নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নির্ভাণা

নির্ভাণা › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই বসন্তে-১

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:১২

শীতের বিকেল গুলোর এই এক সমস্যা, অতি দ্রুত পাঠ চুকিয়ে, তল্পি-তল্পা গুটিয়ে, পগার পার! অফিস শেষে বিকেলের সুধা টুকু নেওয়ার কোন উপায় নেই। এমনই নানা বিধ কারণে, সাদিয়ার কাছে শীতকালটা একেবারে গায়ের কাঁটা। পাঁচটায় অফিস শেষ করে, রিক্সায় চেপে, প্রতিদিনের মতো আজও ইচ্ছে হচ্ছে, বাসায় না ফিরে পুরো ঢাকা শহরটা ঘুরতে। ওই ইচ্ছে পর্যন্তই, ঘুরা কি কখনো হয়েছে? ঘুরার ইচ্ছাটা আসলে দম নেওয়ার একটা ছুতো। অফিস শেষে বাকি সহকর্মীরা হাফ ছেরে বাঁচে, বাসায় গিয়ে ফুসফুস ফুলিয়ে দম নিবে, কিন্তু সাদিয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একেবারেই উল্টো। আজও হয়তো ইনিয়ে-বিনিয়ে, ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ওই একই কথা শুনতে হবে।

নানা কথা ভাবতে ভাবতে কলিং বেল-এ চাপ দিলো সাদিয়া। এই বাড়িতে বেশীরভাগ সময় দরজা খুলে রত্না। ঘরের তেলেপোকা মরার খবর থেকে শুরু করে ইন্টারনেটের লাইন কেটে যাওয়ার খবর, মোট কথা ঘরের ছোট থেকে বড় সব ধরণের খবর, দাঁত কেলিয়ে, ঘরে পা দেবার আগেই, সাদিয়াকে বলা চাই, যদিও সাদিয়ার তাতে বিন্দু মাত্র আগ্রহ নেই আর কেনোই বা তাকে বলে তাও তার জানা নেই। একই নিয়মে, আজও দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল, ‘গেরাম থাইক্কা চাচি আম্মারা আইসে’।
চেহারায় তেমন কোন ভাব প্রকাশ না করেই, ভেতরে ঢুকল সাদিয়া। কয়েক পা এগিয়ে, বয়স্ক মহিলাটিকে দেখে, সালাম দিলো। মহিলাটি চমকিত দৃষ্টিতে যেন একেবারে লাফিয়ে উঠে বললেন, ‘ওও, তুমি-নি নাঈমের বউ, বালো আস-নি?’
উত্তর দেওয়ার আগেই, রান্না ঘর থেকে সাদিয়ার শাশুড়ি মা আলেয়া এসে বলল, ‘সাদিয়া, উনি হচ্ছে নাঈমের দূরসম্পর্কের চাচী, তোমাদের বিয়ের সময় উনি আসতে পারেন নাই......। কি ভাবি কেমন দেখলেন আমার বউ রে?’
‘হ, মাসাল্লাহ বউ তো ভালই, তা যাও মা যাও, বাইরে থেইক্কা আইস, হাত মুখ ধুইয়া লও’।
মৃদু হেসে সাদিয়া ভেতরে চলে গেলো।

নিজের ঘরে বসেই, সেই কুৎসিত ফিসফিসটা শুনতে পেলো। গ্রাম থেকে আসা চাচী বেশ উৎসাহ নিয়ে জিজ্ঞাস করলেন, ‘বিয়ার চাইর বসর হইয়া গেসে, অহনো বাইচ্চা হয় নাই?’
সাদিয়ার শাশুড়ি মা সকল কে যেই বৃত্তান্ত দেন এবং রীতি মতো অন্যান্য আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের বলে বেড়ান, সেই একই বৃত্তান্তই দিলেন, ‘হের মায়ের বাচ্চা হইতে সমস্যা আসে। ওর মায়ের তো দুইটা বাচ্চা পেটেই নষ্ট হইসিলো, শেষেরটা তো ছয় মাসে, তাও আবার ছেলে বাচ্চা।
এই কথা শুনে চাচীর চোখ একেবারে ছানা বড়া, ‘ইয়া আল্লাহ্ কও কি! এডি বুইজ্ঝা সুইন্না, বউ আনতে পারো নাই?’
আলেয়া মুখ কালো করে বলল, ‘কি আর বলবো ভাবী, এতো কিসু কি আর বুচ্ছি, নাতি-নাতনীর চেহারা মনে হয় আর দেখা হবে না। তিন মেয়ের পরে, ছেলে তো আমার ওই একটাই।‘
সাদিয়ার কাছে এগুলো নতুন কথা নয়, তবুও কথা গুলো যেন, মাথায় হাতুড়ির আঘাত হানছে, দাঁতে দাঁত চেপে আজও কথা গুলোকে গেলার চেষ্টা করছে।

রাতের খাবারের পাঠ চুকিয়ে, নাঈম ঘরে এলো, এবং প্রতিদিনের মতোই অর্ধ গ্লাস পানি পান করে, আধশোয়া অবস্থায় চশমা চোখে দিয়ে বিজ্ঞের মতো ‘ফিলিপ কটলার’-এর বইটা হাতে নিয়ে, গভীর মনোযোগে বই-এর মাঝে ডুবে গেলো। ঘুমের আগের সব প্রস্তুতি সেরে, সাদিয়া বিছানায় এলো। খুব শান্ত স্বরে নাঈমকে বলল, ‘রিপোর্ট গুলো নিয়ে আর কত দিন বসে থাকবে? ডাক্তারের কাছে কবে যাচ্ছি আমরা?’
চেহারায় কোন রেখাপাত না করে, মুখের সামনে বই এঁটে, খুব স্বাভাবিক স্বরেই বলল, ‘এই মুহূর্তে হাত ফাঁকা, জানইতো জমি, ফ্ল্যাট আর গাড়ির ইন্সটলমেন্ট টানতে হচ্ছে। এ গুলো শেষ হোক, তারপর যাওয়া যাবে।‘
‘এমন করে করে, তিনটা বছর পার করে দিলে, আর কত?’
বইয়ের ভাজ এঁটে, চশমা খুলে, আড়মোড়া ভেঙে, হাই তুলতে তুলতে নাঈম বলল, ‘সারাদিন অনেক ধকল গেছে, আর পারছিনা, এখন ঘুমাবো’

ব্যাটারি চালিত পুতুলের সুইচ অফ করার সাথে সাথে যেমন শব্দ বন্ধ হয়ে যায়, তেমনই, বিছানায় পিঠ লাগানোর সাথে সাথে নাঈম-ও নাক ডাকতে শুরু করে। সাদিয়া রোজকার মতোই আধ-জ্বলা নিওনের বাতি গুলো দেখে। রাস্তা ফাঁকা পেয়ে সাই সাই করে, ট্রাক চলছে বাস চলছে। আজকের আকাশটাও বেশ পরিষ্কার, রূপোর থালার মতো চাঁদ উঠেছে। সাদিয়া বুঝে পায় না, জীবনের সমস্ত বাদ ভেঙে, রাতে চলা বাস ট্রাক গুলোর মতো সাই সাই করে ছুটবে? নাকি রূপালি আলোয় আকাশে উড়বে্?

চলবে…...

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৩:৪৮

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: চলুক...

২| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৪

নির্ভাণা বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.