নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই তো জীবন

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:১৯

মরিয়ম বেগমের দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে । কিন্তু বসার কোন চেয়ার নাই। উনার বয়স পয়ষট্টি হাঁটুতে ব্যাথা, দাঁড়াতে খুব কষ্ট হয়।
আগে গ্রামে থাকতেন হাঁটা চলা করতেন বাড়ির উঠান জুড়ে কিন্তু স্বামী মারা যাবার পর উনার ছেলেরা বাড়ি বিক্রি করে টাকা পয়সা ভাগাভাগি করে নিয়ে নিয়েছে। উনাকে এখন থাকতে হয়, এক এক ছেলের কাছে তাদের বাড়িতে। শহরের এই বাড়িগুলো দুই বা তিনটা ঘর, একটু খানি রান্নাঘর বারান্দা একটুখানী বসার ঘর। এগুলোকে বাড়ি না বলে বাসা বলতে বা পায়রার খোপ বলতে ইচ্ছা করে মরিয়ম বেগমের।
নিজের বাড়ি পাকা দালান ছিল না। কিন্তু টিনের ঘরগুলো উঠানের চারপাশে। বড়ঘর যেখানে স্বামীসহ তিনি থাকতেন। দক্ষিণ মুখো ঘরে সব সময় হাওয়া আসত, আলো থাকত। পাশাপাশি দুই পাশে লাগুয়া আরো চারখানা ঘর । তিনছেলে আর মেয়ের আলাদা ঘর বড় শখ করে রহমতের বাবা করেছিলেন।
পূব পাশে রান্না ঘর সেখানেই পাটি পেতে খাওয়া হতো বাচ্চারা যখন ছোট ছিল। কিন্তু পরে পাশে একটা ঘর করে চেয়ার টেবিল দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিলেন রহমতের বাবা। ছেলেরা যখন স্কুল, কলেজে যায় সেই সময়। বন্ধু বান্ধব নিয়ে এসে বসবে গল্প করবে খাবে। তাদের জন্য আলাদা বাসন কোসন তোলা থাকে কাঁচের শোকেসে।
শহরে গেলে একটা দুইটা নতুন নতুন জিনিস এনে মরিয়ম বেগমের হাতে দিতেন আব্দুল কাশেম। মরিয়ম বেগম এসবের ব্যবহার জানেন না। কিন্তু স্বামী শিখিয়ে দেন এইসব কাঁচের তৈজস পত্র, কোনটা কি ভাবে ব্যবহার করেতে হয়। টি পটে করে চা ট্রেতে সাজিয়ে চিনি দুধ আলাদা করে দিতে হয়। নিজেদের পছন্দ মতন সবাই চিনি দুধ মিশিয়ে চা খাবে। শহরে এখন অনেকে চিনি, দুধ দিয়ে চা খায় না। লেবু চা খায়। যত্ন করে নতুন শিখে আসা নিয়মগুলো বলেন মরিয়ম বেগমকে। মরিয়ম বেগম মনোযোগ দিয়ে শুনে শিখে রাখেন।
ছেলেদের বন্ধু, আত্মীয় স্বজন আসলে নতুন নিয়মে খাবার পরিবেশন করেন।
টেবিলের উপর ফুলদানীতে ফুল সাজিয়ে রাখেন ।
গ্রামের অনেক বাড়ির মানুষ যখন পীড়ি পেতে, চাটাইয়ে বসে ভাত খায় তখন মরিয়ম বেগমের ছেলেমেয়ে টেবিলে বসে খাবার খাওয়া শিখে সৌখিন বাবার পছন্দে।
ব্যবসার কারনে প্রায় সময় ঢাকা যান আব্দুল কাশেম। ঢাকায় তখন দু'তিনদিন থাকেন। কখনো হোটেলে কখনো বন্ধুদের বাড়িতে। সেখানে যা দেখেন তাই সাথে করে নিয়ে আসেন গ্রামে। কখনো নতুন ধরনের খাবার, কখনো নতুন ধরনের পোষাক।
কখনো দেখতে যান সিনেমা। স্টেডিয়াম মাঠে ফুটবল খেলা।
দু একবার মরিয়ম বেগমকে ঘুরাতে নিয়ে গেছেন ঢাকা শহর। লঞ্চে করে চাঁদপুর সেখান থেকে জাহাজে চড়ে ঢাকা শহরে যাওয়ার প্রথম স্মৃতি বড় একটা সঞ্চয় মরিয়ম বেগমের জীবনে। আব্দুল কাশেম কত কি দেখাতে চান মরিয়ম বেগমকে ঢাকা শহরে। বায়তুল মোকারম মসজিদ। সেখানে মার্কেটে সোনার বড় বড় সাজানো দোকান দেখে চোখ ঝলসে উঠে মরিয়ম বেগমের। এক দোকানে ঢুকে আব্দুল কাশেম কিনে দেন একটা গলার বিছা হার মরিয়ম বেগমকে । চাইনিজ খাবার খেতে নিয়ে যান। মরিয়ম বেগম মাড়ের মতন স্যুপ খেতে পারেন না। ঘিন্যা লাগে, শুনেছেন সাপ, ব্যাঙ খায় চায়নিজরা। যদি সাপের তরকারী দেয়! কিছু খেতে পারেন না। কিন্তু যত্ন করে মুখে তুলে দেন আব্দুল কাশেম। গ্লাসের কোক ঢেলে দেন মুখে। বুদবুদ উঠা কোক খেয়ে মনে হয় গলা জ্বলে গেল। জোড়ে এক ঢেকুর তুলেন শব্দ করে, ভাবেন এগুলা কি মদ। কিন্তু স্বামী খেতে বলেছেন, তিনি চুপচাপ করে খেতে থাকেন।
আব্দুল কাশেম নিউমার্কেটে নিয়ে শাড়ি কিনে দেন কয়েকটা মরিয়ম বেগমকে। এত্ত সুন্দর শাড়ি আগে কখনো দেখেন নাই মরিয়ম বেগম। বেটারা গায়ে শাড়ি জড়িয়ে নানা অঙ্গ ভঙ্গি করে দেখাতে থাকে। এসব দেখে ফিক ফিক হেসে ফেলেন তিনি। ব্যাটাগোর কোন শরম নাই।
সেবার সিনেমা হলে ঢুকে জীবনে প্রথম সিনেমা দেখেন। আগে স্বামী যখন গল্প বলতেন সিনেমার তখন ঠারেঠুরে বুঝার চেষ্টা করেও কিছু আন্দাজ করতে পারতেন না। সিনেম দেখা কি।
সেবার সিনেমা দেখে মন ভরে যায়। নায়িকার সাথে নায়কের মিল হয় না বংশ এক ছিল না তাই শেষ দৃশ্যের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে মুখ চোখ ফুলিয়ে ফেলেছিলেন মরিয়ম বেগম।
এ যেন দাদীর কাছে শোনা, রূপবান রহিম বাদশা, গফুর বাদশা বানেছা পরী, সাইফুলমুলুক বদিউজ্জামানের কিচ্ছা ছায়া ছবি চোখের সামনে তুলে আনে সিনেমা। মনোয়ারা বেগমের মন দখল করে থাকে সিনেমার দৃশ্য, বহু বছর ধরে।
স্বামীর সাথে আবার ঢাকা গিয়ে সিনেমা দেখার ইচ্ছা জাগে কিন্তু নিজে মুখ খুলে আর বলতে পারেন না নিয়ে যাওয়ার কথা। সেই সময়টা বেশ ঝামেলায় ছিলেন আব্দুল কাশেম ব্যবসা নিয়ে। কি ঝামেলা মরিয়ম বেগমকে বলেন নাই কিন্তু তার ভিতরের ছটফটানি খুব বুঝতে পারতেন তিনি। জিজ্ঞেস করলে বলতেন, তুমি বুঝবা না শুইনা কাম নাই।
জটিলতা, এবং জীবনের অনেক কিছু সম্পর্কে একটু কম বুঝেন মরিয়ম বেগম। সে সব বুঝারও দরকার পরে নাই কখনো। স্বামী যত্নে ভালোবেসে আগলে রেখেছেন ,সব সময় সেই চৌদ্দ বছর বয়স থেকে। সরল সহজ মরিয়ম বেগম স্বামীর কাছে যা পেয়েছেন তাতেই অনেক খুশি আল্লাহর দরবারে দুহাত তুলে মোনাজাত করে শোকর গুজার করেছেন সব সময়।

