেশ ভুষায় বুঝা যায় আর্থিক ভাবে বেশ সচ্ছল ঘরের মেয়ে, চলন বলনেও বেশ স্মার্ট। ফোনে কথা বলতে বলতে কার প্রতি যেন বিরক্তি প্রকাশ করল, বাক্যের প্রথম শব্দটি ছিল, ‘ব’ দিয়ে দুই অক্ষরের, আমাদের প্রতিবেশী দেশের প্রধান ভাষায় যাকে বোঝানো হয় ‘চুল’। রিফ্লেক্স একশন-এর মাধ্যমে মেয়েটার দিকে ঘুরে তাকালাম। মেয়েটি ঈষৎ বিব্রত বোধ করে পাস থেকে সোরে গেলো।

এই তিনটি ঘটনার সমীকরণ মিলাতে পারছেন কি ?

রিক্সা চালকের মুখে গালি শুনলে আমরা অবলীলায় বলে দিতে পারি, ‘অশিক্ষিত ছোটলোক’, তাহলে শিক্ষিত মানুষের মুখে একই শব্দ শুনলে তাকে কোন পাল্লায় মাপা উচিত, সেটা কি আমরা কখন চিন্তা করেছি ? বা যারা এই ধরনের শব্দ ব্যাবহারে অভ্যস্ত, তারা কি নিজেরা কখন চিন্তা করে দেখেছেন, আক্ষরিক অর্থে কি বলছেন? কেন বলছেন? কাকে বলছেন?
আরও একদল মানুষ আছে, যারা ব্ল্যাক মানি ওয়াইট করার মত একই শব্দ ইংরেজিতে ব্যাবহার করে নিজেকে খুব ট্রেন্ডী প্রমাণ করতে চান। একবারও কি ভেবে দেখেছেন, তথাকথিত এই ট্রেন্ডের ঘূর্ণিপাক আপনার রুচি পছন্দকে কোথায় তলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে? ইংরেজি সিনেমা অথবা সিরিয়াল গুলোতে কথায় কথায় মধ্যমা প্রদর্শন করে, ‘এফ’ সম্বলিত চার অক্ষরের শব্দের ব্যাবহার কে আমরা যেভাবে ইন টু ট্রেন্ড ভেবে নিচ্ছি, সেটা আসলে কতটুকু যৌক্তিক? জানেন কি, উন্নত দেশ গুলোর এলিট শ্রেণীর মানুষরা তাদের শব্দ উচ্চারণের ব্যাপারে খুবই সতর্ক?

এবারে আসি এখনকার বিনোদনের হট আইটেম, অশালীন ভাষার লাইভ ভিডিও প্রসঙ্গে। এই জাতীয় লাইফ ভিডিও-র শীর্ষে এখন যিনি আছেন, সত্যি কথা বলতে আমি তার নামও জানতাম না, ফেইসবুকে মাঝে মাঝে তার ছবি দেখতাম আর এরপর যখন খবরের চ্যানেলে নিউজ হওয়ে আসলেন, তখন মনে হল, এই লোক আসলে কি বলতে চায় একটু শুনি। আমার পুরো ভিডিও শোনার মত রুচি হয়নি এবং মনে হয়েছে এই লোকের বক্তব্য শোনা আর নীল ছবি দেখা একেই কথা। তার উক্তি এবং মন্তব্য নিয়ে এতো লাফালাফি দেখলে মনে হয়, আমাদের কি বিবেক বোধ এতটাই লোপ পেয়েছে? আসলেই কোন সমাজে আমরা বসবাস করছি? আরও উদ্বেগের কারণ হচ্ছে, যেই লোকের পদাঙ্ক অনুসরণ করে এখন আরও অনেকেই এই ধরণের ভিডিও করতে সাহস পাচ্ছে এবং এই অশালীন ভাষা ব্যাবহারের একটি খোলামেলা মাধ্যম করে দিচ্ছে, কালকে আমার সন্তান, আপনার সন্তান এবং আগামী প্রজন্ম যে এমন ভিডিও বানাবে না, সেটার কোন নিশ্চয়তা আপনি, আমি, আমরা সবাই কি দিতে পারব?

