নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নির্ভাণা

নির্ভাণা › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রয়োজনটা ভেবেছেন কি?

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৫:২০

কোহিনূর বেগম আজ বিধবা হলেন, খাটিয়ায় করে স্বামীর লাশটিকে তার চোখের সামনে দিয়ে নিয়ে গেলো। মানুষটা তো চলে গেলেন, কিন্তু স্মৃতি গুলো? দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর আগে, কোন এক ছোট্ট গ্রামে, বারো বছর বয়সে লাল বেনারসি পরে শ্বশুর বাড়িতে পা রেখেছিলেন। স্বামীর সাথে ঘুরতে যাওয়া তো দূরের কথা, মুরুব্বীদের সামনে কথা বলাটাও যেন পাপ। তাই, শ্বশুরের অজুর পানি আর প্রয়োজনীয় বাকি জিনিষ গুলো গুছিয়ে দিয়ে, স্বামীর হাত ধরে, চাঁদের আলোয় পালা দেখতে যাওয়া হয়েছিলো, বাড়ির পেছনের দরজার কল্যাণে। পরিবারের কেউ কখনো জানেনি, জানলে কি লজ্জাটাই না পেতেন। এরপর, একের পর এক সন্তান, সংসার, কারো চাচী, কারো মামী, কারো ভাবী, কারো বৌমা, এভাবেই তো কেটে গেলো জীবন। আজ কেন মনে হচ্ছে, কতো কথা বলা হয়নি লোকটাকে, অথবা লোকটারই হয়তো আরও অনেক কথা বলার ছিল?

এ তো গেলো একটা সেকেলে গল্প। কিন্তু এই আধুনিক যুগের তিন্নি? প্রাইভেট কোম্পানির চাকরী, বেতন, বোনাস, প্রোমোশন, তীরের বেগে সামনে আগাচ্ছে, অফিসের সকলের মুখে তিন্নির জয়জয়কার। স্বামীও কাজ করছে একটি মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানিতে। বিয়ের প্রথম একবছর বেশ ঘোরাঘুরি চলল। আজ বিয়ের ছয় বছরের মাথায়, দুজনের মাঝে কোথায় যেন একটা টানাপোড়ন জন্ম নিলো। অফিসের কাজে বনবন করে ঘুরছে দুজন, এক মিনিটও যেন ফুরসত নেই।

বাইরে ঘোরা, খাওয়া, চট জলদী টিকিট কেটে হারিয়ে যাওয়া, স্বামীর সাথে লং ড্রাইভে যাওয়া। এক তুড়ি-তে কোথায় যেন উবে গেলো তিথির জীবন থেকে। ঘর আলো করে পর পর দুটি সন্তান আসলো কোলে। ডায়পার, সুজি, খিচুড়ি, বমির গন্ধ, এক পা দুই পা হাটা, এটা ধরে না ওটা ধরে না, স্কুলের এডমিশন, করে করে পার হয়ে গেলো পাঁচটি বছর। স্বামীর সাথে ইদানীং তিথির খুটুর খাটুর যেন লেগেই আছে। তিথিই মাঝে মাঝে বুঝে পায় না, এটা কি ও নাকি ওঁর হরমোন?

