নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুভ্রতায় ঢাকা চরাচর

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:০৩

শুভ্রতায় ঢাকা চরাচর

জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ,বাইরে ঝকঝকে রোদ। সকালে উঠে, সুন্দর একটা দিন দেখে ভাবলাম যাই কিছু কাজ বাকি আছে সেটা করে আসি। নাস্তা শেষে ধীরে সুস্থে বের হতে বারোটার মতো বেজে গেল । আমার বাড়ির পথটা পেরুতেই অনেকটা জায়গা যেতে হয়। গাড়ি নিয়ে খানিক আসার পরে বুঝলাম, ভুল হয়ে গেছে, আজ ঘর থেকে বের হওয়া উচিত হয়নি। চকচকে রোদ থাকলেও দিনটা সুন্দর, নয়। তুমুল বাতাস বইছে আর দুদিন আগে পড়ে থাকা বরফগুলো উড়ে বেড়াচ্ছে এদিক থেকে সেদিক আরামসে।রাস্তা পুরো ঢেকে যাচ্ছে বরফের আভরনে। যতদূর দৃষ্টি যায় মনে হয় যেন এক সাদা সমুদ্রের ভিতর দিয়ে চলছি। দশ হাত দূরের কিছু দৃষ্টি গোচর হচ্ছে না। আসি নব্বই কিলোমিটার জোরে বইছে বাতাস। আকাশে থাকা প্রখর রোদের আলোও দেখাতে পারছে না পথ। খুব বড় ভুল হয়েছে আজ ঘর থেকে বের হয়ে।
বরফ পরছে না সুন্দর চকমকে রোদ, দুদিন আগে বেশ তুষারপাত হয়েছে, আজ একটু ঠান্ডা বেশি হতে পারে এর বাইরে তেমন কিছু ভাবিনি। এমন ঠান্ডায় বাইরে বেরুনো, স্বাভাবিক ব্যাপার এখানে অভ্যস্ত হয়েছি অনেক দিন থেকে।
বাড়ির রাস্তাটা পেরুতে পেরুতে দেখলাম, রাস্তার উপর অনেকগুলো বরফের বাঁধ জমে আছে। একটার পরে একটা বরফের পাহাড় পেরিয়ে এগিয়ে চলেছি। গাড়ি একবার থামিয়ে দিলে বরফের মাঝে ডুবে যাবে গাড়ির চাকা, সেখান থেকে বেরিয়ে আসা মুশকিল হবে। দু-তিনবার পিছলে যাওয়ার মত অবস্থা হলেও কোনমতে গাড়ি না থামিয়ে রাস্তাটা পাড়ি দিলাম। মেইন রাস্তায় উঠার পরে দেখলাম সেখানেও প্রচুর বরফ পড়ে আছে। যদিও একটু আগেই বরফ সাফ করার গাড়ি সাফ করতে করতে পেরিয়ে গেল দেখেছিলাম ।
রোদ ঝকমক করছে বরফ পড়ছে না কিন্তু দুদিন আগের জমিনে থাকা তুষার বাতাসে উড়ে এসে শুয়ে পরছে রাস্তার উপর। পুরো রাস্তার উপরে অনেকগুলো ঢেউয়ের পাহাড় যা পেরিয়ে এলাম । যেখানে গাছ আছে সেখানে অবস্থা স্বাভাবিক। কিন্তু যেখানে ধুধু মাঠ সেখানে আসতেই অবাক হয়ে দেখলাম চারপাশ থেকে ছুটে আসা বরফের ভিতরে আমি যেন ঢুকে গেছি এক অচেনা শুভ্রতার জগতে। কোথায় যাচ্ছি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। চেনা বলে এগিয়ে যাচ্ছি। পাঁচ হাত দূরে ভালো মতন কিছু দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে একটা আমি সাদা টানেলের ভিতরে ঢুকে পড়েছি । আমার নির্দিষ্ট কাজের জায়গায় যেতে যেতে কয়েকবার এমন ভয়াবহ বাতাসের আক্রমণে উড়ে যাওয়া বরফের শিকার হলাম ।
