নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভয়ংকর সুন্দর ;ক্রিষ্টাল মুর্ছনা

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:১৮

সবাই বলছে তুষার ঝড় কিন্তু যেমন করে ঝড় আসে কড়কড় করে বাজ পরে। তুমুল বাতাস ছুটে তেমন কিছুই টের পাওয়া গেলো না। বেশ ঠাণ্ডা ছিল আর আকাশ ভেঙ্গে জল নেমেছিল যেন ভরা বরষা। ঠাণ্ডা কমে গেলো। জিরো থেকে প্লাসে উঠলেই হীমে অভ্যস্থ শরীরে উষ্ণতা অনুভব হয়। বেশ লাগছিল দুদিন ধরে শীতের বর্ষা। এমন সময় বার্তা এলো তাপমাত্রা নেমে যাওয়ার। জল জমে বরফ হয়ে যাওয়ার যা বেশ ভয়ংকর পিচ্ছিল আর শক্ত। পা পিছলে আলুরদম হওয়ার খুবই সম্ভাবনা্ সাবধানী না হলে, সঠিক বরফ উপযুক্ত জুতা পায়ে না থাকলে। আর গাড়ী চলার বিপদ সবচেয়ে বেশী। দমাদম ঠুকাঠুকি লেগে যেতে পারে। কোনদিকে যেতে, কোনদিকে চলে যাবে গাড়ি আপন মনে স্টিয়ারিং ধরে রেখেও তা কন্ট্রোল করা কঠিন হয়ে পড়ে অনেক সময়। যদি টায়ার শক্ত পোক্ত খাজকাটা না থাকে তবে পিছলে যাওয়ার সমুহ সম্ভাবনা।

সতর্কতা তাই পথচারীর জন্যই বেশী ছিল। বিশেষ করে গাড়ি চালকদের জন্য।

প্লাস আবহাওয়া দুম করে হীমাঙ্কের নীচে নেমে গেলো। বৃষ্টির জল যেখনে ছিল, গাছে পাতায়, ডালে, চালে পথে, বিদ্যুতের তারে সেখানেই জমাট বেঁধে গেলো। জলের গড়িয়ে যাওয়ার প্রবনতায় গড়াতে গড়াতে লম্বা লাঠির আকার ধারণ করল কিন্তু ঝরে যেতে পারল না। তার আগেই কঠিন বরফে পরিণত হলো। সারা বিকেল সন্ধ্যা পেরিয়ে জলের ভার বয়ে বয়ে গাছের শাখা, গাছ বেঁকে যেতে লাগল ক্রমাগত। এক সময় আর ভার বইতে না পেরে গড়িয়ে পরল, ভেঙ্গে পরল।হাজার হাজার কোটি কোটি। শাখা প্রশাথা, গাছ পরে যেতে লাগল, সাথে নিয়ে পরল যা ছিল সম্মুখে। বাড়ি, গাড়ি, বৈদ্যুতিক তার। নিভে যেতে লাগল একে একে শহরের আলো। বাড়ি, রাস্তা, হাসপাতাল, স্কুল, দোকানপাট, অন্ধকার। পুরো শহর অন্ধকার। সৌভাগ্যবান কিছু এলাকা দু, চারখানা ঘর অথবা দালান রক্ষা পেলো অন্ধকার বিদ্যুতহীন অবস্থা থেকে।

যতক্ষণ বিদ্যুৎ ছিল কিছুই বোধগম্য হয়নি বাইরে কি হচ্ছে। শীতের ছুটির রাতে উষ্ণ ঘরে পারিবারিক আলস্যসময় উপভোগ চলছিল। চলছিল টিভিতে উৎসবমুখর সময়ের অনুষ্ঠান দেখা।

বিদ্যুৎ চলে যেতেই বাইরে নজর দেয়া হলো। ঘরের শব্দ বন্ধ হয়ে গেলে শব্দ সীলমারা ঘরের ভিতরও চলে আসল জরুরী গাড়ির সাইরেন। হচ্ছেটা কী বাইরে। শুধুই ইর্মাজেন্সি গাড়ির সাইরেন শোনা ছাড়া তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। আকাশে যেন আলোর বন্যা মাটিতেও তেমনি স্ফটিক উজ্জ্বলতা। আর সব স্থির নিরব।

