![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গল্প গুলো মানুষের গড়া। খুব ছোট ছোট গল্প, তাই সমাজ তার বুকে খুব নিখুঁত ভাবে গল্প গুলোকে এঁটে নিয়েছে সামাজিক নিয়ম হিসেবে। নিয়ম গুলো কোন রুল বুকে লেখা নেই, তারপরেও নিয়ম তো!!!! তাই আজকে বলবো নিয়মের গল্প।
জাহানারা বেগম, মেয়েকে বিয়ে দিয়ে বেজায় খুশি। ভোর পেড়িয়ে দুপুর গড়ায়, মেয়ের রুমের দরজায় যেন কোন টোকা না পরে, সেই ব্যাপারে তিনি সদা তৎপর, রুমের ভেতরে নতুন জামাই আছে না!!! অন্তরঙ্গ মুহূর্তে যেন কোন ছেঁদ না পরে!!! এরপর দুপুর ১২টায় টেবিল ভরা নাস্তা অথবা বিকেল চারটায় দুপুরের খাবারের পসরা সাজিয়ে জাহানারা বেগম বিস্তৃত এক গাল হাসি নিয়ে মেয়ে আর মেয়ের জামাই কে খওয়ায়, মেয়ে আর মেয়ের জামাই মিটিমিটি হাসে আর খায়, তারপর আবার কক্ষে যায়। জাহানারা বেগমের প্রাণ জুড়ায়, মেয়ের সুখ দেখে।
কিন্তু কি আশ্চর্য, বছর খানিক পর এই জাহানারা বেগমই, ছেলে বিয়ে করিয়ে, নতুন বউয়ের সাথে কষলেন উল্টো হিসাব। সকাল নয়টা না বাজতেই, ছেলের কক্ষে রীতি মতো বজ্রপাত হানলেন, চমকে উঠে ছেলের বউ, ছেলে দরজা খুলতেই রাগান্বিত স্বরে বললেন, ‘তুই ঘুমাইলে ঘুমা, বউটারে তো সকাল সকাল পাঁঠায় দিতে পারস’, সম্ভবত উনি ভেবেছিলেন, তার পুত্র সারা রাত জেগে মশা মেরেছেন, আর পুত্রবধূ নাক ডেকে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমিয়েছেন। শুধু কি তাই...... পুত্রবধূ বিয়ের পরদিনই সকাল সকাল এসে খুন্তি ধরল না কেনও? তাদের কে পর্যাপ্ত পরিমাণে সময় দিলো না কেন (অর্থাৎ সুযোগ পেলেই ছেলের সাথে রুম বন্ধ করে থাকা)? অতিথি আসার সাথে সাথে রুম থেকে বের হলো না কেন (অর্থাৎ তার পুত্রের সাথে রুমের ভেতর যেই অবস্থাতেই থাকুক না কেন, ঐ মুহূর্তে বেরিয়ে আসা চাই)? এমনই না না বিধ কারণে জাহানারা বেগমের মুখ একেবারে হাড়ি হয়ে ছিল। তার উপর একেবারে ঘড়ির কাটার সাথে নিয়মের বেড়াজাল, ঠিক এতটার মধ্যে নাস্তা, দুপুরের খাবার আর রাতের খাবার খাওয়া চাই, না হলে ঘরের ডিসিপ্লিন থাকে না। পুত্রবধূকে তুলে আনার সময় খুব সোনামুখ করে বলেছিলেন, ‘আমরা বউ নিচ্ছি না, মেয়ে নিচ্ছি’।
এটা কোন একজনের গল্প নয়, এই উপমহাদেশর অসংখ্য ঘরেই ঘটে যাচ্ছে একেই ঘটনা। যে কোন নতুন দম্পতির কাছে বিয়ের পরবর্তী সময় গুলো সারা জীবন সরণীও হয়ে থাকে। তাই, নিজের মেয়ে অথবা বোনের নতুন বিয়ের স্মৃতিকে যেমন অলঙ্করণ করে দিচ্ছেন, নিজের পুত্রবধূ অথবা ভাইয়ের বউয়ের স্মৃতি গুলোতে কালিমা লেপে দিচ্ছেন না তো? আপনার মেয়ে এবং মেয়ের জামাই, বিয়ের প্রথম রাতটি যেমন অন্তরঙ্গ ভাবে কাঁটায়, আপনার পুত্র এবং পুত্রবধূ কিন্তু নাক ডেকে ঘুমায় না, তারাও একই ভাবে রাত কাঁটায়, তাই বিয়ের পরেরদিন সকালে আপনার মেয়ের, মেয়ের জামাইয়ের আর আপনার পুত্রের যেমন ঘুমের প্রয়োজন আছে সেই সাথে আপনার পুত্রবধূটিরও ঘুমের প্রয়োজন আছে, কারণ আপনার পুত্রটিকে সুখ দিতেই আপনার পুত্রবধূ রাত জেগেছে।
সমাজের চোখে, এমন অসম আচরণটাই নাকি নিয়ম। একটি বার কি ভেবেছেন এই নিয়মের ফাঁদে পরে, আপনি আপনার ছেলে এবং মেয়ের দাম্পত্য জীবনে কতটা অসম আচরণ করছেন? সৃষ্টিকর্তার অনুশাসনে পুত্রবধূ এবং মেয়ের জামাইয়ের প্রতি এমন অসম আচরণের কোন নিয়ম তো নেই-ই বরং কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন সন্তানদের প্রতি কোন প্রকারের অসম আচরণ না করা হয়। তাই মানুষের গড়া নিয়ম কে সামাজিক নিয়ম হিসেবে মানতে গিয়ে যেন পরকালে ফেঁসে না যান, কারণ আপনার কারণে আপনার পুত্রের দাম্পত্য জীবনে যদি ছেঁদ পরে, সেই দায় কিন্তু আপনাকেও নিতে হবে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৪৩
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: মানুষ বড়ই স্বার্থপর...