ছেলে মেয়ে স্কুল কলেজে যায়। তারা অনেক কিছু শিখে তাদের প্রাণ দিয়ে আগলে রাখেন মরিয়ম বেগম। মুরগী যেমন ডানার নিচে আগলে রাখে তেমনি করে ছেলে মেয়ের যত্নে আগলে রাখেন, প্রয়োজনের সব কিছু যোগার রাখেন । তাদের যেন কোন কষ্ট হয় না পড়া লেখা করতে মুখের কাছে খাওয়া তুলে দেওয়া থেকে বই খাতা গুছিয়ে রাখা, পরিপাটি জামা জুতা গুছিয়ে রাখা। সবই করেন আন্তরিকতায়। কিন্তু এক সময় টের পান এত আদরের ধন ছেলে মেয়ে তার থেকে কেমন দূরে চলে যাচ্ছে। তারা নিজেদের কাজ নিজেরা করে নিজেদের মতন চলে। বই খাতা গোছাতে গেলে বলে মা তুমি হাত দিও না তো উল্টা পাল্টা করে ফেল জিনিস।
উঠানের মুরগির বাচ্চ হাঁসের বাচ্চাগুলোর দিকেই দেখেন তাকিয়ে, ভাবেন এটাই নিয়ম বড় হয়ে নিজের মতন হয়ে যাবে সব। মায়ের কাছে থাকবে না।
বড় ছেলে রহমত প্রথমে আলাদা হলো বাড়ি থেকে শহরে পড়তে গিয়ে। এক বছর পরে মেঝ শারাফাতও গেল পড়তে। ওরা নাকি বড় কলেজে পড়ে। মরিয়ম বেগম এই সব পড়ার হিসাব বুঝেন না। তবে ছেলেরা অনেক বিদ্যান হচ্ছে এই নিয়ে গর্ব করেন।
দু বছর পর মেয়ে শরিফুন গেল শহরে পড়তে। অথচ মরিয়ম বেগম ভেবেছিলেন মেয়ের বিয়ে দিবেন। নিজের বিয়ে হয়েছে চৌদ্দ বছর বয়সে মেয়ের তো আঠার বছর চলে। কিন্তু মেয়ে পড়তে চায়, বাপও পড়তে পাঠিয়ে দেয় ঢাকা শহরে। তিন ছেলেমেয়ে বাড়ির বইরে থাকে কেবল ছোটটা কাছে থাকে। ছোট শরিয়ত কলেজে পরে পাশের শহরে । কলেজের পড়া শেষে সেও বাড়ির বাইরে চলে যাবে। এখন বাড়ি আছে শরিয়ত কিন্তু নিজের কাছে বসায়ে দু মুঠো ভাত মুখে তুলে খাওয়ানোর সুযোগ পান না তিনি। কোলের এই ছেলেটার প্রতি একটু বেশি আদর যেন মরিয়ম বেগমের। তাকে কাছে ধরে রাখতে চান। কিন্তু ছেলেকে কাছে পাওয়ার উপায় নাই। সারাক্ষণ ব্যস্ত বাইরে। ঘরে এসে ঘুমায়। দরজা বন্ধ করে ঘরে থাকে। ডাকলে বলে ডির্স্টব করোনা তো মা। মরিয়ম বেগম বুঝতে পারেন না কিন্তু আন্দাজ করে নেন। নিজের মতন থাকবে। দিগদারী চায় না।
না চাইলেও দীর্ঘশ্বাস চলে আসে। কেমন বদলে গেলাে সব কিছু। একা হয়ে যাচ্ছেন মরিয়ম বেগম দিন দিন। আব্দুল কাশেম ব্যবসা নিয়ে একটু বেশি দিগদারীতে আছেন। মরিয়ম বেগমের দিকে মনোযোগ দেওয়ার সময় পান না।
সারাদিনের শেষে বাড়ি ফিরে খাওয়া শেষ করেই বিছানায় চলে যান। মরিয়ম বেগম এক খিলি পান এগিয়ে দিয়ে পাশে বসেন। কিন্তু পান খাওয়ার আগেই ঘুমিয়ে পরেছেন স্বামী।
একা একাই বাড়ির চারপাশে ঘুরে ফিরে বেড়ান। নিজের মতন পরিবারের সবার সুখ শান্তি কামনা করেন। ছেলে মেয়ে ইদে পরবে বাড়ি আসে কিন্তু নিজের মতন থেকে চলে যায়। মরিয়ম বেগম যেন আলাদা এক পরজীবী এ বাড়িতে, আপন মনে ঘুরে ঘুরে বেড়ান এর ওর কাছে মূল বিস্তার করতে চান কিন্তু কেউ ধরা দেয় না। সবাই বড় অন্য জগতে বাস করে। ছেলে মেয়ের প্রিয় তরকারী, পিঠা পায়েস রান্না করে তাদের মুখের কাছে এগিয়ে দিলে বলে রেখে যাও পরে খাবো। কখনো এক চামুচ মুখে দেয় না। কখনো পরে থেকে নষ্ট হয়ে যায়। কখনো বিড়াল, ইঁদুর মুখ দেয় পরে থাকা প্লেটে।
মরিয়ম বেগম এ জীবনের ভাবসাব কিছুই বুঝতে পারেন না।
একে একে তিন ছেলে মেয়ের বিয়ে হয় নিজের পছন্দে বিয়ে করে তারা। গ্রামের মানুষ আত্মিয় কুটুমদের ঢেকে যে আনন্দের অনুষ্ঠান হয় বিয়ে বাড়িতে তেমন কিছু করতে পারেন না মরিয়ম বেগম। স্বামী আব্দুল কাশেম আর তিনি একটা হোটেলে গিয়ে উঠেন ঢাকায়, সেখান থেকে বিয়ের কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে মেহমানের মতন বিয়েতে শরিক হন। একে একে তিন ছেলে মেয়ের বিয়েই ঢাকা শহরের বড় বড় আতসবাজী সাজানো ঘরে হয়।
মরিয়ম বেগম শুধু শূন্যতা অনুভব করেন। ছোট ছেলে শারাফত চলে গেছে বিদেশে পড়াশোনা করতে। বিদেশ যে কোন দেশ, কত দূর, এসব বুঝতে পারেন না।
উনার বাড়ি একদম ফাঁকা হয়ে গেছে। সব ঘরে সন্তানরা থাকত । নিজেদের মতন থাকলেও ছুটিতে বাড়ি ফিরত তখন ভরাট লাগত বাড়ি । তারা আর আসবে না আগের মতন, ছুটিতেও না এটা বুঝতে পারেন। ছেলে মেয়ের পড়া এবং বিয়ের খরচ টানতে গিয়ে আব্দুল কাশেম অনেক দেনায় পরেছেন, এটা অনুমান করেন। উনার মনের ছটফটানি দেখেন কিন্তু স্বামী, মরিয়ম বেগমের সাথে কিছুই খোলাশা করে বলেন না।
ছেলে মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে হুট করে একদিন ঘুমের মধ্যে আব্দুল কাশেম পরপারে পাড়ি দিলেন মরিয়ম বেগমকে একা ফেলে।
সেবার সব ছেলে মেয়েরা এক সাথে বাড়ি আসে অনেকদিন পর। সাথে তাদের বউ এবং জামাই এবং বাচ্চারাও আসে। মৃত স্বামী ছাড়া একা নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মরিয়ম বেগমের বড় শান্তি লাগে এই ঘর ভর্তি পোলাপানদের দেখে। শুধু ছোট ছেলে দূর বিদেশ থেকে আসতে পারে নাই।
