নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রাণ হরিয়ে তৃষা হরিয়ে আরো আরো চায় প্রাণ

০৬ ই মে, ২০২০ সকাল ১০:১৯

পঞ্চম পর্ব
ভ্রমণ


পাঁচ মে দুইহাজার আঠার। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই বুঝতে পারলাম। প্রতিদিনের চেয়ে আজ একটু ভিন্ন মনে হচ্ছে চারপাশ। সবার মাঝে আনন্দ চঞ্চলতা, ব্যস্ততা।
আজ নেদারল্যান্ডের লিবারেশন দিবস। প্রতি পাঁচ বছরে একবার পালিত হয়। এবার সেই উৎসব পালনের সময়। এমনিতেই উৎসব মুখর লিউয়াডের্ন। কিন্তু আজ স্বাভাবিক কাজের দিন নয় , আনন্দের দিন, ছুটির দিন। উৎসবের আয়োজনে পাঁচ মে দুই হাজার আঠার লিউয়ার্ডেন শহর ব্যস্ত। ব্যাস্ত সারা দেশ উৎসবে।
সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজনে লিউয়াডের্ন এমনিতেই জমজমাট। আজকের দিন আরো বেশী জমজমাট হয়ে গেল সবার ঘরের বাইরে পদচারনায়।
নানারকম উৎসবের আয়োজন শহর জুড়ে আজ সবাই দেখবে আনন্দ করবে শুধু তা নয় দেশ মাতৃকার জন্য সম্মান প্রদর্শণও করবে।
সকালে জেনিফার মেয়েকে নিয়ে ঘোড়া চড়ার প্রেক্টিস করাতে চলে গেছে। আমি তৈরি হলাম বাইরে যাওয়ার জন্য। ভাই আজ তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পরবেন। রেস্টুরেন্টে আজ অসম্ভব ভীড় হবে।
আমার ট্যাক্সি এসে গেছে মূল শহরে আমাকে পৌঁছে দিবে। আমরা বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা এসে মধ্য শহরে ঢুকার রাস্তা বন্ধ পেলাম। ট্যাক্সিওয়ালা আবার অন্য পথে ঘুরে গেল। কিন্তু সে দিকেও রাস্তা বন্ধ। সে যেন পরল মহা চিন্তায় নানা ভাবে দুঃখ প্রকাশ করে বলল, সিস্টার তোমাকে এখান থেকে হেঁটে যেতে হবে। আমি গাড়ি রেখে যেতে পারব না।
আমাকে রাস্তা চিনিয়ে দিয়ে বলল, এই লেকের পাড় ধরে পার্কের ভিতর দিয়ে হাঁটলেই ভিতরে চলে যেতে পারবে। যেখানে অনেক অনেক অনুষ্ঠান হচ্ছে। মানুষ চলছে পায়ে হেঁটে। তাই গাড়ি চলার পথ বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
ঠিক আছে পেয়ে যাবো অসুবিধা নাই, তুমি চিন্তা করো না। খুব বড় নয় শহর, কদিন ধরে এইসব রাস্তা দিয়ে হাঁটছি কিছুটা চেনা হয়ে গেছে। মানুষ এবং নানা রকম অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে আমি হাঁটছি। বসন্তের বেশ আরমদায়ক উষ্ণ একটা দিন। যে ফুলগুলো কুড়ি ছিল তারাও আজ হেসে উঠেছে, যেন হেসে ফুটে উঠেছে। কেউ গান করছে। কেউ কমেডি করছে। কেউ ভাস্কর্য স্মরণ বেদিতে দিচ্ছে শ্রদ্ধার্ঘ। বাচ্চাদের মুখে আঁকা পতাকা। হাতে বেলুন, খেলনা আর খাবার, আইসক্রিম। ড্রিংসের গ্লাস। কেউ দাঁড়িয়ে বসে খাচ্ছে কেউ হাঁটতে হাঁটতে খাচ্ছে।
লেইকে বজরা তার উপর দাঁড়িয়ে গান গেয়ে যাচ্ছে শিল্পীরা। চারপাশে উৎসব উৎসব পরিবেশ। তার ভিতর দিয়ে আমি হাঁটছি। থামছি ছবি তুলছি। রাস্তার দুপাশে যথারীতি অনেক দোকান বসেছে। সব দেশেই যেমন হয়। হাতের কাজ থেকে নানারকম আকর্ষণিয় বস্তু। আর খাবার দোকান। আইসক্রিম, চকলেট, নানারকম পিঠা জাতিয় খাবার বিক্রি হচ্ছে । বিশাল আকারের রঙিন কটন কন্ডি অনেকের হাতে। আমারও খুব প্রিয় এই বাতাসা। আমিও হাতে নিয়ে খেতে খেতে যাচ্ছি। পিপাসা পেলো লেমনেড খেলাম।
এক সময় দেখলাম আমি মধ্য শহরে পৌঁছে গেছি। আর তখনই সেখান দিয়ে পার হচ্ছে প্যারড। বিশাল এক বলের উপর নৃত্যরত মহিলাকে দেখে আমার ছোটবেলা সার্কাসে এমন বলের উপর নাচা মহিলার কথা মনে পরে গেল।