এ-লেভেল এর কোচিং-এ, ডেভেলপমেন্ট ইকনমিক্স পড়ানর একটা পর্যায়, স্যার একদিন বলেছিলেন, বাংলা ভাষায় কোন গালি বা স্ল্যাং ল্যাংগুয়েজ নাই, আমরা সচরাচর যেই স্ল্যাং ল্যাংগুয়েজ গুলো শুনে থাকি, সেগুলো সব ইম্পোর্টেড ল্যাংগুয়েজ। যেমন আমারা কি কাউকে কখন বলতে শুনেছি, ‘তুমি একটা কুকুর ছানা’?
এতদিন পর কথাটা আসলেই ভেবে দেখলাম, এই যে আমরা কথায় কথায় বলি একাত্তর-এর চেতনা, চেতনাটা আসলে কি??? একাত্তর এর যুদ্ধের রাজনৈতিক অনেক কারণ থাকলেও, শুরুটা হয়েছিল ভাষা নিয়ে। আমরা কি আসলেই বাস্তবিক ভূমিকা রাখছি ভাষার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে?

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৪৫

ঋতো আহমেদ বলেছেন: নির্ভাণা,, আপনার নামটি যেমন অনন‍্য তেমনি আপনার পোস্ট এর বিষয়বস্তু কে উপস্থাপন করার প্রকাশ ভঙ্গিও দারুণ। চমৎকার ও বাস্তব জীবনের কিছু উদাহরণ দিয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ভাষা ব্যবহারের দৈন‍্যতা ও নীচতা কে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। একাত্তরের চেতনা আসলে একটা গাল ভরা কথা মাত্র এখন। সত্যি আমরা নিজেরাই তো প্রায়ই ওইসব শব্দ অবলীলায় ব‍্যবহার করছি রাস্তা ঘাটে। আমাদের বোধোদয় হোক এই কামনা করছি। +++

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:০৩

নির্ভাণা বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: মানুষ যেম বদলায়, মানুষে রমুখে রভাষাও বদলায়। এটা মেনে নিতে সমস্যা কি?

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:০৫

নির্ভাণা বলেছেন: মানুষ, মানুষ থেকে অমানুষ হলে সেটা যেমন মানার মত নয়, তামনি মানুষের ভাষা শালীন থেকে অশালীন হলে সেটাও মানার মত নয়।
একজন মানুষের রুচিবোধ প্রকাশ পায় তার ভাষায় এবং ব্যাবহারে। এটা যদিও আমার নিজস্ব ধারণা।

তবে যার কাছে ভাষার এই প্রকার এর বদল কোন সমস্যা না, তাহলে আমি ধরে নিতে পারি সে অনেক শক্ত মনের মানুষ। কারণ সে যদি অপরের বাবা মা তুলে অস্রব্ব গালা গাল করতে পারে, তাহলে তাকেও তেমনটা মেনে নিতে হবে, যদি তার বাবা মা কে তুলে অপরজন পালটা গালা গাল করে। আমি দুঃখিত আমার বাবা মা কে নিয়ে কেউ এমনটা বললে আমি মেনে নিতে পারবনা, তাই আমিও এই ভাষা ব্যাবহার করব না, কারণ ঢিল ছুঁড়লে পাটকেল খেতে হবে !!!!
যে মেনে নিতে পারে, তাকে হয়ত, মুখের ভাষায় অসংখ্যবার বস্ত্রহরণ করে তার গপন অঙ্গ নিয়ে কথা বললে তার কোন সমস্যা নাই, কিন্তু আমি দুঃখিত আমার সমস্যা আছে।

৩| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৫২

স্রাঞ্জি সে বলেছেন:




ঠিকই বলেছেন.....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.