কয়েক দিন থেকে বাপের শ্রদ্ধা শান্তির মিলাদ সিন্নি দোয়া সব কাজ কাম শেষ করে ওরা চলে যায়। বলে যায় আবার আসবে চল্লিশ দিনের সিন্নি দোয়া খায়রাত করতে। সে সময় ছোট ছেলেও আসবে।
মরিয়ম বেগম একা বাড়িতে অপেক্ষা করেন, স্বামীর মৃত্যুর চল্লিশ দিন হওয়ার। সব ছেলে মেয়েকে এক সাথে দেখতে পাবেন তখন। এই আনন্দের দিন গুনেন।
চল্লিশ দিনের সময়, ছেলে মেয়ে নাতি নতনী জামাই বউ সবাই আসে একে একে। বাড়ি যেন গম গম করে মরিয়ম বেগমের। ছেলেরা বড় করে বাপের জন্য মিলাদ কোরান খতম আয়োজন করে সাথে মাদ্রাসার এতিমদের খাওয়ার ব্যবস্থা করে। সারা গ্রামের মানুষদের ডেকে খাওয়ায়। এত বড় আয়োজন এই গ্রামে কখনো হয়নি। ছেলে মেয়েরা চলে গেলে, সবাই এসে ধন্য ধন্য করে মরিয়ম বেগমের কাছে, মানুষেে প্রসংশা শুনে মরিয়ম বেগমের আনন্দে চোখে পানি আসে।
কয়েক মাস পরে বড় ছেলে এসে বেশ কিছু দিন মায়ের সাথে বাড়িতে থাকে। ছেলে নাকি রাজনীতি করে। ইলেকশনে খারাইছে। ভোটের জন্য মানুষের বাড়ি বাড়ি যায়।
এই সময় কিছু মানুষ এসে মরিয়ম বেগমকে বলে এইটা কেমন কথা, তোমার স্বামী ছিল মুক্তিযোদ্ধা আর তোমার পোলায় করে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ পক্ষের রাজনীতি।
মরিয়ম বেগম এইসব রাজনীতি কিছুই বুঝেন না। ছেলে কি করে, বাপে কি করেছেন, কিছু জানেন না। শুধু মনে পরে যুদ্ধের বছর ফাল্গুন মাসে উনার বিয়ে হয়েছিল আব্দুল কাশেমের সাথে। বিয়ের পাঁচ মাসের মাথায় আব্দুল কাশেম, নতুন বউ রেখে যুদ্ধে চলে যান। ওনাকে বলে যান, দেশ স্বাধীন করে আসতে পারলে দেখা হবে, না হলে শেষ বিদায় দিয়ে দেও। দেশের জন্য তোমার স্বামী শহীদ হলে তার জন্য গর্ব করো, কখনো চোখের জল ফেলবে না। পোয়াতি মরিয়মকে বড় কষ্টে আগলে রেখেছিলেন শ্বশুড় বাড়ির লোকজন। এ বাড়ি ও বাড়ি এ গ্রাম সে গ্রাম কত জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছেন, ছোট ননদ আর ওকে। ওরা বেঁচে গেছে পালিয়ে পালিয়ে থেকে কিন্তু বাড়ির সবাইকে মেরে ফেলেছে, ছেলে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে এই অপরাধের জন্য পাকিস্থানী আর্মি।
যুদ্ধ শেষে, বাড়িতে কাজ করা, এক কামলার বাড়িতে লুকিয়ে থাকা, ননদ, ভাবী ফিরে আসেন গ্রামে। নিজেদের বাড়ি ফাঁকা ভাঙ্গা, সেখানে কেউ ছিল না। দুই নারী একা জীবন শুরু করেন। কিছু দিন পরে জন্ম নেয় বড় ছেলে রহমত। আব্দুল কাশেম তখনও ফিরেননি যুদ্ধ থেকে। কেউ তার খবর বলতে পারে না বেঁচে আছেন না মরে গেছেন। স্বাধীন হওয়ার পাঁচ মাসের মাথায় ফিরে আসেন আব্দুল কাশেম। যুদ্ধের শেষের দিকে তার গুলি লেগেছিল। সেই ক্ষত নিয়ে শুয়ে ছিলেন ইণ্ডিয়ার এক হাসপাতালে দেশ যখন স্বাধীন হয়। কয়েক মাসের মধ্যে একটু ভালো হলে ডাক্তার তাকে দেশে আসার জন্য ছেড়ে দেয়। বুকের ভিতর ঢুকে যাওয়া গুলি, হাড়ের মাঝে অদ্ভুত ভাবে আটকে ছিল। আর একটু ঢুকে গেলে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যেত মানুষটা। শহীদ হয়ে যেত মরিয়ম বেগমের স্বামী যুদ্ধে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ কৃপায় বেঁচে যান মরিয়ম বেগমের স্বামী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাশেম।
স্ত্রী, পুত্র আর বোনকে নিয়ে সংসার শুরু করেন। ধ্বংস হয়ে যাওয়া শরীর এবং পরিবারকে টেনে তুলেন একটু একটু করে। সাজান সব কিছু নতুন করে। সেই কর্মঠো ভালো মানুষের চল্লিশ দিনের সিন্নির বিশাল আয়োজন করে, তার ফল তুলে ভোটে জিততে চায় ছেলে। বাপ যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে মরতে বসেছিল, ছেলে তাদের সাথে হাত মিলিয়েছে এসব খুব ভালো না বুঝলেও মরিয়ম বেগমের ভালোলাগে না। উনি জায়নামাজে বসে হু হু করে কাঁদেন। কখনো চলে যান স্বামীর কবরে। দু হাত তুলে মোনাজাত করেন মানুষটার জন্য।
কিছুদিনের মধ্যে ভোটের ফল হয়। বড় ছেলে ভোটে জিতে নাই। মন খারাপ করে সে চলে যায় সেই সময়। কিন্তু মাস দুয়ের মধ্যে ফিরে আসে আবার সব ভাইবোনদের নিয়ে। এসে বাড়ি বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগি করে সব ছেলে মেয়েরা নিয়ে যায়। মরিয়ম বেগম নিজে কিছু পাবেন। স্বামীর ভিটাতে শেষ জীবন কাটাবেন এমনই ভাবেন কিন্তু তাকে তিন ছেলে নিজের কাছে ভাগাভাগি করে রাখবে ঠিক করে নিয়ে যায়। মায়ের অংশের কিছু টাকা আছে সেটা দিয়ে বাবার ঋণ শোধ করা হয়েছে এবং বাকিটা ব্যাংকে মায়ের নামে রেখে দেয়া হয়েছে বলে তারা জানায়।
তারা বলে মায়ের জন্য একটা কবরের মাটি কিনতে হবে ঢাকা শহরে বনানী গোরস্থানে যার দাম অনেক। মরিয়ম বেগম বুঝে পান না। ঢাকা শহরে কেন তার গোড়ের মাটি কিনতে হবে। তাকে এই গ্রামে স্বামীর পাশে কবর দিলে তিনি বেশি খুশি হবেন। তিনি এই গ্রামে থেকে স্বামীর কবরের পাশে বসে দোয়া করে বাকি জীবনটা কাটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ওরা তাকে তার পরিচিত জায়গা থেকে নিয়ে যাওয়ার সব আয়োজন করে ফেলে।