যুগ বদলেছে, কিন্তু কোহিনূর, তিন্নি, তিথিরা, একটা জাগায় একই ভাবে দাড়িয়ে আছে।

স্বামী এবং স্ত্রীর মাঝে ‘কোয়ালিটি টাইম’-এর প্রয়োজনীয়তার সাথে এখনও কেন যেন আমাদের সমাজ এঁটে উঠতে পারেনি। অনেকেই মনে করেন বিয়ের প্রথম কয়েক বছরই যথেষ্ট, এরপর খুব এক্সক্লুসিভ ‘কোয়ালিটি টাইম’-এর আর প্রয়োজন নেই অথবা প্রয়োজন আছে বলে উপলব্ধই করেন না। যেমন, কোন দম্পতি বাচ্চা ছাড়া কোথাও ঘুরতে গেলে, অনেকের মুখেই শুনতে হয়, ‘আল্লাহ্‌, বাচ্চা আনো নাই?’, ‘বাচ্চা ছাড়া ঘুরতে গেসো?’ ‘ভালই তো, বাচ্চা ছাড়া ঘুইরা আসলা, আমি হইলে জীবনেও পারতাম না!!!’। এমনকি অনেক দম্পতী, বাচ্চা ছাড়া দূরে কোথাও ঘুরতে যেতেও লজ্জা পান অথবা গিল্টি ফিলিং-এ ভুগেন।

মধুচন্দ্রিমা মেনে নিলেও অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ আছেন, যারা স্বামী-স্ত্রীর ঘুরতে যাওয়া কে বাজে খরচ অথবা বাড়তি রংঢং মনে করেন। কিন্তু জানেন কি, যেকোনো বয়সের যেকোনো দম্পতীর, দেশের বাইরে অথবা দেশের ভিতরে অথবা খুব কাছের কোন যায়গা হলেও, অন্তত বছরে একবার একটি মধুচন্দ্রিমা এবং মাসে অন্তত একদিন ডেইট-এ যাওয়া প্রয়োজন? এবং সেই ক্ষেত্রে, পরিবারের অন্য সদস্য বিশেষ করে অভিভাবকদের সহযোগিতা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। বাবা-মা অথবা শ্বশুর-শাশুড়ি বছরে একটিবারের জন্য নাতি-নাতনির দায়িত্ব নিয়ে, তাদের সন্তানদের সুযোগ করে দিতে পারেন কোথাও ঘুরে আসতে।

একটু মনে করে দেখবেন কি, শেষ কবে বাবা-মা অথবা শ্বশুর-শাশুড়িকে দেখেছেন প্লেজার ট্রিপে যেতে? বছরের পর বছর সংসারের ঘানি ঠেলে, ডায়াবেটিস অথবা হার্টের অসুখ বাঁধানো এই মানুষ গুলোর দাম্পত্য জীবনও কিন্তু আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পরে।

বাচ্চাদের সাথে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া যেমন প্রয়োজন, বাবা-মায়েরও আলাদা ঘুরতে যাওয়া প্রয়োজন, সেই শিক্ষাটি সন্তানদের ছোটবেলা থেকে দেওয়া উচিত। যেমন আমার সন্তানদের আমি বুঝাতে সক্ষম হয়েছি, ‘শুধু বাবা-মা যখন ঘুরতে যায়, তখন বেবিদের যেতে হয় না’, এই ব্যাপারটাকে তারা খুব সহজ ভাবে মেনে নিয়েছে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, বাচ্চাকে যেন নিরাপদ হাতে রাখা হয়।

বর্তমান সময়ে, ডিভোর্সের সংখ্যা বাড়ার পেছনে নানাবিধ কারণ থাকলেও, ‘কোয়ালিটি টাইম’-এর অভাবও একটি বড় কারণ। বিয়ের এক যুগ পরেও স্বামী-স্ত্রী আলাদা ভাবে ঘুরতে যাওয়া অথবা ডেইট-এ যাওয়া কোন সামাজিক ট্যাবু নয়, বরং প্রয়োজন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:২০

রাজীব নুর বলেছেন: যুগ যত আধুনিক হচ্ছে। সমস্যা তত বাড়ছে।

২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৫

লিংকন১১৫ বলেছেন: হুম , আসলেই আমি কখনো এমন ভাবে ভেবে দেখি নি ।
আসলেই সবারই পার্সোনাল কিছু সময় দরকার , যা আমরা আসলেই

৩| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:২৬

ওসেল মাহমুদ বলেছেন: সুন্দর পোস্ট !

৪| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৯

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: বর্তমান সময়ে নিজেই তো মনে হয় নিজেজে কোয়ালিটি টাইম দিতে পারে না মানুষেরা, আর পরিবারকে কি দিবে? :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.