![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লা-মাসিয়ার সাথে যদি কোনো ফুটবল এ্যাকাডেমির তুলনা কর হয় তবে সবার আগে যে নামটা আসবে তা হলো আয়াক্স ইউথ এ্যাকাডেমি। আজকের ওয়েসলি স্নাইডার, ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন, থমাস ভেরমালিনরা এই এ্যাকাডেমিরই তৈরি। আর একজন অসাধারণ খেলোয়ারকেও এই এ্যাকাডেমি তৈরি করেছে- রাফায়েল ভ্যান-ডার-ভার্ট।
এই ডাচ খেলোয়ার কতটা প্রতিভাবান ছিলেন তা বুঝতে আয়াক্স এ্যাকাডেমির একটুও সমস্যা হয়নি। তাই প্রথম ট্রায়ালেই ১০ বছর বয়সী ভিডিভিকে নিয়ে নেয় এই দল। তারপর ২০০০ সালে যখন ১৭ বছর বয়সী এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার আয়াক্সের হয়ে তার প্রথম মৌসুম খেলেন তখন দর্শকদের অবাক হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। বাম পায়ের যাদুতে সবাইকেই যেন নিজের বশ করে ফেলেছিলেন। নাহয় ১৭ বছরে ছেলেকে কেউ 'নতুন ক্রুইফ' বলে ডাকে? সাথে ডাচ ফুটবলের বর্ষসেরা প্রতিভা আর গোল্ডেন বয় অ্যায়ার্ডতো ছিলই।
সেটাতো ছিল শুধু শুরু। স্নাইডারের সাথে মিডফিল্ডে ভয়ংকর জুটি গড়ে তোলেন, সাথে ইব্রার মতো স্ট্রাইকার, এক কথা পুরা কম্প্লিট অ্যাটাকিং প্যাকেজ। আর এই প্যাকেজেই বিদ্ধস্ত হতো প্রতিপক্ষ। ২০০৪ এ ইব্রার সাথে সম্পর্ক শীতল হওয়া ও ইব্রার জুভেন্টাসে যাওয়ায় তাকে অ্যাটাকিং মিড থেকে সরাসরি স্ট্রাইকিং পজিশনে খেলানো হয়, সাথে দেওয়া হয়। তবে কোচের সাথে বড়াবড় খারাপ সম্পর্কের জন্য সে ক্লাব ছাড়ে। সম্পর্কটা কতটা খারাপ ছিল তা বোঝার জন্য একটা ছোট পরিসংখানই যথেষ্ঠ, গড়ে তিনি প্রতি মৌসুমে ২৩ টা লিগ ম্যাচ খেলতে পারতেন।
আয়াক্স ছেড়ে যখন হ্যামবুর্গে যোগ দিলেন, অনেকেই অবাক ও হতাশ হয়েছিলেন। যাদের দলে জোহান ক্রুইফও একজন। কারণ হ্যামবুর্গে যোগ দেওয়ার আগে বাতাসে খুব জোড়ালো গুন্জন ছিল তার মিলানে যাওয়ার বেপারে।
তবে ক্লাবকে সফলতা দিতে তার অবদান সবাইকে আবারও অবাক করে, প্রথম মৌসুমেই ক্লাবের টপ স্কোরার, দল লিগ টেবিলের তৃতীয় স্থানে আর ট্রফি কেবিনেটে '২০০৫ উয়েফা ইন্টারটোটো কাপ'। পরের মৌসুমে ক্যাপ্টেন্সি পেলেও ইন্জুরির কারণে নিজের সেরাটা দিতে পারেন নি। তবে দল ঠিকই জেতে ইন্টারটোটো কাপ। রিয়াল মাদ্রিদের তুমুল আগ্রহ যখন তাকে বার্নাব্যুতে আনা সময়ের ব্যাপার মনে করায়, তখনই আরেক বছর থাকার ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি। হ্যামবুর্গে তার শেষ মৌসুমে ১২ গোল করেন, যদিও ইন্জুরি তাকে আবারও গ্রাস করে।
২০০৮-০৯ মৌসুমের শুরুতে চেলসি, অ্যাতলেটিকো আর জুভেন্টাসকে পেছনে ফেলে মাদ্রিদ সাইন করায় ভিডিভিকে। রাউলের পজিশনে দারুন খেললেও জুনাড ও পেলেগ্রিনির প্ল্যানে ছিলেন না তিনি। তাছাড়া স্নাইডার-রোবেনদেরকে অনিচ্ছা থাকা সত্তেও বিক্রি করা তার ভালো লাগে নি, যদিও তিনি চেয়েছিলেন মাদ্রিদে আরও কয়েক মৌসুম থাকতে। তবে ২০১০ এর ডেডলাইন ডের শেষ মুহুর্তে তাকে টটেনহ্যামে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
টটেনহ্যামে সেই চিরচেনা ভ্যান-ডার-ভার্টকে না পাওয়া গেলেও দলের দুর্দান্ত পারফরমেন্সে তার অবদান চোখে পড়ার মতো। বেল-মদ্রিচ-ক্রাউচ-পার্কার-লেলোন-ভিডিভি, এই অ্যাটাক সামলাতে প্রায় প্রতিটা টিমকেই হিমশিম খেতে হয়েছে। সেকেন্ড স্ট্রাইকার হিসেবে তার খেলা ভয়ংকর বললেও কম হবে। ২০১২-২০১২ এর শেষে হ্যামবুর্গে ফিরে আসেন এই ৩১ বছর বয়সী ডাচ।
আন্তর্জাতিক লেভেলে তার পারফরমেন্স সর্বদাই আশানূরূপ ছিল। দেশের হয়ে মোট গোল সংখ্যা ২৫। ২০০৪ এর ইউরো আর ২০১০ এর বিশ্বকাপ তার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আসলে মাঝেমাঝে একটা প্রশ্ন আমার মাথায় বারবার ঘুরপাক খায়, ভ্যান-ডার-ভার্ট আসলে কোন পায়ে খেলেন। কারণ একদিকে বাম পায়ের লং রেন্জের শট, অন্যদিকে ডান পায়ের চোখ ধাঁধানো ফিনিশিং। দারুণ ও কার্যকরী থ্রু পাস বা ক্রস, অথবা গোল করার অভ্যাস। ক্লিনিকাল স্ট্রাইক বা দারুন ভিসন সম্বলিত কম্প্লিট প্যাকেজ এই ডাচ। এ্যাটাকিং মিডফিল্ড পজিশনটাকে 'সেকেন্ড স্ট্রাইকার'-এ বদলানোর পেছনে রাউলের পড়ে যদি কারো হাত থেকে থাকে তবে সে রাফায়েল ভ্যান-ডার-ভার্ট।
এতটা গিফটেড ফুটবলার হয়তো ফুটবল বিশ্ব আগামী ৩০-৪০ বছরেও পাবেনা।
রাফায়েল ভ্যান-ডার-ভার্ট
©somewhere in net ltd.