নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি হারিয়ে ফেলি নিজেকে ফিরে ফিরে পাই এক চিলতে হাসিতে।
ছবি নেট ।
সেদিন বন্ধু লোটাসের বাসায় গেছি মালিবাগ। রেললাইন পাড় হয়ে হাতের ডান দিকে। ওর বাসা থেকে আবুজাফর গিফারি কলেজ কাছে। বন্ধু বলতে এই লোটাসই আছে। বাকিরা ঝরে গেছে। মানে কেউ ইউরোপ কেউ আমেরিকা।
কথা হয় আজকাল শুধু নেট থাকলেই চলে ভিডিও কলও দেয়া যায় কিন্তু সময় হয়না কারো আবার রাত দিনের ফারাক! ফারাকে ফারাকে গোল্লায় যাচ্ছে রিস্তা বেবাক!
কলিং বেল টিপ দিয়ে বেশীক্ষণ দাঁড়াতে হলো না। দরজা লোটাস খুলে দিল সাথে বত্রিশ পাটি বের করে হাসি। তারপর বলে চলল, কি রে কি খবর? এতদিন পর। আমি কইলাম আরে ব্যাটা! দম লইতে দে। বাল! ঘরে না ঢুকতেই জেরা!
লোটাস হাসতে লাগলো। ওর হাসি দেখলে মনে হয়না ও দুনিয়ায় এতিম। মা, বাবা অনেকে আগেই গত হয়েছে। অবশ্য আন্টি ওর বউ দেখে গেছে আর খবর শুনে গেছে ওর বউ পোয়াতি। নাতি আর দেখা হলো না। এই বুঝি জীবন বা জীবনের কিছু অংশ!
যাই হোক ভেতর রুমে ঢুকে সোফাতে গা এলিয়ে দিলাম। একেতো বাসে বসে থেকে মেজাজ খারাপ আবার জ্যাম আর হর্ণ। উফফ! ঢাকা শহর বিরক্তিকর। তবুও পেটের টানে থাকা।
মাঝেমধ্যে ভাবি এই বালছাল ছেড়ে গ্রামে যেয়ে হালচাষ করি কিষাণ দের সাথে গল্প করি। তামাক ফুঁকি। নদীতে সাঁতার কাটি। মাছ ধরি সারা রাইত। তালের রস, খেজুরের রস, ভাং খেয়ে মাতলামি করি। নাহ! কি এক বালের জীবন! কাম বাসা কাম বাসা। জীবন টা ফাতাফাতা হয়ে যাচ্ছে। ভালো লাগে না।
লোটাস জোরে বলতে লাগলো, সঞ্জিতাকে এই দেখো কে আসছে? সঞ্জিতা ওর স্ত্রী। প্রেম করে বিয়ে। এক ছেলের মা। তোমার আমার কাছের লোক মানে আমি।
সঞ্জিতা কিচেন থেকে প্রায় দৌড়ের উপর চলে আসলো। সঞ্জিতা আগের চেয়ে একটু মোটা হয়েছে। ঘরের ফিলিপস বাতির আলোতে আরও ফুটে উঠেছে সৌন্দর্য্য রুপ। বেশ লাগছে ওকে। পড়নে একটা জলপাই রঙের শাড়ি সাথে গোলাপি রঙের ব্লাউজ।
মেয়েদের আসলে মেলা রুপ! মা হলে এক। প্রেমিকা হলে এক। বোন হলে এক আর খালা, ফুপু হলে আরেক শেষমেশ নানী, দাদি হলে আরেক। পুরুষরা কি এমন হয়?
আমাকে দেখেই কি এতদিনে মনে পড়লো? সেই কবে বাবুর জন্মদিনে আসলেন তারপর খবর নাই। এত ব্যস্ত? অথচ একই শহরে থাকি।
আমি বললাম, এই আসি সেই আসি করে আসা হয়নি। তাছাড়া অফিস শেষে কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না। ছুটির দিন ঘুমিয়ে যায়।
তাছাড়া আমি একলা মানুষ তোমাদের কেমনে যেতে বলি তাও পারছি না। আমি এই বলে কিছু ক্যাডবেরি ওর হাতে দিয়ে বললাম " বাবুর জন্য " ছোট বাবু কিন্তু! সঞ্জিতা হাসতে লাগলো।
পরক্ষণেই বলে বসল একলা থেকে দোকলা হয়ে গেলেই পারেন আপনার অভাব কিসে? আমি কইলাম এই যে ভেজাল বাজাইয়া দিলা। অভাব নাই মানে কও কি? অভাবের ঠেলায় তালগাছে বাসা বাঁধার চিন্তা করতাছি।
এইবার সবাই হাসতে শুরু করলাম। আহ! জীবন কত আনন্দের। এ ছেড়ে কোথাও একদিন হারিয়ে যাওয়া ভাবতেই কলিজা গুর্দা মাইনাস ডিগ্রি তাপমাত্রার পরশ পেয়ে যায়। ভালো লাগে না।
আমি কইলাম কাম কাইজ চলতাছে দোকলা হওয়ার। পাখি রাজি হইলে বন্দী করমু খাঁচায়! সঞ্জিতা বলল, আপনারা গল্প করেন আমি আসছি।
লোটাস এতক্ষণ একটা খুঁটির মতন খাড়াইয়া ছিল খালি হাসছে কোন টু শব্দ করেনি। আমি কইলাম এত ব্যস্ত হওয়ার কিছু নাই। আমি ঘরের লোক পর ভাবার সুযোগ নাই। তা তোমার বড় বাবুরে দেখছি ছোট বাবু কই? সঞ্জিতা লজ্জা পেলো। দ্রুত চলে গেল।
লোটাস বলল, এইতো পাশের বাসায় গেছে। আর বলল, তুই কি এমনই থাকবি মুখে কিছু আটকায় না। আমি কইলাম কি করলাম? দুই নম্বরী কিছু তো করি নাই। লোটাস কইল আচ্ছা! বাদ দে।
আমি কইলাম, হ। আমি আমার মতন বাঁচতে চাই।
লোটাস আবার আমার কবিতার একমাত্র ভালো পাঠক আবার সমালোচক। ওর সমালোচনা ভালো লাগে।
প্রায়ই বলে এখান টা এমন হলে ভালো হতো ওখানটায় আরেকটু কিছু যোগ করা যেতো। আমি এসব শুনি। ওরে মাঝেমধ্যে বলে বসি লিখছ না ক্যান?