অনেকে ক্নাউন সেজেছে। অনেকে অনেক রকম খেলা দেখাচ্ছে। ব্যাণ্ড দল বাজাচ্ছে সুর। ভিন্নরকমের চরিত্র নিয়ে এক সাথে যাচ্ছে বিশাল মিছিল।
ওদের সাথে আমিও অনেকটা পথ হাঁটলাম। তারপর মধ্য শহরের দোকান পাটে ঘুরলাম খানিক। অনেক কিছু কিনতে ইচ্ছে করছে কিন্তু বাক্স ভাড়ি হবে বলে কিছুই কেনা হলো না।
চার তারিখ সকালে আমি আর জেনিফার মিলি অনেক খুঁজে এয়ার টিকেট কিনে ফেলেছিলাম ছয় তারিখে ফিনল্যাণ্ডে রওনা হওয়ার। সকাল নয়টায় প্লেন। ছয়টার ট্রেন ধরে আমস্টারডাম পৌঁছে অনায়াসে প্লেন ধরা যাবে।
ছয় তারিখ হেলসিঙ্কি পৌঁছালে সেখান থেকে যেতে হবে প্রায় ছয় ঘণ্টার ড্রাইভ এতটা রাস্তা পেরিয়ে পেডারসারেন। ফিনল্যাণ্ডে যাবো কাজিন ভাইয়ের কাছে। ও থাকে বাল্টিক সাগরের পাড়ের শহর পেডারসারেন। ওর সাথে কথা হয়েছে সে ছয় তারিখে হেলসিঙ্কিতে খেলার কম্পিটিশন, শেষ করে বাড়ি ফিরবে। তাই সেদিন পৌঁছালে এয়ারপোর্ট থেকে আমাকে পিক আপ করে নিবে। এবং দুই ভাইবোন বেশ গল্পে স্বল্পে ছয় ঘন্টার রাস্তা পার হতে পারব এক সাথে। নয় তো হেলসিঙ্কি পৌঁছে আমাকে ট্রেন খুঁজে বার করতে হবে। সময় মতন ট্রেন না পাওয়া গেলে সেদিনের জন্য হেলসিঙ্কি থাকার ব্যবস্থা খুঁজে বের করতে হবে।
ওদের সাথে দেখা হওয়ার দিন আরেকটু দূরে যাবে।
এসব হিসাব ঠিক থাকলেও দেখা যাচ্ছে পাঁচ তারিখের নেদারল্যাণ্ডের বিশেষ ডের কথাটা আমার জানা ছিল না। জেনিফারও খেয়াল করেনি।
এখন দেখা যাচ্ছে পরদিন সকাল বেলা ট্রেন বন্ধ থাকবে। এবং কোন বাসও চলবে না। ভাই পরলেন মহাচিন্তায়। তুমি তাহলে সকালে এয়ারপোর্টে পৌঁছাবে কিভাবে। আমার সাথে কথা না বলে কেন যে টিকেট কিনে ফেললে। টেক্সিওলার সাথেও কথা বলা হলো কিন্তু শহরের প্রচুর ট্রিপ ছেড়ে সে দিন যেতে রাজি নয় চার ঘন্টা যাওয়া আসার সময়ে প্রচুর ক্ষতি হয়ে যাবে ওর। রাত গভীর পর্যন্ত কাজ করে ভোরে যাওয়াও সম্ভব নয়।
আমি বললাম সমস্যা নাই আমি বরং রাতে ট্রেনে আমস্টারডাম চলে যাই। এয়ারপোর্টে রাত কাটিয়ে সকালে প্লেন ধরাও সহজ হবে। সেই ভাবে আমার উৎসব দিবসের আয়োজন দেখা অর্ধেক দিনে সর্টকাট করতে হলো। বারোটায় ঘুরে ফিরে রেস্টুরেন্টে ফিরে আসলাম। জেনিফার আমাকে নিতে আসবে কিন্তু রেস্টুরেন্টের কাছে পৌঁছাতে পারবে না তাই আবার কিছুটা হেঁটে গিয়ে দাঁড়াতে হবে সেই জায়গায় যেখান পর্যন্ত আজকের দিনে গাড়ি ঢুকতে পারছে।
যেহেতু আমি চিনব না। আমাকে সেই জায়গায় কে নিয়ে যাবে অতএব অনেক কাজের মাঝেও ভাইকে আমার সাথে বেরুত হলো। প্রচুর মানুষের ভীড় ঠেলে আমরা চৌরাস্তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি বারবার বলতে লাগলেন আজ তোমার যাওয়াটা ঠিক হলো না। এই যাওয়াটা কখনোই ঠিক হতো না। অদ্ভুত এক হৃদ্যতা যেতে নাহি দিব তবু যেতে হয়। আমরা পৌঁছানোর মিনিট দুইয়ের মধ্যে জেনিফার পৌঁছাল। রাস্তা পেরিয়ে আমি দ্রুত গাড়িতে গিয়ে বসলাম। সেখান থেকে মার্কেটে। কিছু কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরে এসেই আমরা আবার বেড়িয়ে পরলাম। আর্মিদের প্যারড দেখার জন্য।