অনেক কিছু নিজের মনে ভেবে ফেললেও মরিয়ম বেগম কিছুই বলে উঠতে পারেন না ছেলে মেয়ে কাউকে। ওদের বড় অপরিচিত মনে হয়। উনি চুপি চুপি কাঁদতে কাঁদতে বায়তুল মোকারম থেকে স্বামীর কিনে দেয়া সোনার বিছা হাড়খানা বাড়ির কামলা সিতারার হাতে দিয়ে বলেন। এটা যত্ন করে রেখে দে। ওরা আমারে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে জানি না। যদি কখনো ভালো না লাগে এসে তোর কাছে থাকব সিতারা, আমারে তখন রাখিস।
শোকেস খুলে কাঁচের কাপ ডিস সেট গুলো খুলে খুলে দেখছে বউ এবং মেয়ে। ভাগাভাগি করে নিচেছ তারা উনার যত্ন করে রাখা আদর করে স্বামীর এনে দেয়া জিনিস পত্র। একবার উনাকে কেউ জিজ্ঞেসও করছে না কিছু। যেন মরিয়ম বেগমের সব অধিকার শেষ।
এ্যা মা কী দারুণ এন্টিক এগুলো। শ্বশুর সাবের রুচি খুব ভালো ছিল। কিন্তু শাশুড়ি এসব কখনোই বুঝলেন না।
এত বছর ধরে যত্নে জমিয়ে রাখা স্বামীর আদরে তুলে দেয়া জিনিস গুলো নিজের পছন্দে সবই নিয়ে নিল। মরিয়ম বেগম আলমারির ডালা খুলে দিয়ে বললেন, তোমরা নিতে চাইলে এইখান থেকে শাড়িও নিতে পারো। সবাই মিলে হুমড়ি খেয়ে পরল আলমারির উপর। সব নামিয়ে বেছে বেছে কয়েক খানা তুলে নিল এক একজন। একটা শাড়ি যা নিউমার্কেট থেকে কিনে দিয়েছিলেন আব্দুল কাশেম বালুচুড়ি কাতান, মরিয়ম বেগম মোটে দু একদিন পরেছেন সেটা নেয়ার জন্য সবাই টানাটানি করছে। কারো মন খুশি হবে না এই শাড়ি না পেলে সবার মনে অন্যের প্রতি একটা রাগ জমবে। এটা বুঝতে পেরে তিনি সেই শাড়িটা তুলে নিয়ে বললেন এই শাড়িটা আমার কাছে আর কিছুদিন থাক। তোমাদের শ্বশুড় বড় ভালোবেসে এই শাড়িটা আমাকে দিয়েছিলেন। ছোট বউ ফট করে বলে ফেলল, মা কাফনের কাপড় এটা দিয়ে করলে কেমন হবে।
সবাই ওর কথা শোনে চুপ হয়ে গেলো। মরিয়ম বেগম শাড়িটা তুলে নিতে নিতে বললেন ভালো হবে, তোমাদের খরচ করে কিনতে হবে না
এর পর সবাই চুপচাপ সরে পরল ঘর থেকে।
মরিয়ম বেগম অনেকক্ষণ কাঁদলেন শাড়িটা বুকে জড়িয়ে। মরিয়ম বেগম ছেলে মেয়েদের নিজের প্লেট থেকে তুলে খাওয়াতে দেখলে আব্দুল কাশেম সব সময় একটা কথা বলতেন, তোমার ভাগের যা, তা অন্যের সাথে ভাগ করো না। নিজের নাড়ি ছেড়ে ধন ছেলে মেয়ে কি কখনো অন্য কেউ। মরিয়ম বেগমের মন খারাপ হতো এ কথা শুনে। কিন্তু এতদিন পর সে কথার মর্ম যেন বুঝতে পারলেন মরিয়ম বেগম।
উনার ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন মূল্য নেই। একটা স্যুটকেসে কয়েকটা কাপড় জামা গুছিয়ে নিয়ে, উনাকে গাড়িতে উঠিয়ে ওরা রওনা হয়ে গেলো ওদের বাড়ির দিকে। পিছনে পরে রইল মরিয়ম বেগমের আদর, ভালোবাসা স্নেহ নাড়ির সাথে মিশে থাকা ঘর বাড়ি উঠান গ্রাম, সবুজ গাছ পালা। পাখির ডাক, মোরগ, হাঁস গরু বাছুর। অচেনা অনাত্মিয় কিন্তু চির সাথে থাকা মধুর স্বভাবের ভালোবাসার সব মানুষ।
ছেলেরা ভাগ করে নিল কয়দিন মা, কার কাছে থাকবেন।
তাদের বাড়িতে মরিয়ম বেগমের নিজস্ব কোন ঘর নেই। আড়াল রাখার নিজের মতন চলার, ভাবার। নাতীদের সাথে তাদের শোয়ার ঘর ভাগ করতে হয়। ওদের পড়া খেলা শেষ না হলে বাতি নিভিয়ে শুয়ে পরার উপায় নাই। কিছু দিন এক বাড়িতে, তো আবার অন্য বাড়িতে নতুন জায়গায় গিয়ে প্রথম বেশ কদিন ঘুম হয় না। খাওয়া খেতে পারেন না। একটু অভ্যস্থ হয়ে উঠলে আবার অন্য ছেলের কাছে যেতে হয়।
ছেলে, বউ, কে কি করে কিছুই জানেন না মরিয়ম বেগম। তাদের এখানে উনার একার জীবন। যখন বাড়িতে লোকজন আসে তখন উনাকে লুকিয়ে থাকতে হয় ঘরের ভিতর। এমনিতেই ঘরের ভিতর বিছানার উপর সারাক্ষণ বসে থাকা, সে সব দিনে আরো চুপচাপ বসে থেকে কাটাতে হয় যখন কেউ বাসায় আসে।
প্রথমদিকে কথা বলে ফেলতেন নতুন কারো সাথে দেখা হলে। সেটা নিয়ে বউদের অসুন্তুষ্টি টের পাওয়ার পর নিরব হয়েছেন। সবাই যখন কোনদিন এক সাথে টেবিলে বসে খায় তখন তাদের মাঝে যেয়ে বসতে উনার খুব ইচ্ছা করে। কিন্তু ওরা কেউ সেটা পছন্দ করে না। বাড়ির কাজের লোকজনের সাথেও তিনি যেন বেশি কথা না বলে ফেলেন, সেই নির্দেশ দেয়া আছে।
মরিয়ম বেগম চুপচাপ থাকতে থাকতে মাঝে মধ্যে মনে হয় উনি বোবা হয়ে গেছেন। হঠাৎ কখনো ছেলে বা বউ এসে যদি অতি সাধারন কথা মা কেমন আছেন, জিজ্ঞাসা করে উনার মুখ দিয়ে চট করে, কোন কথা বের হয় না। কি বলবেন বুঝে উঠতে পারেন না। থতমত খেয়ে যান।
ওরা মরিয়ম বেগমের এই কথা বলতে না পারা বা সময় নেয়াটাকে খারাপ ভাবে দেখে। উনি যখন কথা বলার জন্য প্রস্তুত ততক্ষণে ওরা চলে গেছে। ওদের সময় কই উনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকার। কিছু বলতে গিয়ে মুখ উঠিয়ে দেখেন, কেউ নেই উনার কথা শোনার জন্য।

