নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সংক্রান্তির সলতে। লেখক সম্পাদক ওয়েব প্রকাশক

শ্রীশুভ্র

ফ্রীল্যান্স লেখক

শ্রীশুভ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতীয়তাবাদ বিরোধী রবীন্দ্রনাথ

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২৭





বিশ্বমানব বিশ্বপথিক কবি রবীন্দ্রনাথ আজীবন তাঁর জীবন সাধনায় জাতীয়তাবাদের বিরোধী ছিলেন। তিনি বিশ্বমানবের বেদীমূলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন জাতীয়তাবাদ মানুষকে এক করে না, বিছিন্ন করে, মহামিলনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রবল ভাবেই। তাই আবিশ্ব মানবপ্রেমের বাণী বহন করে বেড়ানো এই পুজারী প্রবল ভাবেই রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন এই জাতীয়তাবাদের বিপক্ষ্যেই।

রবীন্দ্রদর্শনের মূলেই আছে মিলনের গান। মানুষের সাথে মানুষের, মানুষের সাথে প্রকৃতির, মানুষের সাথে বিশ্বসত্ত্বার। আর মানুষের সাথে মানুষের এই মিলনের পথে তিনি মানব হৃদয়ের আবেগকেই প্রাধান্য দিয়ে গিয়েছেন আজীবন। কারণ তিনি দেখেছিলেন মানুষের সাথে মানুষের মিলনের পথে আমদের ভাষা সংস্কৃতি ধর্ম এবং জাতীয়তার বাধাকে দূর করতে পারে মানুষের প্রতি আমাদের হৃদয়ের অমলিন প্রীতি। সেই প্রীতির উপাচারেই হৃদয়ের ঔদার্য্যে আমরা ভিন্ন সংস্কৃতির ভিন্নভাষী মানুষকে কাছে টানতে পারি। মিলতে পারি সবার সাথে। দূরকে করতে পারি নিকট। তিনি এও দেখেছিলেন এই মিলনের পথে প্রধান অন্তরায় জাতীয়তাবাদের উদ্ভবে সৃষ্ট বিচ্ছিন্নতাবোধ; যা মানুষকে মানবিক হয়ে উঠতে বাধা দেয় প্রবল ভাবেই। সেই বিচ্ছিন্নতাবোধের থেকেই বিশ্বমানবকে বিশ্বমিলনের পথে এগিয়ে চলার ডাক দিয়ে গেলেন কবি।

আমাদের সভ্যতায় রাষ্ট্রতন্ত্রের উদ্ভবের সাথেই জাতীয়তাবাদের উন্মেষ। রাষ্ট্রতন্ত্র যত প্রবল হয়ে উঠেছে, জাতীয়তাবাদ তত দৃঢ় হয়েছে। আর ততই বেড়ে উঠেছে জাতিতে জাতিতে বৈরীতা। মানুষে মানুষে দূরত্ব। মিলনের পথ হয়ে উঠেছে কন্টকাকীর্ণ। আধুনিক যুগে রাষ্ট্রতন্ত্রের এই অগ্রগতি বিভিন্ন জাতিগুলিকে পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাসী করে তুলেছে। প্রত্যেক জাতি নিজ নিজ জাতীয়তার গর্বে মদমত্ত হয়ে অন্য জাতিগুলির উপর সবরকমের অনৈতিকতার প্রশ্রয় দেওয়াকেই দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত বলে বিশ্বাস করে নিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ মনুষ্যত্তের এই অবমাননাকে মেনে নিতে পারেননি কোনোদিনও। দেশপ্রেম তাঁর কাছে এমন অমানবিক ছিল না। এই ধরণের দেশপ্রেমের জন্যে মানুষের মনুষ্যত্বকে বলি দেওয়ার বিরোধী তিনি। মানুষের ব্যক্তিত্বের স্বাধীন বিকাশের অনুরাগী কবি, বিশ্বমানবাত্মার মহামিলনের মধ্যেই মানবজন্মের শ্রেষ্ঠতম বিকাশকে প্রত্যক্ষ করতে চেয়েছিলেন তাঁর আন্তরিক প্রত্যয়ে। এখানেই তাঁর অনন্যতা, এখানেই তিনি পৃথক তাঁর সমসাময়িকদের থেকে। এবং এইখানেই তিনি এগিয়ে ছিলেন আর সকলের থেকে, কারণ তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, এই সংকীর্ণ দেশপ্রেমের গন্ডী থেকে অদূর ভবিষ্যতে মানুষকে বেরিয়ে আসতেই হবে। সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের উর্ধে উঠে দাঁড়াতেই হবে আধুনিক মানবকে। ঠিক এই কারণেই মার্কিণ রাষ্ট্রপতি উড্র উইলসনকে ১৯১৮ সালের ৯ই মে কলকাতা থেকে লিখলেন, “It is needless to tell you, that I do not believe in patriotism which can ride roughshod over higher ideals of humanity, and I consider it to be an act of impiety against one’s own country when any service is offered to her which is loaded with secret lies and dishonest deeds of violence.” আর ইউরোপের জাতীয়তাবাদ প্রবন্ধে লিখছিলেন, “When this organization of politics and commerce, whose other name is the Nation, becomes all-powerful at the cost of the harmony of the higher social life, then it is an evil day for humanity”

