![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পেলে একবার বলেছিলেন, "ফুটবল কিভাবে খেলা উচিৎ সেটা তিনি শিখিয়ে দিয়েছেন।"
" এই পৃথিবীর সবকিছুই আপেক্ষিক ", কথাটা সত্য। সবকিছুই নির্ভর করে আপনার ওপর, আপনার দৃষ্টিকোণের ওপর। তাই কোনো কিছুকেই আপনি 'পরম সত্য ' বলতে পারবেন না। তবে হ্যাঁ, যুগে যুগে এমন কিছু মানুষ পৃথিবীতে আসে যারা নিজেদেরকে নিয়ে যায় এমন উচ্চতায়, যেখানে আপেক্ষিকতার কোনো প্রশ্ন আসে না, কথা হয় মহত্বের, অমরত্বের। এই পৃথিবী ফুটবলকে কতকিছু দিয়েছে তার পরিমাণ হয়তো আমার কাছে জানা নেই, তবে ফুটবল এই পৃথিবীকে যে কত কিছু দিয়েছে তার খুব ছোট, অতি ক্ষুদ্র একটি উদাহরণ আছে আমার কাছে, যাকে হয়তো ইতিহাসের পাতায় জায়গা দিতে কেউই বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করবে না। তিনি একজন অতি সাধারণ মানুষ যার অসাধারনত্বের গল্প শুধু ব্রিটেনেই না, জানতো সারা পৃথিবী। তিনি স্যার স্ট্যানলি ম্যাথিউস।
১৯১৫ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি গ্রেট ব্রিটেনে জন্মগ্রহণ করেন এই প্রয়াত ইংলিশ ফুটবলার। ছোট বেলা থেকেই প্রিয় ক্লাব পোর্ট ভ্যালে হলেও বাবার ইচ্ছায় ১৫ বছর বয়সে যোগ দেন স্টোক সিটিতে। পরের মৌসুমে রিভার্স দলের হয়ে ২২ ম্যাচ খেলেই সবার নজরে আসেন। সেই ম্যাচগুলোর একটি ছিলো ম্যাঞ্চেস্টার সিটির বিরুদ্ধে। এই ম্যাচটায় তিনি এমন কিছু করেছিলেন যা কোনো খেলোয়াড়ের পায়ে তার আগে কেউ দেখেওনি, ভাবেওনি। আবিষ্কার করেন এক নতুন কৌশল।
তিনি ছিলেন টিপিক্যাল 'আউটসাইডিয়ট রাইট '। পজিশনটা বর্তমানে বিলুপ্ত হলেও কার্যকারিতা এখনো বিদ্যমান। এই পজিশনটা ছিলো তৎকালীন বহুল প্রচলিত ৫-৩-২ বা ৫-২-৩ ফর্মেশনের রাইট উইংয়ের মতো। তাই স্বাভাবিক ভাবেই তাকে বিরোধী ফুলব্যাকরা তাকে করা মার্কিংয়ে রাখতো। আর এরই সুযোগ নেন তিনি। শুরুতে ধির গতিতে আগাতেন আর যখনই ফুলব্যাকরা তাকে ট্যাকেল করার জন্য এগিয়ে আসতেন ওমনি বিদ্যুৎ গতিতে দৌড়ে পরাস্ত করতেন সবাইকে। তার গতি সম্পর্কে জার্মান কিংবদন্তি ফ্রেন্জ ব্যাকেনব্যুর বলেন, "ওকে থামানোর মতো কেউই নেই এই খেলায়। "
ব্রিটিশ মিডিয়া ঠিকই এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের খোঁজ পেয়েছিল, আর সাথে ব্রিটিশ ফুটবল। দ্বিতীয় বিভাগের দলকে প্রায় একায় নিয়ে আসেন প্রথম বিভাগে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের আগ পর্যন্ত স্টোককে প্রথম বিভাগে টিকিয়ে রাখেন এই ফুটবল কিংবদন্তি। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শেষে ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমের পার্ফরমেন্স ছিল দেখার মতো, দলের ৪১ গোলের ৩০ টাতেই রাখেন সরাসরি অবদান। ওই মৌসুমে স্টোক চতুর্থ স্থানে থেকে লীগ শেষ করে।
