নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নির্ভাণা

নির্ভাণা › বিস্তারিত পোস্টঃ

টুকটুকির সাথে একদিন

১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:২৪


ঝটিতি এক রাতে বাচ্চাদের একটা অনুষ্ঠানের শুটিং-এর অফার পেলাম, আর অনুষ্ঠানটি যেহেতু সিসিমপুর, তাই এক সেকেন্ডও সময় লাগল না উপরনিচে মাথা ঝেঁকে সম্মতি জানাতে। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর জন্য বাচ্চাদেরকে খুব একটা চাপাচাপি করতে হল না, শুধু বলতে হয়েছে, ‘কালকে কিন্তু শিকু, হালুম, টুকটুকি আর ইকরির সাথে কথা বলতে হবে, তাই তাড়াতাড়ি ঘুমাও।
শুটিং-এর অল্প বিস্তর কিছু অভিজ্ঞতা থাকায়, টি ভি-তে সিসিমপুরের সেট দেখে ধরেই নিয়েছিলাম শুটিং-টা ইনডোরে হবে তাই মনটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল ‘যাক বাবা হ্যাপা কম।‘ কিন্তু সেই স্বস্তিতে গুঁড়ে বালি!!!
প্রথমে একটু ঘাবড়ে যাচ্ছিলাম, এই দুই জন কে নিয়ে আউটডোর শুটিং???
সকলে মিলে চলে গেলাম কেরানীগঞ্জের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে। সবে মাত্র আষাঢ় এসেছে, কোথায় আকাশ চুন কালি মেখে বসে থাকবে!!! তা তো নয়-ই এ যেন একেবারে শরৎ-এর ঝকঝকে নীল আকাশ, তার মাঝে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা তুলো। গরমটাও যেন একেবারে ভাদ্রের গরম।

সে গরম-টরম যাই হোক, দিনটা কিন্তু স্মৃতির বাক্সে তুলে রাখার মত একটা দিন ছিলো বটে। কারণ এটা ছিল আমার দুষ্টু পাখি দুইটার প্রথম গ্রাম দেখা। দুটির মনই অস্থির, ছুটে বেড়ানোর বায়নায়, এই নৌকায় উঠার আবদার, তো এই পানিতে সাঁতার কাটার আবদার, এই গাছে উঠবো তো এই দুরন্ত পায়ে খোলা মাঠে দৌড়ে বেড়াবো। আমার মনটাকেও কি আর বেধে রাখতে পেরেছিলাম!!! কোথায় গিয়ে যেন হাতরে বেড়াচ্ছে, শৈশবের দিন গুলোকে। জীবনের প্রথম পনেরোটি বছর তো, এমনই এক মনোরম পরিবেশে কাটিয়েছিলাম।
শুরু হল শুটিং, বেশ কয়েকটা খণ্ড খণ্ড পর্বে। আজকের শুটিং শুধুই টুকটুকির সাথে। গ্রামের মানুষ গুলোর যেন আজ ঈদ, গ্রামে শুটিং পাট্টি এসেছে যে!!! গ্রামের মানুষ গুলো খুব উদার, ওরা ইট কাট পাথরে থাকা মানুষ গুলোর মতো মেপে হাসে না, মেপে কথা বলেনা, মাপা আত্মসম্মান বোধ নিয়েও চলে না।

শুটিং-এ যাওয়ার অতিরিক্ত পাওনা হিসেবে যোগ হলো, নতুন কিছু মানুষের সাথে পরিচয় এবং শুটিং-এর ফাঁকে লেখালেখি নিয়ে বেশ উর্বর কিছু আলোচনা। উপকৃত বোধ করি আমিই হয়েছিলাম বেশি, কারণ এই মানুষ গুলোর কাছ থেকে জেনেছি অনেক।
দুপুরের খাওয়া শেষে এবার ডায়লগ শিখানোর পালা, ‘টুকটুকি আমারা কিন্তু সাবান দিয়ে হাত-ও ধুয়ে নিয়েছি। সাবান কে ‘সামান’ আর ‘হাত-ও’ বলার সময় দীর্ঘ নিঃশ্বাস সহ অতিরিক্ত টান, এই দুই জিনিষ ঠিক করতে রীতি মতো মাথার ঘাম পায়ে ঝরাতে হলো।
এইবার শট নেওয়ার পালা, কিন্তু প্রয়োজন একজন ‘দাদি’ কে, এখন কোথায় পাওয়া যাবে এই ’দাদি-কে’?? শুটিং কেন্দ্র করে, ইতিমধ্যেই গুড়ো থেকে বুড়ো সবার ভিড় জমেছে। দাদির বয়সী কয়েক জন কে প্রস্তাব দেওয়া হলো, আঁচল টেনে, দাঁতে কামড়ে, সাফ জানিয়ে দিলেন তারা ক্যামেরার সামনে যাবেন না। এখন উপায়? দাদি ছাড়া এই শট অসম্ভব। বহুত বলে কয়ে একজন দাদি-কে রাজি করানো গেলো। গাছের ছায়ায়, উঠানে বসে, আমার জ্যেষ্ঠ মেয়ে, জ্যৈষ্ঠ মাসের ফল খাচ্ছে, তার কাল্পনিক বাবা, ভাই আরে কাঠ খর পুড়িয়ে ম্যানেজ করা দাদির সাথে।

সারাদিনের ক্লান্তি মেখে অবশেষে শেষ হল শুটিং। দিনের আলোটা হেলে পরেছে পশ্চিমে। বাড়ি ফিরে মনে হলো যেন যুদ্ধ জয় করলাম। আর আমার পাখি দুইটা, নতুন এক অভিজ্ঞতার পালক মাথায় গুঁজে কিচির মিচির করছে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৪

বিজন রয় বলেছেন: আপনার জন্য ও আপনার দুষ্টু দুটি পাখির জন্য শুভকামনা রইল।

ভাল থাকুন সবসময়।

২| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৪

এ.এস বাশার বলেছেন: ভালো লিখেছেন.....

৩| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৫২

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: আপনার অভিজ্ঞতা পড়ে ভাল লাগল।

৪| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৩

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: আর আমার পাখি দুইটা,
নতুন এক অভিজ্ঞতার পালক মাথায় গুঁজে কিচির মিচির করছে।

.....................................................................................
এমন অভিজ্ঞতা সবার হয়না, অভিনন্দন !

৫| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর।

৬| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:০২

নির্ভাণা বলেছেন: সবাই কে ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.