ঘন্টা দুই সময় লাগল কাজ সারতে। বাড়ি ফিরে যাওয়াটা ঠিক হবে না রাস্তার উপর পাহাড় জমে গেছে এতক্ষণে। শহরে কিছু কাজ আছে বরং সেটা করতে চলে যাই। হাইওয়ে অনেক বেশি পরিস্কার করা হচ্ছে। তাই অতটা খারাপ হবে না। যদিও রেডিওতে শুনছি একই প্যারালালের অন্য রাস্তায় এক সাথে ষাটটা গাড়ি দূর্ঘটনায় পরেছে, না দেখতে পাওয়ার জন্য। এবং অবশ্যই সাথে কিছু জোড়ে এবং অসতর্ক হয়ে চালানো চালকের জন্য। সামনের গাড়ি থেকে দূরত্ব অনেক চালকই রাখতে চায় না ফলে এমন রাস্তার অবস্থায় হঠাৎ ব্রেক দিয়ে নিজে থেমে গেলেও দূর্ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। পিছনের গাড়ি সময় মতন থামতে পারে না জায়গা না থাকায় বা রাস্তা পিচ্ছিল থাকার কারণে সময় মতন ব্রেক লাইট না দেখতে পাওয়ার জন্য। সামনের গাড়ির উপর যেয়ে হুমড়ি খেয়ে পরে।
কিন্তু এখন বাড়ি ফিরে আমি বাড়িতে ঢুকতে পারব না কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে রাস্তা পরিস্কার করার জন্য। তাই শহরে গিয়ে এসময়টা কাজ করে নেয়াই ভালো।
বিকেলবেলা রাস্তা পরিষ্কার করা হলে আবার ফিরবো ভেবে শহরে চলে গেলাম । কাজ শেষ হতে সন্ধ্যা হয়ে গেল বাড়ির রাস্তায় রওনা হয়ে মনে হল যেন একটা ঝড়ের ভিতর পড়ে গেছি।
এত বছর বরফ দেখছি বরফ এলে আমার ভালই লাগে কিন্তু এমন ভয়ংকর ভাবে বাতাসের তুমুল শক্তিতে বরফ উড়ে যাওয়া কখনো দেখিনি। শহরের রাস্তায় বরফ কম উড়ছে কিন্তু সন্ধ্যার দিকে বরফবৃষ্টি হচ্ছে, মাটিতে পরে থাকা বরফগুলো যেন পিচ্ছিল হয়ে গেছে। সব রকমের সাংঘাতিক অবস্থার সমন্বয় ঘটেছে রাস্তার উপরে।
গাড়ি মনে হচ্ছে যে কোন সময় উড়ে অন্য লাইনে চলে যাবে এমন ভাবে হাওয়ার দাপটে মাঝে মধ্যে দুলে উঠছে। বাড়ি ফিরার একশ কিলোমিটার পাড়ি দেয়া সহজ হবে না এমন অবস্থায়। আসার সময় এতটা খারাপ ছিল না কিন্তু বিকাল থেকে জোর বাতাসের সাথে বরফ পড়া এবং বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে। পরিচ্ছন্ন কর্মী ক্রমাগত রাস্তা পরিষ্কার করে শেষ করতে পারছে না । প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার আসার পরে ভাবলাম আজ বাড়ি যাওয়া ঠিক হবে না। রেডিওতে শুনছি শুধুই ঘরে থাকার আহ্বান জানাচ্ছে। যত সামনে যাবো তত রাস্তা খারাপ হবে। আজ শহরেই থাকতে হবে। সিদ্ধান্ত নিয়ে এক্সিট নিয়ে আবার উঠলাম ফিরার রাস্তায়।
যে ত্রিশ কিলোমিটার পেরিয়ে এলাম আবার ফিরে যেতে হল সেই পথ। ফেরার পথটা সহজ ছিল না।
যা হোক রাতটা ছেলের বাড়িতে কাটিয়ে পরের দিন দুপুরে আবহাওয়া শান্ত হলে রাস্তা পরিচ্ছন্ন হওয়ার খবর পাওয়া গেলে বাড়ি ফিরলাম।
গত ছয় বছর বরফের দেখা নেই খুবই মিস করছিলাম। শীতকালে বরফের সাথে কিছু সময় না কাটালে শীতকালটা উপভোগ্য হয় না। গত ছয় বছরের সমস্ত বরফ একসাথে চলে এসেছে এবছর যেন। তুষারপাতে সারা শীতের মধ্যে তিন চার দিন হয়তো খুব খারাপ সময় থাকে একদিন ফ্রোজেন রেইন, এক দুদিন তুমুল তুষারপাত। একদিন ঘাস, জমিন, গাছ, ঘর, গাড়ি বরফের ক্রিস্টাল আভরণে কাঁচ সমুদ্র হয়ে যাওয়া চারপশের পৃথিবী। অপূর্ব সুন্দর সে দৃশ্য। যদিও স্কেইটের মতন পথে নামলে পরে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