অনেকদিন ধরে কেউ বাড়ি আসে না সবাই নিজের বাড়িতে বসে আছে। পৃথিবীতে নাকি ভীষণ রকম এক মহামারী এসেছে। তাই সব মানুষ নিজের ঘরে লুকিয়ে আছে। মরিয়ম বেগম এমনিতেই নিজের ঘরে লুকিয়ে আছেন। এখন ওরাও লুকিয়ে আছে মহামারীর জন্য। মহামারী কি এত কিছু কেউ উনাকে বুঝায় না।
কাজের যে মেয়েটি বাইরে থেকে আসত। সে নিজে থেকে অনেক কথা বলে যেত। বাইরের দুনিয়ার খবর শুনতেন মরিয়ম বেগম। সে এখন থেকে আর আসবে না। বউ বলছিল, তুই আর কাজে আসিস না। মেয়েটি কান্নাকাটি করছিল। চলবে কি ভাবে। বউ বলছিল আচ্ছা এসে টাকা নিয়ে যাস মাস শেষে।
বাচ্চা গুলো স্কুলে যায় না। সারাদিন সবাই বাড়িতে। বাড়ির কাজ বউকে একা করতে হচ্ছে, এজন্য ওর মেজাজ চড়া থাকে সব সময়। মরিয়ম বেগম বলেছিলেন, উনি কাটাকুটি করে দিতে পারেন, রান্না করেও সাহায্য করতে পারেন। কিন্তু বউ বলেছে না কিচ্ছু করা লাগবে না ঘরে চুপচাপ বসে থাকেন।
উনি ঘরের কাজ করলে কি খারাপ হবে, সেটা বুঝতে পারেন না। নিজের বাড়িতে থাকতে সব কাজই তো করেছেন। এখন্ও ইচ্ছা করে শীতকালে পিঠা বানিয়ে বাচ্চাদের দেন। কিন্তু উনার রান্না ঘরে যাওয়া বারণ।
অনেকটা মাস এক ঘরের ভিতর কেটে গেছে।
মহামারীর টিকা আবিস্কার হয়েছে। মরিয়ম বেগমকে টিকা দেওয়ানোর জন্য ছেলে আজ নিয়ে এসেছে। অনেকদিন পরে, ঘরের বাইরে এসে উনার অস্থির লাগছিল। তার উপর মানুষের এত্ত ভিড়। শেষ মাঘের বিকালে উনি ঘেমে উঠছিলেন, কিন্তু বলতে পারছেন না তার অস্বস্থি ছেলেকে। অনেকটা পথ হাত ধরে হাাঁটয়ে নিয়ে এসে, দাঁড় করিয়ে রেখেছে ছেলে লাইনে। মরিয়ম বেগমের পা দুখানা ভেঙ্গে আসছে ব্যাথায়। কুঁকড়ে উঠছেন তিনি। আসে পাশে কিছু নাই যা ধরে একটু সাহায্য পান।
ছেলে কি যেন দেখতে সামনে গেছে। একা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পায়ে শক্তি নাই মাথাও ভীষণ ভাবে ঘুরে উঠল। চোখে অন্ধকার দেখছেন, এক সময় মাথা ঘুরে পরে গেলেন মরিয়ম বেগম।