লোটাসের কথা সবার কাম লেখা না। লিখনি শক্তি থাকা চাই। গভীরতা চাই। আমি কইলাম এত গভীরে গেলেতো ব্লাক হোলে যাওয়া ভালো যার ভেতর থেকে আলো পর্যন্ত বের হয় না।
ও বলল, আজকাল কি লিখছিস? এগুলি অর্পা জানে? আমি কইলাম হুম, আলবাত! লুকিয়ে কোন কাম আইজ পর্যন্ত করি নাই। করছি ক? পাপ করলেও সিনা ফুলাইয়া পূণ্য করলেও সিনা ফুলাইয়া।
লোটাস বলল, হুম। তুই বহুত বড় সেনাপতি! লোটাস বলতে লাগলো তোর কবিতার বিষয়বস্তু সেই নর নারীর প্রেম, শরীর, যৌনতা এর বেশকিছু? আমি কইলাম আলবাত! তুমি ঠিক ধরেছ বৎস কিন্তু সব দিকে নজর দিলে পরে নজর খারাপ হইয়া যাইব।
লোটাস বলল কেন? অন্যরা লিখছে না। আমি কইলাম, আমি অন্যদের দলে নই আলাদা। লোটাস বলল, আলাদা হতে হলে নজর বদলাতে হয়! আমি কইলাম ইচ্ছে করেই নজর বদলাই না। কি লাভ? লোটাস বলল, তাইলে কেমনে আর আলাদা হলি? বল? জোয়ারে ভেসে যাচ্ছিস! কচুরিপানার মতন। আমি কইলাম, ইদানীং ভাসতেও পারছিনা ভীষণ জ্যাম!
তারপর বললাম, ধর এই মুহুর্তে মাথায় চলছে কয়টা লাইন। শোন তাইলে
" নেতা আপনি ভীষণ অদ্ভুত !
লুটে যাচ্ছেন দেশ!
আরামে আছেন বেশ
মনে কি করেন?
জনতা খানকির পুত!
নেতা আপনি সত্যি অদ্ভুত ! "
লোটাস কইল হুম এই জন্য বলি একটু সিরিয়াস হ। এই লেখালেখি অত সোজা না। তাইলে চেয়ার টেবিল ও পেরে যেতো তারপর আবার কবিতা।
আমি কইলাম,
" ঘটনা হাছা
হও নাই এখনো চাচা!
দিও জ্ঞ্যান কম
মাস্কের সনে বাড়তি নিও কন্ডম ! "
এইবার ও হাসে আমিও। এমন সময় সঞ্জিতা তিনটা বাটিতে করে টমেটো, পেঁয়াজ, মরিচ, দেশী ধনিয়াপাতা আর চানাচুর, বাদাম মিশিয়ে ঝাল মুড়ি নিয়ে হাজির আর তিন কাপ রঙ চা। টেবিলে রেখে বলল, রঙ চা চলে? আমি কইলাম সব চলে না চললে চালাই লই। এত টেনশন নিও না।
সঞ্জিতা পরক্ষণেই প্রশ্ন করল একবার অর্পাকে নিয়ে আসেন ? প্রশ্নটা শুনে দুষ্টমী মাথা চারা দিয়ে উঠল। বললাম, ওরে নিয়া আসছি তো। তুমি যখন কয়দিনের জন্য বাপের বাড়ি গেছ তখন। তোমার সেলাই করা একটা নকশীকাঁথা আছে না। ঐ টা ওর ভীষণ পছন্দ হইছে।
সঞ্জিতা এ শুনে কি বলবে বুঝতাছে না। লোটাস ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে এমন ডাহা মিথ্যে কথা কেমনে বলে ফেললাম এক শ্বাসে।
আমি মুড়িটা মুখে তুলে বললাম, হেব্বি হইছে যদিও ঝাল বেশী ! সঞ্জিতা বলল, ও আচ্ছা ! দুঃখিত, আসছি বলেই অন্য রুমে যেয়ে লোটাস কে ডাক দিল। বুঝলাম ঘটনা কি ঘটতে যাচ্ছে।
শুধু এইটকুন শুনলাম, সঞ্জিতা বলছে, এই তুমি ওদের রুম ডেটিং করতে দিছ? আমায় একবারও বলো নাই। আবার নকশীকাঁথার কথা বলে মানে বিছানায় গেছে। ছিঃ! ছিঃ! লোটাস উত্তর খুঁজে পায়নি। আমি আস্তে করে উঠে দরজা লাগিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিড়ি ফুঁকছি আর দৃশ্যটি মগজে এঁকে চলেছি... ।
©somewhere in net ltd.