পরের মৌসুমে যোগ দেন ব্ল্যাকপুলে। এখানেও নিজের এক গাঢ় ছাপ রেখে যান। ১৯৪৮ সালে জেতেন এফডব্লিউএ বর্ষসেরা ফুটবলারের খেতাব। ৫২-৫৩ মৌসুমের এফএ কাপের ফাইনাল ছিল এফএ কাপের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ফাইনাল। বোল্টনের বিরুদ্ধে ব্ল্যাকপুল ৫৫ মিনিট পর্যন্ত ৩-১ গোলে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু তারপরই শুরু হয় স্ট্যানলি স্টানার। সবাইকে হতবাক করে দলকে জেতান ফাইনাল। তারই দলের মর্টেন্সেন ওই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করলেও আজও সেই ম্যাচ 'ম্যাথিউসের ফাইনাল' নামে পরিচিত। তখনকার এই ব্ল্যাকপুলের সাথে শুধু তুলনা হতো ম্যাট বাসবির ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের। ১৯৫৬ সালে জেতেন ব্যালন ডি 'অর।
১৯৬৩-৬৪ মৌসুমে আবারো স্টোক সিটিতে ফেরেন এই কিংবদন্তী। ২৮ বছর পর আবারো ফেরেন ইংলিশ ফুটবলের দ্বিতীয় বিভাগে। কয়েকজন বুড়োর এই দল আবারও স্টোককে নিয়ে আসে প্রথম বিভাগে। আর স্ট্যানলি আবারো জেতেন এফডব্লিউএ বর্ষসেরা ফুটবলারের খেতাব। ১৯৬৫ সালের পহেলা জানুয়ারি খেলোয়াড় অবস্থায় ৫০ বছর বয়সে 'নাইট ' উপাধিতে ভূষিত হন। সেই মৌসুমের শেষে ফুটবলকে বিদায় জানান ম্যাথিউস।
স্ট্যানলি ম্যাথিউস শুধু যে নিজেকেই ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন তা নয়, তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ টিম ম্যান। সতীর্থদের অ্যাসিস্ট করতে তার জুড়ি ছিলো না। টিপিক্যাল আউটসাইড রাইটদের মতো চোখধাধানো সব ক্রসে গোল করানোটা স্বাভাবে পরিণত হয়েছিল তাঁর। ক্রস প্লেসমেন্টে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়তো পৃথিবীতে আসেনি আজ পর্যন্ত। ড্রিবলিংয়ের সময় বল তার পা থেকে সরানোই ছিল প্রতিপক্ষের মূল লক্ষ্য। ৪-৫ জনকে কাটিয়ে গোল করাটা ট্রেডমার্ক বানিয়ে ফেলেছিলেন স্ট্যানলি। পেয়েছিলেন The Wizard of Dribble এবং The Magician খেতাব। ঠান্ডা মস্তিষ্কে প্রতিপক্ষকে বিদ্ধস্ত করার আরেক নাম স্ট্যানলি।
সত্যি বলতে কি, ফুটবলে দুই ধরণের খেলোয়াড় বিদ্যমান। এক, যাদের আপনি ভালোবাসেন ; দুই, যাদের আপনি ঘৃণা করেন। তবে আপেক্ষিকতার সুত্রকে কাজে লাগিয়ে আরো একদল ফুটবলার আছে, যারা এদের উর্ধ্বে। তাদের আপনি ভালোও বাসতে পারবেন না, ঘৃণাও করতে পারবেন না। এরা শুধুই আপনার 'রেস্পেক্ট ' এর অধিকারী। এদের আরেক নাম 'লেজেন্ড'।
আর স্ট্যানলি 'দ্যা স্টানিং' ম্যাথিউস তাদেরই একজন। I dare to love him...
"His name is symbolic of the beauty of the game, his fame timeless and international, his sportsmanship and modesty universally acclaimed. A magical player, of the people, for the people."
He is Sir Stanley Mathews!!!
©somewhere in net ltd.