বিশ্বমানবতাবাদে বিশ্বাসী কবি, মানুষের সাথে মানুষের সহযোগিতায় গড়ে ওঠা সমাজ সভ্যতার পক্ষ্যেই তাঁর অভিমত ব্যাক্ত করে গিয়েছেন দৃঢ়তার সাথে। তীব্র ভাবে বিরোধীতা করেছেন, জাতিতে জাতিতে, গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে রেষারেষি, অবিশ্বাস, এবং তীব্র প্রতিযোগিতার যুদ্ধকে। কারণ তিনি দেখেছেন, প্রতি্যোগিতার ভয়াবহ পরিনতি দুর্বলের উপর সবলের নিদারুণ অত্যাচার অবিচার এবং শোষণকে কিভাবে তীব্র থেকে তীব্র করে তোলে। রুদ্ধ হয় ব্যক্তিমানবের ব্যাক্তিস্বাধীনতার পরিসরটি। বন্ধু উইলিয়াম রোদেনস্টাইনকে ১৯১৭ সালের ২৬শে অক্টোবরের এক পত্রে, শান্তিনিকেতন থেকে লিখলেন;

“The rapid growth of nationalism in Europe begins with her period of foreign exploration and exploitation. Its brilliance shines in contest upon the dark background of the subjection of other peoples. Certainly it is based upon the idea of competition, conflict and conquest and not that of cooperation.”

তাই জাতীয়তাবাদ থেকে গড়ে ওঠা দেশপ্রেমকে কবি কোনোদিনো শ্রদ্ধা জানাতে পারেননি তাঁর অন্তর থেকে। যে দেশপ্রেম সমাজ সংসারের স্বাভাবিক বিকাশের ধারাতে গড়ে ওঠা কোনো সজীব পদার্থ নয়, যা ব্যক্তিমানবের মনুষ্যত্বের পূর্ণ উদবোধনকে নিশ্চিত করে না, করতে পারে না কিছুতেই। এবং এই যে জাতীয়তাবাদ যা রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষার জন্যেই গড়ে ওঠা একটি যান্ত্রিক ব্যবস্থা মাত্র, যা বিশ্বপ্রকৃতির আনন্দ থেকে চিরনির্বাসিত এবং সম্পূর্ণ প্রাণহীন একটি অবস্থা, তা কখনই বিশ্বমানবের পক্ষে কল্যাণকর নয়। খুব সদর্থক রূপেই এই সত্যটি দেখতে পেয়ে গিয়েছিলেন কবি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধূসর পান্ডুলিপিতেই।

তাঁর নিজের কথাতেই, ন্যাশানালিজম ইন ওয়েস্ট প্রবন্ধে তাই দ্যর্থহীন ভাষাতেই কবি স্পষ্ট করলেন তাঁর নিজস্ব অভিমত। বললেন, “This history has come to a stage when the moral man, the complete man, is more and more giving way, almost without knowing it, to make room for the political and the commercial man, the man of the limited purpose. This process, aided by the wonderful progress in science, is assuming gigantic proportion and power, causing the upset of man's moral balance, obscuring his human side under the shadow of soul-less organization. We have felt its iron grip at the root of our life, and for the sake of humanity we must stand up and give warning to all, that this nationalism is a cruel epidemic of evil that is sweeping over the human world of the present age, and eating into its moral vitality.”

কবির কথা যে কত সত্য, সেটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেই টের পাওয়া গেল। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই ভয়াবহ পরিনিতি থেকেও মানুষ শিক্ষা নিতে পারল না। আজকের একবিংশ শতকের প্রথম ভাগেও জাতীয়তাবাদের বিভীষিকা তারা করে বেড়াচ্ছে মনব সভ্যতাকে।

শ্রীশুভ্র

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৩১

লোনার বলেছেন: আপনার লেখা আমি আগেও পড়েছি - একমত না হলেও, একধরনের ভালো লেগেছে। আমি আশা করছি আমার এই মন্তব্যটা মুছে না দিয়ে, বাস্তবতা জানার সৎসাহসটুকু আপনার আছে! তবে রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে আরেকটু জেনে নিন: view this link

১২ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২০

শ্রীশুভ্র বলেছেন: রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে না জেনে আমি একটি লাইনও লিখি না কখনো। রবীন্দ্রনাথকে জানাও শেষ হয় না। এতই বিশাল মাপের এই মানুষটি। আমরা রবীন্দ্রনাথকে যতই ভালো জানি না কেন, সেটি তাঁর সমগ্রতার এক একটি খণ্ডাংশ মাত্র। ফলে কেউ যদি দাবি করেন, তিনি রবীন্দ্রনাথকে পুরোপুরি জেনে ফেলেছেন, তবে সেটা হাসির খোরাক হতে পারে। সত্য হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কিন্তু এই মানুষটি বিভিন্ন বিষয়ে আমরা আমাদের সাধ্য মতো খুব ভালো করেই জানার সাধনা করতেই পারি। সদিচ্ছা থাকলে। সেই জানাও অসম্পূর্ণ নয়। আবার সেই জানাটাই গোটা মানুষটির নাড়ীনক্ষত্র জানাও নয়। এই সামান্য লেখাটিতে আমি যা বলতে চেয়েছি, যদি ভালো ভাবে রবীন্দ্রনাথ সম্ভন্ধে আমাদের পড়াশুনা থাকে, দেখা যাবে; এই লেখার একটি শব্দও অসত্য বা কাল্পনিক নয়!

২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪৮

আবু তালেব শেখ বলেছেন: দেশের স্বাধীনতার পক্ষে তিনি কি করেছিলেন?
উনার অবদান কতটুকু ছিল?
জানালে কৌতুহল নিবৃত্ত হত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.