![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন সাধারন মানুষ আমি মানুষের কথা বলি, দেশের কথা বলি। আমি যা বলি আর যা লিখি তা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ধারনা।
ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ বাঁশের সঙ্গে আমাদের সবারই
কমবেশি পরিচয় আছে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের
জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঁশ। জন্মের পর মা-খালা, নানি- দাদিরা যে দোলনায় চাপিয়ে দোল দিতে দিতে আমাদের গান শুনিয়েছেন, সেই দোলনা তো বাঁশেরই তৈরি ছিল। আবার মৃত্যুর পর বাঁশের খাটিয়াতে চড়েই যেতে হবে। দাফনের পর মাটিচাপা দেওয়ার আগেও বাঁশ লাগবে। অর্থাৎ জীবনের কোনো প্রান্তেই বাঁশ থেকে মুক্তি নেই। কিংবা বলা যেতে পারে, আমাদের জীবন
কোনোভাবেই বাঁশমুক্ত নয়। বাঁশের বহুমুখী ব্যবহার দেখতে পাই আমরা। আজকের দিনের মতো কংক্রিটের ব্যবহার যখন ছিল না, তখন বাঁশের প্রয়োজন ছিল অনেক বেশি। আজও বাঁশ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বড় বড় দালান তৈরিতেও বাঁশের
ব্যবহার আছে। বাঁশের তৈরি তৈজসপত্রের কদর আছে বিদেশের বাজারে। বাঁশের আসবাবও ব্যবহৃত হচ্ছে। তাতে কেবল আমাদের প্রয়োজন মিটছে, তা নয়; শিল্পমনের পরিচয়ও ফুটে উঠছে। বাঁশের শিল্পিত ব্যবহার আমাদের জন্য অর্থকরী। আবার বাঁশের ভিন্ন অর্থও আছে। তবে স্বীকার করতে হবে, আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঁশ। আমাদের সাহিত্যে বাঁশের
ব্যবহার আছে। আমাদের পরিচিত এক ব্যর্থ কবি তাঁর কবিতায় বাঁশ ব্যবহার করেছেন। তিনি লিখেছেন, 'বাঁশ থেকে হয় শক্ত লাঠি/বাঁশ থেকে হয় বাঁশি/বাঁশির সুরেই রাধার মুখে/উঠত ফুটে হাসি।' বাঁশ থেকে যে বাঁশি তৈরি হয়, সেই বাঁশিতে সুর তুলতেন কৃষ্ণ। সেই সুরের টানে ঘর ছেড়ে বের হতেন রাধা। আবার আমাদের ইতিহাসের সঙ্গেও বাঁশের যোগ রয়েছে। যেমনটি লিখছেন সেই ব্যর্থ কবি, 'তিতুমীরের কেল্লারে ভাই/কেল্লা ছিল বাঁশের/বংশজাত কেল্লাটা আজ/অঙ্গ ইতিহাসের।' গেল
শতকে 'তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা' নামে একটি ছায়াছবিও
নির্মিত হয়েছিল। বাঁশ কোথায় থাকে? কবির ভাষায়,
'বাঁশি থাকে হাতের মুঠোয়/ বাঁশ থাকে বাঁশঝাড়ে/
রাত্তিরে সেই বাঁশের লাঠি/ চৌকিদারের ঘাড়ে/ উঠলে সেটা চোর ছ্যাঁচোড়ের/ জন্য ভীষণ ত্রাস। বাঁশ জিনিসটা যেঅতিপ্রয়োজনীয় সেটা আমরা যেমন বুঝেছি, বিশেষ
করে আজকের দিনে যখন পরিবেশ বান্ধব' কথাটা সবার
কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে, তখন বাঁশও প্রিয় হয়ে উঠতে।
প্রাকৃতিক এই উপাদান দিয়ে সেখানে তৈরি হয়েছে বাইসাইকেল।
প্রতিষ্ঠানের ওয়ার্কশপে সাইকেল তৈরির উপাদান যেমন বাঁশ,
তেমনি যেসব উপকরণ ব্যবহার করে বাঁশকে সাইকেল তৈরির
উপযোগী করা হয়, সেগুলোও নাকি বাঁশের তৈরি।
জার্মানির দেখাদেখি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ঘানা, জাম্বিয়া,
সিঙ্গাপুরেও নাকি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে বাঁশের
সাইকেল তৈরির প্রতিষ্ঠান। বলা যায় না, কিছুদিনের