বাসা থেকে প্রায় আধঘণ্টার দূরে ছোট একটা শহরে চলে গেলাম আমরা। যেখানে সারিসারি আর্মি ট্রাক এবং ট্রাকে সুস্বজ্জিত সৈনিক দল বেঁধে চলে যাবে যুদ্ধ সময়ের সময়ের মতন রাস্তা ধরে। অসংখ্য মানুষ রাস্তার দুইপাশে দাঁড়িয়ে আছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই আছেন। হাতে পতাকা তাদের অভিনন্দন জানানোর জন্য। অনেকেই বলাবলি করছে কানাডার অনেক সৈনিক এসেছেন। যারা যুদ্ধ করেছিলেন নেদারল্যাণ্ডসকে মুক্ত করতে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে কানাডার সৈনিকের বিশাল অবদান ইইরোপের নানান দেশে গিয়ে তারা মিত্রবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছেন।
কিছুদিন আগে গতবছর ছয় জুন ২০১৯ পালিত হলো ডি ডের গৌড়বের পঁচাত্তর বৎসর। অনেক কানাডিয়ার সৈনিক যাদের বয়স নব্বইর বেশি হয়ে গেছে অনেক একশ ছূঁই ছূঁই করছেন, তাদেরও দেখলাম নর্থ সাগরের ঠাণ্ডা পানিতে পা ডুবিয়ে স্মরণ করছেন সেই কিশোর জীবনের স্মৃতি।
তারা যেন ফিরে গিয়েছেন সেই শত্রু মুক্ত করার আনন্দ সময়ে, হয়ে উঠেছেন এক একজন কিশোর। প্যারাসুট থেকে নর্থ সাগরে নেমে এসে সেখান থেকে নানা অবস্থানে ছড়িয়ে গিয়ে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। এবং বিজয় দেখেছিলেন মিলেমিশে। অনেক সহযোদ্ধাকে হারিয়েছেন। তাদের উচ্ছাস আনন্দ দেখেছিলাম খবরে, ডকুমেন্টারিতে। ফ্রান্সের নর্মেণ্ডির জুনো বীচে তারা জড়ো হয়েছিলেন। বছর চার আগে এই জুনো বীচে ঘুরে এসেছিলাম দেখেছি যুদ্ধের অনেক স্মৃতি। বীর যোদ্ধারা সেই বীচে উত্তর সাগরের শীতল পানিতে বুক উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পা ভিজিয়ে যেন তাদের প্রথম দিনের অবতরণ স্মরন করছিলেন গভীর ভালোবাসায়।
লিবারেল ডে বা মুক্তি দিবস যা ডাচ ভাষায় বেভরিজডিংসড্যাগ বলা হয়। স্মরণ দিবস অর্থাৎ রিমেম্বারন্স ডে যা নেদারল্যান্ডে পালিত হয় চার মে তারপরের দিন ৫ ই মে প্রতি পাঁচ বছরে পরে নেদারল্যান্ডসে পালিত হয়। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের দখল করে রাখা অবস্থার সমাপ্তি হওয়ার দিন আনন্দের, সাথে জাতি স্মরণ করে এবং উৎসব পালন করা হয়। দু হাজার আঠারোয় এই উৎসব মুখর দিবসটি, আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। আগের দিন চার মে, সাগরপাড়ে দেখেছিলা, ভেটদের গভীর নিমগ্নতায় স্মরন করা ।