দু চার দিনের বেশি কখনোই এমন পরিস্থিতি থাকে না কিন্তু এবছর সেই যে বরফ পরা শুরু হলো ডিসেম্বরে তারপর সব গলে পরিস্কার হয়ে গেল। হাসলাম অনেক, ঠিক ক্রিসমাসের আগে বরফ পরল সাদা ক্রিসমাস হওয়ার জন্য। সবাই খুব খুশি এমন বরফপাত দেখে, হোয়াইট ক্রিসমাস হলো। তারপর তিন সপ্তাহ পার হওয়ার পর যখন শীতকালের ঘন্টা বাজল তখন শীত নামল তুষার সমেত। খুব বেশি তুষারপাত দেখলাম না শীতের প্রথম সপ্তাহে কিন্তু বাতাসের প্রবল বেগে তুষার ছুটছে এপাশ থেকে ওপাশে। একদিন একটুখানি থেমে যাওয়ার পরেই আবার তুষারপাত শুরু হচ্ছে গত তিন চার সপ্তাহ, থেকে থেকে এরকমই চলছে।
দুদিন আগে ঘরের সামনে তিন সাড়ে তিনফুট বরফ জমে ছিল। মজা করে বরফে নামতে গিয়ে দুই পা ভাড়ি ভেজা বরফের ভিতরে আটকে গিয়েছিল। সেখান থেকে আমাকে টেনে তুলতে হলো । বাসার সামনে দিনে তিনবার পরিষ্কার করা লাগছে। একবার বরফ জমে ভাড়ি হয়ে গেলে তখন পরিস্কার করা খুব কষ্টের। যত না পরছে বরফ তারচেয়ে বেশি পাহাড় সমান হয়ে যাচ্ছে বাতাসে উড়ে এসে জমে। আরো এক মাস এমন বরফ পরলে সে বরফ তুলে রাখার জন্য জায়গা খুঁজতে হবে। শহরে রাস্তায় হাঁটার পথ চিকন থেকে চিকন হয়ে গেছে।
জমে থাকা বরফে ঢেকে আছে আগুন নিভানোর জন্য পথের পাশে রাখা ইমার্জেন্সি পানির পুলগোল। এদিকে আগুন লাগছে নানা জায়গায়। বেশ কয়েকটা খবর দেখলাম এরমধ্যে আগুন লাগার। গতকাল দমকল বাহিনী নিজেরাই পোষ্ট গুলো বরফ খুঁড়ে বার করছিল নানা জায়গায়।
এত বরফ পরছে কিন্তু বরফ পরার যে সৌন্দর্য, গাছ থেকে মাটি সব শুভ্রতায় ঢেকে যায় তেমন সুন্দর কিছু এখনও পেলাম না এবছর। গাছের ডালে পাতায় জমে থাকা বরফ নেই। তবে প্রচুর ভিডিও আসছে এমন বরফ ঢাকা। যা ফেইক এ আই দিয়ে তৈরি। যারা জানে না তারা এই সব ফেইক খবর দেখে ভাববে আহা কি সুন্দর।
এবছর সব কিছু কেমন যেন ভয়ানক মনে হচ্ছে। ফ্লোরিডায় বরফ পরে ঢেকে গেল। যেখানে সবাই উষ্ণতা উপভোগ করার জন্য যায় শীতকালে। আর আগুনের পর ভয়াবহ বন্য হচ্ছে ক্যালিফোনির্য়ায়। আমেরিকা জুড়ে ঝড়ের দাপট গত বছর থেকে চলছেই সারা বছর জুড়ে। প্রকৃতি অস্থির হয়ে উঠেছে যেন।
এই এত বরফ পরছে গাড়ি ঢাকা পরছে বরফের নিচে এ সময়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে গাড়ি চালানোর আগে। বরফ যেন ঢেকে বন্ধ করে না রাখে গাড়ির এক্সস্ট পাইপ । কার্বন মনোক্সাইড বন্ধ গাড়ির ভিতর মূহুতে মৃত্যু ডেকে আনবে। কার্বন মনোক্সাইডের কোন গন্ধ পাওয়া যায় না তাই সতর্কতার সুযোগ নেই এ্যাটাক হলে। তাই এমন বরফ দিনে গাড়ি চালানোর আগে এক্সস্ট পাইপ চেক করে নিবেন গাড়িতে উঠার আগে এবং সতর্কতামূলক ভাবে ঠান্ডা লাগলেও জানালা কিছু সময় খুলে রাখা ভালো।
বাড়ির চিমনির পাইপের মুখও যেন বন্ধ হয়ে না থাকে বরফে সেটা দেখা খুব জরুরী। সবাই সাবধান থাকুন, সুস্থ থাকুন। আরো একটা বিষয় আসবে মাস থেকে দুমাসের মধ্যে, যার জন্য সতর্ক হওয়া এখনই জরুরী। যখন বরফ গলতে শুরু হবে তখন বন্যা হবে এবার বরফগলা জলে। বাড়ির ভিতর যে সব জায়গায় পানি ঢুকে পরার সম্ভাবনা বিশেষ করে বেইজমেন্ট আগে থেকেই সেখান থেকে জিনিস পত্র উঁচুতে তুলে রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন। এত বরফগলা জল তো আর কম হবে না। যখন বরফ গলবে সে সময়টা বৃষ্টি হওয়ার সময়ও।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:১১