মধ্যে ওই ব্যাম্বু-সাইকেল আমাদের দেশেও চলে আসতে পারে।
হয়তো আগামী দিনে যান্ত্রিক বাহনেও দেখা যাবে বাঁশের
উৎকৃষ্ট ব্যবহার। বাঙালির জীবনের সঙ্গে বাঁশ জড়িয়ে আছে। আগেকার দিনে ঘর-গৃহস্থালির নানা কাজে বাঁশ ব্যবহৃত হতো।
সম্পন্ন গৃহস্থের বাড়িতে বড় বড় ধানের গোলা দেখা যেত।
সেই গোলা তৈরি করতে বাঁশ লাগত। ঘরের খুঁটি দেওয়ার
কাজে ব্যবহৃত হতো বাঁশ। আজকের দিনের মতো ব্যাংক
যখন ছিল না, তখন গ্রামের প্রান্তিক মানুষের টাকা- পয়সা সঞ্চয়ের জন্য বাঁশের খুঁটিই ছিল নির্ভরযোগ্য জায়গা। একবার ঢুকিয়ে দিতে পারলে সেখানেতো গিন্নির হাতও যাবে না। বাঁশের
ঝুড়ি এখনো ব্যবহৃত হয়। চাষির মাথায় যে মাথাল ব্যবহৃত
হতে দেখা যেত, সেটাও তৈরি হতো বাঁশ দিয়ে।
জমিতে যে বেড়া দেওয়া হতো, তার প্রধান উপাদান ছিল বাঁশ।
যদিও 'বেড়ায় ক্ষেত খেলে' তার দায় বাঁশের ওপর বর্তায় না। বাঁশের বেড়ার ঘরও অনেক দেখতে পাওয়া যেত গ্রামে।
এখন হয়তো তা আর দেখা যাবে না। শখের বাগানবাড়িতে কেউ কেউ বাঁশের ঘর তৈরি করে রাখতে পারেন।
রাখালের হাতে বাঁশির সঙ্গে থাকত লম্বা বাঁশের লাঠি। সেসব দিন তো প্রায় উঠেই গেছে। আগেকার দিনে জমিজমা সংক্রান্ত
কাজিয়া লেগেই থাকত। সেই কাজিয়াতে ব্যবহার করা হতো লাঠিয়ালদের। বাঁশের লাঠি-লড়ি ছিল সেই কাজিয়ার প্রধান উপজীব্য। এখন লাঠিখেলা একটি শিল্পসম্মত
ক্রীড়া। কুষ্টিয়ার ওস্তাদ ভাই ছিলেন এই লাঠিখেলার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লাঠি খেলাকে তিনি তুলে এনেছিলেন রাজধানীতে। এই লাঠি তৈরি করা সহজ কাজ নয়। সময়ের পরিবর্তনে বাঁশের ব্যবহারেও অনেক পরিবর্তন
এসেছে। এমনকি বাঁশ শব্দের ব্যবহারেও পরিবর্তন লক্ষ করি আমরা। কারো বাঁশ যাচ্ছে, কেউ বাঁশ খাচ্ছে, কেউ বাঁশ দিচ্ছে। কোনো ঘটনা কারো জন্য বাঁশ হয়ে যাচ্ছে। অমুক বাঁশ খেয়েছে, অমুক বাঁশ দিয়েছে, অমুক সেধে বাঁশ নিয়েছে- এমন অনেক কথা আমরা শুনে থাকি। এই বাঁশ খাওয়া-নেওয়া-দেওয়ার বিষয়টির সঙ্গে অনেকের বংশানুক্রমিক সম্পর্কও রয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে কেউ কেউ বাঁশ খেতে, দিতে ও সমাজের এক
প্রভাবশালী মানুষ, যিনি বাঁশ দিতে অভ্যস্ত। কিন্তু সেই বাঁশ
কেমন বাঁশ, সেখানেই কৌতুকের মজা। ছোটবেলায় তেলমাখা বাঁশ বেয়ে বানরের উঠে যাওয়া ও নেমে আসার অঙ্ক তো অনেককেই করতে হয়েছে। কিন্তু একটি তেল মাখা বাঁশে একটি বানর কেন উঠতে যাবে, সে রহস্য আজ পর্যন্ত উন্মোচিত হয়নি।
অঙ্কটাযেছাত্রজীবনেঅনেকের জন্য বাঁশ ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইংরেজিতে একটি শব্দ আছে ব্যাম্বুজল, যার অর্থ 'ধোঁকা/ধাপ্পা দেওয়া, বোকা বানানো, ছলনা করা' ইত্যাদি। বাঁশের ইংরেজি ব্যাম্বু। ছলনা, প্রবঞ্চনা, ধোঁকাও তাহলে এক
ধরনের বাঁশ! বাঁশ যতই উপকারী হোক, হোক ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ, বাঁশের এই 'দেওয়া-নেওয়া-খাওয়া' জাতীয় ব্যবহার আমাদের জন্য খুবই বিপদের কথা। কারো বাঁশ যাক, কেউ বাঁশ খাক- এটা আমরা চাই না। চাই না সুযোগ বুঝে কেউ বাঁশ দিক। তাই আমাদের উচিত সকল প্রকার বাঁশ হতে দুরে থাকা।।।।।।।।
©somewhere in net ltd.