নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি এক জন আত্মবিশ্বাসী মানুষ ।যে মচকায় কিন্তু ভাঙ্গে না ।
"হিয়া সুরত-এ আদম বহুত হ্যাঁয় , আদম নেহি হ্যাঁয়।" মীর তকি মীরের এই অমর উক্তি মানব জীবনের এক অনিবার্য সত্যকে তুলে ধরে। মানুষের মতো দেখতে অনেকেই থাকতে পারে, কিন্তু সকলেই সত্যিকারের মানুষ নয়। এই বাক্যের মধ্যে লুকিয়ে আছে মানব জীবনের নানাবিধ জটিলতা, বিশেষ করে সফলতার পথে যেসব প্রতিবন্ধকতা আসে।
ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, মনসুর হাল্লাজের মতো অনেক মহান ব্যক্তিই সামাজিক, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক কারণে নিপীড়িত হয়েছেন। মনসুর হাল্লাজের জীবন যেন এই বিষয়টির এক চরম প্রত্যয়। তিনি যখন মারেফাতের চূড়ায় পৌঁছেছিলেন, তখনই তাঁকে হত্যার মতো নির্মম শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। চাঁদনী রাত চোরের কখনো ভালো লাগে না।
এখানে মানুষের মতো দেখতে অনেক আছে কিন্তু মানুষ নাই।
উর্দু সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি মীর তকি মীরের উপরোক্ত কথা কোন যুগের মধ্যে সীমাবদ্ধ না। সর্বযুগের জন্য প্রযোজ্য এ কথা।
ইতিহাসের অন্যতম খোদা প্রেমিক মনসুর হাল্লাজ যখন মারেফাতের জগতের চূড়ান্ত চূড়ায়, ফানা ফিল্লাহ থেকে বাকা বিল্লায় বিলীন তেমন সময় হাল্লাজের জনপ্রিয়তায় তাকে অজুহাত তৈরি করে নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয়।
মনসুর হাল্লাজের হত্যা প্রক্রিয়ার সময়ের কিছু ঘটনা প্রমাণ করে প্রেমে দেওয়ানা মনসুর হাল্লাজ কত সহজেই নিষ্ঠুর শাস্তি ও মৃত্যুকে অবহেলে বরণ করে নিতে পারলেন।
মৃত্যু দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মনসুর হাল্লাজের দিকে সমস্ত দর্শক পাথর ছুঁড়তে শুরু করলো।
শিবলি একটা লাল গোলাপ ছুঁড়ে মারলেন। পাথরের আঘাতে কাতর হন নাই মনসুর হাল্লাজ কিন্তু প্রিয় সহচরের ছোড়া গোলাপের আঘাতে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
মানুষ জানতে চাইল, ”পাথরের আঘাতে শব্দ করোনি, আর গোলাপের আঘাতে দীর্ঘশ্বাস ফেললে কেন?”
প্রথমে মনসুর হাল্লাজের দুই হাত কেটে ফেলা হোল। হাল্লাজ হাসতে লাগলেন। জনতা ক্রুদ্ধ হয়ে জিজ্ঞাসা করল,”হাসছো কেন?”
এবার তাঁর দুই পা কাটা হলো। মনসুর হাল্লাজ হাসতে লাগলেন আর বলতে লাগলেন, ”এই দুটো পা দিয়ে অনেক হেটেছি আমি পৃথিবীর পথে। আমার আরও দুই অদৃশ্য পা এখনও দুই জগতের মাঝ দিয়ে চলছে। পারলে তোমরা সেই পা দুটো কাটো।“
এবার এলো সেই মহিমান্বিত সময়। মাশুকের সাথে মিলনের পূর্বে নাগালের মধ্যের উপাচার দিয়ে নিজেকে সাজানোর জন্য আশেকের প্রাণান্ত প্রয়াস।
মনসুর হাল্লাজ রক্তাক্ত কাটা হাত দিয়ে নিজের মুখায়বব রঞ্জিত করলেন।
জানতে চাওয়া হল, ”কেন এমন করলেন?”
মনসুর হাল্লাজ বল্লেন, ”শরীর থেকে অনেক রক্ত ঝরেছে। ফ্যাকাসে হয়ে গেছে চেহারা। যদি ভাবো আমি তোমাদের দেওয়া শাস্তিতে ভয় পেয়েছি তাই চেহারায় রক্ত মাখালাম যাতে আমাকে গোলাপ রাঙ্গা দেখায়। “অরুণ রাঙ্গা গোলাপ কলি, কে নিবি সহেলি আয়…।“ রক্তইতো নির্ভীক বীরের শ্রেষ্ঠ প্রসাধন!
মানুষ বলতে শুরু করলো, “মুখে রক্ত মাখানোর মারেফাত না হয় বুঝলাম কিন্তু বাহু কেন রক্তে রাঙ্গালে?”