হয়তো বা কাছেই কোথাও আগুন লেগেছে যার প্রভাব বিদ্যুতের উপর। সময়টা অনেক আলো জ্বালার উৎসব মুখর। আলোর বার্তাবাহক শান্তির দুতের জন্মদিন উপলক্ষে আলোর মালায় সাজিয়ে তোলা হয় ঘর বাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাস্তাঘাট। ক্রিসমাস ট্রির আলোর ঝলক প্রায় প্রতিটি ঘরে। কখন অসাবধানে মোমের আলো বা অতিরিক্ত আলোর চাপে আগুন লেগেছে হয়তো বা কোথাও প্রাথমিক ভাবে এমনি ভাবা হলো।

বিদ্যুতের উপর আধুনিক আমরা এমন আস্ট্রে পৃষ্ট্রি জড়িত হয়ে আছি। বিদ্যুৎ বিহীন আমাদের কোন কিছু করার উপার নাই আর। সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন আমরা খানিক এদিক ওদিক ঘুরে, ঘরের এজানালা ওজানালায় চোখ রেখে বিদ্যুতের অপেক্ষা করে অবশেষে বিছানায় আশ্রয় নেয়া হলো।

এমন হীম আর ফ্রোজেন পথঘাটে বাইরে বেরুনোর ইচ্ছে হলো না আর। অদ্ভুত সবুজ আলোর বিস্ফোরন যেন আকাশ জুড়ে মাঝে মাঝেই জ্বলতে লাগল বজ্র চমক সারারাত ভর।

রাত পেরিয়ে গেলো অন্ধকারে। পরদিন পথে নেমে বোঝা গেল কী ভয়াবহ অবস্থা । গাছদের বিদ্রোহে ভেঙ্গে পরেছে যেন, আধুনিক জীবন যাপনের সকল সুযোগ।

কাঁচ কাঁচ ঝকঝকে হীরে ছড়ানো পথঘাট, গাছ পালা অদ্ভুত অনিন্দ্য মূর্ছনা বাজছে তালেতালে ঝরে পড়ার জলের শব্দে । কখনো ঝরে পরছে জমাট বাধা বরফ খণ্ড, যেন মাঝে মাঝে ড্রাম বীট।

যেখানে জল ছিল গড়িয়ে যেতে যেতে খাপ খোলা তলোয়ার হয়ে ঝুলে আছে গাছে, দালানে, ছাদের কিনারা বেয়ে। ছোটছোট ধারা যেন করাত হয়ে ঝুলছে। উপরে পড়ে গেলে মারাত্মক ব্যথা থেকে রক্তাক্ত হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা।

টুসটাস র্মূছনায় ঝরছে শক্ত হীমে বাধা ক্রিস্টাল বাতাসের ধাক্কায় বা ভারে। সারাদিন আকাশ মেঘ ভরা। সূর্যাস্তের আগে রোদের কিরণ সোনা রঙ লাগাল হীরক রাজ্যে। অপূর্ব সে রূপ ভার শুধু উপভোগ করা যায় চোখে দেখে। উপলব্ধির বীণায় গেঁথে নেয়া যায় সুরে বেঁধে। কিছুই বর্ণনা করা যায় না দেখার মতন করে। ছবিতে ধারন করা যায় খানিকটা্ তার, সবটুকু নয়।

কী অপরূপ কী অপরূপ এই ভয়ঙ্কর সুন্দর। চারপাশের গাছগুলো যেন হীরের তৈরী। মাঠঘাট স্ফটিক শুভ্র। পরদিন জ্বলল সূর্যের আলো ক্ষণে ক্ষণে আলোর প্রভাবে ভিন্ন রূপ পেলো ক্রিস্টাল হীরক জমাট বাধা জল। শুভ্র কাঁচের গাছের মনভুলান রূপ।সহজ জীবনের বৈসাদৃশ্য অবস্থা, আমাকে অনন্ত ভুলিয়ে দিয়েছে প্রকৃতি ভিন্ন রূপে মুগ্ধ করে রেখে। প্রতিদিন সচরাচর প্রকৃতি এমনরূপ ধারন করে না।

সময়টা উৎসবের ব্যবসায়িরা শেষ দু চার দিনের চুটিয়ে ব্যবসার আশায়। আর প্রিয়জনের জন্য শেষ উপহার সামুগ্রি কেনার ব্যস্ততায় কেউ। কারো বা শুরুই হয়নি কেনা কাটা এই শেষ ছুটির দিনের অপেক্ষায়। প্রিয় জনের সাথে মিলিত হতে কেউ পারি দিবে বিভিন্ন দূরদূরান্তে। অথচ এক নিমিশে সব পরিকল্পনা বাতিল। অপেক্ষার পালা দীর্ঘ হতে হতে পাঁচ দিনে পৌঁছেছে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার। এমন অদ্ভুত তুষার ঝড় কখনও দেখেনি আগে। গত বছর অল্প কিছু এলাকায় এমন হয়েছিল শহর থেকে দূরে। আমার বাড়ির দুটো গাছ আচানক পরে গিয়েছিল। সৌভাগ্যবসত ঘর থেকে দূরে পরে ছিল। শহরের অনেকে বিশ্বাস করেনি এমন হতে পারে।