রাজীব নুর বলেছেন: প্রচুর তুষারপাত হলে সমস্যা। প্রচুর বৃষ্টি হলেও সমস্যা।
কিন্তু ঈশ্বর কখনও কিছু কম দেন না আমাদের। দুঃখ কষ্ট অভাব।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৩:৫০

রোকসানা লেইস বলেছেন: অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। কিন্তু প্রকৃতও রেগে যায় কখনো। নানা ভাবে অতিরিক্ত হয়ে সেই রাগ ঝরায়

২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৫২

কামাল১৮ বলেছেন: তুষার পরিস্কার করার ভয়ে নিজের বাড়ী বাদ দিয়ে ফ্লাটে থাকি।এখানে তুষার পরিস্কার করার ঝামেলা নাই।গার্বেজ দেয়ার সমস্যা নাই।এই বার মনে হয় একটু বেশিই তুষার পড়ছে।আবহাওয়া পরিবর্তনের ফল হতে পারে।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৩:৫৪

রোকসানা লেইস বলেছেন: ফ্লাটে থাকার সুবিধা অনেক। আমি থেকেছি অনেক কাল কিন্তু এখন ভালোলাগে না। বিশেষ করে এলিভেটরের জন্য অপেক্ষা। আর যখন তখন ফায়ার এর্লাম বেজে উঠা । উপর থেকে হেঁটে নিচে নামা আবার হেঁটে উপরে উঠা।
এবার গত ছয় বছরের না পরা টা পুষিয়ে দিচ্ছে যেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.