মানুষের হৈ চৈ শুনে ফিরে এসে ছেলে দেখল, মা পরে আছে মাটিতে সবাই বলছে, মহিলার কি করোনা হয়েছিল?
উনার কি ফিটের ব্যারাম আছে। মৃগি রোগ আছে কিনা। নানা কথার ভীড়ে এক সময় দু একজনের সাহায্য নিয়ে মরিয়ম বেগমকে ইমারজেন্সিতে নিয়ে আসতে পারল বড় ছেলে রহমত।
সেখানে ভর্তি হয়ে, মাসখানেক পরে আছেন মরিয়ম বেগম। পরে গিয়ে উনি মাথায় ব্যাথা পেয়েছেন ব্রেন হ্যামারেজ হয়ে কমায় চলে গেছেন মরিয়ম বেগম। লাইফ সাপোর্টে এক মাস রাখার পর, সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী পরশু শুক্রবার বাদ জুম্মা মরিয়ম বেগমের লাইফ সার্পোট খুলে দেয়া হবে। উনার অংশের যে টাকা জমা ছিল তা ক্লিনিকের খরচ এবং এত দিন উনি যে বিভিন্ন ছেলে মেয়ের বাড়িতে ছিলেন সে হিসাবে শূন্যের কোঠায়। বনানীতে কবর কেনার মতন টাকা নাই। তাই গ্রামে নিয়ে যাওয়া ঠিক হলো।
অনেক বছর পরে ছেলে মেয়ে মরিয়ম বেগমের লাশ নিয়ে গ্রামে এসেছে। এখন গ্রামে হোটেল এবং গেষ্ট হাউস হয়েছে। ওরা গেস্ট হাউসে উঠেছে। যদিও ওদের ছোট ফুপুর ছেলে তাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে, এসেছিল কিন্তু তারা যায়নি। একদিন থেকে মায়ের দাফন শেষে ওরা ঢাকা ফিরে গেছে।
মরিয়ম বেগমের কবরে সিতারা রোজ দুবার দোয়া পরতে আসে।











মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৩

ভুয়া মফিজ বলেছেন: বড় গল্প, আমাদের অতি পরিচিত গল্প। খারাপ লাগলেও এটাই বাস্তবতা। আসলে পৃথিবীতে সবাই একা। এটা আমি হাড়ে হাড়ে টের পাই আজকাল। সব সময়ে এটা যে বোঝা যায়, তা না; বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে বোঝা যায়। যেভাবে মরিয়ম বেগম বুঝেছিলেন।

এমন ছেলেমেয়ে থাকার চেয়ে না থাকা ভালো। X(

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৫১

রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভুয়া মফিজ সুন্দর মন্তব্য ভালোলাগা দিল।

অনেকদিন পর গল্প দিলাম। বড় গল্প একবারেই দিয়ে দিলাম। যাদের ইচ্ছা হয় পড়ে নিবেন এই ভেবে।

আসলে আমারও মন খারাপ হয়ে গেলো গল্পটা লিখতে গিয়ে। কিন্তু চারপাশে এই জীবন বড় বেশি তাড়িত করে।

এমন ছেলে মেয়ে মানুষ করা বাবা মায়েরও কিছুটা দোষ আছে।
বেশি আদরে স্পয়েল্ড চাইল্ড।

২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৯

চাঁদগাজী বলেছেন:




মোটামুটি আজকের অরাজকতার পরিবেশে বাংগালী মধ্যবিত্তের জীবনের প্লট; শেষটা বিয়োগান্তক করলে, গল্প পড়তে ভালো লাগে না।

প্রায়ই দেখছি, বাংলার বউয়েরা তাদের শ্বাশুড়িকে পছন্দ করছে না; ইহার সমাধান সম্ভব, আমার মনে হয়।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৫৭

রোকসানা লেইস বলেছেন: বুঝেছি মরিয়ম বেগমের সিনেমা দেখার মতন আপনার কান্না আসে :D

কিন্তু জীবনের বাস্তবতাই এমন।
বউ শাশুড়ির দ্বন্দ দূর করার জন্য বাঙলার অনেক নিয়ম বদল করতে হবে।
প্রথম ভাবনাটা, হতে পারে প্রত্যেকের আলাদা সংসার।
একজনের সংসারে আরেক জনের উপস্থিতি অনেকটা জমি দখলের মতন সংসার দখল করে নেয়ার মানসিক দ্বন্দ ঝগড়াটা বেশি লাগিয়ে দেয় আমার মনে হয়
শুভেচ্ছা রইল

৩| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৪১

ওমেরা বলেছেন: গল্প পড়ে কষ্ট লাগলো কিন্ত এটাই জীবন সামনে তো আরো খারাপ অবস্থা আসছে।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ২:১০

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ ওমেরা।
কষ্ট মানুষের জীবনেরই অংশ। কেউ সুন্দর ভাবে সরিয়ে রাখতে পারে কেউ পারে না।

সামনের খারাপ অবস্থা আসার যে আশংকা প্রকাশ করেলেন, তা আসার আগেই নতুন ভাবে ভাবা দরকার পরিবারের সম্পর্ক নিয়ে।
শুভেচ্ছা রইল

৪| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৪০

আখেনাটেন বলেছেন: বেশ সময় লাগল পড়তে। তবে পড়তে খারাপ লাগে নাই। চমৎকার লিখেছেন লেইসাপা। পুরো গল্প জুড়ে হাহাকার, কাছে না পাওয়ার বেদনা লক্ষ করা যায়। এখন এটাই আমাদের তথা মনে হয় পুরো বিশ্বের বয়স্ক লোকেদের ভবিতব্য। কিছু ব্যতিক্রম থাকলেও, বেশির ভাগ বয়স্ক লোকেদের শেষ জীবনটা খুব একটু সুখের হয় না।