আজ ক্রিসমাসের দিনে অনেকের ঘরে আলো পৌঁছায়নি। অন্ধকার ঘর রেখে, শহরের খুলে দেয়া সাহায্য ঘরে অচেনা অনেকের সাথে সময় কাটছে ত্রিসমাসের দিনটি। শহরে অনেক গুলো সাহায্য কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে সাথে সাথে খাবার, পানি, উত্তাপের ব্যবস্থা করে। আর বিদ্যুৎ কর্মি, পুলিশ, সাহায্যকারী, রেডক্রস, দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছে বিরামহীন ভাবে। সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে অন্য প্রভিন্সের বিদ্যুৎ কর্মি। কী ভয়ানক ঠাণ্ডা আঙ্গুল নিমিশে অসাঢ় করে দেয় অথচ সাহায্যকারীরা দিনরাত অক্লান্ত প্ররিশ্রম করে চলেছে আলো ফিরিয়ে আনার জন্য, বাতাস আর ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে। ভুলে গেছে তারা নিজেদের উৎসব, ছুটির কথা।

ধৈর্য্য সহকারে প্রতিটি মানুষ অবস্থা মেনে চলছে। কাঁচ সমুদ্র পারি দিয়ে একের পর এক রাস্তা বাড়ি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোজন চলছে যেন নতুন করে শহরে বিদ্যুৎয়ায়ন করা হচ্ছে্ । আবহাওয়া ক্রমাগত হীমাঙ্কের নীচে নেমে যাচ্ছে। তাপ না বাড়লে জমাট বরফ গলবে না। আরো গাছের বিপর্যয় হবে সাথে আরো অবস্থার অবনতি হবে।

রাস্তায় ট্রাফিক আলো নেই। চারপাশের রাস্তার গাড়িগুলি অপেক্ষা করছে অন্যজনের পেরিয়ে যাওয়ার শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে। কোন হর্ণ বিরক্তি বা অসহিষ্ণুতা নেই, অন্যকে ছাড়িয়ে আগে চলে যাবার কোন প্রবণতা নেই যদিও সবারই তাড়া আছে। অথচ এরা বিভিন্ন দেশ থেকে আশা মানুষ। নিয়মটা ঠিক ভাবে ধৈর্য্য ধরে পালন করছে সহনশীলতার সাথে।সাহায্যের হাত বাড়িয়ে আলো, উত্তাপ, খাবার দিয়ে সাহায্য করছে আত্মিয়, বন্ধু থেকে অচেনা মানুষ এই ভয়াবহ ক্রান্তীলগ্নে। বিপর্যস্ত এই শুভ বড়দিন অভিজ্ঞতার আলোকে আলোকিত করুক সবাইকে। শুভ বড়দিন শুভ মেরী ক্রিসমাস।







মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৪৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: শুভ মেরী ক্রিসমাস

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৩

রোকসানা লেইস বলেছেন: মেরী ক্রিসমাস হাসান মাহবুব

কিছু ছবি দিতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু আপলড হলো না কিছুতেই।

২| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৩৯

সমুদ্র কন্যা বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১৬

রোকসানা লেইস বলেছেন: যা দেখলাম তা কিছুই ধারন হলো না লেখায়। অনেক ভালোবাসা সমুদ্র কন্যা

৩| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:৪৬

হান্টার১ বলেছেন: আমার এখানে অবস্থা একটু ভালো, আপনি ও ভালো থাকবেন, সুন্দর লিখেছেন

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৪২

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ ........সবার ভালো থাক কাম্য। আজ নয়দিন পর সব ঘরে বাতি জ্বলেছে।
আমাদের দেশে হয়তো আগুন জ্বালিয়ে, মরধর করে বেশ একটা তাণ্ডব হয়ে যেত এতদিনের অপেক্ষার প্রতিবাদে।

সবাই যে ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এ থেকে অনেক কিছু শিখার আছে । শুভকামনা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.