নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নির্ভাণা

নির্ভাণা › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই বসন্তে-২

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:০৯

অফিসে আজ কিউবিকল গুলোর সামনে কিছুক্ষণ পর পরই জটলা পাকাচ্ছে। খন্ড খন্ড কথা কানে আসছে, ‘হ্যাঁ যাবো’, ‘কোথায় যাচ্ছিস?’, ‘কখনো যাইনি, এইবার যাবো’, জাতীয় সব কথা।

পিঠে আচমকা টোকা দিয়ে কেয়া বলল, ‘কি রে, সেই কখন থেকে দম মেরে বসে আছিস, তোর আজকাল কি হয়েছে বল তো?

সাদিয়া চেহারা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল, ‘কই, কিছু না তো।’

‘তুই বললেই হলো? আচ্ছা যাই হোক, ছুটিতে কোথায় যাচ্ছিস?’

‘ছুটি? কিসের ছুটি?’

‘তোর তো দেখছি মাথা আসলেই আউট হয়ে আছে, আরে বাবা উইকেন্ডের আগে পরে সরকারী ছুটি পড়েছে, সব মিলিয়ে চার দিন, এমন সুযোগ মিস করা যায়?’

তেমন কোন উৎসাহ ছাড়াই, সাদিয়া বলল ‘ও আচ্ছা, দেখি নাঈম কি বলে’

‘বলবে কি রে দৌড়াবে!!! এই চান্সে একটা হানিমুন সেরে ফেলো মামু!!! আমাদের তো দিন শেষ, বাচ্চা নিয়ে তো আর হানিমুন হয় না। কে যানে, হানিমুন থেকে ফিরে আসার পর হয়তো তোর মুখেও সুখবরটা শুনবো’

সাদিয়া যানে, সুখবর শোনার কোন সম্ভাবনা নেই, তাই কথা না বাড়িয়ে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে। সুখবর কথাটা মধুর, কিন্তু এই মধুর কথাটাই আজ ওর মাথায় যন্ত্রণাদায়ক টোকা দিয়ে যাচ্ছে।

কলিং বেল চাপতেই, যথারীতি রত্না দাঁত কেলিয়ে দরজা খুলল, নতুন কোন সংবাদ না দিয়ে, শুধু বলল, ‘ভাবী, আপনার লগে কথা আসে।‘
সাদিয়ার পিছু পিছু রুমে এসে, যতটা সম্ভব গলা নামিয়ে বলল, ‘গেরাম থাইক্কা চাচী আম্মার লগে তার একখান নাতনী আইসে না? হেই নাতনীরে চাচী আম্মা কি কইসে জানেন?’
বিন্দু মাত্র আগ্রহ না দেখিয়ে, বেশ বিরক্তি নিয়ে, চোখ সরু করে, সাদিয়া রত্নার দিকে তাকালো।
রত্নার যেন তাতে কোন বিকার নেই, কোন রকম ইতস্তত না করে হর হর করে কথা গুলো বলে ফেলল, ‘চাচী আম্মা হের নাতনীরে কইসে, আপনার লগে কম মিশতে, আপনের হাতের কিছু খাইতে না। বাঞ্জা বেডির সুইত লাগলে হের নাতনীর বিয়ায় না কি অলক্ষ্মী লাগবো।‘
সাদিয়া চোয়াল শক্ত করলো, বিকারহীন পাথরের মূর্তির মতো সটান দাড়িয়ে রইল। এতো শক্ত চোয়াল ভেদ করে কোন ভাষা বের হওয়া সম্ভব না। সাতটি শব্দ বহুত কসরত খাটিয়ে বের হলো, ‘রত্না, এই মুহূর্তে তুমি এখান থেকে যাও।’

একই টেবিলে বসে, রাতের খাবার খওয়ার আর রুচি হলো না। বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লো সাদিয়া। আজ চোখের ঘুম গুলো একেবারে বেসামাল হিজরা নাচ নাচ্ছে, শুয়েও স্বস্তি হচ্ছে না। হঠাৎ কাঁধে একটা হাত পড়লো, পেছন না ফিরে, হাতে হাত রেখেই সাদিয়া বুঝতে পারলো, হাতটা নাঈমের।

অফিসের ছুটি আরও একদিন বাড়িয়ে, বেশ একটা জম্পেশ ভ্রমণ হলো বান্দরবান, খাগড়াছড়ির বুকে। প্রতিদিনকার অফিসের চেয়ার, একই রাস্তায় বাড়ি ফেরা, রত্নার দেঁতো হাসি, শাশুড়ি মায়ের বাঁকা হাসির টিপ্পুনি, রাতের আধ-জ্বলা নিওনের বাতি, হুস হুস করে গন্তব্যে ছোটা বাস ট্রাক ছাপিয়ে, কিছুটা হলেও তো স্বস্তি। প্রকৃতি এখানে বড়ই উদার, পৌষ মাসের অসহ্য কৃপণ বিকেলটাও এখানে বেশ উপভোগ্য। কিন্তু জীবনের ওই খচ খচ টা, সেটার কি কোন সুরাহা হবে?

সাময়িক ঘোরাঘুরি গুলোর এই এক বিড়ম্বনা, হাতে গোনা কিছু দিন বাস্তবতা থেকে একেবারে দূরে সরিয়ে আলাদা এক মায়াময় জগত তৈরি করে, তারপর ছিটকে ফেলে দেয় বাস্তবতায়। সেই তো আবার আটপৌঢ়ে জীবনটায় ফিরে আসা, খামোখাই এতো আয়োজন। এমনই না না বিধ কথা ভাবতে ভাবতে, অফিস ছুটছে সাদিয়া।

চলবে…...

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: গুছিয়ে লিখুন। বুঝতে বেগ পেতে হয়।

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৮

নির্ভাণা বলেছেন: ভাই, এখনি সব বুঝে ফেললে, গল্পের শেষে গিয়ে কি বুঝবেন?
দোয়া করবেন, যেন আরও গুছিয়ে লিখতে পারি।

২| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:২৯

আহমেদ জী এস বলেছেন: নির্ভাণা,




ঠিকই বলেছেন - "সাময়িক ঘোরাঘুরি গুলোর এই এক বিড়ম্বনা, হাতে গোনা কিছু দিন বাস্তবতা থেকে একেবারে দূরে সরিয়ে আলাদা এক মায়াময় জগত তৈরি করে, তারপর ছিটকে ফেলে দেয় বাস্তবতায়। সেই তো আবার আটপৌঢ়ে জীবনটায় ফিরে আসা, খামোখাই এতো আয়োজন।"

ভালো হচ্ছে। চলুক....

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৫

নির্ভাণা বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.