“অজু করে নিলাম। রক্ত না হলে প্রেমের নামাজের অজু হয় না। আমার মাশুকের সাথে দেখা করতে চলছি। “অহুয়াল গফুরুল ওদুদ”। সে ক্ষমাশীল। সে প্রেমময়।প্রেমিকের সাথে দেখা করতে হলে রক্ত দিয়ে অজু করতে হয়।“
তাঁর চোখ উপড়ানো হলো। জনতা যখন জিভ কাটতে উদ্যত হোল তিনি বল্লেন, “একটু কথা বলার সময় দাও। জিভ কাটলেতো আর সে কথা বলতে পারবো না!”
আসমানের দিকে দুই খণ্ডিত বাহুদ্বয় তুলে বল্লেন, ”হে আল্লাহ্, তোমার খাতিরে ওরা আমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে, তাঁর জন্য তুমি ওদের ত্যাগ করো না।”
জিভ কাটা হলো। সন্ধ্য প্রার্থনার সময় তাঁর মাথা কাটা হলো।
ওরা আমার মৃতদেহ ছাই করে দজলা নদীতে ভাসাবে।দজলার প্লাবনে বাগদাদ প্লাবিত mহবে। আমার আলখেল্লা পানির সামনে বিছিয়ে দিও, পানি আর এগুতে পারবে না।
মানুষ মনসুর হাল্লাজকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল।বেহেশত দোজখের আশা না করে তিনি বেহেশত দোজখের স্রষ্টাকে চেয়েছিলেন।
লোভী মানুষেরাও তাকে মেনে নিতে পারে নাই। তুলসি দাসের সুন্দর একটা উপমা আছে:
“চোরহি চন্দিনি রাত ন ভারা।“ অর্থাৎ চাঁদনী রাত চোরের কখনো ভালো লাগে না। তাই মনসুর হাল্লাজকে রক্ত দিয়ে অজু করতে হয়েছে।
“তরুণ প্রেমিক প্রণয় বেদন জানাও জানাও বেদিল প্রিয়ায়”-নজরুল
মনসুর হাল্লাজের মৃত্যুদণ্ডের সময় যেসব ঘটনা ঘটেছিল, তা মানব মনের জটিলতার এক চিত্র তুলে ধরে। তাঁকে পাথর ছুঁড়ে মারার সময় শিবলির ছোড়া গোলাপের আঘাতে তিনি বেশি কষ্ট পেয়েছিলেন। এটি ইঙ্গিত করে যে, প্রিয়জনের কাছ থেকে আসা আঘাত অন্য যেকোনো আঘাতের চেয়ে বেশি যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে।
মনসুর হাল্লাজের শেষ মুহূর্তের কথাগুলি তার মনোবলের প্রমাণ। তিনি নিজের শরীরে যেসব নির্যাতন সহ্য করেছেন, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। তাঁর এই আত্মত্যাগের পেছনে ছিল এক অকৃত্রিম ভালোবাসা ও বিশ্বাস।
মীর তকি মীর ও মনসুর হাল্লাজের জীবন ঘটনা থেকে আমরা শিখতে পারি যে, সফলতার পথে প্রতিবন্ধকতা আসা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই প্রতিবন্ধকতাকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা আমাদের নিজেদের উপর নির্ভর করে। মনসুর হাল্লাজের মতো আমাদেরও নিজের বিশ্বাস ও আদর্শের প্রতি অটল থাকতে হবে।
সফলতার পথে প্রতিবন্ধকতা
সমাজের রীতি-নীতি, ধর্মীয় বিশ্বাস, বর্ণবাদ ইত্যাদি সফলতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি ইত্যাদি ব্যক্তির সফলতা বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
অর্থের অভাব, দারিদ্র্য ইত্যাদি শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও সুযোগের অভাব ঘটিয়ে ব্যক্তির উন্নতি বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
আত্মবিশ্বাসের অভাব, ভয়, হতাশা ইত্যাদি ব্যক্তিকে সফল হতে বাধা দেয়।
প্রতিবন্ধকতাকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়:
নিজের ক্ষমতায় বিশ্বাস রাখা।
সফলতা অর্জনের জন্য সময় ও ধৈর্যের প্রয়োজন।
কঠিন পরিশ্রম ছাড়া সফলতা অর্জন সম্ভব নয়।
:স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করা।
: লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করা।
অন্যদের সাথে সহযোগিতা করে কাজ করা।
নিজেকে নতুন জিনিস শিখতে উৎসাহিত করা।
পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে পরিবর্তন করতে প্রস্তুত থাকা।
সফলতার পথে প্রতিবন্ধকতা আসা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই প্রতিবন্ধকতাকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা আমাদের নিজেদের উপর নির্ভর করে। মীর তকি মীর ও মনসুর হাল্লাজের জীবন আমাদের শিক্ষা দেয় যে, আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য ও কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে যেকোনো প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করা সম্ভব।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৪২
Salina Alam বলেছেন: আত্মবিশ্বাস ধৈর্য ও কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে যে কোন প্রতিবন্ধকতাকে ইনশাআল্লাহ অতিক্রম করা সম্ভব। হতাশাগ্রস্হ মানুষকে একথা প্রেরণা যোগাবে। ইনশাআল্লাহ।
জাযাকাল্লাহ খয়রান।