আমি একজনকে চিনি। ঘটনাচক্রে দূরসম্পরর্কের আত্মীয়। ভারত বিভাগের পর এদেশে এসেছিলেন। উনার হাজবেন্ড খুবই বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। নাম বললে অনেকেই চিনবেন। ভদ্রমহিলা একাই ধানমন্ডির বিশাল বাসাতে তিনজন কাজের লোকসহ থাকত। বয়স ৯০'র উপর। একজন ছাড়া ছেলেমেয়েরা কেউ দেশে থাকে না। এক নাতি বারডেমের ডাক্তার। সেই মাঝে মাঝে গিয়ে নানীকে দেখে আসত। কয়বছর আগে বিঘার উপর সেই জায়গাটা ডেভালপারকে দিয়ে তাদের মাকে এক ভাড়া বাসায় রেখেছে। ঐ প্রায় স্মৃতিভ্রষ্ট ভদ্রমহিলা এখন সেই ভাড়া বাসাতেই থাকছেন। ছেলেমেয়েরা খরচ দেন। তবে মাঝে মাঝেই কাজের লোকের সংকট দেখা দেয়। কারণ তারা নিয়মিত বেতন পান না। অথচ সেই জমিতে অসংখ্য এপার্টমেন্ট হচ্ছে.....। কাড়ি কাড়ি টাকা ভাগ....। অদ্ভুত এক দুনিয়ায় আমরা বাস করছি....।

কবি আবিদ আনোয়ারের একবার একটি কবিতা আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল। কবিতার শিরোনাম ছিল এরকম, 'ভালোবাসা ক্রমশই নিম্নগামী হয়'। বাবা-ছেলে-নাতি। আর ঊর্ধেব বাস করাদের হাহাকার বাড়ে প্রতিনিয়ত...ঠিক গল্পের
প্রোটাগনিস্ট মরিয়মের মতো।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:১৬

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ আখেনাটেন ।
পাঠকের কাছে পড়তে ভালোলাগাটা অনেক বড় পাওয়া লেখকের জন্য। জেনে ভালোলাগল। বড় হলেও লেখাটা পাঠককে আটকে রেখেছে শষ পর্যন্ত।
দুই পর্বে দিতে পারতাম। হয়তো অনেকের ফিরে এসে শেষটা পড়া হতো না।
আমাদের সামজিকতার বিশাল প্রভাব এমন জীবন। সচেতনতার সময় এখন, নিজের শেষ বয়সে যেন নিজের মতন থাকতে পারেন সে ব্যবস্থা করার। সামাজিক ভাবে নতুন চিন্তা ভাবনা আনা দরকার।
উন্নত বিশ্বের মানুষ, নিজের মতন থাকায় অভ্যস্থ বা মেনে নেয়ার মানসিকতা গড়ে তুলেছেন।
তাদের পরিবার যে ভাবে যত্ন করে, খোঁজ খবর রাখে ওল্ডহোমে থাকলেও। আমাদের দেশে ঘরে, থেকেও সাধারন সুন্দর ব্যবহার অনেকে পান না। এটা খুব কষ্ট কর একটা অবস্থা।
তোমার উল্লেখিত আত্মিয় মহিলার জীবনটাও অনেকটা মরিয়ম বেগমের মতনই। সন্তান যখন মা বাবাকে তাদের মর্যাদা থেকে নামিয়ে আনে, সেটা খুব কষ্টকর একটা বিষয়। নিজেদের মতন আস্ত একটা বাড়ি নিয়ে থেকেছে যারা, তাদের ঘরের এক কোনে একটু জায়গা অপমানের জীবন যাপন প্রতিদিন মানসিক যন্ত্রনায় রাখার সমতূল্য।
মানসিকতার পরিবর্তন জরুরী।
শুভেচ্ছা রইল



৫| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:০৯

করুণাধারা বলেছেন: পড়ে মনখারাপ হয়ে গেল। জানিনা শেষ জীবনটা কিভাবে কাটবে...

গল্প ভালো লেগেছে।+++

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৩:১৯

রোকসানা লেইস বলেছেন: এমন ঘটনা চারপাশের বাস্তব জীবন হয়ে গেছে। তার আঙ্গিকে লেখা। সবারই নিজের জন্যও ভাবা দরকরা এখন থেকে অন্যের উপর নির্ভর না করে।
তা হলে ভয়ের কিছু থাকবে না।
শুভেচ্ছা করুণাধারা

৬| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:১৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

চমৎকার গল্প ! পড়তে সময় লাগলেও
বিরক্তির উদ্রেক হয়নি বলেই ধন্যবাদ।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৩:২১

রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ নূর মোহাম্মদ নূরু
চমৎকার মন্তব্য মন ভালো করে দিল।
শুভেচ্ছা জানবেন

৭| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: একদম বাস্তব গল্প। সুন্দর লেখা।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৩:২৫

রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ রাজীব নুর
শুভেচ্ছা

৮| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৪৮

এল গ্যাস্ত্রিকো ডি প্রবলেমো বলেছেন: নিকষ কালো বাস্তবতার গল্প। ভয় হয়।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:৪৯

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ এল গ্যাস্ত্রিকো ডি প্রবলেমো
কালো একটা দিক সমাজের
ভয় না পেয়ে সমাধানের কথা ভাবা দরকার ।
পারিবারিক ভালোবাসা বোঝা পড়া থাকলে সমস্যা হওয়ার কথা না।

৯| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:১১

রানার ব্লগ বলেছেন: এটাই মনে হয় বাস্তব !!!

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৪৮

রোকসানা লেইস বলেছেন: হ্যাঁ এই নিষ্টুর বাস্তবতা অনেক পরিবারের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে ।
শুভেচ্ছা রানার ব্লগ

১০| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৩৮

সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: ভালো লাগলো ।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৩:১৩

রোকসানা লেইস বলেছেন: শুভেচ্ছা জানবেন সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.