নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছুটাছুটির মাঝেই দেখাদেখি

৩০ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১৩



বাড়ি ফিরার জন্য যখন বেরুলাম তখন কাটায় কাটায় সাড়ে তিনটা বাজে রাত। আকাশে বেশ একটা চাঁদ অনেক আলোর মাঝেও আলো হয়ে আলো জ্বেলে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়িতে যখন ঢুকব তখন চারটা পয়তাল্লিশ হয়ে যাবে। গুগল ম্যাপ এমনই আন্দাজ দিল। বেশ মনোরম একটা উত্তাপ আজ। গাড়িটা একদম মুভারদের ট্রাকের মতন ফুললি লোউডেড হয়ে আছে। পিছনে ট্রাংক ভরতি মালামাল পিছনের সিট, সামনের সিট সব দখল করে নেয়া মালামাল আমার যাত্রী, আমি চালক। আকাশের দিকে মুখ করে বেশ খানিক শুদ্ধ বাতাসে টেনে নিলাম বুকের ভিতর।
অনেকক্ষণ ধরে ভাড়ি জিনিস টানাটানি করে গাড়ি ভরতি করে, বেশ কিছুটা শক্তি ক্ষয় হয়েছে। এখন শ্রান্তি কাটানো যাবে চালকের সিটে বসে, পথ চলতে চলতে। এই আসা যাওয়া টানা হ্যাছড়া জিনিস পত্রের চলছে অনেক দিন যাবত। এ বছর যেন এই টানা টানি আরো বেড়ে গেছে। এ বাড়ির মাল ওবাড়ি নিয়ে যাচ্ছি আনছি চলছে চলছে মুভিং মুভার আমার কাজকাম।
রাস্তা একদম ফাঁকা। মাত্র পাঁচ মিনিটে হাইওয়েতে উঠে পরলাম। ভেবেছিলাম কিছু ট্রাকের সাথে দেখা হবে। কিন্তু কিছুই নাই। শুধু দু চারটা গাড়ি, আমার মতন ভোররাতের রাস্তায়।
ফোর ও ওয়ান মনে হচ্ছে একটা খেলার মাঠ ম্যারাথনের ট্রাকিং। দুপাশটাই খালি। মাত্র বিশ মিনিট চলার পর আকাশের মাঝে বিশাল গোল চাঁদটা আমাকে এমন হাতছানী দিয়ে ডাক ছিল মেঘের আড়াল থেকে, ইচ্ছে করছিল ওর একা ছবি তুলে রেখে দেই নিজের কাছে কিন্তু ঠিক সে মূহুর্তে ঘুরছিলাম কিছু বাঁক তাই ছবি তোলার জন্য তাক করতে পারলাম না চলতে চলতে। সময় আছে আবার তাকে ধরা যাবে এই ভাবনায় চলায় মন দিলাম ।
ফোর হান্ডেডের নিচে আসতে না আসতে ক্যাটস এণ্ড ডগ রেইন শুরু হয়ে গেলো। একি কাণ্ড আকাশের নিচে থেকেও বুঝতে পারলাম না মতিগতি। মাত্র একটু আগে একটু দূরে বসন্ত সময় মনে হচ্ছিল আর এখানে পুরোই ঝরোঝরো বর্ষাকাল, তুমুল বৃষ্টি কেমনে কি হলো।
ওয়াইপারের গতি বাড়াতে লাগলাম বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে তাও পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি না দূরে। আশে পাশে গাড়ি নেই এটা বেশ সাচ্ছন্দ দিল এমন অবস্থায়। ফোর ওয়ান বদল করে টেন ধরতেই বৃষ্টিরা চলে গেলো। শুকনো খটখটে রাস্তা মনে হলো পুরোই গ্রীষ্মকাল।
এদিকে আরো নিরিবিলি এখন। আকাশে চাঁদটাকে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু ঘনকালো মেঘের ভিতর ঢুকে যাওয়ার আগেই যে শেষবারের মতন বাই বলেছে সেটা বুঝতে পারলাম এক্কেবারে শেষ পর্যন্ত এসে। পথে তার সাথে আর দেখাই হলো না।