এয়ারপোর্ট।
আমরা পথের পাশে আর সবার সাথে দাঁড়িয়ে পরার খানিক পরেই একে একে সাজোয়াবাহিনীর গাড়িগুলো বেরিয়ে আসতে থাকল। সেই পুরানো সময়ের সাজ সজ্জায় সজ্জিত কিছু গাড়ি, সৈনিক। সাথে নতুন দিনের বহরও চলছে। অনেকগুলো নেদারল্যান্ডের গাড়ি পার হওয়ার পর কানাডার পতাকা শোভিত গাড়িগুলি আসতে থাকল। যাতে বসে আছেন কানাডার সৈনিকরা। অনেকের সাথে তাদের পরিবারের নতুন প্রজন্মর সদস্য। অনেক বাচ্চা যারা স্কুলের লিডারশীপ বা অন্য ধরনের প্রোগরাম, ভলান্টিয়ার এবং স্কাউট ইত্যাদিতে জড়িত। তেমন অনেকে গাড়িতে বসে প্যারড়ে সামিল হয়েছে। খুবই সম্পর্কিত মনে হতে লাগল আমার নিজেকে তাদের সাথে। আমি একাই ও কানাডা বলে একটু বেশি চিল্লাতে থাকলাম, সাথে হাতে নেদারল্যাণ্ড কানাডার যৌথ পতাকা তুলে অভিনন্দন চলতে থাকল।
সব কিছুর উপরে একটি অপশক্তির বিরুদ্ধে যে জয় হয়েছিল সেই জয়ের আনন্দটাই বড় করে উপভোগ করছিলাম সবার সাথে। হোক তা ভিন্নভাষা জাতির মানুষ।
গাড়ির বহর চলে গেলে আমরা আরো কিছুক্ষণ সেখানে কাটিয়ে বাড়িতে ফিরে এলাম। দারুণ একটা স্মৃতি সাথে করে।
জেনিফার ঝটপট ডিনার তৈরি করে ফেলল। আর আমি শেষ প্যাকাপ সারলাম ।
ডিনার শেষেই বেরিয়ে পরলাম ট্রেন স্টেশনে।
জেনিফার টিকেট কেটে আমাকে প্লাটর্ফম দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলো। মিনিট পাঁচের মধ্যেই ট্রেন এসে গেলো। আমি উঠতে গিয়ে দেখলাম আজ ট্রেনে অসম্ভব ভীড়। খালি হাতে সবাই ছটপট উঠে পরছে। আমি সুটকেস সামলে তাদের সাথে পাল্লা দিতে পারছি না।
ইউরোপের ট্রেনগুলো অনেকটা উঁচু প্ল্যাটফর্ম থেকে। বিশ কেজির সুটকেস টেনে তোলা বেশ কষ্টই একা সাথে আবার হাত ব্যাগটাও বেশ ভাড়ি । যা হোক আমার কসরত করে উঠা অনেকের পথ আটকে দিল বেশ খানিক সময়ের জন্য। পিছন থেকে একজন ঝট করে টেনে উঠিয়ে দিল সুটকেস সে সময়।
ধন্যবাদ দিয়ে ভিতরে ঢুকে কোন জায়গা দেখলাম না বসার মতন। আরো কয়েকধাপ উপরে উঠে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো কয়েক স্টেশন। অতপর কয়েকজন নেমে গেলে আবার নিচে নেমে বসার সুযোগ পেলাম।
যারা দাঁড়িয়ে আছে তাদের কোন ক্লন্তি নেই। আজ সারাদিন সবই ব্যস্তছিল। কেউ ঘুরেছে। কেউ পারর্ফম করেছে। কেউ দোকান নিয়ে বসেছে। কিন্তু তারপরও কেউ চুপচাপ বসে নেই। বিভিন্ন শহর থেকে যে কত মানুষ লিউয়ার্ডেন এসেছিল সেটা বুঝতে পারলাম।