সাড়ে চারটা বেজে গেছে পথ চলার এক ঘন্টা কেটে গেছে আর পনের মিনিট কিন্তু এই সময়টা শুরু হলো সামনের দিক থেকে উল্টো পথে আসা গাড়ির ব্যস্ততা। একটু পর পর ঢাল থেকে উঠে আসছে একটা বা কয়েকটা গাড়ি এক সাথে। হেড লাইটের হাই বীমের আলোয় আমার চোখ ধাঁদিয়ে যাচ্ছে। এদিকের পথে আমি একা আর সামনে অন্ধকার। বারবার বন্ধ হয়ে যচ্ছে হাই বীম অটোমেটিক ভাবে, অন্য গাড়ির স্পর্শ পেলে। আর তখন সামনেটা হয়ে উঠছে আরো বেশি ঘন অন্ধকার। চলছি রাস্তার পাশের টানা সাদা লাইন দেখে।
হয় অন্য গাড়ির আলো পিছন থেকে জ্বালাবে, নয় তো সামনে থেকে চোখের উপর ঢেলে দিবে যাবতিয় প্রেশার রাতের বেলা চলায় এই এক অসুবিধা।
আর দিনের বেলা সূর্যদেব কখনো চোখের বারোটা বাজিয়ে দিতে চায়। সকাল বেলা পূবের দিকে যেতে আর বিকাল বেলা পশ্চিমে যেতে সূর্যদেবের চোখে চোখ রেখেই চলতে হয়। কখনো পিছন থেকেও সকাল সন্ধ্যায় মিররে ঝলক তুলে, জানান দেন আমি আছি তোমার সাথে। কখনো আমি বড় আনমনা হয়ে পরি, তার রাঙানো আকাশ দেখে বনান্তের উপর বিছানো তার আলোর ছন্দ দেখে। আর মেঘের কোলাহলে তার আসা যাওয়া দেখে। আসছি আসছি উঠছি জেগে বা যাচ্ছি যাচ্ছি আবার কাল দেখা হবে । প্রতিদিনের তার একই যাওয়া আসার মাঝেও যে কত বৈচিত্র, কত ভিন্নতা তা পথে নামলে আরো বেশি উপভোগ করি। সৌন্দর্য গুলো যেন বেশি ধরা দেয় চলার পথে যখন তাকে তাক করে একটা ক্লিক করার সময় থাকে না । তবে মনের ঘরে ক্লিক ক্লিক করে রেখে দেই মাথার হার্ড ডিস্কে ভরে।
একবার পেরুচ্ছিলাম ওন্টারিও প্রভিন্স। অনেকটা পথ যেতে ঠিক বিকাল হয়ে গেল, সল্ট সুসান ম্যারির পাহাড়ি রাস্তায়। সূর্যদেব তখন বিকালের আলো ছড়িয়ে হাসছেন মহা আনন্দে। গ্রেইট লেইকে প্রতিচ্ছবি পরেছে, যেমনটা আকাশে তার চেয়েও বড় বেশি জ্বলজ্বলে তীব্রতা পানির ভিতর থেকে তিনি ছড়াচ্ছেন।
এক পাশে খাড়া পাহাড় একদম আঁকা বাঁকা ঘোরানো প্যাঁচানো রাস্তা অন্য পাশে লেইকের বিস্তৃর্ণ জল। একটা লেইন ধরে সারি সারি গাড়ি। যারা এ পথে প্রতিদিন না হলেও প্রায় চলেন, তাদের চেনা বাঁকগুলো কিন্তু আমি হঠাৎ এসে, থমকে চমকে, থমকে থেমে যাওয়ার অবস্থা। একে তো চোখ মেলে রাখতে পারছি না পানি এবং আকাশ থেকে চোখ রেখেছেন সূর্যদেব মুখের উপর। ঘন কালো সানগ্লাস ভেদ করে চোখ রাখছেন, চোখের তারায়। তার মাঝে নিত্যদিনের অফিস ফেরত যাত্রী আমার পিছনে থমকে থাকতে দিতে কিছুতেই রাজী না তাদের চেনা রাস্তায়। কিন্তু পেরিয়েও যেতে পারছেন না একটা লেনের কারণে। সেই সময়টা মনে হয়ে, বিভৎস সুন্দরের মাঝে নিজের চিড়ে চ্যাপ্ট হওয়ার অভিজ্ঞতা মাঝে মাঝে পুলক দেয়।