ক্রমাগত কথা চলছে। প্রতিটি স্টেশনে মানুষ উঠছে নামছে অনেক বেশি। তরুণরা দাঁড়িয়ে আছে কথা বলতে বলতে কয়েকজন মিলে একজনকে ঠেলে উপরে ব্যাগ রাখার সেলফে ঢুকিয়ে দিল। ওদের হৈ চৈ আনন্দ দেখে মজা পাচ্ছিলাম আবার একটু অস্বস্থিও অনুভব করছিলাম। ড্রাংক না তো! বমি করে ভাষিয়ে দিবে না তো। আচরণ অনেকটা সেরকম লাগছে। প্রচুর পান হয়েছে আজ বোঝা যায়। তরুণদের সাথে মা, মাসি ধরনের মহিলারাও আছেন। তারা হাসছেন। যদিও কথা বুঝতে পারছি না। তারা মনে হয় আমাকে বুঝতে পারছেন। দূর থেকে ইশারা ইঙ্গিতে এবং জোড়ে ডাচ ভাষায় মজা করছে অস্বাভাবিক কিছু ঘটবে না এমনটা বলে আমাকে আস্বস্থ করতে চাইলেন যেন। অনেক সময় আমি দেখেছি। যখন ভাষা না বোঝা মানুষদের পাশে আমি, বডি লেঙ্গুয়েজ বা ভিন দেশি ভাষায় বলা কথা ঠিকই অর্থবােধক হয়ে উঠেছে।
এক সময় প্রচুর যাত্রী নিয়ে ট্রেন এসে থামল, স্চিফল এয়ারপোর্টে। সবাই তাড়াহুড়ায় বাড়ির পথ ধরেছে, বা প্লেন ধরার জন্য যাচ্ছে। আমার তেমন তাড়া নেই, মাত্র সাড়ে দশটা বাজে। সামনে সারা রাত পরে আছে। আস্তে ধীরে বিশাল এয়ার্টপোটের অনেকটা ধরে ঘুরে বেড়ালাম অনেক যাত্রীর ভীড়ে। একসময় কিছু ফাঁকা পছন্দ মতন একটা জায়গা দেখে দুচারজন যাত্রীর সাথে বসে থাকলাম।
একজন মহিলা আর একটি মেয়ে। একসাথে বসে আছে মনে হলো মা মেয়ে। পাশে আরো দুজন মহিলা তারা ডাচ ভাষায় কথা বলছে।
মা মেয়ে কেবল ইংলিশে কথা বলছে। এক সময় কথা বলে জানতে পারলাম তারা আসলে দুজন ভিন্ন দেশের যাত্রী। দুজনের প্লেনের সময় আমার মতন অনেক দেরিতে। তবে মাঝ রাতের দিকে তারা চলে যাবে।
মাঝরাতে তারা চলে গেলো কিন্তু পাশের রাস্তা দিয়ে প্রচুর মানুষের আনাগোনা চলতে থাকল। সেখানে চোখ বন্ধ করে বসে থাকাটা মুসকিল হলো।
উঠে আবার একটা ফাঁকা জায়গা খুঁজতে লাগলাম। এবং এক পাশে আলো নিভানো বেশ ছায়াছায় ফাঁকা একটা জায়গা পেয়ে গেলাম। বেশ আবাম করে সেখানে শুয়ে একটা ঘুম দিলাম। ভোরের দিকে কাউন্টারটা খুলতে এলো প্লেন কোম্পানির লোকজন। আমাকে উঠিয়ে দিল। দূর আর ঘন্টা খানেক ঘুমাতে পারলে বেশ হতো। যা হোক ঘুম মন্দ হয়নি। অন্য পাশে বসে আরো ঘন্টাখানেক সময় ফোনে রাত্রী যাপনের ইতিবৃত্ত লিখে কাটিয়ে এবার বাথরুমের দিকে হাঁটা দিলাম। ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে আমার প্লেন বাল্টিক এয়ারের কাউন্টার খুঁজতে লাগলাম। সময় মতন ছয় মে সকালে ফিনল্যান্ডের পথে রওনা হলাম। পথে একটা বিরতি ছিল সুইডেনের রাজধানী স্টকহলম অরলান্ডা

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মে, ২০২০ দুপুর ১২:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি বেশ ভালো আছেন।

০৯ ই মে, ২০২০ রাত ১:৪৭

রোকসানা লেইস বলেছেন: অবশ্যই ভালো থাকব অকারণ খারাপ থাকার কোন কারণ দেখি না। যতদিন বাঁচব সুস্থ সুন্দর চিন্তায় ভালো ভাবে বাঁচব।
তুমিও ভালো থাকো।

২| ০৬ ই মে, ২০২০ দুপুর ১:৪৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুন্দর । নান্দনিক

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.