শুনসান নিরবতার শহরটা সবুজ আর নীল লেকের জলের পাহাড়ি আনন্দ নিয়ে এক এক ঋতুতে একে এক সাজে আকর্ষণিয় হয়ে উঠে বড় অদ্ভুত রকম সল্ট সুসানমেরি। সেন্ট মেরিস নদীর তীরে অবস্থিত, লেক হুরন ও লেক সুপিরিয়র মিলেছে এক সাথে । এই শহর হৃদগুলির হৃদয় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দক্ষিণের পঞ্চান্ন এবং পূর্ব এবং পশ্চিম থেকে ট্রান্স কানাডা হাইওয়ের মাঝে । নৈসর্গিক অ্যাডভেঞ্চারের আনন্দ করার জন্য একটি অনবদ্য জায়গা। অনেক কিছু করার আছে তবে কিছু না করে চুপচাপ বসে দেখার আনন্দও অনেক এই জায়গায়। তবে মেপে মেপে ঠিক দুখ্খুরবেলা ওই অসাধারন সৌন্দর্যের রাস্তাটা পেরুতে পারলে চোখের জ্বালা কিছু কম হবে। কিন্তু সেটা কি কখনো সম্ভব হয় ঠিক দুপুরে রাস্তার ঠিক ওই জায়গাটায় পৌঁছে যাওয়া। কয়েকবার পেরিয়েছি পথটা তবে একবারই সূর্যদেবের ভয়ানক নজর পরেছিল আমার উপর । অন্যবার মেঘলা দিনের মেঘ বাঁচিয়ে দিয়েছিল।
যে কোন সময় পাল ধরা হরিনও নামতে পারে রাস্তার উপর । সেটাও মনে রাখতে হয় সারাক্ষণ।
সেদিন বাড়ি ফিরার পথে যেমন দুবার দু জায়গায় তাদের সাথে দেখা হয়ে গেল। শেষ পাঁচ মিনিটের পথে কোন কথা ছাড়া আবার শুরু হলো প্রবল তুষারপাত। কিন্তু বাড়ি ফিরে ভিজে একশা হয়ে মালপত্র নামাতে হবে ঘর হয়ে যাবে ভিজা কাদায় অবর্জনার মতন। এই সময়ে আবার সাফ করতে হবে। দূর!। হয়ত কাল সকালে আবার পুরু বরফের আস্তরণ সাফ করতে হবে এই ভেবে তবু চলছি। বাড়িতে আমিও থামলাম বরফ পরাও থেমে গেল । আকাশে তাকিয়ে দেখলাম বেশ কিছু তারা উকি ঝুকি দেয়ার চেষ্টা করছে। পূবের আকাশে সাদা দাগ লেগে গেছে ততক্ষণে। এক ঘণ্টা পয়তাল্লিশ মিনিট সময়ে কত রকম রূপ দেখা গেল। এও মন্দনা অভিজ্ঞতা সঞ্চয়।


মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৫৮

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: রাত সাড়ে তিনটায় বেরোলেন যে!
ভাল লেগেছে। শুভ কামনা।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:০১

রোকসানা লেইস বলেছেন: রাতের পথ চলা আমার ভালোলাগে। ট্রাফিকে বেশি থাকে না তাই।

অনেক ধন্যবাদ

২| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:০২

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন?

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:০৬

রোকসানা লেইস বলেছেন: এ আবার কমেন প্রশ্ন?
এমন মনে হওয়ার কারণ কি?

৩| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:২১

ফয়সাল রকি বলেছেন: বাহ সুন্দর অভিজ্ঞতা!

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ২:০৬

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ ফয়সাল রকি
আসলে সুন্দর অভিজ্ঞতা। মন ভালো হওয়াও
দেরি হয়ে গেল রিপ্লাই দিতে
শুভেচ্ছা জানবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.